আজকের আর্টিকেল এ আমি লিনাক্স এবং উইন্ডোজ এর মাঝে কিছু পার্থক্য তুলে ধরবো এবং আমার লিনাক্স ব্যাবহার এর কিছু উপকারিতা এবং এ নিয়ে কিছু কথা বলবো।
আমি দীর্ঘদিন লিনাক্স ব্যবহার করে আসছি এবং লিনাক্সের কিছু সীমাবদ্ধতা সত্বেও আমি এর পারফর্ম্যান্সে সন্তুষ্ট । সাথে আছে এর শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা । লিনাক্সে কোনদিন আমি কোন ভাইরাস আক্রমনের শিকার হইনি । লিনাক্সের সাথে সাথে আমি উইন্ডোজ সেভেনও ব্যবহার করে আসছি।
উইন্ডোজ সেভেনে আমি উইন্ডোজ ফায়ারওয়াল এবং মাইক্রোসফট সিকিউরিটি এসেনশিয়ালস ব্যবহার করে থাকি । উইন্ডোজে আমি দুইবার ভাইরাস পেয়েছি
আমার অভিজ্ঞতা থেকে উইন্ডোজ এবং লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু পরামর্শ দিতে চাই ।
উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য:
— পাইরেটেড উইন্ডোজ যত নষ্টের গোড়া । এগুলোতে নিরাপত্তা শোচনীয় হয়ে থাকে । উইন্ডোজ ব্যবহার করলে জেনুইন উইন্ডোজ ব্যবহার করুন ।
— মাইক্রোসফটের সিকিউরিটি এসেনশিয়ালস শুধু মাত্র ভাইরাস আক্রমন হলে সেটিকে প্রতিহত করে । ভাইরাস চুপ চাপ বসে থাকলে তাকে কিছুই বলে না । এপ্লিকেশনটি লাইটওয়েট রাখার জন্য জন্য এরকমটি করা হয়েছে । সুতরাং যদি দেখেন ভাইরাস আছে কিন্তু সিকিউরিটি এসেনশিয়ালস সেটিকে ধরছে না তাহলে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই । তবে যদি আপনার মধ্যে সন্দেহপ্রবনতা কাজ করে তবে পরামর্শ থাকবে এভাস্ট এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার । (যারা ফোরামে, ব্লগে কিংবা ফেইসবুকের ওয়ালে ওয়ালে বলে বেড়ান উইন্ডোজের এন্টিভাইরাসের জন্য টাকা লাগে তাদের জন্য — এই দুটি এন্টিভাইরাসই ফ্রি এবং জনপ্রিয় )
— ফায়ারওয়াল ব্যবহার করুন । কন্ট্রোল প্যানেল থেকে উইন্ডোজ ফায়ারওয়াল এনাবল করে দিন । ফায়ারওয়াল নিশ্চিত করবে আপনার অজান্তে কোন এপ্লিকেশন ইন্টারনেট বা লোকাল নেটওয়ার্কে যেন এক্সেস না পায় ।
— ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার আপনার উইন্ডোজের অনেক কিছুই ওয়েব এপ্লিকেশন থেকে এক্সেস করতে দেয় । এটি একটা বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি এবং ভাইরাস ইনফেকশনের অন্যতম মাধ্যম । আপনার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার কে লেটেস্ট ভার্সনে (ভার্সন নাইন) এ আপডেট করুন । সম্ভব হলে অন্য কোন ব্রাউজার ব্যবহার করুন ।
— কোন সফটওয়্যার চালানোর আগে তার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করে নিন । অপরিচিত কোন সফটওয়্যার সম্পর্কে ভাল করে খোজ না নিয়ে চালাবেন না। গুগলে সার্চ করলেই যে কোন জনপ্রিয় সফটওয়্যার সম্পর্কে রিভিউ পাওয়া যাবে ।
লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য:
লিনাক্সের জন্য নিরাপত্তার দরকার আছে একথা শুনে অনেকেই হয়ত চোখ উল্টাবেন, কেউ কেউ আবার হেসে গড়াগড়ি খাবেন । কিন্তু বাস্তব সত্য হল লিনাক্সেও আক্রমন হতে পারে (এবং অহরহ হচ্ছে) । লিনাক্সের ম্যালওয়্যার গুলো এখনো সার্ভার টার্গেটেড কেন না ডেস্কটপে এখনো লিনাক্স তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি । কিন্তু আস্তে আস্তে লিনাক্সের জনপ্রিয়তার সাথে সাথে ডেস্কটপের জন্যও ম্যালওয়্যার আসতে শুরু করবে । তাই লিনাক্স ব্যবহারকারীদেরও সতর্ক হওয়া দরকার।
— লিনাক্সের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা এর অনলাইন রিপোজিটরি । এখানে আসা সফটওয়্যারগুলো পরীক্ষিত হয়, তাই এগুলোতে কোন ঝুকি নেই । যথাসম্ভব রিপোজিটরি থেকে এপ্লিকেশন ইন্সটল করুন ।
— আমরা অনেকেই থার্ড পার্টি রিপো থেকে সফটওয়্যার ইন্সটল করি । এই রিপো গুলো সম্পর্কে খোজ নিয়ে নেওয়া ভাল ।
— লিনাক্সে রুট পার্মিশন চাওয়া খুব সহজ, কমান্ডের আগে sudo বা gksu লাগিয়ে দিলেই হল । তাই রিপো থেকে ইন্সটল করেননি এমন সফটওয়্যার কে রুট এক্সেস দেওয়ার আগে আরেকবার ভাবুন ।
লিনাক্সের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারনে চিন্তা কম, একটু সচেতন হলেই চলে । তবে উইন্ডোজের নিরাপত্তাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে । উইন্ডোজ সেভেন কিন্তু উইন্ডোজ এক্সপির চাইতে অনেক বেশী নিরাপদ । সর্বোপরি নিরাপত্তার জন্য দরকার ব্যবহারকারীর সচেতনতা ।
এখন কথা হচ্চে আপনি লিনাক্স কেন ব্যবহার করবেন?
কেন ব্যবহার করবেন সেটা বুঝার জন্য একবার কোন একটা লিনাক্স ডিস্ট্রো ইন্সটল করে ফেলেন, তাতে কিছু ডেভেলপমেন্ট এর কাজ করেন। এরপর একই কাজগুলো উইন্ডোজে করেন। পার্থক্যটা হাতে নাতে পাবেন।
লিনাক্স এর কিছু সুবিধা ও রয়েছে
- লিনাক্স মূলত ইউনিক্স বেইজড সিস্টেম। আসল ইউনিক্স না, তবে ইউনিক্সের মত। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এর কাজ করতে চাইলে ইউনিক্স বেইজড সিস্টেম আপনাকে অবশ্যই কিছু সুবিধা দিবে যেগুলো উইন্ডোজে পেতে আপনাকে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হবে। বিস্তারিত জানতে একটু গুগল করুন।
- পৃথিবীর বেশিরভাগ খারাপ কম্পিউটার ভাইরাস সবই উইন্ডোজ এর জন্য লেখা, এজন্যই উইন্ডোজে ভাইরাস ধরে। লিনাক্সে উইন্ডোজের কোন প্রোগ্রাম কাজ করেনা, কাজেই ভাইরাসও কাজ করেনা। কাজেই, আপনি এটা মনের সুখে ব্যবহার করতে পারবেন, ভাইরাস লাগার কোন চিন্তা নাই, অ্যান্টিভাইরাসের তো প্রশ্নই নেই
- লিনাক্স খুবই লাইটওয়েট সিস্টেম। এটা আপনি যদি ১৫ বছর আগের পেন্টিয়াম ফোর প্রসেসর ও ৫১২ মেগাবাইট র্য্যাম কিংবা তার চেয়েও লো কনফিগারেশনের কম্পিউটারের কম্পিউটারে সেটআপ করেন, এটা সেখানেও ভালোই চলবে।
সহজ ভাষায় বললে :
লিনাক্স ফ্রি, সিকিউরড, ভাইসার নাই. এই গুলা বেশির ভাগই মার্কেটিং এর কথাবার্তা। আসলে আপনার যদি আগ্রহ থাকে তাহলে আপনি একটা সিস্টেম (লিনাক্স) কে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারবেন , আপনি ওই সিস্টেম এর প্রতিটা পার্ট নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন , সবচেয়ে বড় কথা একটা অপারেটিং সিস্টেম কিভাবে কাজ করে সেইটা বুঝতে পারবেন। আর এইটা সম্ভব হইসে ওপেনসোর্স এর কারণে।
শেষ এ বলতে চাই
আমরা যারা উইন্ডোজ চালাই একচুয়ালি চুরি করে এটা চালায় । একটা উইন্ডোজের দাম প্রায় ৭-৮হাজার টাকা (ভ্যাট ছাড়া)। উইন্ডোজ ইউজ করার সময় নিজেকে চোর চোর মনে হয়। লিনাক্স সম্পুর্ণ ফ্রী আবার ওপেন সোর্স। মানে যদি কেও চাই সে আবার লিনাক্স এ কন্ট্রিবিউটও করতে পারবে :)। আর উইন্ডোজে যা যা করা যায় তা তো লিনাক্সে করা যায়ই বাড়তি সুবিধা লিনাক্সে ভাইরাস নাই। আপনি চাইলে লিনাক্স মিন্ট অথবা উবুন্টু দিয়ে শুরু করতে পারেন 🙂
আজকের আর্টিকেল এখানেই শেষ করলাম ।কমেন্ট সেকসন এ জানাবেন কুন অপারেটিং সিস্টেম আপনি বেশি পছন্দ করেন।