(= আসসালামুআলাইকুম =)
ট্রিকবিডির সকল মেম্বারকে শুবেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের == একটি পোষ্ট 🙂
++আজকে আমরা জানব বিশ্বের সর্ববৃহৎ ২০টি ধর্ম সম্পর্কে++
(কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন,, আর ভুলটা বলে দিবেন যাতে সুধরে নিতে পারি)
আমরা মানুষ! আমাদের এক একটা জতি আছে! আমাদের এক একটা দেশ আছে! এবং আমাদের আছে এক একটা ধর্ম!
আজকে আমরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্ম সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। (২০ থেকে ১)
(20) সার্বজনীনতাবাদ : Unitarian-Universal
সর্বজনীনতাবাদ একটি ধর্ম। যার অনুসারী প্রায় ৪,০০,০০০ বা ৪ লক্ষ মানুষ।
(১৯) নিও পাঙ্গান : Neo-Pagan
নিও পাঙ্গানিস্ম এবটি ধর্ম। যার অনুসারী প্রায় ১০,০০,০০০ বা ১০ লক্ষ মানুষ।
(১৮) টেনরিকিয় : Tenrikyo
টেনরিকিয় একটি ধর্ম। যার অনুসারী প্রায় ২০ লক্ষ বা ২০,০০,০০০ মানুষ।
(১৭) যরয়াসট্রিয়ান : Zoroastrian
যরয়াসট্রিয়ানিস্ম একটি ধর্ম। যার অনুসারী ২০ লক্ষ ৬০ হাজার বা ২০,৬০,০০০ মানুষ।
(১৬) ক্যাও দাই : Cao Dai
‘ক্যাওদাই বা ক্যাও দাই , “মহা শক্তির পথ”; হচ্ছে একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। ১৯২৬ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের তায় নিনহ শহরে এই ধর্মের আবির্ভাব হয়। এই ধর্মের অনুসারী প্রায় ৪০,০০,০০০ বা ৪০ লক্ষ মানুষ। এই ধর্মের পুরো নাম হচ্ছে দাই দাও তাম কাই ফো দো (“The Great Faith [for the] Third Universal Redemption”).
ক্যাও দাই , (আক্ষরিক অর্থে সর্বোচ্চ শাসক অথবা সর্বোচ্চ শক্তি) হচ্ছেন উপাস্য দেবতা, যিনি এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যাকে ক্যাও দাই অনুসারীরা উপাসনা করে। ক্যাও দাই অনুসারীরা পৃথিবী স্রষ্টাকে সংক্ষেপে দুক ক্যাও দাই বলে যার পুরো নাম ক্যাও দাই তিয়েন অং দাই বো তাত মা হা তাত।
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ক্যাও দাই উপাসনালয়গুলো দেখতে একই রকম। আকৃতি এবং রঙের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।[৪]
(১৫) শিন্তৌ : Shinto
শিন্তৌ (শিন্তো) (“দেবতার পথ”) জাপান রাষ্ট্র এবং জাপানি জাতির জাতীয় আধ্যাত্মিকতা এবং প্রচলিত ধর্ম। এই ধর্মের অনুসারী প্রায় ৪০ লক্ষ। এটিকে আচারনির্ভর ধর্ম বলা হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথা এবং আচারের মাধ্যমে এই ধর্ম পালিত হয় যা বর্তমান এবং অতীতের মাঝে যোগসূত্র স্থাপন করেছে। জাপানী পুরাণ খ্রিস্টের জন্মের ৬৬০ বছর পূর্বে শিন্তো ধর্ম উৎপত্তি লাভ করে খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে কোজিকি এবং নিহন শকি’র ঐতিহাসিক দলিলে শিন্তো আচারের কথা লিপিবদ্ধ আছে।
শিন্তো শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দেবতার পথ। শিন্তো শব্দটি শিন্দো শব্দ থেকে এসেছে। শিন্ডো শব্দটির মূল খুঁজে পাওয়া যায় চীনা শব্দ শেন্ডো থেকে। শিন্তো শব্দটি দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। শিন অর্থ ইংরেজী স্পিরিট বা আধ্যাত্বিক শক্তি এবং তো অর্থ পথ।
শিন্তো জাপানের প্রধান ধর্ম। দেশটির ৮০% মানুষ বিভিন্ন ভাবে শিন্তো রীতিনীতি পালন করে। কিন্তু জনগণনের খুব অল্প সংখ্যক লোক নিজেদেরকে শিন্তো ধর্মানুসারী বলে পরিচয় দেয়।
(১৪) যানি : Jain
একটি ধর্ম। যার অনুসারী প্রায় ৪০ লক্ষ ২০ হাজার বা ৪০,২০,০০০ মানুষ।
(১৩) বাহাই : Bahai
একটি ধর্ম। যার অনুসারী প্রায় ৭০ লক্ষ বা ৭০,০০,০০০ মানুষ।
(১২) যুদা : Juda
একটি ধর্ম। যার অনুসারী প্রায় ১ কোটি ৪ লক্ষ মানুষ বা ১,৪০,০০,০০০ জন।
(১১) স্পিরিট : Spirit
একটি ধর্ম। যার অনুসারী প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ বা ১,৫০,০০,০০০ জন।
(১০) জুস : Juche
একটি ধর্ম। যার অনুসারী
(৯) শিখ : Sikh
শিখ ধর্মের অনুসারীদেরকে শিখ বলা হয়। এই শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। মূলত সংস্কৃত শিষ্য শব্দ থেকে এই শব্দটি এসেছে। শিষ্য মানে শিক্ষার্থী বা শিক্ষানুরাগী। অথবা সংস্কৃত শব্দ শিক্ষা থেকে এই শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ হলো নির্দেশ, উপদেশ ইত্যাদি। ১৫ শতাব্দীতে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে এ ধর্মের গোড়াপত্তন হয়। একজন শিখ তার গুরুর অনুসারী হয়। একজন শিখকে চেনার উপায় হলো পাঁচটি “ক”। ১-কেশ (চুল)। ২-কারা (শিখদের ডানহাতে পড়ার বিশেষ বন্ধনী)। ৩-কৃপাণ (ছোট এক প্রকারের তরবারি)। ৪-কাশেরা(বিশেষ ধরনের অন্তর্বাস)। ৫-কঙ্গ(পাগড়ীর সাথে থাকা চিরুনী)। তবে এগুলো তাদের চিহ্ন যাদেরকে ধর্মীয় নিয়ম মেনে বিশেষভাবে পরিশুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া মুখভর্তি দাড়ি, পাগড়ি বা ডান হাতে ব্রেসলেট দেখে অনায়াসেই একজন শিখকে চিহ্নিত করা সম্ভব। ব্রেসলেটটিকে পাঞ্জাবি ভাষায় “কারা” বলা হয়। এছাড়া তাদের অধিকাংশ পুরুষের নামে “সিং” (সিংহ) এবং নারীদের নামে “কাউর” (রাজকন্যা) উপাধি থাকে। শিখদের অধিকাংশই বসবাস করে ভারতের পাঞ্জাব এলাকায়। অবশ্য পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলেও তাদের বিস্তৃতি রয়েছে।
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
২ কোটি ৬০ লাখ | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
ধর্ম | |
শিখ ধর্ম | |
ধর্মগ্রন্থ | |
গুরু গ্রন্থ সাহিব | |
ভাষা | |
হিন্দি, পাঞ্জাবি |
শিখ গুরুবৃন্দ
# | নাম | জন্ম তারিখ | গুরুত্ব অর্জন | মৃত্যু তারিখ | বয়স |
---|---|---|---|---|---|
১ | নানক দেব | এপ্রিল ১৫, ১৪৬৯ | আগস্ট ২০, ১৫০৭ | সেপ্টেম্বর ২২, ১৫৩৯ | ৬৯ |
২ | অঙ্গদ দেব | মার্চ ৩১, ১৫০৪ | সেপ্টেম্বর ৭, ১৫৩৯ | মার্চ ২৯, ১৫৫২ | ৪৮ |
৩ | অমর দাস | মে ৫, ১৪৭৯ | মার্চ ২৬, ১৫৫২ | সেপ্টেম্বর ১, ১৫৭৪ | ৯৫ |
৪ | রাম দাস | সেপ্টেম্বর ২৪, ১৫৩৪ | সেপ্টেম্বর ১, ১৫৭৪ | সেপ্টেম্বর ১, ১৫৮১ | ৪৬ |
৫ | অঞ্জন দেব | এপ্রিল ১৫, ১৫৬৩ | সেপ্টেম্বর ১, ১৫৮১ | মে ৩০, ১৬০৬ | ৪৩ |
৬ | হর গোবিন্দ | জুন ১৯, ১৫৯৫ | মে ২৫, ১৬০৬ | ফেব্রুয়ারি ২৮, ১৬৪৪ | ৪৮ |
৭ | হর রায় | জানুয়ারি ১৬, ১৬৩০ | মার্চ ৩, ১৬৪৪ | অক্টোবর ৬, ১৬৬১ | ৩১ |
৮ | হর কৃষান | জুলাই ৭, ১৬৫৬ | অক্টোবর ৬, ১৬৬১ | মার্চ ৩০, ১৬৬৪ | ৭ |
৯ | তেগ বাহাদুর | এপ্রিল ১, ১৬২১ | মার্চ ২০, ১৬৬৫ | নভেম্বর ১১, ১৬৭৫ | ৫৪ |
১০ | গুরু গোবিন্দ সিং | ডিসেম্বর ২২, ১৬৬৬ | নভেম্বর ১১, ১৬৭৫ | অক্টোবর ৭, ১৭০৮ | ৪১ |
(৮) আফ্রিকান ট্রেডিসিওনাল এন্ড ডিয়াস্পরিক : African traditional and Diasporic
একটি আফ্রিকান ধর্ম। যা আফ্রিকায় প্রচলিত। এই ধর্মের অনুসারী প্রায় ১০ কোটি মানুষ বা ১০,০০,০০,০০০ জন।
(৭) প্রিমাল ইন্ডিজেনউস : Primal-indigenous
একটি ধর্ম। যার অনুসারী প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বা ৩০,০০,০০,০০০ জন।
*(৬) বৌদ্ধ : Buddh
বৌদ্ধ ধর্ম বা ধর্ম (পালি ভাষায় ধম্ম) গৌতম বুদ্ধকর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবন দর্শন। এখন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী প্রায় ৩৭ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ বা ৩৭,৬০,০০,০০০ জন। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। বুদ্ধের পরিনির্বাণের পরে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হয়। বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্ম দুটি প্রধান মতবাদে বিভক্ত। প্রধান অংশটি হচ্ছে হীনযান বা থেরবাদ (সংস্কৃত: স্থবিরবাদ)। দ্বিতীয়টি মহাযান নামে পরিচিত। বজ্রযান বা তান্ত্রিক মতবাদটি মহাযানের একটি অংশ। শ্রীলংকা, ভারত, ভুটান, নেপাল, লাওস, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, চীন, জাপান, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ও কোরিয়াসহ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে এই ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী বাস করেন চীনে। বাংলাদেশের উপজাতীদের বৃহত্তর অংশ বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত।
ব্যুৎপত্তি
আক্ষরিক অর্থে “বুদ্ধ” বলতে একজন জ্ঞানপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত, জ্ঞানী, জাগরিত মানুষকে বোঝায়। উপাসনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং পরম জ্ঞানকে বোধি বলা হয় (যে অশ্বত্থ গাছের নিচে তপস্যা করতে করতে বুদ্ধদেব বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন তার নাম এখন বোধি বৃক্ষ)। সেই অর্থে যে কোনও মানুষই বোধিপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত এবং জাগরিত হতে পারে। সিদ্ধার্থ গৌতম এইকালের এমনই একজন “বুদ্ধ”। বুদ্ধত্ব লাভের পূর্ববর্তী (জাতকে উল্লেখিত) জীবন সমূহকে বলা হয় বোধিসত্ত্ব। বোধিসত্ত্ব জন্মের সর্বশেষ জন্ম হল বুদ্ধত্ব লাভের জন্য জন্ম। ত্রিপিটকে, বোধিসত্ত্ব হিসেবে ৫৪৭ (মতান্তরে ৫৫০) বার বিভিন্ন কূলে (বংশে) জন্ম নেবার ইতিহাস উল্লেখ আছে যদিও সুমেধ তাপস হতে শুরু করে সিদ্ধার্থ পর্যন্ত অসংখ্যবার তিনি বোধিসত্ত্ব হিসেবে জন্ম নিয়েছেন । তিনি তাঁর আগের জন্মগুলোতে প্রচুর পুণ্যের কাজ বা পারমী সঞ্চয় করেছিলেন বিধায় সর্বশেষ সিদ্ধার্থ জন্মে বুদ্ধ হবার জন্য জন্ম গ্রহণ করেন। বুদ্ধত্ব লাভের ফলে তিনি এই দুঃখময় সংসারে আর জন্ম নেবেন না, এটাই ছিলো তাঁর শেষ জন্ম। পরবর্তী মৈত্রেয় বুদ্ধ জন্ম না নেওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে তাঁর শাসন চলবে।
গৌতম বুদ্ধের জীবনী
উত্তর-পূর্ব ভারতের কপিলাবস্তু নগরীর রাজা শুদ্ধোধন এর পুত্র ছিলেন সিদ্ধার্থ(গৌতম বুদ্ধ)। খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনি কাননে (বর্তমান নেপাল) জন্ম নেন সিদ্ধার্থ(গৌতম বুদ্ধ)। তাঁর জন্মের ৭ দিন পর তাঁর মা, রানি মহামায়া মারা যান। তাঁর জন্মের অব্যাবহিতকাল পর জনৈক কপিল নামক সন্ন্যাসী কপিলাবস্তু নগরীতে আসেন। তিনি সিদ্ধার্থকে দেখে ভবিষ্যৎবানী করেন যে, সিদ্ধার্থ ভবিষ্যতে হয় চারদিকজয়ী (চক্রবর্তী রাজা) রাজা হবেন, নয়ত একজন মহান মানব হবেন। মা মারা যাবার পর সৎ মা মহাপ্রজাপতি গৌতমী তাকে লালন পালন করেন, তাই তার অপর নাম গৌতম। ছোটোবেলা থেকেই সিদ্ধার্থ সব বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু সিদ্ধার্থ সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন বলে তাঁকে সংসারী করানোর লক্ষ্যে ১৬ বছর বয়সে রাজা শুদ্ধোধন যশোধরা (যিনি যশ ধারণ করেন) মতান্তরে যশোধা বা গোপা দেবী নামক এক সুন্দরী রাজকন্যার সাথে তার বিয়ে দেন। রাহুল নামে তাদের একটি ছেলে সন্তান হয়। ছেলের সুখের জন্য রাজা শুদ্ধোধন চার ঋতুর জন্য চারটি প্রাসাদ তৈরি করে দেন। কিন্তু উচুঁ দেয়ালের বাইরের জীবন কেমন তা জানতে তিনি খুবই ইচ্ছুক ছিলেন। একদিন রথে চড়ে নগরী ঘোরার অনুমতি দেন তার পিতা। নগরীর সকল অংশে আনন্দ করার নির্দেশ দেন তিনি, কিন্তু সিদ্ধার্থের মন ভরল না। প্রথম দিন নগরী ঘুরতে গিয়ে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি, দ্বিতীয় দিন একজন অসুস্থ মানুষ, তৃতীয় দিন একজন মৃত ব্যক্তি এবং চতুর্থ দিন একজন সন্ন্যাসী দেখে তিনি সারথি ছন্দককে প্রশ্ন করে জানতে পারেন জগৎ দুঃখময়। তিনি বুঝতে পারেন সংসারের মায়া, রাজ্য, ধন-সম্পদ কিছুই স্থায়ী নয়। তাই দুঃখের কারণ খুঁজতে গিয়ে ২৯ বছর বয়সে গৃহ্ত্যাগ করেন। দীর্ঘ ৬ বছর কঠোর সাধনার পর তিনি বুদ্ধগয়া নামক স্থানে একটি বোধিবৃক্ষের নিচে বোধিজ্ঞান লাভ করেন। সবার আগে বুদ্ধ তাঁর ধর্ম প্রচার করেন পঞ্চ বর্গীয় শিষ্যের কাছে; তাঁরা হলেন কৌন্ডিন্য (মতান্তরে প্রথম জীবনে সিদ্ধার্থের গুরু ছিলেন), বপ্প, ভদ্দিয় (ভদ্রিয়), মহানাম এবং অশ্বজিত। এরপর দীর্ঘ ৪৫ বছর বুদ্ধ ভারতের বিভিন্ন স্থানে তার বৌদ্ধ ধর্মের বাণী প্রচার করেন। এবং তাঁর প্রচারিত বাণী ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশেও দিকে-দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অব্দে তিনি কুশীনগর নামক স্থানে ৮০ বছর বয়সে মৃত্যু বরন করেন। গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত বাণীর মূল অর্থ হল অহিংসা।
বুদ্ধের দর্শন
বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়। বাসনা হল সর্ব দুঃখের মূল। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য- এটাকে নির্বাণ বলা হয়। নির্বাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিভে যাওয়া (দীপনির্বাণ, নির্বাণোন্মুখ প্রদীপ), বিলুপ্তি, বিলয়, অবসান। কিন্তু বৌদ্ধ মতে নির্বাণ হল সকল প্রকার দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ। এই সম্বন্ধে বুদ্ধদেবের চারটি উপদেশ যা চারি আর্য সত্য (পালিঃ চত্বারি আর্য্য সত্যানি) নামে পরিচিত। তিনি অষ্টবিধ উপায়ের মাধ্যমে মধ্যপন্থা অবলম্বনের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন।
পরকাল
বুদ্ধ পরকাল সম্বন্ধে অনেক কিছুই বলে গেছেন, পরকাল নির্ভর করে মানুষের ইহ জন্মের কর্মের উপর । মৃত্যুর পর মানুষ ৩১ লোকভুমির যে কোনো একটিতে গমন করে। এই ৩১ লোকভুমি হছে ৪ প্রকার অপায় : তীর্যক (পশু-পাখি কুল), প্রেতলোক (প্রেত-পেত্নী), অসুর (অনাচারী দেবকুল), নরক (নিরয়)। ৭ প্রকার স্বর্গ : মনুষ্যলোক, চতুর্মহারাজিক স্বর্গ, তাবতিংশ স্বর্গ, যাম স্বর্গ, তুষিত স্বর্গ, নির্মানরতি স্বর্গ, পরনির্মিত বসবতি স্বর্গ। রুপব্রম্মভূমি (১৬ প্রকার) = ১৬ প্রকার রুপব্রম্মভূমি । অরুপব্রম্মভূমি ( ৪ প্রকার) = ৪ প্রকার অরুপব্রম্মভূমি । মোট ৩১ প্রকার । এই ৩১ প্রকার লোকভুমির উপরে সর্বশেষ স্তর হচ্ছে নির্বাণ ( পরম মুক্তি ) যেমন : ইহজন্মে মানুষ যদি মাতৃহত্যা , পিতৃহত্যা , গুরুজনের রক্তপাত ঘটায় তাহলে মৃত্যুর পর সেই মানুষ চতুর অপায়ে ( তীর্যক, প্রেতলোক, অসুর, নরক) জন্মগ্রহণ করে, আর ইহজন্মে মানুষ যদি ভালো কাজ করে তাহলে মৃত্যুর পর সেই মানুষ বাকি ২৭ লোকভুমিতে গমন করে।
বৌদ্ধধর্মের মূলনীতি
চতুরার্য সত্য
- দুঃখ
- দুঃখ সমুদয়: দুঃখের কারণ
- দুঃখ নিরোধ: দুঃখ নিরোধের সত্য
- দুঃখ নিরোধ মার্গ: দুঃখ নিরোধের পথ
অষ্টাঙ্গিক মার্গ
- সম্যক দৃষ্টি, (সম্যক ধারণা বা চিন্তা) (Right View),
- সম্যক সংকল্প, (Right Resolve),
- সম্যক বাক্য, (Right Speech),
- সম্যক আচরণ, (Right Action),
- সম্যক জীবিকা (জীবনধারণ), (Right Livelihood),
- সম্যক প্রচেষ্টা, (Right Effort),
- সম্যক স্মৃতি (মনন), (Right Mindfulness),
- সম্যক সমাধি (একাগ্রতা) (Right Samadhi/Concentration)।
এই আটটি উপায়কে একত্রে বলা হয় আয্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ, যার দ্বারা জীবন থেকে দুঃখ দূর করা বা নির্বাণ প্রাপ্তি সম্ভব। এই আয্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের উপর ভিত্তি করেই বৌদ্ধ ধর্মে দশ শীল, অষ্টশীল এবং পঞ্চশীলের উৎপত্তি। অষ্টাঙ্গিক মার্গকে বৌদ্ধ ধর্মের মূল ভিত্তি বলা যায়, যা মধ্যপথ নামে অধিক পরিচিত।
ত্রিশরণ মন্ত্র
আর্যসত্য এবং অষ্টবিধ উপায় অবলম্বনের পূর্বে ত্রিশরণ মন্ত্র গ্রহণ করতে হয়। এই মন্ত্রের তাৎপর্য:
- বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি – আমি বুদ্ধের শরণ নিলাম। বোধি লাভ জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য। বুদ্ধত্ব মানে পূর্ণ সত্য, পবিত্রতা, চরম আধাত্মিক জ্ঞান।
- ধম্মং শরণং গচ্ছামি – আমি ধর্মের শরণ নিলাম। যে সাধনা অভ্যাস দ্বারা সত্য লাভ হয়, আধ্যাত্মিকতার পূর্ণ বিকাশ হয় তাই ধর্ম।
- সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি – আমি সঙ্ঘের শরণ নিলাম। যেখানে পূর্ণ জ্ঞান লাভের জন্য ধর্মের সাধনা সম্যক্ ভাবে করা যায় তাই সঙ্ঘ।
দুঃখ
বুদ্ধ দুঃখ কি, দুঃখের কারণ, দুঃখ দূর করার উপায় সম্বন্ধে উপদেশ দিয়েছেন। তাঁর মতে জীবন দুঃখপূর্ণ। দুঃখের হাত থেকে কারও নিস্তার নেই। জন্ম, জরা, রোগ, মৃত্যু সবই দুঃখজনক। মানুষের কামনা-বাসনা সবই দুঃখের মূল। মাঝে মাঝে যে সুখ আসে তাও দুঃখ মিশ্রিত এবং অস্থায়ী। অবিমিশ্র সুখ বলে কিছু নেই। নিবার্ণ লাভে এই দুঃখের অবসান ঘটে। কামনা-বাসনার নিস্তারের মাঝে অজ্ঞানের অবসান ঘটে। এতেই পূর্ণ শান্তি অর্জিত হয়।
ধর্মগ্রন্থ
“ত্রিপিটক” বৌদ্ধদের ধর্মীয় গ্রন্থের নাম যা পালি ভাষায় লিখিত। এটি মূলত বুদ্ধের দর্শন এবং উপদেশের সংকলন। পালি তি-পিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। তিন পিটকের সমন্বিত সমাহারকে ত্রিপিটক বোঝানো হয়েছে। এই তিনটি পিটক হলো বিনয় পিটক , সূত্র পিটক ও অভিধর্ম পিটক। পিটক শব্দটি পালি । এর অর্থ – ঝুড়ি, পাত্র , বক্স ইত্যাদি। অর্থাৎ যেখানে কোনো কিছু সংরক্ষন করা হয়। বৌদ্ধদের মূল ধর্মীয় গ্রন্থ । খ্রীষ্ট পূর্ব ৩য় শতকে সম্রাট অশোক এর রাজত্বকালে ত্রিপিটক পূর্ণ গ্রন্থ হিসাবে গৃহীত হয়। এই গ্রন্থের গ্রন্থনের কাজ শুরু হয়েছিল গৌতম বুদ্ধ এর মহাপরিনির্বানের তিন মাস পর অর্থাৎ খ্রীষ্ট পূর্ব ৫৪৩ অব্ধে এবং সমাপ্তি ঘটে খ্রীষ্ট পূর্ব প্রায় ২৩৬ অব্ধে । প্রায় তিনশ বছরে তিনটি সঙ্ঘায়নের মধ্যে এর গ্রন্থায়নের কাজ শেষ হয়।
(৫) চীনা ধর্ম (গুলো – একত্রে) : Chinese Religios
শানধর্ম-থাওধর্ম বর্তমানে চীনের বৃহত্তম ধর্ম। চীনের ২০-৩০% লোক এই ধর্মগুলি পালন করেন। এদের মধ্যে প্রায় ১৬ কোটি লোক, অর্থাৎ চীনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১% মাৎসু নামের দেবীর পূজা করে। বৌদ্ধধর্ম ২য় বৃহত্তম ধর্ম (১৮-২০% লোক)। দেশের ৩-৪% লোক খ্রিস্টান, ১-২% মুসলমান।
চীনের এই সকল ধর্মের অনুসারী মোট ৩৯ কোটি ৪০ লক্ষ বা ৩৯,৪০,০০,০০০ জন।
চীনারা সাধারণত তাদের দেবদেবী ও ধর্মীয় নেতাদের বিশালাকার মূর্তি বানিয়ে থাকে। বিশ্বের সর্বোচ্চ ও সর্ববৃহৎ দেবমূর্তিগুলির অনেকগুলিই চীনে অবস্থিত।
চীনের ৪০-৬০% লোক কোন ধর্মের অনুসারী নন। এরা বেশিরভাগই অজ্ঞাবাদের বিশ্বাসী। কট্টর নাস্তিকের সংখ্যা ১৪-১৫%।
এগুলি ছাড়াও চীনদেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন স্থানীয় লোকধর্ম ও আচার।
(৪) হিন্দু : Hindu
হিন্দু দিয়ে একটি ধর্মীয় অথবা একটি সংস্কৃতির পরিচয় বোঝানো হয় যা ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব দর্শনগত, ধর্মীয় এবং সংস্কৃতির সাথে জড়িত। বর্তমানে সাধারণভাবে হিন্দু দিয়ে হিন্দুধর্মকে বোঝানো হয়। যদিও ভারতের সংবিধানে”হিন্দু” শব্দটি ব্যবহার করে যে কোন ভারতীয় ধর্ম বিশ্বাসীকে
হিন্দু ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা ৯০ কোটি বা ৯০,০০,০০,০০০ জন মানুষ।
(হিন্দুধর্ম, জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম বা শিখধর্ম) নির্দেশ করা হয়েছে। হিন্দু এবং হিন্দি শব্দ দুটিকে সংস্কৃতির পরিচায়ক হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে সেই সকল লোকের জন্য যারা সিন্ধু নদের পাশে বসবাস করছেন। এইভাবে কবি যেমন ইকবাল, মন্ত্রী যেমন এম.সি.চাগলা এবং আরএসএসের মত প্রতিষ্ঠান হিন্দু এবং হিন্দি শব্দ দুটিকে ব্যবহার করেছেন সিন্ধু নদের পাড়ে বসবাসরত মানুষদেরকে বোঝাতে তা সেই যে কোন ধর্মের হোক না কেন।
হিন্দু শব্দটি এসেছে (পার্সিয়ান হয়ে) সংস্কৃত শব্দ সিন্ধু (ঐতিহাসিক স্থানীয় সিন্ধু নদী বা ইন্ডাস্ রিভার) থেকে। এর অবস্থান ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরপশ্চিম অংশে (বর্তমানে পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতের অংশে)। গেবিন ফ্লাডের মতে, “আসল পরিভাষা হিন্দু প্রথম দেওয়া হয় পার্সিয়ান ভৌগোলিক পরিভাষা থেকে যা দ্বারা সিন্ধু নদীর পাশে বসবাসকারী লোকেদের বোঝানো হত। শব্দটি দিয়ে তখন ভৌগোলিক অবস্থান বোঝানো হত এবং এর দ্বারা কোন ধর্মকে বোঝানো হত না।
হিন্দু শব্দটি পরবর্তীতে মাঝে মাঝে ব্যবহার করা হয়েছিল কিছু সংস্কৃত লেখায় যেমন কাশ্মীরের রাজাতরঙ্গিনিসে (হিন্দুকা সি. ১৪৫০)। বিভিন্ন কবিরা হিন্দু ধর্মকে আলাদা করে ইসলাম ধর্ম (turaka dharma) থেকে ব্যাখ্যা করেছেন যেমন বিদ্যাপতি, কবির এব একনাথ। ১৬শ থেকে ১৮শ শতাব্দিতে বাংলা গৌড়িয় বৈষ্ণব লেখায় যাতে চৈতন্য চরণামৃত এবং চৈতন্য ভগবতেও একই ধরনের তুলনা করা হয়। ১৮শ শতাব্দির শেষের দিকে, ইউরোপীয় ব্যবসায়ী ও ঔপনিবেশিকরা ভারতীয় ধর্মের অনুসারীদেরকে একত্রে (একক কোন ধর্মকে নয়) হিন্দাস হিসেবে নির্দেশ করে। ঊনবিংশ শতাব্দিতে হিন্দুইজম বা হিন্দুধর্ম শব্দটি ইংরেজি ভাষায় সূচিত হয় ভারতীয়দের ধর্ম বিশ্বাস, দর্শন এবং সংস্কৃতিকে বোঝানোর জন্য। বিলিয়নেরও বেশি অনুসারী নিয়ে খ্রিষ্ঠান ও ইসলামের পর হিন্দুধর্ম হল পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। সবচেয়ে বেশি পরিমান হিন্দু ধর্ম অনুসারী বাস করে ভারতে যা প্রায় ৯৪০ মিলিয়ন। অন্যান্য দেশেও অধিক হিন্দু ধর্ম অনুসারী রয়েছে যেমন নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, কানাডা, ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে, ফিজি, ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি।
(৩) ইর্রেলিজিওন (ধর্মহীনতা) Irreligion
এটি একটি ধর্মের নাম। যর বাংলায় হয় “ধর্মহীনতা”। এই ধর্মের অনুসারী প্রায় ১০০ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ বা ১০০,০০,০০,০০,০০০ জন মানুষ।
(এই ধর্মের তথ্য তেমন পাওয়া যায়নি। পরে আপডেট হবে)
(২) ইসলাম : ISLAM
ইসলাম (আরবি: الإسلام) একটি একেশ্বরবাদী এবং আব্রাহামিক ধর্ম; যা আল্লাহর
বানী (কোরআন) এবং নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) (Irreligion-এর প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতি, জীবনাদর্শ (সুন্নাহ এবং হাদিস নামে লিপিবদ্ধ) দ্বারা পরিচালিত। ইসলামের অনুসারীরা মুহাম্মদ-কে শেষ নবী বলে মনে করেন।
ইসলাম (আরবি: الإسلام) শব্দটি এসেছে আরবি س-ل-م শব্দটি হতে; যার দু’টি অর্থঃ ১. শান্তি ২. আত্মসমর্পণ করা। সংক্ষেপে, ইসলাম হলো শান্তি (প্রতিষ্ঠা)’র উদ্দেশ্যে এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর (আল্লাহ)-এর কাছে আত্মসমর্পণ করা।
বিশ্বের সব মুসলমানদের মতে, তিনি এই ধর্মের প্রবর্তক নন, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত রাসূল (পয়গম্বর)। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে তিনি এই ধর্ম পুনঃপ্রচার করেন। পবিত্র কুরআন শরিফ হলো ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয় (তবে আল-কোরআনের বিধান মতে কেবল মাত্র এই ধর্মে বিশ্বাসী হলেই তাকে “মুসলিম” বলা যাবে না। দুনিয়ার যে কোন ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষই হোক, যারা এই ধর্মে নিজেকে শতভাগ সমর্পন করতে পারবেন, কেবল তাদেরকেই বলা হবে “মুসলিম”। সূত্রঃ সূরা বাকারাহ; আয়াত ২০৮)।
কোরআন আল্লাহর বাণী এবং এটি তার দ্বারা ফেরেস্তা হযরত জীব্রাইল (আঃ) -এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাদের বিশ্বাস অনুসারে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)শেষ নবী। হাদিসে প্রাপ্ত তাঁর নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তিতে কুরআনকে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে, কোনো হাদিসের মর্মার্থ কুরআনের বিরুদ্ধে গেলে, তা বাতিল বলে গণ্য হয়।
মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ও সার্বজনীন ধর্ম, যা এর আগে অনেক নবী ও রাসুল-এর প্রতি নাযিল হয়েছিল। তারা আরও বিশ্বাস করে যে, কুরআন হচ্ছে আল্লাহ্র পক্ষ হতে প্রেরিত সর্বশেষ জীবন বিধান।
মুসলমানরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানের উপর। এই দিনটিকে হাশরের দিন বলা হয়। এই দিন প্রত্যেক মানুষের কাজের বিচার করা হবে এবং এর ভিত্তিতে বেহেশত বা দোযখে পাঠানো হবে।
মুসলমানরা বিশ্বাস করে ভাগ্যের ভাল-মন্দ সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত।
ইহুদি ও খৃস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও ইব্রাহিমীয়।বর্তমান বিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা আনুমানিক ১.৮ বিলিয়ন এবং তারা পৃথিবীর প্রধান ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীসমূহ।। এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার উত্তরসূরীদের প্রচার ও যুদ্ধ জয়ের ফলশ্রুতিতে ইসলাম দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ইউরোপে মুসলমানরা বাস করেন। আরবে এ ধর্মের গোড়াপত্তন হলেও অধিকাংশ মুসলমান অন্যাংশের। আরব দেশের মুসলমানরা মোট মুসলমান জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ২০ বিশ ভাগ। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু বলকান অঞ্চল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম।
ধর্ম বিশ্বাস
মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসের মূল ভিত্তি আল্লাহর একত্ববাদ। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ্ মানবজাতির জন্য তাঁর বাণী ফেরেস্তা হযরত জীব্রাইল(আঃ) -এর মাধ্যমে রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর নিকট অবতীর্ণ করেন। কুরআনে বর্ণিত “খতমে নবুয়্যত” এর ভিত্তিতে মুসলিমরা তাঁকে শেষ বাণীবাহক (রাসূল) বলে বিশ্বাস করেন।
তারা আরও বিশ্বাস করেন, তাদের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন নিখুঁত, অবিকৃত ও মানব এবং জ্বিন জাতির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ আল্লাহর সর্বশেষ বাণী, যা পুনরুত্থান দিবসবা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল ও কার্যকর থাকবে।
আদম হতে শুরু করে আল্লাহ্ প্রেরিত সকল পুরুষ ইসলামের বাণীই প্রচার করে গেছেন। কুরআনের সূরা ফাতিরে বলা হয়েছে,
“নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে (মুহাম্মদ) পাঠিয়েছি সত্যের সাথে সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে। আর এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যাঁদের মধ্যে একজন সতর্ককারী পাঠানো হয়নি।”৩৫:২৪
ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মাবলম্বীরাই ইব্রাহিমের শিক্ষার ঐতিহ্য পরম্পরা। উভয় ধর্মাবলম্বীকে কুরআনে “আহলে কিতাব” বলে সম্বোধন করা হয়েছে । কুরআনের সূরা আলে ইমরানে আহবান করা হয়েছে,
“তুমি (মুহাম্মদ) বল, হে কিতাবীগণ, এসো সেই কথায় যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক; যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদত না করি। কোনো কিছুকেই তাঁর শরিক না করি। এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করি। যদি তাঁরা মূখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা স্বাক্ষী থাক; অবশ্যই আমরা মুসলিম।”৩:৬৪
এই ধর্ম দুটির গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয়ের উল্লেখ কুরআনেও রয়েছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রয়েছে পার্থক্য। ইসলামি বিশ্বাসানুসারে এই দুই ধর্মের অনুসারীগণ তাদের নিকট প্রদত্ত আল্লাহ্-এর বাণীর অর্থগত ও নানাবিধ বিকৃতসাধন করেছেন। ইহুদিগণ তৌরাতকে (তোরাহ) ও খৃস্টানগণ ইনজিলকে নতুন বাইবেল বলে থাকে। কুরআনের বিশ্বা অনুসারে ”যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম বেছে নিবে সে কষ্মিনকালেও সফলকাম হতে পারবেনা এবং সে চরম ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” – (সূরা আল ইমরান, আয়াত :৮৫)
আল্লাহ্
মুসলমানগণ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তাকে ‘আল্লাহ’ বলে সম্বোধন করেন। ইসলামের মূল বিশ্বাস হলো আল্লাহর একত্ববাদ বা তৌহিদ। ইসলাম পরম একেশ্বরবাদী ও কোনোভাবেই আপেক্ষিক বা বহুত্ববাদী নয়। আল্লাহর একত্ব ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে প্রথম, যাকে বলা হয় শাহাদাহ। এটি পাঠের মাধ্যমে একজন স্বীকার করেন যে, (এক) আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নাই এবং (দুই) মুহাম্মদ [(সাঃ)] তাঁর প্রেরিত বাণীবাহক বা রাসূল সুরা এখলাছে আল্লাহর বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে, [قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ. اللهُ الصَّمَدُ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ] {الاخلاص:১-৪}
“বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।”১১২:১-৪
আল্লাহ্ শব্দটি আল এবং ইলাহ যোগে গঠিত। আল অর্থ সুনির্দিষ্ট এবং ইলাহ অর্থ উপাস্য, যার অর্থ সুনির্দিষ্ট উপাস্য। খৃস্টানগণ খৃস্ট ধর্মকে একেশ্বরবাদী বলে দাবী করলেও মুসলিমগণ খৃস্টানদের ত্রিত্ববাদ (trinity) বা এক ঈশ্বরের মধ্যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার মিলন, এই বিশ্বাসকে বহু-ঈশ্বরবাদী ধারণা বলে অস্বীকার করেন। কারণ 1+1+1=3 হয় কিন্তু 1+1+1=1 হয় না । ইসলামি ধারণায় আল্লাহ সম্পূর্ণ অতুলনীয় ও পৌত্তলিকতার অসমতুল্য, যার কোনোপ্রকার আবয়বিক বর্ণনা অসম্ভব। মুসলিমরা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে বর্ণনা করেন তাঁর বিভিন্ন গুণবাচক নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে।
কিতাবুল ঈমানে আল্লাহর বর্ণনা এভাবে আছে :
”আল্লাহ এক,অদ্বিতীয়,অতুলনীয়। তার কোন অংশ বা অংশিদার বা শরিক নেই। তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন, বরং সকলেই তার মুখাপেক্ষি । তার কোন কিছুর অভাব নেই । তিনিই সকলের অভাব পূরণকারী। তিনি কারো পিতা নন, পুত্র নন, তাঁর সমতুল্য কেউ নেই । একমাত্র তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা,রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা । কোন জ্ঞান বা চক্ষু আল্লাহ তাআলাকে আয়ত্ব করতে পারেনা । তিনি চিরকাল আছেন এবং থাকবেন। তিনি অনাদি ও অনন্ত । অাল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই । তিনি একমাত্র ইবাদত পাওয়ার যোগ্য । “ তিনি সর্বশক্তিমান।আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে ঘটমান সব কিছু দেখতে ও শুনতে পান।
মূল কথা আল্লাহর বর্ণনা মানুষের কল্পনা,বিজ্ঞান বা দর্শন দ্বারা আনুভব করা সম্ভব না, কারণ মানব মস্তিষ্কের শক্তি সীমাবদ্ধ ।
ফেরেশতা
ফিরিশতা বা ফেরেশতা ফারসী শব্দ। ফেরেশতা আরবী প্রতিশব্দ হলো ‘মালাইকা’। ফেরেশতায় বিশ্বাস ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসের একটি মূল নীতি। এরা অন্য সকল সৃষ্টির মতই আল্লাহর আরেক সৃষ্টি। তাঁরা মুলত আল্লাহর দূত। তারা সর্বদা ও সর্বত্র আল্লাহর বিভিন্ন আদেশ পালনে রত এবং আল্লাহর অবাধ্য হবার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই। ফেরেশতারা নূর তথা আলোর তৈরি। রূহানিক জীব বলে তারা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করেন না। তারা সুগন্ধের অভিলাষী এবং পবিত্র স্থানে অবস্থান করেন। তারা আল্লাহর আদেশ অনুসারে যেকোনো স্থানে গমনাগমন ও আকৃতি পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখেন।
ফেরেশতাদের সংখ্যা অগণিত। ইসলামে তাদের কোনো শ্রেণীবিন্যাস করা না হলেও চারজন গুরুদায়িত্ব অর্পিত প্রধান ফেরেশতার নাম উল্লেখযোগ্য:
- জিব্রাইল (আ:) – ইনি আল্লাহর দূত ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা। এই ফেরেশতার নাম তিনবার কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা ২:৯৭; ৯৮, ৬৬:৪)। সূরা ১৬:১০২ আয়াতে জিব্রাইল ফেরেশতাকে পাক রূহ বা রুহুল ক্বুদুস বলা হয়েছে। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ এবং সংবাদ আদান-প্রদান যেসব ফেরেশতার দায়িত্ব, জিব্রাইল তাদের প্রধান। জিব্রাইল-ই আল্লাহর বাণী নিয়ে নবীদের কাছে গমনাগমন করেন। এই ফেরেশতাকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তার নিজস্ব আকৃতিতে মোট দুইবার দেখেছেন। পবিত্র কোরআনে সূরা আন নাজমে বলা হয়েছে,
“সে ঊর্ধ্বাকাশের উপরিভাগে। তারপর সে কাছে এলো। অতঃপর সে আরো কাছে এলো। তাঁদের মাঝে ব্যবধান থাকল দুই ধনুকের বা তাঁর চাইতেও কম। অতঃপর সে তাঁর বান্দার কাছে ওহী পৌঁছে দিল, যা তাঁর পৌঁছানোর ছিল। সে যা দেখেছে, অন্তর তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেনি। তোমরা কী সে বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও, যা সে নিজের চোখে দেখেছে। সে তাঁকে আরও একবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুন্তাহার কাছে।” ৫৩:৭-১৪
প্রাসঙ্গিক হাদিসসমূহ: মুসলিম শরীফ ৩২৯, ৩৩০, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৩৪ এবং ৩৩৬
- ফেরেশতা মিকাইল(আ:) – কুরআনের ২:৯৭ আয়াতে এই ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইনি বৃষ্টি ও খাদ্য উৎপাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
- ফেরেশতা ইসরাফিল(আ:) – এই ফেরেস্তা আল্লাহর আদেশ পাওয়া মাত্র শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার মাধ্যমে কিয়ামত বা বিশ্বপ্রলয় ঘটাবেন। তার কথা কুরআন শরীফে বলা না হলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
- মালাক আল-মাউত বা আজরাইল (আ:) – ইনি মৃত্যুর ফেরেশতা ও প্রাণ হরণ করেন।
বিশেষ শ্রেণীর ফেরেশতা যাদেরকে কুরআনে ‘কিরামান কাতিবিন’ (অর্থ: সম্মানিত লেখকগণ) বলা হয়েছে তাঁরা প্রতিটি মানুষের ভালো মন্দ কাজের হিসাব রাখেন। কবরে মুনকির ও নাকির নামের দুই ফেরেশতা মানুষকে তার কৃত কর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মালিক নামের ফেরেশতা নরক বা জাহান্নামের রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং রিদওয়ান নামের আরেক ফেরেশতা জান্নাত বা বেহেশতের দেখভাল করেন বলে বর্ণিত আছে। ইসলাম, খৃস্টান ও ইহুদী ধর্ম ছাড়া হিন্দুধর্মেও ফেরেশতা তথা স্বর্গীয় দূতদের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে।
আসমানী কিতাবসমূহ
প্রধান আসমানী কিতাব ৪ টি । যথাঃ ১. তাওরাত ২. যবূর ৩. ইঞ্জিল ৪. কুরআন মাজীদ এ ছাড়াও আরও ১০০ সহিফা বা ছোট আসমানী কিতাব নাজিল হয়েছে ।
আল-কুরআন
কুরআন মুসলিমদের মূল ধর্মগ্রন্থ। তাদের বিশ্বাস পবিত্র এই কুরআন স্রষ্টার অবিকৃত, হুবহু বক্তব্য। এর আগে স্রষ্টা প্রত্যেক জাতিকে বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠিয়েছেন, কিন্তু সেগুলোকে বিকৃত করা হয়। কুরআনকে আরও বলা হয় “আল-কুরআন” বা “কুরআন শরীফ”। বাংলায় “কুরআন”-এর জায়গায় বানানভেদে “কোরআন” বা “কোরান”ও লিখতে দেখা যায়।
ইসলাম ধর্মমতে, জীব্রাইল (আ:) ফেরেশতার মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট ৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬ই জুলাই, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু অবধি বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ তাঁর বাণী অবতীর্ণ করেন। এই বাণী তাঁর (মুহাম্মদ সা: ) অন্তঃস্থ ছিলো, সংরক্ষণের জন্য তাঁর অনুসারীদের দ্বারা পাথর, পাতা ও চামড়ার ওপর লিখেও রাখা হয়।
অধিকাংশ মুসলিম পবিত্র কুরআনের যেকোনো পাণ্ডুলিপিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন, স্পর্শ করার পূর্বে ওজু করে নেন। । কুরআন জীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া হয় না, বরং কবর দেয়ার মত করে মাটির নিচে রেখে দেয়া হয় বা পরিষ্কার স্রোতের পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়।
প্রত্যেক মুসলিমই কুরআনের কিছু অংশ এর মূল ভাষা আরবিতে মুখস্থ করে থাকেন, কমপক্ষে যেটুকু আয়াত নামাজ আদায়ের জন্য পড়া হয়। সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থকারীদের হাফিজ (সংরক্ষণকারী) বলা হয়। মুসলিমরা আরবি কুরআনকেই কেবলমাত্র নিখুঁত বলে বিশ্বাস করেন। সকল অনুবাদ মানুষের কাজ বিধায় এতে ভুল-ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থেকে যায় এবং বিষয়বস্তুর মূল প্রেরণা ও সণেটিক উপস্থাপনা অনুবাদকর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারে বিধায় অনুবাদসমূহকে কখনোই আরবি কুরআনের সমতুল্য ও সমান নিখুঁত গণ্য করা হয় না, বরং এগুলোকে সর্বোচ্চ ‘অর্থানুবাদ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
কুরআনকে কোনো অবস্থাতেই বিকৃত করা সম্ভব নয় । আল্লাহ নিজেই এই কুরআনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন । প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ছাত্র সমগ্র পৃথিবীতে এই কুরআন মুখস্থ করেন এবং এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন ।
নবী ও রসূলগণ
মুসলিমরা বিশ্বাস করে হযরত আদম(আঃ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত আল্লাহ পৃথিবীতে প্রায় ১,২৪,০০০ (আনুমানিক) নবী ও রাসূল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর তাদের মধ্যে হযরত আদম (আঃ) সর্ব প্রথম মানুষ ও আল্লাহর সর্ব প্রথম নবী এবং সর্ব শেষ ও সর্ব শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।
মুসলিমগণ বিশ্বাস করে ঈসা(আঃ) আল্লাহর পুত্র নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল । তাঁর উপর ইঞ্জিল কিতাব নাজিল হয়েছে। তিনি কেয়ামতের আগে আবার পৃথিবীতে আবার আসবেন এবং হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুসারী হিসেবে মৃত্যু বরণ করবেন ।
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন তৎকালীন আরবের বহুল মর্যাদাপূর্ণ কুরাইশ বংশের একজন। নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে তাঁর বিশেষ গুণের কারণে তিনি আরবে “আল-আমীন” বা “বিশ্বস্ত” উপাধিতে ভূষিত হন। স্রষ্টার নিকট হতে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তিনি মানুষকে ইসলাম ধর্মএর দিকে দাওয়াত দেন । তাঁকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ বাণী-বাহক (নবী) হিসেবে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা হয়। মুসলমানরা তাঁকে একটি নতুন ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে দেখেন না। তাঁদের কাছে মুহাম্মদ (সাঃ) বরং আল্লাহপ্রেরিত নবী-পরম্পরার শেষ নবী; যিনি আদম, ইব্রাহিমও অন্যান্য নবীদের প্রচারিত একেশ্বরবাদী ধর্মেরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন। তার পূর্বের একেশ্বরবাদী ধর্ম বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তাই মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলামকে শেষ প্রেরিত ধর্ম হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে উপস্থাপন করেন।
ইসলাম ধর্মমতে, তিনি চল্লিশ বছর বয়স হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২৩ বছর যাবৎ ফেরেশতা জিব্রাইল (আ:) মারফত ঐশী বাণী লাভ করেন। এই বাণীসমূহের একত্ররূপ হলো পবিত্র কুরআন, যা তিনি মুখস্থ করেন ও তাঁর অনুসারীদের (সাহাবী) দিয়ে লিপিবদ্ধ করান। কারণ, তিনি নিজে লিখতে ও পড়তে জানতেন না।
“তুমি তো এর আগে কোনো কিতাব পড় নি এবং স্বহস্তে কোনো কিতাব লেখনি যে অবিশ্বাসীরা সন্দেহ পোষণ করবে।”২৯:৪৮
মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একজন উৎকৃষ্ট চরিত্রের মানুষ। সকল মুসলমান বিশ্বাস করেন মুহাম্মদ (সাঃ) এই বাণী নির্ভুলভাবে প্রচার করেছেন। এবং তাতে কোনো কিছু যোগ করেননি।
“সে যদি আমার নামে কোনো কথা রচনা করতো, তবে আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তাঁর গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।” ৬৯:৪৪-৪৭
মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) ও সর্বোপরি সকল নবী ঐশী বাণী প্রচারে কখনো ভুল করেন নি। তবে মানবিক এবং পার্থিব কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মানুষ হিসেবে নিজের পক্ষ থেকে মত দিয়েছেন বলে (আহালুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত বা সুন্নীরা) বিশ্বাস করে থাকে। কিন্তু শিয়ারা মনে করে থাকে, সকল নবী ও তাদের ইমামগণ সর্বাবস্থায় নির্ভুল ছিলেন; যা ধর্মগ্রন্থ কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদিসের বিপরীত। কারণ মুহাম্মদ (সাঃ) এর সকল প্রকার মানবিক ও পার্থিব সিদ্ধান্তগুলো স্বয়ং আল্লাহ্ শুধরে দিতেন। উদাহরণ হিসেবে নিম্নলিখিত আয়াতটি আলোচনা করা হয়:
“হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করেছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্য তা নিজের উপর হারাম করছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।” ৬৬:১
এভাবে কুরআনের আরও কয়েক জায়গায় মুহাম্মদের (সাঃ) কাজ শুধরে দেয়া হয়েছে। এই আয়াতগুলো আল্লাহর বাণী নির্ভুল এবং অপরিবর্তিতভাবে প্রচার করার ব্যাপারে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কারণ নির্ভুলভাবে প্রচারের ইচ্ছা না থাকলে নিজের অসম্মান হয় এমন কিছুই তিনি প্রচার করতেন না। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, মানুষ হিসেবে সিদ্ধান্ত দিতে হলে মুহাম্মদ (সাঃ) কখনো কখনো ভুল করতেন। কিন্তু ঐশ্বিক বাণী প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি কখনো ভুল করেননি। তাঁর জীবনকালে তিনি সম্পূর্ণ আলৌকিকভাবে মেরাজ লাভ করেন।
মুসলিমদেরকে শেষ বাণীবাহক মুহাম্মদের নাম উচ্চারণ করার সাথে সাথে “সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম” বলতে হয়। এর অর্থ: ‘আল্লাহ তাঁর উপর রহমত এবং শান্তি বর্ষণ করুন।’ একে বলা হয় দরুদ শরীফ। এছাড়াও আরও অনেক দরুদ হাদীসে বর্ণীত আছে। তাঁর মধ্যে এটাই সর্বপেক্ষা ছোট। কোনো এক বৈঠকে তাঁর নাম নিলে দরুদ একবার বলা অবশ্যকর্তব্য (ওয়াজিব)।
হাদিস
‘হাদীস’ (اﻠﺤﺪﻴث) আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- কথা, বাণী, কথা-বার্তা, আলোচনা, কথিকা, সংবাদ, খবর, কাহিনী ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় মুহাম্মদের (সাঃ) কথা, কাজ, অনুমোদন এবং তাঁর দৈহিক ও চারিত্রিক যাবতীয় বৈশিষ্ট্যকে হাদীস বলে। মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তাঁর সাহাবীরা তাঁর হাদীসসমূহ মুখস্থ করে সংরক্ষণ করতেন। প্রথমত হাদীস লেখার অনুমতি ছিলো না, যাতে হাদীস এবং কোরআন পরস্পর মিলে না যায়। পরবর্তীতে মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেই তাঁর কোনো কোনো সাহাবী বা সহচরকে হাদীস লেখার অনুমতি প্রদান করেন। মুহাম্মদের (সাঃ) মৃত্যুর পর তার সাহাবীরা নিয়মিত তাঁর হাদিসগুলো চর্চা করতেন ও তাদের ছাত্রদের কাছে বর্ণনা করতেন। মহাম্মদের সাহাবীদের ছাত্র তথা তাবেঈরা ওমর ইবন আব্দুল আযীযের আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হাদীস লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেন।
মুহাম্মদের (সাঃ) কথা-কাজসমূহের বিবরণ এভাবে লোকপরম্পরায় সংগ্রহ ও সংকলন করে সংরক্ষণ করা হলে তাঁর বক্তব্যসমূহ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উন্মুক্ত হয়। বিভিন্ন বিখ্যাত পণ্ডিতেরা এই কাজে ব্রতী ছিলেন। তাঁদের সংকলিত সেসব হাদিস-সংকলন গ্রন্থের মধ্যে ছয়টি গ্রন্থ প্রসিদ্ধ হয়েছে। এগুলো ‘ছয়টি হাদিস গ্রন্থ’ (কুতুবুস সিত্তাহ) আখ্যা দেয়া হয়। তবে এটা ভাবা ভুল হবে যে, এই ছয়খানা গ্রন্থের বাইরে আর কোনো বিশুদ্ধ হাদিস নেই। এর বাইরেও বহু বিশুদ্ধ হাদিসের সংকলন রয়েছে। হাদিসের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হাদীসের সনদ বা “হাদিস প্রাপ্তির সুত্র” যাচাই।
কিয়ামত
অধিকন্তু পড়ুন: ইসলামী পরকালবিদ্যা
কিয়ামতে বা শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস ইসলামের মূল বিশ্বাসগুলির একটি| ইসলাম ধর্মে কেয়ামত বা কিয়ামত হলো সেই দিন যে দিন এই বিশ্বের সৃষ্টা( আল্লাহ) সকল মানুষ ও জ্বীন দের পুনরুত্থান করা হবে বিচারের জন্য| সকলে তার কৃতকর্মের হিসাব দেওয়ার জন্যে এবং তার কৃতকর্মের ফলাফল শেষে পুরস্কার বা শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণ শেষে জান্নাত/বেহেশত কিংবা জাহান্নাম/দোযখ এ পাঠানো হবে| নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কিয়ামতের সম্পর্কে কিছু আগাম নিদর্শন প্রকাশ করে গেছেন যেমন ১। পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে; ২। ইমাম মাহাদির আবির্ভাব ঘটবে; ৩। দুনিয়ায় পাপ কাজ বেড়ে যাবে; ৪। অযোগ্য লোকের হাতে ক্ষমতা চলে যাবে; ৫। ব্যভিচার বেড়ে যাবে; ৬।পাপ কাজ করতে মানুষ দুইবার ভাববে না; ৭। কয়েকজন লোক নিজেকে নবী দাবি করবেন প্রভৃতি।
ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহ
ইসলামের ৫টি মূল স্তম্ভ রয়েছে। এগুলো হলো-
ইসলামিক উৎসবসমূহ
(১) খ্রিষ্টান – Christian
খ্রিষ্টান ধর্ম হলো বিশ্বের বৃহৎ ধর্ম। যার অনুসারী ২০০ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ বা ২০০,২০,০০,০০,০০০ জন।
আবার, খ্রিস্ট ধর্ম হচ্ছে একেশ্বরবাদী ধর্ম। নাজারাথের যীশুর জীবন ও শিক্ষাকে কেন্দ্র করে এই ধর্ম বিকশিত হয়েছে। খ্রিস্টানরা মনে করেন যীশুই মসীহ এবং তাঁকে যীশু খ্রীস্ট বলে ডাকেন। খ্রিস্ট ধর্মের শিক্ষা নতুন টেস্টামেন্ট বা নতুন বাইবেলে এ গ্রন্থিত হয়েছে। এই ধর্মাবলম্বীরা খ্রিস্টান পরিচিত। তারা বিশ্বাস করে যে যীশু খ্রীস্ট হচ্ছেন ঈশ্বরের পুত্র।
২০০১ সালের তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে ২.১ বিলিয়ন খ্রীস্ট ধর্মের অনুসারী আছে। সে হিসেবে বর্তমানে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ধর্ম। ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, সাব-সাহারান আফ্রিকা, ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জ ও ওশেনিয়া অঞ্চলে খ্রীস্ট ধর্ম প্রধান ধর্ম হিসেবে পালিত হয়।
প্রথম শতাব্দীতে একটি ইহুদি ফেরকা হিসেবে এই ধর্মের আবির্ভাব। সঙ্গত কারণে ইহুদি ধর্মের অনেক ধর্মীয় পুস্তক ও ইতিহাসকে এই ধর্মে গ্রহণ করা হয়েছে। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তানাখ বা হিব্রু বাইবেলকে খ্রিস্টানরা পুরাতন বাইবেল বলে থাকে। ইহুদি ও ইসলাম ধর্মের ন্যায় খ্রিস্ট ধর্মও আব্রাহামীয়।
তথ্যসূত্রঃ Wikipedia, Theregister, UK site and Google with my Mind.
আপনাকে পোষ্টটি পড়ার জন্য ~ ধন্যবাদ 😀