রহস্য! কথাটা শুনেই আমাদের মনে একটা অন্যরকম চিন্তা বা অনুভুতি হয়। আমরা যে জিনিস এখন জানতে পারিনি বা জানলেও এর ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি, এরকম জিনিসএ হল রহস্য। আমরা বাস করি এর পৃথিবীতে। মনে হতে পারে আমরা এর পৃথিবী সব কিছুই জানি, কিন্তু না, আমরা অনেক কিছুই জানি না বা এসব অজানা। যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান বা কেউ দিতে পারেনি। আজকে এমন কিছু স্থান আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, — “বিশ্বের রহস্যময় কিছু স্থান যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান আজ পর্যন্তও দিতে পারেনি।” আর্টিকেলে।
স্কেলেটন লেকঃ কঙ্কালের হ্রদ
স্কেলেটন লেক বা বাংলায় কঙ্কালের হ্রদ। এর স্থানিয় নাম হলো রুপকুন্ড (Roopkund)। এর অবস্থান ভারতের উত্তরাখন্ডে হিমালয় পর্বতমালার মাঝে। কঙ্কালের হ্রদ, নামটার ভেতরই লুকিয়ে আছে এর এক রহস্য; কেনই বা একটি লেক বা হ্রদ এর নাম স্কেলেটন লেক তথা কঙ্কালের হ্রদ! হিমালয় দর্শনার্থীদের কাছে এই স্কেলেটন লেক বা কঙ্কালের হ্রদ একটি অন্যতম আকর্ষণ; কেননা যখন হিমালয়ের স্বচ্ছ বরফগলা পানি এই হ্রদে জমা হয়, ঠিক তখন এই হ্রদের তলায় বহু মানব কঙ্কালের দেখা পাওয়া যায়।
প্রথম এটি আবিস্কার হয়েছিল ১৯৪২ সালে; আর এর ভেতর যেসব কঙ্কাল রয়েছে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে সেগুলো আরও শত বছর আগের। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ মিটার উপর উচুতে অবস্থিত এই হ্রদে এতসব মানুষের কঙ্কাল এর বাস্তবিক অর্থে আসল রহস্যটা কি এবং কেন তাদের কঙ্কাল এই হ্রদের ভেতর শত বছর ধরে আছে তা অনেক বড় রহস্য এবং যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান এখনও দিতে পারেনি।
কঙ্কালের হ্রদ এর কিছু ছবি।
—— —– —— ——
হেসড্যালেন লাইট
অজানা উৎস থেকে আসা আলো; সাদা, লাল, হলুদ যা-কিনা রহস্যময়ভাবে বিচরণ করে পুরো আকাশ জুরে, এমন ঘটনাটি ঘটে নরওয়ের আকাশে। আর এটি পরিচিত হেসড্যালেন লাইট (The Hessdalen lights) বা নামে। আগুন বা বিদ্যুৎ এর স্ফুলিঙ্গ এর মত আলো হঠাৎই আকাশে জলে উঠলে আপনার কেমন মনে হবে? পাশাপাশি যদি আরও লাল, হলুদ আলো আলো আকাশে ছোটাছুটি করে।
এমনি ভুতুরে কার্যকলাপ ঘটে নরওয়ের আকাশে কেবল রাতের বেলা নয়, দিনেও । তবে দিনের চেয়ে রাতের আকাশের এই ব্যাপারটা আরও রহস্যজনক। তবে বিজ্ঞানি এবং গবেষকেরা এখনও এই হেসড্যালেন লাইট এর আসল কারনটা খুঁজে পায় নি। তাই এটিও বিজ্ঞানের একটি অন্যতম অমিমাংসিত রহস্য।
—— —– —— ——
ডেভিলস সিঃ শয়তানের সাগর
আপনারা সবাই নিশ্চয়ই বারমুডা ট্রাই-অ্যাঙ্গেল এর নাম শুনেছেন ; ঠিক এমনি সমুদ্রের আরেকটি রহস্যময় স্থান এর নাম হল ডেভিলস ট্রাই-অ্যাঙ্গেল ;যাকে বলা হয় ডেভিলস সি বা শয়তানের সাগর। এটি জাপানের টকিও শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিনে মিয়াকে দ্বীপ ঘেরা প্রশান্ত মহাসাগর এর এক বিশেষ অঞ্চল। এটিকে সমুদ্রের একটি একটি অস্বাভাবিক অবস্থান বিবেচনা করা হয়। বারমুডা ট্রাই-অ্যাঙ্গেল এর মতই এখানে বহু জাহাজ,ছোট-বড় উড়োজাহাজ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে; একে প্যাসিফিক বারমুডা ট্রাই-অ্যাঙ্গেল’ও বলা হয়ে থাকে।
সবার বিশ্বাস এখানে প্যারা-নরমাল কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকার কারনেই এমন প্রকারের ঘটনা ঘটে। কেননা বিজ্ঞান আজও বারমুডা ট্রাই-অ্যাঙ্গেল এর মত এর কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। আর তাই ডেভিলস সি কে বলা যেতে পারে আরেকটি বারমুডা ট্রাই-অ্যাঙ্গেল।
ডেভিলস সি এর কিছু ছবি।
—— —– —— ——
লেক মিসিগান ট্রাই-অ্যাঙ্গেল
বারমুডা ট্রাই-অ্যাঙ্গেল এর মত নানা রহস্যময় বিষয় কেবল যে শুধু সমুদ্র পটেই থাকবে এর কোন মানে নেই। ঠিক এমনি জাহাজ এবং উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার রহস্য বহনকারী আরেকটি ট্রাই-অ্যাঙ্গেল রয়েছে আর এর নাম হচ্ছে ‘লেক মিসিগান ট্রাই-অ্যাঙ্গেল’ । বারমুডা ট্রাই-অ্যাঙ্গেল এবং ডেভিলস সি এর মত এই লেক মিসিগান ট্রাই-অ্যাঙ্গেল এরও রয়েছে অদ্ভুত খ্যাতি। এই লেক মিসিগান নিয়ে রহস্যের সূচনা ঘটে ১৮৯১ সালে।
টমাস হিউম নামে এক ব্যাবসায়ি তার সাথে ৭-৮ জন নাবিক নিয়ে কাঠ আনার উদ্দেশে এই লেক মিসিগানের ভেতর যাত্রা শুরু করে। তবে এক রাতেই এক তীব্র বায়ু প্রবাহের পর থেকে টমাস হিউম এবং তার জাহাজসহ নাবিক দল বলতে গেলে একদম গায়েব হয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে ব্যাপক অনুসন্ধানের পরেও আশ্চর্যজনক ভাবে সেই জাহাজের একটি কাঠের টুকরাও পাওয়া যায়নি ; টমাস হিউম এবং তার দলের কথা দূরে থাক! — এরকম আরো নানান রহস্যজনক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই এটাকেও একটা রহস্যজনক স্থান বলে ধরা যায়।
লেক মিনিগান এর কিছু ছবি।
—— —– —— ——
ডেভিল’স ক্যাটেলঃ শয়তানের ক্যাটেল
একটা গভির রহস্যজনক স্থান দিয়ে পোষ্টটি শেষ করতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের Judge C. R. Magney State Park এর অন্যতম একটি আকর্ষণ হল এই পার্কটির ভেতর অবস্থিত একটি রহস্যময় জলপ্রপাত; যাকে সবাই বলে “The Devil’s Kettle” (শয়তানের ক্যাটেল)। তবে আসল ব্যাপারটি হল এই জলপ্রপাত টির দুইটি ধারা রয়েছে, ডান দিকে একটি এবং অন্যটি বাম দিকে। এর বাম দিকের ধারাটি সরাসরি পার্ক এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত একটি নদীতে গিয়ে মিশেছে; তবে এর ডান দিকের ধারাটি পরেছে পাহারের পাথর ঘেরা এক রহস্যময় গর্তের ভেতর।
আর এই বিশাল জলের উৎস এই পাথরের ভেতর অজানা গর্তে প্রবেশ করে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে তা আজ পর্যন্ত কেউ আবিস্কার করতে পারেনি, কেউ আজ পর্যন্ত গবেষণা করেও জানতে পারেনি এই The Devil’s Kettle এর পানি আদৌ কোথায় গড়িয়ে যাচ্ছে এবং কোন উৎসে গিয়ে পরছে। গবেষকরা এই গর্তের ভেতর নানাভাবে এর গভীরতা এর শেষ কোথায় ইত্যাদি জানার জন্য পরীক্ষা চালিয়েছেন; তবে কোন প্রকৃত ফলাফল পাননি। আর এই কারনে এটি বিজ্ঞানের অন্যতম একটি অমিমাংসিত রহস্য।
ডেভিলস ক্যাটেল এর কিছু ছবি।
— — — — — — — — — — — — — — — — — — — — — — — — — — — —
কিছু ব্যাপার অমিমাংসিতই থেকে যায় এবং হয়ত এখনও বহু কারনে বিজ্ঞান সেসব এর রহস্য ভেদ করতে পারেনি। আমাদের এই মহাবিশ্বে রয়েছে নানান রহস্য, যা হয়ত বিজ্ঞান এখন খুঁজে বের করতে পারেনি। হয়ত বা পারবেও না! রহস্য নিয়েই গঠিত আমাদের এই মহাবিশ্ব; পৃথিবী।
আর্টিকেলটি ভাল লাগলে “Like” করবেন, আর আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং ট্রিকবিডি এর সাথেই থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
© Online, Google, Wikipedia, Techubs.