Site icon Trickbd.com

ময়মনসিংহে ইসলাম প্রচারের ইতিহাস

ময়মনসিংহ, ১০ মার্চ- বাংলাদেশের মত ময়মনসিংহ জেলাতেও ইসলাম প্রচারিত হয়েছিল মূলত সূফী, পীর, ফকির, অলি ও বুজুর্গদের মাধ্যমে। ময়মনসিংহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য পীর ফকির দরবেশদের দরগাহ, মাযার অথবা তাঁদের সৃতি বিজড়িত মসজিদ লোকসৃতি বিদ্যমান। ১৪৯১ সালে দ্বিতীয় ফিরোজ শাহ দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করে ব্রহ্মপুত্র অতিক্রম করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং একাজে তিনি সেনাপতি মজলিস খাঁ হুমায়ুনকে সসৈন্য প্রেরণ করেন। মজলিস খাঁ ময়মনসিংহের উত্ত অংশে প্রবেশ করে শেরপুর প্রদেশ আক্রমণ করেন। তখন শেরপুরের অন্তর্গত গড়দলিপায় দলিপ সামন্ত নামক জনৈক কোচ রাজা শাসন করছিলেন। মজলিসের আক্রমনে দলিপ পরাজিত ও নিহত হন এবং এভাবে শেরপুরে মুসলিম রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই ছিল ময়মনসিংহ প্রথম মুসলিম প্রবেশ। বাংলাদেশের মত ময়মনসিংহ জেলাতেও ইসলাম প্রচারিত হয়েছিল মূলত সূফী, পীর, ফকির, অলি ও বুজুর্গদের মাধ্যমে। ময়মনসিংহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য পীর ফকির দরবেশদের দরগাহ, মাযার অথবা তাঁদের সৃতি বিজড়িত মসজিদ লোকসৃতি বিদ্যমান। সূফী সাধনার স্বর্ণ যুগে যে সকল সূফী সাধক প্রথমে এ উপমহাদেশে আগমন করেন তাঁদের অন্যতম এবং বাংলাদেশে প্রথম আগমনকারী সাধকদের মধ্যে সর্ব প্রথম হলেন হজরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী রহ. শাহ সুলতান কমর উদ্দি অঞ্চলে ইসলামের বীজ রোপণ করে গেছেন এবং পরবর্তী শাসকগন তাকে লালন পালন করে প্রসারিত করেছেন ।  ১৪৯৮ সালে হুসেন শাহ বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার সময় সমগ্র ময়মনসিংহে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। এ সম্বন্ধে ব্লকম্যানকৃত রিয়াজ-উস-সালাতিনের অনুবাদটিতে কিছু তথ্য আছে: হুসেন শাহ উড়িষ্যা জয় করে, তার অন্তর্গত রাজাদের নিকট থেকে কর নিলেন ও বাঙ্গালার পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্তস্থ আসাম প্রদেশ বিজয়ের লক্ষ্যে বিরাট অভিযান করলেন। তিনি বহু সৈন্য সাথে নিয়ে আসাম রাজ্যে প্রবেশ করেন ও কামতাপুর থেকে কামরুপ পর্যন্ত অধিকার করে অন্যান্য প্রদেশ, যথা- রুপনারায়ণ, মাল (পাল?), কানুয়ার, গশালক্ষ্ণণ, লক্ষ্মিনারায়ণ প্রভৃতি পরাক্রমশালী রাজাদের রাজ্য হস্তগত করেন। রাজারা তাদের ভয়ে পাহাড় পর্বতে আশ্রয় গ্রহণ করেন ও মুসলমানরা তাদের রাজ্য অধিকার করে নেন। এভাবে হুসেন শাহ, কামরুপ রাজ্য জয় করে, নিজ পুত্র নসরৎ শাহকে তার শাসনকর্তা রেখে বাঙ্গালায় প্রত্যাবর্তন করেন। এ বিবরণ থেকে হুসেন শাহ ময়মনসিংহ জয় করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়না। কারণ এখানে উল্লেখিত রাজ্যগুলো কোথায় অবস্থিত তা জানা যায়নি। তবে অন্য আরও প্রমাণ দ্বারা হুসেন শাহের ময়মনসিংহ বিজয় সম্বন্ধে জানা যায়। যেমন, হুসেন শাহ যে অঞ্চল জয় করতেন সেখানেই নিদর্শনস্বরুপ একটি মসজিদ নির্মাণ করতেন। বর্তমান বৃহত্তর ময়মনসিংহের টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত আটীয়া নামক স্থানে হুসেন শাহ নির্মিত একটি মসজিদ ছিল (বর্তমান আতিয়া মসজিদ নয়)। এই মসজিদ-গাত্রের প্রস্তর ফলকে হুসেন শাহের পশ্চিম ময়মনসিংহ বিজয়বার্তা আরবি অক্ষরে খোদাই করা ছিল। এছাড়া হুসেন শাহ ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব দিক জয় করে একেবারে ত্রিপুরা পর্যন্ত অধিকার করেন। তিনি খোয়াজ খাঁকে এ অঞ্চলের শাসনকর্তা মনোনীত করেন। খোয়াজ খাঁ ময়মনসিংহের অন্তর্গত মুয়াজ্জামাবাদে থেকে এই যুক্ত প্রদেশ শাসন করতে থাকেন। খোয়াজ খাঁর নামাঙ্কিত একটি প্রস্তর লিপিও আবুষ্কৃত হয়েছে যার অনুবাদ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশ করেছে।

This mosque was built in the reign of the Sultan of the age, the heir of the kingdom of Solomen, Alaudunya waddin Abbul Muzuffor Husain Shah. may God perpituate his kingdom and his rule, and elevate his condition and his dignity, and render, in every minute his proof victorious, by the great and noble Khan, Khawas Khan, Governer of the land of Tiparah and vazir of the district in Muazzamabad,- may God preserve him in both world! Dated 2nd Rabi 11, 919 (7th June, 1513).

লিপিতে উল্লেখিত এই মুয়াজ্জমাবাদ বর্তমানে আর নেই। ব্লকম্যানও এর সঠিক অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেননি। তিনি একবার একে সোনারগাঁ এবং অন্যবার পূর্ব ময়মনসিংহের অন্তর্গত বলে উল্লেখ করেছেন। তবে হুসেন শাহ যে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় বঙ্গই দখল করেছিলেন তা এ থেকে সুস্পষ্ট। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলার হুসেনশাহী পরগণা এবং হুসেনপুর নামক স্থান হুসেন শাহের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। হেনরি টমাস কোলব্রুক এবং হেনরি ফ্রার্ডিনান্ড ব্লকম্যান বঙ্গে যে দশটি টাকশালের কথা উল্লেখ করেছেন তার একটি ছিল মুয়াজ্জামাবাদ। এ থেকে বোঝা যায় তৎকালীন বঙ্গ এই কয়টি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল, আর তখন পূর্ব ময়মনসিংহ মুয়াজ্জামাবাদ নামে পরিচিত ছিল। মুয়াজ্জামাবাদের সঠিক সীমানা জানা না গেলেও এটুকু জানা যায় যে তা পূর্বদিকে শ্রীহট্টের লাউর প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তত্থসূত্র : উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য