সম্প্রতি আমরা শুনেছি যে, ফেসবুক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’দের জন্য নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে যার নাম হলো “ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস”। এই প্ল্যাটফর্ম’টি বর্তমানে শুধু IOS ব্যবহারকারী’দের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে এবং অতিশীঘ্রই এই প্ল্যাটফর্ম’টি Android ব্যবহারকারী’দের জন্যও উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এই প্ল্যাটফর্ম’টিতে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’রা অনেক সহজেই জয়েন করতে পারবেন এবং তাদের তৈরি ভিডিও’গুলো এই প্ল্যাটফর্মে প্রচার করতে পারবেন। ফেসবুক অনলাইন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’দের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করতে এই প্ল্যাটফর্ম’টি তৈরির পরিকল্পনা করেছে এবং এই প্ল্যাটফর্ম’টি ইউটিউবের মতোই তাদের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’দের ভিডিও মনিটাইজেশনের সুবিধা প্রদান করবে, যার মাধ্যমে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’রা ফেসবুকের কাছ থেকে তাদের ভিডিও’র জন্য ন্যায্য মূল্য পাবে। এই কারণেই অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’রাই কোন প্ল্যাটফর্ম’টিকে বেছে নেবেন তা নিয়ে বিভ্রান্তির মুখামুখি হয়েছেন। তাই আমি আশা করছি আজকের এই পোস্ট’টির মাধ্যমে সেসব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’দের বিভ্রান্তি দূর করতে সক্ষম হব, এবং তাদের নিজেদের জন্য একটি সঠিক প্ল্যাটফর্ম বাছাই করতে সহায়তা করতে পারবো।
ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস কী?
ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস হচ্ছে ফেসবুকে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের তৈরি একটি কমিউনিটি। এটি প্রায় অনেকটাই ইউটিউব কমিউনিটির মত যেখানে আপনি যদি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হন, তবে আপনার তৈরি করা কন্টেন্ট বা আপনার তৈরি করা ভিডিও হাজার হাজার মানুষ দেখবে (বিশেষভাবে-আপনার সাবসক্রাইবাররা) এবং আপনার একটি ফ্যান বেস বা একটি কমিউনিটি তৈরি হবে। ফেসবুকও এই ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই করতে চাচ্ছে। ফেসবুকের ভাষায়, আপনি যদি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হন এবং কোয়ালিটি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন তবে আপনি সেটি ফেসবুক ক্রিয়েটর হিসেবে পোস্ট করবেন এবং ফেসবুক মূলত আপনার ভিডিওটিকে মনেটাইজ করবে। মনেটাইজ মানে কি সেটা নিশ্চই জানেন। যদি না জানেন, তাহলে বলি, ফেসবুক আপনার ভিডিওতে এডস শো করবে এবং সেই এডস এর ইম্প্রেশন বা ক্লিকস কাউন্ট অনুযায়ী আপনাকে প্রোফিট দেবে, ঠিক যেমনটা ইউটিউব করে থাকে। তাহলে ইউটিউব এবং ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস এর মধ্যে পার্থক্যটি কি হল? এখনও পর্যন্ত যতটুকু জানা গিয়েছে, তাতে ইউটিউব এবং এটির মধ্যে প্রধান এবং সবথেকে বড় পার্থক্য হচ্ছে ইউটিউব ভিডিওগুলো থাকে গুগলের তত্ত্বাবধায়নে। আর ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস এর ভিডিওগুলো থাকবে ফেসবুক সার্ভারের তত্ত্বাবধায়নে।
ইউটিউব কী?
ইউটিউব হল একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট, যার মাধ্যমে যেকোন ইউজার নিজের ভিডিও আপলোড করতে পারে একইসাথে অন্যদের আপলোড করা ভিডিওগুলোও দেখতে পারে। এই সাইটটি ২০০৫ সালে প্রথম মুক্ত ওয়েবসাইট হিসেবে যাত্রা করে।ইউটিউবের শ্লোগান হল “broadcast yourself”..এটি বলতে বুঝিয়েছে যে, ইউটিউব সার্ভিস ডিজাইন করা হয়েছে।
সাধারণ মানুষদের জন্য যারা নিজেদের তৈরি ভিডিওগুলো প্রকাশে আগ্রহী। অনেক কোম্পানী এবং প্রতিষ্ঠান তাদের প্রচার প্রচারণা ও ব্যবসার কাজে ইউটিউব ব্যবহার করে, যদিও ইউটিউবের ব্যবহারকারীদের মাধ্যে অপেশাদারদের সংখ্যাই বেশী। ইউটিউবের সুবিধা হল এতে আপলোড করার সাথে সাথে এসব ভিডিও অন্য ওয়েবসাইটেও আপলোড করা যায়, তবে হোস্ট করা হয় ইউটিউবের সার্ভার ব্যবহার করে।
ইউটিউব VS ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস, কোনটি বেছে নেবো?
এখন কথা হলো, আপনি কোনটি বেছে নেবেন? আমার মতে আপনি যদি ইউটিউবের পুরনো কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে থাকেন এবং ইউটিউবে সেরকম সফলতা পাচ্ছেন না বলে মনে করে থাকেন তাহলে আপনি ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস-এ কাজ করতে পারেন। কারণ ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস প্ল্যাটফর্ম’টি একদম নতুন এবং হয়তোবা আপনি সেখানে সফলতা পেতেও পারেন। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন যে ইউটিউবে আপনি বেশ সফলতার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন, তাহলে ইউটিউব না ছাড়া’টাই আমি ভালো বলে মনে করি। কারণ ইউটিউব অনেক জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম এবং বর্তমানে আমরা বলতে পারি এটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভিডিও প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু আপনি যদি চান দু’টি প্ল্যাটফর্মে একসাথে কাজ করতে এবং আপনার তৈরি ভিডিও দু’টি প্ল্যাটফর্মেই প্রচার করতে, তাহলে সেই চিন্তা বাদ দেওয়াটাই ভালো বলে আমি মনে করি। কারণ ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস চাই তাদের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’রা শুধু তাদের প্ল্যাটফর্মেই কাজ করুক এবং তাদের প্ল্যাটফর্মের ভিডিওগুলো এক্সক্লুসিভ হোক। আর আপনি যদি আপনার ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা ভিডিও আবার ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস-এ প্রচার করেন তাহলে ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস কর্তৃপক্ষ এটি মেনে নেবে না এবং আপনাকে সেই প্ল্যাটফর্ম’টিতে বাতিলও করে দিতে পারে। তাই আমার মতে নতুন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’দের জন্য ফেসবুক ফর ক্রিয়েটরস ব্যবহার করাটাই ভালো এবং পুরনো কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’দের জন্য আমি ইউটিউব ব্যবহার করাটাই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি।
পোস্ট’টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করছি এই পোস্ট’টির মাধ্যমে আমি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’দের বিভ্রান্তি দূর করতে সক্ষম হয়েছি এবং তাদের’কে নিজেদের জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম’টি বেছে নিতে সহায়তা করতে পেরেছি।