বছরখানেক হয়ে গেছে উবুন্টুর সাথে শেষবার দেখা হওয়ার। এই সময়ের মধ্যে দুটো মেজর রিলিজ এসেছে উবুন্টুর এবং বেশ বড় কিছু পরিবর্তন এসেছে। উবুন্টু ২১.১০ নিয়ে যদিও আগ্রহবোধ করিনি, উবুন্টু ২২.০৪-এ কিছু ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার ছিলো। সব মিলিয়ে ভাবলাম কেন না ভার্চুয়ালবক্সে একবার ট্রাই করে দেখা যাক!
আমার প্রাইমারী মানজারো ইন্সটলেশনের মধ্যে ভার্চুয়ালবক্সে উবুন্টু ২২.০৪ ইন্সটল করেছি। ভার্চুয়ালবক্স সম্পর্কে যারা জানেন না, এটা একটা অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে আরেকটা অপারেটিং সিস্টেম চালানোর একটা পদ্ধতি। এতে মূল অপারেটিং সিস্টেমে সমস্যা কিংবা ডাটা হারানোর ভয় থাকে না। ভার্চুয়ালবক্সে উবুন্টু ইন্সটলেশনের টিউটোরিয়াল রয়েছে এখানে।
উবুন্টুরর নতুন ইন্সটলার নিয়ে কাজ করার কথা জানা গিয়েছিলো আগের বছরের শুরুর দিকেই। তবে ২২.০৪-এ এসেও এর দেখা মিলেনি। ইন্সটলার আগের মত থাকলেও পরিবর্তন হয়েছে উবুন্টুর লোগো। বুট স্ক্রিন থেকেই তাই থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া।
উবুন্টু ২১.১০-তে সর্বপ্রথম গ্নোম ৪০ ডেস্কটপ ব্যবহার হয়েছিলো, যেটা গ্নোম ৩.৩৮ থেকে ছিলো একটা হিউজ জাম্প। এর মধ্যে আরো দুটো মেজর রিলিজ দেখেছে গ্নোম, উবু্ন্টু ২২.০৪-এ থাকছে গ্নোম ৪২, এবং উবুন্টুও এর মধ্যে তাদের গ্নোম ৪০ সিরিজের ইমপ্লিমেন্টেশনে আরো উন্নত করার সুযোগ পেয়েছে।
উবুন্টু ২২.০৪-এ লাইট মানে লাইট, অরেঞ্জ মানে অরেঞ্জ। উবুন্টু ২১.১০-তে এসে গ্নোমের থিম সাপোর্টজনিত লিমিটেশনের কারণে আগের ভার্সন পর্যন্ত ডিফল্ট ডার্ক হেডারের সাথে লাইট কালারসহ Yaru Mixed থিম বাদ দেয়া হয় এবং লাইট থিমকে ডিফল্ট করা হয়। উবুন্টু ২২.০৪-এ এসে এখন লাইট মোডে শেল থিমও লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।
উবুন্টুতে আগে থেকেই প্রাইমারী কালার ছিলো অরেঞ্জ। তবে এই ভার্সনে উবুন্টুকে আরো বেশি অরেঞ্জ দেখাবে, কেননা চেকবক্স, রেডিও বাটন, স্লাইডারসহ পূর্বে যে পার্পল (একচুয়ালি Aubergine/বেগুনি) একসেন্টের ছোঁয়া ছিলো, তা-ও এবার অরেঞ্জ দিয়ে রিপ্লেস করা হয়েছে। অবশ্য ফোল্ডার আইকন, ওয়ালপেপারে পার্পল টাচ এখনো আছে। তো আমি ভাবছিলাম এ সবকিছু মিলিয়ে আসলে চোখে কেমন দেখাবে। সত্যি বললে খুব মন্দ দেখায় না।
কালারের কথা বললে একটা ভালো কাজ উবুন্টু অবশ্যই করেছে, তা হলো একসেন্ট কালার সমর্থন। অরেঞ্জের সাথে পার্পল টাচটুকু বাদ দেয়ার একটা কারণ এটা হতে পারে- যদি অরেঞ্জ আপনার পছন্দ না হয়, নতুন ভার্সনে থাকছে ১০টি একসেন্ট কালার থেকে বেছে নেয়ার সুবিধা।
২১.১০ ভার্সনের স্ক্রিনশটগুলোতে ওয়ার্কস্পেস সুইচার/এক্টিভিটিস ভিউ বেশ নিচের দিকে ছিলো, লেফট ডকের সাথে সবমিলিয়ে অসামঞ্জস্যতা চোখে লাগার মত। ২২.০৪-এ নিচে এক্সট্রা মার্জিন এড করা হয়েছে, এবং ছোট্ট এই পরিবর্তনটুকু এর লুককে অনেক বেটার করেছে।
গ্নোমের হরাইজন্টাল ওয়ার্কস্পেসের সাথে লেফট প্যানেল যদি আপনার পছন্দ না হয়, অথবা প্যানেল স্টাইলের পরিবর্তে ডক স্টাইল প্রিফার করেন, উবুন্টুতে নতুন কিছু ডক সেটিংস এড করা হয়েছে। তবে আমি জানি না ক্লিক টু মিনিমাইজ এনাবল করার অপশন সেটিংসে রাখাতে ঠিক কী অসুবিধা ছিলো, এবারও তারা অপশনটি আনেনি। হ্যা, আপনি একটা মাত্র কমান্ডে এটা করতে পারেন বটে, তবে একটা ভিজিবল ডকের সাথে ঠিক হিডেন করে রাখার মত কোন ফিচারও এটা না…
আর ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, অটো-হাইড ছাড়া ডক ফ্লোটিং থাকে, কিন্তু ম্যাক্সিমাইজড স্ক্রিন ডক পর্যন্ত চলে আসে। নিচের মত ওপরেও সামান্য মার্জিন রাখাটা পার্সোনালি প্রিফার করতাম।
ভ্যানিলা গ্নোম ৪২ থেকে উবুন্টুর ডার্ক মোড ও লাইট মোডে ওয়ালপেপার সুইচ ফিচারটি ভিন্নতর। যে মোডে যে ওয়ালপেপার সিলেক্ট করা হবে, তা সেই মোডে গেলে অটোমেটিক সুইচ হবে।
ভার্চুয়ালবক্স সেটআপে 4 GB র্যাম, ৪টি সিপিইউ থ্রেড ও 64 MB ভিডিও মেমোরিতে 3D Acceleration-সহ উবুন্টু ভালোই চলেছে। গ্নোম অন্য ডেস্কটপগুলো থেকে একটু বেশি র্যাম নেয়, তা তো জানা কথা-ই, কোন বাড়তি অ্যাপ চালু থাকা ছাড়া 1.5 GB-র মত কনজ্যুম করছিলো।
উবুন্টু ২২.০৪-এ স্ক্রিনশট নেয়ার জন্য থাকছে গ্নোম ৪২-এর নতুন স্ক্রিনশট টুল। স্ক্রিন রেকর্ডিং ফিচারও এতে আছে। মিনিমাল ইউআই। সুন্দর না? বাইরের চাকচিক্যে ধোঁকা না খাওয়াই ভালো, খুব অল্প সময়েই এটা আমাকে মোটামুটি ডিপ্রেশনে ফেলে দিয়েছে…
ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত এটা সুন্দর ছিলো, যতক্ষণ না দেখলাম এতে ফাইল ফর্মেট বা সেভ ডিরেক্টরি পর্যন্ত পরিবর্তনযোগ্য না, এমনকি অনলাইনে (অন্য অ্যাপ ইন্সটল করা ছাড়া) কোন সল্যুশন পেলাম না, আগের Dconf Editor বা gsettings কমান্ড পদ্ধতিও এখানে কার্যকর না। আগের স্ক্রিনশট টুলের চমৎকার কীবোর্ড শর্টকাটগুলো পর্যন্ত নেই। একইসাথে ডিরেক্টরিতে সেভ ও ক্লিপবোর্ডে কপি হয়, যেকোন একটা করার অপশন নেই। নেই delay অপশন। টিপিকাল গ্নোম ফিলোসফি?
উবুন্টু নিয়ে কথা বললে Snap-এর প্রসঙ্গ চলে আসে। যেহেতু রেগুলার স্ন্যাপ ব্যবহার করি না, তাই সেরকম কোন মন্তব্য করছি না। তবে যদি স্পেসিকফিকভাবে কন্ট্রোভার্সিয়াল ফায়ারফক্সের স্ন্যাপ ভার্সন ব্যবহার নিয়ে বলি, আমার টেস্টিংয়ে এটা কোন সমস্যা করেনি, স্টার্টআপ টাইম সহ সবকিছু জাস্ট ডিসেন্ট ছিলো।
ডেইলি লাইফে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বিষয় সামনে আসে, যা শর্ট টাইম টেস্টিংয়ে বোঝা সম্ভব নয়। আবার রিয়েল হার্ডওয়্যার আর ভার্চুয়ালবক্সে ব্যবহারের মধ্যেও একটা তফাৎ থাকে-ই। তবে সংক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতায় স্ক্রিনশট টুল ছাড়া আর সবকিছুর দিকে রিসেন্ট প্রিভিয়াস ভার্সনগুলো থেকে উবুন্টু ২২.০৪ একটা আকর্ষণীয় আপডেট। সব মিলিয়ে আমি যেমনটা এক্সপেক্ট করছিলাম, উবুন্টু ২২.০৪ সে অনুযায়ী আশাহত করেনি।
একটি নিয়নবাতি পরিবেশনা