যেকোনো পণ্য বাজারজাত করার আগে উদ্যোক্তার উচিত তার টার্গেট কাস্টমার কি তা জেনে নেওয়া। যাতে সর্বোচ্চ বিক্রি করা যায়, যদি টার্গেট কাস্টমারদের সম্পর্কে জানেন তাহলে তিনি বিভিন্ন মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে তার পণ্য বিক্রি করে প্রচুর আয় করতে পারেন।
আজকের পোস্টের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কম খরচে নিজের পণ্য marketing করার কিছু উপায় , শেষ পর্যন্ত পড়ুন আশাকরি এটি থেকে লাভবান হবেন ।
১. পোস্টার এবং ব্যানার
পোস্টার এবং ব্যানার মার্কেটিং কৌশল এখনও কার্যকর, বিশেষ করে বাংলাদেশে, আপনার পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে। এটি মানুষের মধ্যে পণ্য এবং সার্ভিস সম্পর্কে সচেতনতা এবং জানার ইচ্ছা তৈরি করে। পোস্টার এবং ব্যানারগুলি সহজেই তৈরি করা যেতে পারে এবং জনবহুল এলাকায় লাগানো যেতে পারে। এছাড়াও এটি ট্রেন, বাস, বাজার ইত্যাদিতেও লাগাতে পারেন।
২. পণ্য বা সার্ভিসের সুবিধা উল্লেখ করা
সুবিধা উল্লেখ বলতে গ্যারান্টি, ডিসকাউন্ট, মুলছার ইত্যাদি বুঝি। মূল্য সংযোজনের মূল লক্ষ্য হল কাস্টমারের সন্তুষ্টি। এই মার্কেটিং টেকনিক সবচেয়ে লাভজনক কৌশল।
কারণ বাংলাদেশে, কোনও ব্যক্তিকে যদি কোনও জিনিস বা সার্ভিস কিনতে হয়, তবে তাকে অবশ্যই অভিজ্ঞ লোকদের জিজ্ঞাসা করতে হবে, কোন কোম্পানির পণ্য তার জন্য ভাল হবে ইত্যাদি । অতএব, গ্রাহক যদি উদ্যোক্তার পণ্য বা সেবায় সন্তুষ্ট হয়, তাহলে উদ্যোক্তা বা কোম্পানির পণ্য অটোমেটিক বিক্রি হবে।
৩. সম্ভাব্য গ্রাহকদের খুঁজে বের করে মেসেজ বা কল করা
একজন উদ্যোক্তা যদি তার ব্যবসার মার্কেটিংয়ের জন্য যে কাউকে ফোন বা মেসেজ করেন, তবে বিক্রি নাও হতে পারে। এবং যদি উদ্যোক্তা বা কোম্পানি তার সম্ভাব্য গ্রাহকদের খুঁজে বের করে তাদের কল করেন, তাহলে এই মার্কেটিং কৌশলগুলি উদ্যোক্তার ব্যবসায় লাভবান হতে পারে।
এখন আপনি বলবেন যে কীভাবে আমরা আমাদের সম্ভাব্য গ্রাহকদের খুঁজে বের করতে পারি? এর জন্য আমার পরামর্শ হল আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত যে কোনও পপুলার ব্লগে যান এবং এর কমেন্ট সেকশনে একবার দেখুন, আপনি সেখান থেকে অনেক লিড পাবেন। এছাড়াও, আপনি সম্ভাব্য গ্রাহকদের সনাক্ত করতে সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
৪. আর্টিকেল লেখা
আজকাল প্রতিটি পপুলার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গেস্ট পোস্ট করার সুযোগ দেয়, আপনার সার্ভিস সম্পর্কিত পপুলার ব্লগ খুঁজে বের করতে হবে। এবং আপনার পণ্য বা সার্ভিসএর উপর ভিত্তি করে একটি আর্টিকেল পাবলিশ করুন। এর থেকে কি হবে যে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে সেই আর্টিকেল যখনি কেউ পড়বে, সেখান থেকেও কনভার্সন আসবে।
৬. ফ্রি ডেমো সার্ভিস দেওয়া
উদ্যোক্তার যদি তার দ্বারা তৈরি করা পণ্যের উপর পূর্ণ আস্থা থাকে, তবে তার আংশিক গ্রাহকদের কাছে পণ্যটির ফ্রি ডেমো অফার করাও একটি সেরা মার্কেটিং কৌশল হতে পারে। কারণ ডেমো দেখার পর গ্রাহকরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করা যায়। যদি উদ্যোক্তার ফ্রি প্রোডাক্টের ডেমো গ্রাহকরা পছন্দ করেন, তাহলে তিনি অবশ্যই আপনার পণ্য কিনবেন।
যদি গ্রাহকদের পছন্দ না হয় তবে গ্রাহকদের পছন্দ না হওয়ার কারণ অবশ্যই আপনাকে বলবে এবং সেই পয়েন্টগুলো নোট করে তার পণ্যের সংশোধন করতে হবে।
৬. পণ্য সম্পর্কে ভিডিও তৈরি করা
উদ্যোক্তাকে তার ব্যবসার নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল/ ফেসবুক পেজ তৈরি করতে হবে এবং এতে একটি টিউটোরিয়াল তৈরি করে তার পণ্য সম্পর্কিত তথ্য যেমন: কীভাবে ব্যবহার করবেন, এটি কতটা দরকারী ইত্যাদি ভিডিও আপলোড করতে হবে । কারণ আজকাল কিছু কেনার আগে পণ্য গবেষণার জন্য মানুষ ইউটিব বেশি ব্যবহার করে। সেজন্য এই মার্কেটিং টেকনিক কোথাও না কোথাও ব্যবসাকে প্রচারের করার ক্ষমতা রাখে।
৯. ফ্রি বিজনেস কাউন্সেলিং সেশন
আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেলা সহ উদ্যোক্তাদের সম্মেলন বসে । আপনি এমন কোন জায়গায় গিয়ে একটা store খুলতে পারেন । আপনি খেয়াল করে দেখবেন আমাদের দেশের নানান ব্রান্ড যেমন : সিম্ফনি , ওয়ালটন সহ অনেক কোম্পানি এমন মেলায় নিজের পণ্যর পাবলিসিটি করেন ।
৮. ব্যবসার নামে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট
বর্তমানে, সাধারণ জনগণের কাছে ইন্টারনেট রয়েছে যার কারণে, মানুষ অবশ্যই কোনও আইটেম কেনার আগে ইন্টারনেটে এটি সম্পর্কে জানতে চায়। এজন্য উদ্যোক্তাকে অবশ্যই তার ব্যবসার জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। উদ্যোক্তা এই কাজটি ওয়েব ডেভেলপার বা নিজেই করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ফ্রি সিএমএস যেমন: ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, ড্রুপাল ইত্যাদির সাহায্যে এমনকি কোডিং ভাষা সম্পর্কে জ্ঞানহীন ব্যক্তি সহজেই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন ।
৯. সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যবসার উপস্থাপন করা
যে কোন ব্যবসার জন্য সেই ব্যবসার জন্য একটি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যাতে গ্রাহক বা অন্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজের মাধ্যমে উদ্যোক্তার সেবা বা পণ্য সম্পর্কে জানতে পারে। আর উদ্যোক্তাও তার পণ্য বা সেবার উপকারতা সম্পর্কে জানতে পারে । এই মার্কেটিং কৌশল আপনার পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে অনেক জরুরি।
১০. বিজনেস কার্ড মেকিং
বিজনেস কার্ড অনেকের কাছে ভিজিটিং কার্ড নামেও পরিচিত, এটি একজন উদ্যোক্তা, একটি কোম্পানির সেলস এক্সিকিউটিভ বা অন্যান্য কর্মচারীরা ব্যবসা সম্পর্কিত কাজের জন্য একে অপরকে বিনিময় করতে ব্যবহার করে। এই কার্ডে যোগাযোগের তথ্য এবং কোম্পানির নাম ইত্যাদি লেখা থাকে। এই মার্কেটিং কৌশলটি অনেক কাজের কারণ যখনই একটি প্রডাক্ট বা সার্ভিস একটি কোম্পানি, কারখানা বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কিনতে হয়।
তখন সাধারণত সেইসব বিজনেস কার্ডের দিকে নজর দেওয়া হয়, উদ্যোক্তার উচিত ব্যবসার সম্পর্কিত কারো সাথে দেখাহলে তাকে তার বিজনেস কার্ড দেওয়া।
১১. ফেরাম বা গ্রুপে যুক্ত হওয়া
বর্তমানে বাংলাদেশে ফেরামের জনপ্রিয়তা না থাকলেও ফেসবুক গ্রুপের অনেক ব্যাবহার রয়েছে । তাই আপনার পণ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হয়ে বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন ।
ব্যবসার জন্য মার্কেটিং কেন প্রয়োজন? ৯টি প্রধান কারণ।
© Shahin Alam Shakil
Published date 23/12/22 Trickbd.com