একবার আইনস্টাইন কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি হতে কেমন লাগে?’
উনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এর উত্তর আমার জানা নেই। আপনি নিকোলা টেসলা কে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন!’
নিকোলা টেসলা
আজ আপনাদের আমি ইতিহাসের পাতায় ধুসরভাবে বিরাজমান একজন জ্ঞানীর কথার বলব।
আমার প্রিয় বিজ্ঞানী ! নিকোলা টেসলা !
কে এই নিকোলা টেসলা?
যারা বিজ্ঞানকে প্রকৃত ভালোবাসেন, নিকোলা টেসলা তাদের অনেকের কাছে মোটামুটি সুপারহিরো। কারো কারো কাছে তিনি ব্যাটম্যান, বিজ্ঞানের জগতের ‘দ্যা ডার্ক নাইট’।
পৃথিবীর ইতিহাসে সব থেকে রহস্যময় ও বিস্ময়কর বিজ্ঞানী ছিলেন নিকোলা টেসলা যিনি সত্যি বলতে পুরো আধুনিক পৃথিবীরটা আমাদের দিয়ে গেছেন।
আজ পৃথিবীর হাতের মুঠোয় চলে আসা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, বেতার ব্যবস্থার বিস্ময়কর সব প্রযুক্তি… এসব কিছুই হয়তো সম্ভব হতোনা তাঁকে ছাড়া ।
≫ আমাদের পরিচিত এবং বাসাবাড়িতে বহুল ব্যবহৃত ফ্লুরোসেন্ট বাতির আবিষ্কারক কে? আপনি নিশ্চয়ই ভাববেন ‘টমাস আলভা এডিসন’ কিংবা ‘পিটার কুপার হিউইট (Peter Cooper Hewitt)’।
≫ আধুনিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবিষ্কারকের কথা জিজ্ঞেস করলেও আমাদের উত্তর হয় জর্জ ওয়েস্টিংহাউজ (‘লেস্টার অ্যালান পেল্টন’ জলবিদ্যুৎ শক্তি সম্পর্কিত ধারণা দেন। কিন্তু বর্তমানে আমরা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে যেভাবে চিনি সেটার আবিষ্কারক হিসেবে ধরা হয় ‘জর্জ ওয়েস্টিংহাউজকে’)।
≫ একইভাবে আমরা এখন যে এক্স-রে প্রযুক্তি ব্যবহার করি এর নেপথ্য নায়ক, রেডিওর আবিষ্কারক বলা হয় যথাক্রমে উইলহেলম রন্টজেন ও গুইয়েলমো মার্কনিকে (Guglielmo Marconi) ।
কিন্তু সবকিছুর জবাব ‘নিকোলা টেসলা’!
আমার এই কথা শোনার পর আপনার ধোঁয়াশা আর কৌতুহল দুটোই মেটানোর চেষ্টা করব আমি ? ।
শুধু উপরের এই আবিষ্কারগুলোতেই নয়; এই যে ইন্টারনেটে বসে আপনার জীবনের মূল্যবান সময়গুলো ফেইসবুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করছেন, এর পেছনেও আছে টেসলার অবদান। আসলে আপনি যে আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি চালাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন সেটা টেসলারই অবদান! আপনার রুমে যে বাতি জ্বলছে সেটা টেসলার অবদান। এফ এম রেডিওতে যে আর.জে. দের বকবক শুনেন সেটাও টেসলারই অবদান!
যথেষ্ট অবাক হয়েছেন! চলুন জেনে আসি টেসলার…
জীবনকাহিনীঃ
Nikola Tesla (নিকোলা টেসলা)-র জন্মই ছিল রহস্যময়। প্রচণ্ড প্রতিকূল আবহাওয়া ও বজ্রপাতের রাতে ১৮৫৬ সালে ৯ জুলাই এবং ১০ জুলাইয়ের মাঝে রহস্যময়ভাবে ঠিক রাত ১২:০০ টায় তাঁর জন্ম হয় ক্রয়োশিয়াতে। তাই তাঁর জন্ম তারিখ ২ টি বলা হয়ে থাকে।
তবে Wikipedia তে কনফিউশন এড়াতে ৯ ও ১০ জুলাই-ই এর পরিবর্তে ১০ জুলাই লেখা হয়েছে। খারাপ আর ভয়ঙ্কর আবহাওয়াতে জন্ম বলে মানুষ তাঁকে “Child of Darkness” বলেছিল কিন্তু তাঁর মা বলেছিলেন সে একদিন পৃথিবীকে আলোকিত করবে, তাই তাঁকে তাঁর মা “Child of Light” বলতেন। বাস্তবেও কিন্তু তাই হয়েছিল। তাঁর আবিষ্কৃত AC বিদ্যুৎ পুরো পৃথিবীকেই আলোকিত করেছে, এবং আমাদের আধুনিক একটা পৃথিবী দিয়েছে।
Nikola Tesla-র পিতা তাঁকে ধর্মযাজক বানাতে চেয়েছিলেন এবং পাঠিয়েও দিয়েছিলেন ধর্মযাজকদের কাছে। কিছুদিন পর কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পথ থেকে বেঁচে আসেন এবং পারিবারিক ভাবে তাকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর পরিকল্পনা করা হয়। স্কুলে / কলেজে সে তাঁর প্রতিভার বিস্ময় দেখাতে শুরু করলেন। বড় বড় ত্রিকোনামিতিক ক্যালকুলাস তিনি খাতা কলম ছাড়াই ব্রেইনে চিন্তা করেই উত্তর বলে দিতেন। তিনি এতোটাই মেধাবি ছিলেন যে কলেজের শিক্ষকরা তার বিস্ময়কর মেধা দেখে তার বাবাকে চিঠি দিত।
Engineering পড়ার সময়ে এক শিক্ষকের সাথে তাঁর কোন একটা বিষয় নিয়ে দ্বিমত হয়। পরে তিনি প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা ল্যাবে কাজ করে প্রমাণ করেন যে তাঁর ধারনাই সঠিক। এই ঘটনা কলেজে ছড়িয়ে পড়লে তিনি সকলের কাছেই আরও বেশি বিস্ময়কর ছাত্র হয়ে ওঠেন। তখনও তাঁর বিস্ময়কর আবিস্কার শুরু হয়নি।
–//
১৮৮০ সালে টেসলা পকেটে করে মাত্র চার পেনি (ডলার নয়, পেনি!), চারটা কাপড়, একটা কাগজে লেখা কয়েক গুচ্ছ কবিতা আর একটা বিমান বানানোর ব্লু-প্রিন্ট নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান।
আর তাঁর সাথে ছিল Thomas Edison (টমাস আলভা এডিসন!)-কে লেখা একজনের একটা চিঠি যেটা নিকোলা টেসলাকে বলা হয়েছিল Thomas Edison কে পৌঁছে দিতে। Thomas Edison-র কাছে যখন চিঠি পৌঁছে দেন টেসলা, চিঠি খুলে তিনি দেখেন সেই চিঠিটাতে লেখা : “আমি পৃথিবীতে দুইজন জ্ঞানী লোক চিনি, একটা তুমি (Edison) এবং অপরটি তোমার সামনে দাঁড়ানো Nikola Tesla!”
Edison তাঁর কোম্পানিতে Nikola Tesla কে নিয়োগ করেন এবং ডিসি জেনারেটর পুনরায় ডিজাইন করার জন্য তাকে $50000 দেবেন বলে ঘোষণা দেন। Nikola Tesla প্রচণ্ড পরিশ্রম করে সফল হন। কিন্তু Edison — Nikola Tesla কে কোন টাকাই দেননি এবং বলেন “It’s a Joke”!! এর মাঝেই Nikola Tesla আবিস্কার করেন সব থেকে বিস্ময়কর আবিষ্কার যা সারা পৃথিবীকে বদলে দিয়েছিল। আর সেটি হল AC বিদ্যুৎ বা Alternating Current.
Edison এর DC বিদ্যুৎ দিয়ে মানুষ শুধু আলো পাবার চিন্তা করত। কিন্তু Nikola Tesla এর আবিষ্কৃত AC দিয়ে সব কিছু করা সম্ভব এটা মানুষ বুঝতে পারে। Nikola Tesla এডিসনকে DC এর পরিবর্তে AC ব্যবহার করতে বলেন। এতে এডিসন ক্ষিপ্ত হন এবং টেসলা তাঁর কোম্পানি থেকে আলাদা হয়ে Tesla Electric Company নামে নতুন একটি Company প্রতিষ্ঠা করেন। এসি বিদ্যুৎ খুব শীঘ্রই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । কারণ এসি ছিল অত্যন্ত পাওয়ারফুল এবং কম খরচে পাওয়া যেত এবং শিল্প কারখানার কাজেও একমাত্র ব্যবহার উপযোগী।
এদিকে Edison এর ডিসি বিদ্যুতের বাবসা প্রায় শেষ। এডিসন নিকোলা টেসলাকে থামাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে কুকুর, বিড়াল চুরি করে রাস্তায় রাস্তায় ক্যাম্প বানিয়ে সেগুলো কে AC বিদ্যুতে শক দিয়ে জন সম্মুখে হত্যা করে মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করতে লাগলেন। একজন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিকেও AC দিয়ে হত্যা করার জন্য প্রশাসনকে বোঝান।
এই ঘটনা গুলো ঘটিয়ে মানুষের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে এডিসন নিকোলা টেসলার কোম্পানিকে চরমভাবে আর্থিক বিপর্যয়ে ফেলে এবং একসময় নিকোলা টেসলা এসি বিদ্যুতের প্যাটেন্ট বিক্রি করে দেন। প্যাটেন্ট বিক্রির $60000 দিয়ে তিনি নতুন নতুন আবিস্কারের পেছনে কাজে লাগান।
কিন্তু মানুষ পরবর্তীতে ঠিকই এসি বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে এবং পুরো শহরে ACবিদ্যুতের জন্য একটি কোম্পানি এডিসনের বিদ্যুৎ কোম্পানিকে বরাদ্দ করে। এটি ছিল এডিসনের জন্য চরম লজ্জাজনক। তিনি করবেন না বলে জানিয়ে দেন। সেই জন্য এডিসনের কোম্পানির অন্যান্য শেয়ার হোল্ডাররা এডিসনের কোম্পানি থেকে এডিসনকেই বের করে দেয়।
মানব কল্যাণে Nikola Tesla এর যুগান্তরকারী আবিষ্কার গুলোঃ
300 এর বেশি আবিস্কারের প্যাটেন্ট ছিল এই মহান বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার। এছাড়াও অনেক আবিস্কারের প্যাটেন্টই গ্রহন করেননি। আর অনেক আবিষ্কারের আইডিয়া চুরি করে অনান্য বিজ্ঞানীরা নিজের বলে চালিয়েছিল। নিকোলা টেসলা একমাত্র বিজ্ঞানী ছিলেন যিনি যা চিন্তা করতে তাই-ই তৈরি করে দেখাতেন। আবিষ্কারই ছিল তাঁর নেশা!
1. AC ELECTRICITY:
এই সম্পর্কে আগেই বিস্তারিত বলা হয়েছে। এসি বিদ্যুৎ আবিষ্কার না হলে আমরা অন্ধকার পৃথিবীতেই থাকতাম। আর পৃথিবীতে এত শিল্প বিপ্লব হত না।
2. RADIO:
মারকনির রেডিও আবিস্কারের কয়েক বছর আগেই নিকোলা টেসলা রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন এবং রেডিও তরঙ্গও তাঁর গবেষণার কাজেও ব্যবহার করেছিলেন। 1943 সালে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট সত্যটা জানার পরে মারকনির রেডিও প্যাটেন্ট বাতিল ঘোষণা করে নিকলা টেসলাকে রেডিও আবিষ্কারক হিসাবে ঘোষণা করে। কিন্তু একবছর পর প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় মারকনি প্যাটেন্টটি নিজের নামে বহাল রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
3. REMOTE, ROBOT AND GUIDED MISSILE SYSTEM:
নিকোলা টেসলা রিমোট প্রযুক্তির জনক ছিলেন। তিনি একটি খেলনা নৌকাকে দুর নিয়ন্ত্রিত ভাবে চালাতে গিয়ে একসাথে ৩ টি আবিষ্কার করে ফেলেন। ১. পৃথিবীর সর্বপ্রথম রিমোট , ২.পৃথিবীর সর্বপ্রথম রোবট , ৩.পৃথিবীর সর্বপ্রথম গাইডেড মিসাইল সিস্টেম।
4. WIRELESS ELECTRICITY:
নিকোলা টেসলা এমন একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন, কোনো তার ছাড়াই বিদ্যুৎ এক স্থান থেকে অন্যস্থানে পাঠানো যেত। তিনি তখনকার সময়ে একজন নামকরা বাবসায়ীর থেকে ফান্ড নিয়ে তৈরি করে 187 ফুট উঁচু একটি Tesla Tower যেখান থেকে তার ছাড়াই বিদ্যুৎ পাঠানো যাবে এবং তিনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে সারা পৃথিবীকে বিদ্যুৎ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
তিনি পুরো পৃথিবীকেই একটা conductor হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন এবং সার্থকও হয়েছিলেন। কিন্তু প্রজেক্টটির কাজ শেষ হবার আগেই বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ করেই টাকার জোগান দেয়া বন্ধ করে দেয়। কারণ বিদ্যুৎ কোম্পানি গুলো ভয়ে ছিল যদি সারা পৃথিবীতে ফ্রিতে বিদ্যুৎ দেয়া হয় অনেক কোম্পানিই দেউলিয়া হয়ে যাবে। আবিষ্কারটি হারিয়ে গেছে। না হলে আজ আমরা তার ছাড়াই ফ্রিতে বিদ্যুৎ পেতাম।
5. INDUCTION MOTOR:
শিল্প ক্ষেত্রে Induction Motor এর ভূমিকা কেমন সেটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই ।
6. TESLA COIL:
বর্তমান যুগের Wifi technology মূলত টেসলার এসব আবিষ্কার থেকেই বিবর্তিত হয়ে এসেছে।
তাঁর আবিষ্কার সম্পর্কে লিখে শেষ করতে পারব না। আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার যেমন
7. Violet Ray,
8. TeleForce,
9. Neon Lamp,
10. Wireless Telegraphy,
11. Three phase Electric power,
12.Tesla Turbine,
13.Tesla valve,
14.Vacume Variable Capacitor,
15. Shadowgraph,
16. Free Energy ***,
17. Tesla Experimental,
18. Tesla’s Columbus,
19. Resonant inductive coupling,
20 .Polyphase system,
21. Rotating magnetic field,
22. Radio control,
23. Plasma globe,
24. 30Violet rayp,
25. Carbon button lamp,
26. Telegeodynamics,
27.Teleoperation,
28. Torpedo,
29. Vacuum variable capacitor,
30. VTOL
এছাড়াও আরও অনেক অনেক আবিষ্কার যা এই আর্টিকেলটিতে বলে শেষ করা যাবে না।
কিছু জিনিসের আবিষ্কার মূলত Nikola Tesla-ই করেছিলেন। কিন্তু আবিস্কারক হিসাবে তাঁর ক্রেডিট নেই এবং কিছু আবিষ্কার ন্যাক্কারজনক ভাবে কিছু বিজ্ঞানী চুরি করে নিজের নামে করেছিলেন।
কথিত আছে যে, এডিসন বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিস্কারের অনেক আগেই নাকি নিকোলা টেসলা ল্যাবে বাল্ব জালিয়ে কাজ করতেন!!!
NIKOLA TESLA এর কয়েকটি অতি বিস্ময়কর এবং ভয়ঙ্কর আবিষ্কারঃ
Nikola Tesla এর কিছু আবিষ্কার ছিল যেগুলো পৃথিবী ধ্বংসের ক্ষমতা রাখতে পারতো। কিন্তু মানব কল্যাণের স্বার্থে তিনি নিজের হাতেই তৈরি করেই তা নষ্ট করেছিলেন। আর কিছু আবিষ্কার তিনি অর্থাভাবে করতে পারেন নি।
1. EARTHQUAKE MACHINE:
1893 সালে নিকোলা টেসলা এমন একটি মেশিন তৈরি করেন যা দিয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি করে ফেলেছিলেন। এটি মূলত ছিল একটি Oscillator যার নাম দিয়েছিলেন “Tesla Oscillator” এবং তিনি অনুভব করেছিলেন তাঁর যন্ত্রটিকে যদি খুব বড় পরিসরে তৈরি করা হয় পুরো পৃথিবীতে ভূমিকম্প সৃষ্টি করা যেতে পারে। মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তিনি নিজের হাতে হাতুরি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছিলেন এবং আবিষ্কারটিও হারিয়ে যায়।
2. ARTIFICIAL TIDAL WAVE:
সমুদ্রে বিশাল কৃত্রিম ঢেউ তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন যা সুনামি তৈরি করতে সক্ষম ছিল এবং যা দিয়ে শত্রু পক্ষের জাহাজকে সেই ঢেউতে ডুবিয়ে দিতে পারতো।
3. THOUGHT CAMERA:
নিকোলা টেসলা সেই সময়েই এমন একটি ক্যামেরা তৈরির কথা বলেছিলেন যা মানুষের চিন্তা শক্তি থেকে ডাটাতে কনভার্ট করে সেই গুলোকে দেখা যাবে একটি স্ক্রিনে, এমন একটি প্রজেক্ট। কিন্তু তিনি আর্থিক কারণেপ্রজেক্ট সফল করতে পারেননি। সম্ভব হলে মানুষের কোনো কিছুই আর গোপন থাকতো না।
4. ELECTRIC-POWERED SUPERSONIC AIRSHIP:
তিনি এমন একটি Airship এর কথা বলেন যার গতি হবে এতই বেশি মাত্র ৩ ঘণ্টায় New York City এ যেতে London পারবে কিন্তু এই আবিষ্কারটির সমস্ত মডেল, ডকুমেন্ট মৃত্যুর পরে হারিয়ে যায়।
5. PHILADELPHIA EXPERIMENT / PROJECT RAINBOW / TELEPORTATION:
এটি ছিল World War 2 এর সময়ের একটি প্রজেক্ট। আমেরিকার নৌবাহিনী জাহাজ অদৃশ্য করে শত্রু বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই প্রজেক্ট এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো নিকোলা টেসলাকে। সেই প্রজেক্ট এ নিকোলা টেসলার অধীনে আলবার্ট আইনস্টাইনকেও টিম মেম্বার করা হয়। নিকোলা টেসলা ছোট একটি Boat এর ক্ষেত্রে সার্থক হয়েছিলেন। নিকোলা পুরোপুরি অদৃশ্য করে ফেলেন সেটিকে। কিন্তু এই পরীক্ষাটি করে সফল হওয়ার পর কিছু ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর নিকোলা টেসলা প্রজেক্ট থেকে অব্যাহতি নেন এনং তিনি নিষেধ করেছিলেন আইনস্টাইন সহ বাকি যে মেম্বরদেরকে যাতে এই বড় জাহাজ এর ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটি না করা হয়। কিন্তু তার পরেও পরীক্ষাটি করা হয়েছিলো জাহাজে কয়েকজন ক্রুসহ। পরে জাহাজটি অদৃশ্য হয়েছিল ঠিকই কিন্তু জাহাজে অবস্থিত ক্রুদের বিগলিত লাশ, কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্যহীন, এবং কাউকে জাহাজের দেয়ালে অর্ধেক শরীর ঢুকে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। নিকোলা টেসলা কিন্তু আগে থেকেই এর ভয়াবহতা কল্পনা করেছিলেন।
6. ANTI GRAVITY FLYING MATCHING:
১৯১১ সালে New York এর একটি ম্যাগাজিনকে বলেন নিকোলা টেসলা আরও একটি Flying Matching নিয়ে কাজ করছিলেন যেটি দেখতে (UFO) এর মত হবে এবং যেকোন দিকে যেকোন গতিতে ছুটতে পারবে। এটি আকাশে ওড়ার সময় গ্রাভিটি শুন্য হয়ে পড়বে এবং বাতাসে স্থির অবস্থায় রাখা যাবে। কিন্তু এই মেশিনটিতে না থাকবে কোন পাখা না থাকবে কোন উইংস।
7. TIME MACHINE:
নিকোলা টেসলা একমাত্র বিজ্ঞানী যিনি Time Machine নিয়ে কাজ করেছিলেন সবার প্রথম। অনেকেই মনে করেন তিনি টাইম মেশিন তৈরি করে ফেলেছিলেন।
8. DEATH RAY / DEATH BEAM:
Nikola Tesla এর যে কয়টি ভয়াবহ আবিষ্কারের কথা বলে ছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল Death Ray . এটি এমন একটি যন্ত্র যা ২৫০ মাইল দূর থেকে ১০ হাজার যুদ্ধ বিমানকে এক সাথে ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা রাখতে পারতো এবং যে কোন যুদ্ধকে শেষ করে দিতে পারতো। অনেকে বলেন তিনি এই যন্ত্রটি তৈরিও করে ফেলেছিলেন কিন্তু এটি দিয়ে মানুষ পৃথিবী ধ্বংস করে দেবে চিন্তা করে এই যন্ত্রটিকেও তিনি নষ্ট করে ফেলেন। তাঁর ল্যাবে একাধিকবার আগুন লেগে অনেক আবিষ্কারের ডকুমেন্টই পুরে গেছিলো ।
এরকম বিস্ময়কর আবিষ্কারের জন্য অনেক বিজ্ঞানীই মনে করতেন Nikola Tesla এর সাথে এলিয়েনদের যোগাযোগ রয়েছে এবং তাঁদের সাথে কাজও করেন। সত্যি বলতে তাঁর সম্পর্কে জানার পর আমার নিজের কাছেও তাঁকে এলিয়েন মনে হয়েছিলো। নিকোলা টেসলা পৃথিবী ধ্বংসের যন্ত্র আবিষ্কারের কথা শুনে আমেরিকা তাঁর সব নথি জব্দ করেছিল। কিন্তু নিকোলা কাজ করেছিলেন মানুষের কল্যাণে ।
মৃত্যুঃ
7 জানুয়ারি 1943 সালে পৃথিবীর এই মহান বিজ্ঞানী করোনারি থ্রম্বসিস এ মারা যান। তবে ধারণা করা হয় তিনি অবসেসিভ কম্পলসিভ ডিসঅর্ডার নামে পৃথিবীর এক বিরল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এটা একটা মানসিক রোগ। যে রোগে আক্রান্ত হলে মনে হয় “সে নিজে যা করছে সেটা সঠিক ভাবে করতে পারছে না”
তিনি সম্পূর্ণ নিঃস্ব অবস্থায় নিউইয়র্কের এক হোটেল রুমে মারা যান। কেউ কেউ বলেন, জার্মান নাজি গুপ্তচরেরা তাকে খুন করেছিলো। অনেকে দাবি করেন যে তারা গুপ্তচরদের নামও নাকি জানেন – অটো স্করজেনি (হিটলারের সরাসরি বডি গার্ড) এবং রাইনহার্ড। মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন, টেসলার যাবতীয় কাজকর্মের নকশা সব চলে যায় এফবিআইয়ের কাছে।
টেসলা চাইছিলেন মানবসভ্যতার উন্নয়নের জন্যে বিদ্যুৎশক্তিকে বিনামূল্যে ছেড়ে দেয়া হোক। তিনি অনেক প্রভাবশালীদের নিয়ে এ ব্যাপারে আলোচনাও করেছিলেন। কিন্তু কেউই তাঁর এই মতামত গ্রহণ করেননি। সবাই চেয়েছিলেন মানুষ বিদ্যুৎ তাদের থেকে কিনে নিয়ে ব্যবহার করুক। পরে টেসলা একা একাই গবেষণার মাধ্যমে এই লড়াই চালিয়ে যান।
এতে কিছু সফলতাও লাভ করেন।
Iframe and codes are not working in Trickbd Mobile mode. Please visit TrickBD Desktop mode for best Experience
তথ্য-প্রমাণ না থাকলেও অনেকে সন্দেহ করেন এই ব্যাপারটা নিয়ে গবেষণা করার কারণেই তিনি পুঁজিবাদীদের রোষানলে পড়ে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর পরপরই তাঁর হোটেল রুমে তৎকালীন এফবিআই চীফ এডগার জে হুভার এর নেতৃত্বে কিছু এফবিআই সদস্য হামলা চালায়। তারা টেসলার সব গবেষণাপত্র লুটপাট করে কেটে পড়ে।
আসলে শুধু মৃত্যুর পরে নয়, মৃত্যুর আগেও এই সমস্যাটায় তাঁকে পড়তে হয়েছিলো। তিনি যেটাই আবিষ্কার করেন সেটাই পরে চুরি হয়ে যায়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তাঁর এমন অনেক আবিষ্কার বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে গিয়েছিলো। তাঁর প্রযুক্তি দিয়ে অনেক দেশ সুপার পাওয়ারার হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টেসলা যেই নিঃস্ব-ভবঘুরে-হতচ্ছাড়া ছিলেন, তাই রয়ে গেলেন। মাঝে অনেক টাকা কামালেও সেগুলোকে নতুন গবেষণায় উড়িয়ে দিয়েছিলেন টেসলা।
তাঁর জন্মের মতই মৃত্যুটাও অদ্ভুত ছিল । মারা যাবার দিন তার ঘরের দরজায় লিখা ছিল “Don’t Disturb Me” ।
অনেকেই মনে করেন তাঁর আবিষ্কারের ডকুমেন্ট হারিয়ে যায়নি। আমেরিকা এখনও নতুন নতুন আবিষ্কার করেই চলছে নিকোলা টেসলা ওই সব ডকুমেন্টের ওপর ভিত্তি করে। ধারনা করা হয় এরিয়া-51 এ তাঁর রেখে যাওয়া ডকুমেন্ট এর ওপর এখন ও গবেষণা করা হয়।
অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সাথে নিকোলা টেসলার তুলনা চলে না শুধু এই টুকুই বলা যায় তাঁরা শুধু থিওরি আকারে তাঁদের আবিষ্কার গুলোকে প্রকাশ করতেন সেখানে নিকোলা টেসলা বাস্তবে তৈরি করে দেখাতেন এবং তাঁর প্রত্যেকটা আবিষ্কারই ছিল অন্যান্য বিজ্ঞানী থেকে অনেক বিস্ময়কর। নিকোলা টেসলা কে বলা হয় “The Wizard of Electricity” কিন্তু তিনি ছিলেন আসলে “The King of all Scientists”, এবং তাঁর আবিষ্কারই পৃথিবীটাকে আধুনিক করেছে।
নিকোলা টেসলা তার জীবনের অর্জিত সমস্ত সম্পদ আবিষ্কারের পেছনে ব্যয় করেছিলেন। পৃথিবী আজ নিকোলা টেসলাকে প্রায় ভুলে গেছে। কিন্তু পৃথিবীর মানুষগুলো খুব ভাগ্যবান যে এমন একজন জ্ঞানী পৃথিবীতে এসে সব কিছু আলোকিত করে দিয়েছিলেন ।
হ্যাঁ তিনিই নিকোলা টেসলা, যাকে সম্মান করি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ Engineer হিসাবে এবং আমার চোখে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ।
—–» গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন !! «—–
–› এমন মেধাবী একজন বিজ্ঞানী সম্পর্কে বিশ্ববাসী এত কম জানেন কেন?
–› কেন স্কুলের বইয়ে এডিসন, মার্কনি কিংবা আইনস্টাইনের নামের পাশাপাশি তাঁর নাম জানা যায় না?
:: এর কারণ, টেসলা সম্পর্কে আমাদের কখনও জানতে দেয়া হয়নি!
তাঁর আবিষ্কারগুলো ছিলো বিভিন্ন দেশের সরকারের বেশ আগ্রহের বিষয়। তাঁর সমসাময়িক সকল বিজ্ঞানীরা তার অনন্য মেধাকে হিংসা ও ঘৃণা করতেন। কিন্তু তার কাছ থেকে আইডিয়া চুরি করতে কারো তেমন খারাপ বোধ হতো না। কিন্তু টেসলা প্রশংসা দূরে থাক, বেঁচে থাকার জন্য ভালোমতো খাবারের পয়সাই জোটাতে পারেননি।
তিনি এমনকি আক্ষেপ করে বলেছিলেন- কিছু টাকাপয়সার মালিক হলে তিনি আরও নতুন নতুন কিছু আইডিয়া নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারতেন। এবার কল্পনা করুন বিদ্যুৎ, রেডিও, টিভি, ওয়ারলেস ফোন, রাডার, এক্স-রে মেশিন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ১৩০ ফুট লম্বা বৈদ্যুতিক রশ্মির বাইরেও আর কি আবিষ্কার তিনি আমাদের উপহার দিতে পারতেন?
টেসলা যে আসলে ১৫০ বছর আগের মানুষ নন,বরং যেন আমাদের এ যুগেরই সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর কিছু কথায়। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘এমন একসময় আসবে যখন সংবাদ, প্রেসিডেন্টের ভাষণ, কিংবা মাঠের খেলা তারবিহীন পদ্ধতিতে ঘরে বসেই দেখা যাবে।’
হ্যাঁ, টেসলার ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছে।
বিজ্ঞানী টেসলার কয়েকটি উক্তি –›
আপনি যদি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গোপনীয়তা সম্পর্কে জানতে চান তবে এনার্জি, ফ্রিকোয়েন্সি ও ভাইব্রেশনের কথা ভাবুন।
তাঁরা আমার আবিষ্কার চুরি করে নিয়েছে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি বুঝি তাদের নিজস্ব কোনো আবিষ্কার নেই।
এখনকার (তখনকার) বিজ্ঞানীরা গভীরভাবে চিন্তা করেন, তবে তারা পরিষ্কার নন। যিনি পরিষ্কারভাবে চিন্তা করেন, তিনি বিবেকবান।
সবকিছুর চেয়ে আমি বইকেই বেশি পছন্দ করি।
আপনার ঘৃণা যদি বিদ্যুতে পরিণত হয়, তবে এর আলো সারা বিশ্বকে আলোকিত করবে।
একা থাকাই হচ্ছে আবিষ্কারের প্রথম গোপনীয়তা, একা থাকুন আপনার মধ্যে একের পর এক ধারণার জন্ম হবে।
বড় বড় আবিষ্কারের পেছনে কোনো বিবাহিত মানুষের অবদান রয়েছে, এটা আমি ভাবতে পারি না।
যদি টেসলাকে বিন্দুমাত্র অনুভব করতে চান, তাহলে আপনার রুমে যান।
– লাইট, ফ্যান সব বন্ধ করে দিন।
– মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিন।
– ইন্টারনেট থেকে লগআউট করে কম্পিউটার শাট ডাউন করে দিন।
– রুমে চলতে থাকা টিভি, রেডিও সব বন্ধ করে দিন।
এবার খাটে বা চেয়ারে ৫ টা মিনিট চুপ করে চোখ বন্ধ করে বসে থাকুন আর ভাবুন কেমন অনুভব করছেন?
নিকোলা টেসলা ছাড়া আমাদের জীবনটাও ঠিক এমনই হতো! নিকোলা টেসলা তাই আমাদের কাছে বিজ্ঞানের জগতের ‘দ্যা ডার্ক নাইট’।
সবাই ভালো থাকবেন, সুন্থ থাকবেন আর ট্রিকবিডি এর সাথেই থাকবেন। ? আল্লাহ্ হাফেজ।
অনেকদিন আগে ‘Chernobyl — TV mini series’ নিয়ে একটা বড় আর্টিকেল লিখেছিলাম। অর্ধের হাওয়া সত্তেও, সময়ের অভাবে পুরো লিখে পোষ্ট করতে পারি নাই। Wait for it… ?