Site icon Trickbd.com

টিন সার্টিফিকেট কি এবং কিভাবে তৈরী করবো? [Don’t Miss]

টিন সার্টিফিকেট কি এবং কিভাবে তৈরী করবো?
E-TIN Registration

আসসালামু-অলাইকুম, বাংলাদেশের নিয়মিত করদাতা সহ প্রায় সকলের কাছেই টিন বা টিআইএন (TIN) শব্দটি বহুল পরিচিত। কর প্রদান ছাড়াও বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে বিভিন্ন কারনে আমাদের টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হয়। বর্তমানে অনেকেই টিন সার্টিফিকেট করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভূগছে তাই আজ আপনাদের সাথে টিন বা টিআইএন ( TIN) সার্টিফিকেট তৈরী করার পদ্ধতি আলোচনা করবো।


যেনে রাখা ভালো যে, টিন সার্টিফিকেট অনলাইনেই তৈরী করা যায় যেটি ই-টিন ( E-TIN) নামে পরিচিত। যার সব তথ্য অনলাইনে সংরক্ষিত থাকে।


টিন বা টিআইএন ( TIN) কি?

টিন বা টিআইএন (TIN) এর পূর্ণরুপ হলো ট্রাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার ( taxpayer Identification Number)। এটি ১২ সংখ্যার একটি বিশেষ নাম্বার যার সাহায্যে করদাতাকে শনাক্ত করা হয়। টিন বা টিআইএন ( TIN) নাম্বার করদাতায় পরিচয়পত্রের মতই কাজ করে।

বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আপনাকে বৈধ উপায়ে আয় করতে হলে অবশ্যই নিদিষ্ট হারে আয়কর প্রদান করতে হবে আর এই আয়কর প্রদানের জন্য টিন সার্টিফিকেট থাকা অবশ্যক।


টিন সার্টিফিকেট কি কি কাজে লাগে?

টিন সার্টিফিকেট বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করা হয়,এমনকি অনান্য সার্টিফিকেট / লাইসেন্স পেতেও অনেক ক্ষেত্রে এই টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হয়।

নিচে কোন কোন কাজে টিন সার্টিফিকেট ব্যাবহার করা হয় তার একটি তালিকা দেওয়া হলোঃ



টিন সার্টিফিকেট করতে কি কি লাগে?
টিন সাটিফিকেট তৈরী করতে চাইলে যেসব জিনিস প্রয়োজন হবে তার তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ
  • আবেদনকারীর এনআইডি ( NID) নাম্বার,
  • আবেদনকারীর নাম  (এনআইডি অনুযায়ী), 
  • আবেদনকারীর পিতা & মাতার নাম,
  • আবেদনকারীর স্বামী বা স্ত্রীর নাম ( বাধ্যতামূলক নয়),
  • আবেদনকারীর বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা।

কাদের জন্য টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন?
বাংলাদেশ সহ প্রতিটি দেশেই কর পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে। প্রতিটি দেশেই একটি নিদিষ্ট পরিমান বাৎসরিক আয়ের উপর কর দিতে হয়। যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে অবশ্যই তাদের কর প্রদানের জন্য টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।

বাংলাদেশে যাদের উপর আয়কর প্রযোজ্য হবে তাদের একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ
  • যাদের বাৎসরিক আয় ৩,০০,০০০( তিন লক্ষ) টাকার বেশি,
  • ৬৫ বছর বয়সি কোন মহিলার বাৎসরিক আয় ৩,৫০,০০০ ( তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার বেশি হলে
আয়কর প্রদান ছাড়াও আরো বিভিন্ন বিষয়ে কর প্রদানের জন্য টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হতে পারে।


নিচে যাদের টিন সার্টিফিকেট তৈরী করার প্রয়োজন হতে পারে তাদের একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ
  • ভ্যালু এডেট টেক্স ( VAT) বা মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ অনুযায়ী কোন ক্লাবের সদস্যপদ  থাকলে,
  • ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স থাকলে,
  • নিজস্ব গাড়ির মালিক হলে,
  • সরকারি,আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা স্থানীর কতৃপক্ষের ঠিকাদারি কাজের টেন্ডার অংশগ্রহনকারী ব্যাক্তিদের,
  • কোন নির্বাচনের প্রার্থীকে,
  • কোন ট্রেড এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দদের,
  • কোন ব্যাংক থেকে ক্রেডিট র্কাড পেতে চাইলে আবেদনকারিকে টিন সার্টিফিকেট তৈরী করতে হবে,
  • ব্যাবসার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে কিছু আমদানি করতে,
  • ডাক্তার,আইনজীবী, সার্ভেয়ার, পোকৌশলী, স্থপতি পেশায় নিয়জিত ব্যাক্তিদের।


ই-টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম (ধাপ) সমূহঃ

ধাপ-১ঃ টিন সার্টিফিকেট তৈরী করতে হলে প্রথমেই আপনাকে রাজস্ব বোর্ডের ( E-TIN)  ওয়েবসাইটে গিয়ে একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে অথবা আপনি চাইলে সরাসরি নিচের দেওয়া লিংক থেকেও রেজিষ্ট্রেশন করে নিতে পারেন।

রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য প্রথমেই এখানে গিয়ে “Register” এ ক্লিক করুন।


অথবা সরাসরি রেজিষ্ট্রেশন করতে এখানে গিয়ে নিচের মত রেজিষ্ট্রেশন ফরম পূরন করুন।

উপরের চিত্র অনুযায়ী তথ্য দিয়ে “Register” বাটনে ক্লিক করার পর আপনার দেওয়া নাম্বারে একটি Account activation coad যাবে সেটি দিয়ে নিচের মত করে একাউন্ট একটিভ করে নিন। 

এখন আপনার একাউন্টটি সচল হয়ে গেছে সেটা জানিয়ে আপনাকে একটা মেসেজ দিবে এবং লগিন করতে বলবে।



ধাপ-২ঃ E-TIN  application এই ধাপে মূলত আমরা ই-টিন এর জন্য একটি এপ্লিকেশন করবো তারজন্য নিচের চিত্র অনুযায়ী লগিন করুন। 


এখন পাসে দেখানো e-TIN application এ ক্লিক করুন।

E-TIN application এ ক্লিক করার পর নিচের মত পেজ আসলে এখনে আপনাকে কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে। 
  • এখানে প্রথম ঘরটিকে করদাতার ধরন নির্ধারণ করতে হবে,করদাতা ব্যাক্তিগত পর্যায়ের হলে ” Individual” কোন কম্পানি হলে ” Company ” অথবা ” Partnership ” এছাড়া অন্য কিছু হলে সে অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে।
  • এর পরের ঘরটিতে কি (এনআইডি,ট্রেড লাইসেন্স, পাসপোর্ট)  ব্যাবহার করে টিন সাটিফিকেট বানাবেন তা বেছে নিতে হবে।
  • এরপর রেজিষ্ট্রেশন এর ধরন ” New registration ” বেছে নিন,
  • পরের ঘরে আপনার এই টিন সার্টিফিকেট বানানোর উদ্দেশ্য কি সেটি দিন,
  • এরপর আপনার আয়ের মাধ্যম কি সেটি দিন,
  • এরপর কোন ঠিকানা থেকে আয় করছেন সেটি বেছে নিন,
  • এরপর আপনি কি কাজ করেন সেটি দিন।

সব শেষ ” Go To Next ” এ ক্লিক করুন।

উপরে আপনাকে কিছু ব্যাক্তিগত তথ্য দিতে হবে, এই তথ্যগুলো আপনি আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড অনুযায়ী বসিয়ে নিন।




এই ধাপে আপনার দেওয়া সব তথ্য দেখাবে,ভালোমতো দেখুন সব কিছু ঠিক থাকলে “Submit Application ” এ ক্লিক করুন।



এখন ” Print Details ” এ ক্লিক করুন,



ব্যাস, আপনার টিন সার্টিফিকেট টি তৈরী হয়ে গেল।এখন এটি প্রিন্ট করার জন্য ” print Certificate ” সেভ করার জন্য “Save certificate” এবং কাওকে ইমেইল এর মাধ্যমে পাঠাতে ” Email certificate ” এ ক্লিক করুন।



উপরের বক্সে যাকে পাঠাবেন আর ইমেল এড্রেস টি বসিয়ে ” send me certificate ” এ ক্লিক করুন।



দেখুন তারা উক্ত মেইল এ এই টিন সার্টিফিকেট টি পাঠিয়ে দিয়েছে। 




মেইল এর ইনবক্স চেক করলে নিচের মত একটি মেইল পাবেন, 

মেইল টি ওপেন করার পর উপরের মত দুইটা অপশন পাবেন। 

প্রথমটি এই সাটিফিকেট টি ডাওনলোড করার জন্য এবং ২য় অপশন টি গুগল ড্রাইভে সংরক্ষন করার জন্য।

এটি হচ্ছে আমার টিন সার্টিফিকেট। 


টিন সাটিফিকেট থাকার সুবিধাঃ
টিন সাটিফিকেট তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য কর প্রদান ছাড়াও এর মাধ্যামে অনেক প্রকার কাজ করা সম্ভব। 

এর মধ্যো গুরুত্বপূর্ণ একটি কারন হচ্ছে সঞ্চয়পত্র ক্রয়।বর্তমানে রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ২,০০,০০০ ( ২ লক্ষ) বা অধিক টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রর করতে চাইলে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে।

এছাড়াও ব্যাক্তিগত গাড়ি কেনার জন্যও টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়।।

বর্তমানে আয়ের বড় মাধ্যম হচ্ছে ব্যাবসা, আর এই ব্যাবসা বৈধভাবে করার জন্য টিন সার্টিফিকেট এর বিকল্প নেই।

তাই একবার টিন সার্টিফিকেট তৈরী করে রাখলে সময় ও শ্রম উভয় বেচে যায়।

টিন সাটিফিকেট থাকার অসুবিধাঃ
টিন সার্টিফিকেট করার পরেও যদি আপনি ট্যাক্স বা রিটার্ন জমা না দেন তাহলে আপনার ইনকাম অবৈধ হিসাবে গন্য হবে।

টিন সার্টিফিকেট কত প্রকার?
টিন ৫ প্রকারের হয়ে থাকে নিম্নে দেওয়া হলোঃ
  • SSN: সামাজিক নিরপত্তার জন্য,
  • EIN: ব্যাবসা সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য,
  • ITIN: ব্যাক্তির আবাসিক, অনাবাসিক, বাসস্থান এবং তার বৈবাহিক অবস্থানের জন্য,
  • ATIP/PTIN: বাংলাদেশে প্রয়োজন নেই।


কতটাকা আয়কর ( TAX) দিতে হবে?
এটি সম্পূর্ণ আপনার আয়ের উপর নির্ভর করে তবে নূন্যতম ট্যাক্স ঢাকা ও চট্রগ্রাম ৫০০০, অনান্য সিটিকর্পোরেশন ৪০০০ এবং সিটিকর্পোরেশন ব্যাতিত ৩০০০ এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে কোন ট্যাক্স দিতে হবেনা
নিচে টেবিলের মাধ্যমে দেখানো হল আপনার আয় কত হলে কত %  কর দিবেন।


ইনকাম ট্যক্স কিভাবে জমা দিবেন?
আপনি যদি ট্যাক্স দিতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে টিন সার্টিফিকেট নিতে হবে এবং ইনকাম ট্যাক্স ফাইল/ফরম পূরণ করে রিটার্ন জমা দিতে হবে।

টিন সাটিফিকেট বাতিল করার নিয়ম?
মূলত আয়কয় অধ্যাদেশ টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়নি।তবে প্রচলিত নিয়মে আপনি যে কর অঞ্চলের টিন সার্টিফিকেট নিবন্ধন করছেন সেই অঞ্চলের উপকর কমিশনার বরাবর এটি বাতিলের জন্য আবেদন বা দরখাস্ত করতে হবে।

তবে দরখাস্থ করার পূর্বে সময়সাপেক্ষ কিছু নিয়ম অত্যাবশ্যকঃ 

  • দেশের করদাতা হতে যে পরিমান আয়ের প্রয়োজন যেই পরিমান আয় যদি না থাকে তবে পরপর কমপক্ষে ৩ বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে হবে,
  • ৩বছর শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার পরেও যদি আপনার করযোগ্য আয়ের কোন সম্ভাবনা না থাকে তবে আপনি তৃতীয় বছরে শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় আপনার আইকর ফাইলটি নথিস্থ করার জন্য উপকর কমিশনার বরাবর একটি দরখাস্থ করতে হবে,
  • উপকর কমিশনার যদি আপনার দরখাস্থে সন্তুষ্ঠ হন তবে আপনার ফাইলটি নথিস্থ করে রাখবেন,
  • পরবর্তীতে যদি কখনো আপনার কর দেওয়ার মত আয় হয় তবে তখন ফাইলটি সচল করতে হবে।

সাধারণ জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সমূহঃ
১.টিন সাটিফিকেট থাকলেই কি আয়কর দিতে হবে?
উত্তরঃ কেও টিন সার্টিফিকেট তৈরী করলে স্বাভাবিক নিয়মে তাকে অবশ্যই কর দিতে হবে তাই করযোগ্য আয় না থাকলে টিন বাতিল করাই উত্তম।

২.একটি এনআইডি এর মাধ্যমে কয়টি টিন সার্টিফিকেট করা যায়?
উত্তরঃ একটি এনআইডি এর মাধ্যমে মাত্র একটি  টিন সার্টিফিকেট করা যায়।



৩.টিন সার্টিফিকেট তৈরী করতে কত টাকা খরচ হয়?
উত্তরঃ টিন সার্টিফিকেট তৈরীতে কোন টাকার প্রয়োজন নেই,অনলাইনে উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করে বিনামূল্যে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারবেন। 

৪.বিদেশি ব্যাক্তিদের কর দেওয়ার প্রয়োজন হলে কোথা থেকে টিন সার্টিফিকেট তৈরী করবে?
উত্তরঃ বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল  করদাতাকে বাংলাদেশ থেকেই টিন সার্টিফিকেট তৈরী করতে হবে।

ঘরে বসেই আপনার ইংরেজির দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে চলে এলো স্পোকেন ইংলিশ কোর্স। কোর্সটিতে থাকছে ৮০টির অধিক ক্লাস, কুইজ ও রিভিশন কার্ডসহ আরও অনেক সুবিধা৷ আজই Enroll করুন Spoken English কোর্সে এবং হয়ে উঠুন স্পোকেন ইংলিশ pro!