বিভিন্ন সংবাদে ‘ব্লু হোয়েল’ সম্পর্কিত তথ্য ও ঘটনা বর্ণনায় এটি স্বচ্ছ হয় যে ব্লু হোয়েল সম্পর্কে যথাযথ গবেষণা না করেই রিপোর্টগুলো তৈরি করা হয়েছে এবং রিপোর্টকারীদের কেউই ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে কিংবা ডিপ ওয়েবের মত টার্মগুলোর সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখে না। এদের অধিকাংশেরই তথ্যসূত্র অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন গুজব সংবাদ বা ভিডিও। সাধারণত, গেম অর্থ আমরা যেমন মোবাইল বা কম্পিউটার গেম বুঝি ‘ব্লু হোয়েল’ এমন কোন গেম না। বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিওতে এটিকে একটি মোবাইল গেম হিসেবে যেভাবে রোমঞ্চকরভাবে উপস্থাপন করা হয়, বিষয়টি বাস্তবে মোটেও ঠিক এরূপ নয়।
ব্লু হোয়েল মূলত একটি টাস্ক লিস্ট ভিত্তিক গেইম। অর্থাৎ, অংশগ্রহণকারীদের এই খেলায় বিভিন্ন কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এক গেইমটি সর্বপ্রথম পরিচালিত হয় রাশিয়া ভিত্তিক ‘ভিকে’ নামক সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটে F57 নামক একটি গ্রুপের মাধ্যমে। এক সাক্ষাতকারে গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা ফিলিপ বুদেইকিন F57-এর মানে ব্যাখ্যা করে বলেন, “এটি খুব সাধারণ। F এসেছে আমার নামের প্রথম থেকে আর 57 এসেছে আমার তখনকার ফোন নাম্বারে শেষ ডিজিট থেকে”। এই গ্রুপের সদস্যদের গ্রুপ চ্যাটের মাধ্যমে এসব কাজগুলো করতে উদ্বুদ্ধ করা হতো বলে জানা যায়। অবশ্য পরবর্তীতে এই গ্রুপটি সোশ্যাল মিডিয়া সাইটটির কর্তৃপক্ষ ব্যান করে দেয়।
বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হ্যাকাররা মোবাইলের ভেতর গেমটির মাধ্যমে বা বিভিন্ন লিংক ব্যবহার করে চিরস্থায়ীভাবে ঢুকে যাওয়ার এমন দাবীগুলো কল্পনাপ্রসূত। এই গেইমের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের হিপটোনাইজ করে আত্মহত্যা বা আত্মঘাতী কাজে বাধ্য করা হয় না। এই ধরণের গ্রুপগুলো আত্মহত্যাকে উৎসাহ দিলেও এই গেমের মাধ্যমে রাশিয়ায় ১৩০ জনকে সরাসরি আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয় এমন দাবী সমর্থন করে এমন কোন প্রমাণ মেলে নি পুলিশী কোন অনুসন্ধানে। বয়ঃসন্ধিকাল পার করছে এমন কিশোর-কিশোরীদের অনেকেরই আত্মহত্যা বা নিজের ক্ষতি সাধনের করার প্রবণতা থাকে। এই গেইমের মাধ্যমে গ্রুপে এমন মানুষদের নিয়ে আনা হয় যারা আত্মহত্যা করার ইচ্ছা পোষণ করে এবং তাদের কাছে আত্মহত্যাকে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে রোমাঞ্চকরভাবে তুলে ধরা হয় মাত্র।
এই গেমটি উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর কিংবা খুব ভয়ানক হ্যাকারদের দ্বারা পরিচালিত কোন গেম না বরং ‘ট্রুথ অর ডেয়ার’-এর মত চ্যালেঞ্জভিত্তিক একটি খেলা। তাই এই খেলার কোন ওয়েবসাইট নেই, গোপন লিংক নেই বা ভয়ঙ্কর কোন হ্যাকার গ্রুপের হাত নেই। এটি চকিং গেইম (দম বন্ধ করে অজ্ঞান হওয়া) এর মত খেলাগুলোর মতই একটি বিকৃত খেলা যেটি কিছু গ্রুপ অসুস্থ বিনোদনের লক্ষ্যে খেলে থাকে। কিছু ব্লগ, ট্যাবলয়েড পত্রিকা, ইউটিউব চ্যানেল, নিউজ পোর্টাল, ফেইসবুক পেইজ কেবল ভাইরাল খবর প্রচারের লক্ষেই ব্লু হোয়েলের খবরগুলোকে রসিয়ে উপস্থাপন করে থাকে, কেবল বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বব্যাপী ব্লু হোয়েল নিয়ে মিডিয়ার গুজব একই ধরণের। নকল ডিমের দাবীগুলোর মতই এই গেইমের অস্তিত্ব অপ্রমাণিত এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ব্লু হোয়েলের মত আত্মঘাতী ক্রীড়াগুলোকে প্রতিহত করতে ব্রাজিল ভিত্তিক একটি গ্রুপ পিংক হোয়েল নামক একটি চ্যালেঞ্জের প্রচলন করে যার মাধ্যমে মানুষদের ইতিবাচক ও মানসিকভাবে সহায়ক কিছু কাজ করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়।
UK Safer Internet Centre ব্লু হোয়েলকে জাল খবরের রোমাঞ্চকর উপস্থাপন বলে অভিমত দেয়। বুলগেরিয়া ভিত্তিক একাধিক সংগঠন ব্লু হোয়েলের গুজব বিশ্বাস না করার জন্য সতর্কতা প্রদান করে।
তথ্যসূত্র : যাচাই ডটকম।
এইরকম আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে আমার ফেসবুক পেজে লাইক দিন – www.facebook.com/WAMahbubPathan.