সদ্য এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে বিশ্ব
টি-টুয়েন্টি খেলতে ভারত গেছে
মাশরাফি বাহিনী। বিশ্ব ক্রিকেটের
অন্যতম পরাশক্তি ভারতের সঙ্গে এশিয়া
কাপের ফাইনাল খেলা বাংলাদেশ দলের
খেলোয়াড়দের মনোবল তাই তুঙ্গেই
রয়েছে।
কাল বুধবার টি-২০ বিশ্বকাপের মূল পর্বে
নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের
বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এ
খেলায় বাংলাদেশের জয়ের প্রবল
সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ সদ্য শেষ হওয়া
এশিয়া কাপেই পাকিস্তানকে রীতিমত
ঘোষণা দিয়ে হারিয়েছে টাইগাররা।
সেদিনও পূর্ণ শক্তির পাকিস্তান দলই ছিল।
২ মার্চের সেই খেলায় অদম্য সহস
দেখিয়েছে টাইগাররা, দেখিয়েছে
তাদের মনোবল। পাকিস্তানের দেয়া ১২৯
রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা
বাংলাদেশের যখন দ্রুত উইকেট পড়ছিল,
তখনও হার না মেনে দলকে জয়ের বন্দরে
নিয়ে যান অধিনায়ক মাশরাফি আর
মাহামুদুল্লাহ। সেদিনের এই জয় বড় ভূমিকা
রাখবে কালকের ম্যাচে। বলতে গেলে
টনিক হিসেবে কাজ করবে।
বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলতে গত ৯ দিন
ধরে ভারতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ
দল। তাও কোথায়? ভারতের সবচেয়ে
চ্যালেঞ্জিং মাঠ ধর্মশালায়। সমতল
থেকে অনেক উঁচু এই জায়গা, যেখানে
খেলোয়াড়দের শ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছিল।
সেখানেও দুর্দান্ত খেলা দেখাল
টাইগাররা। তারা নেদারল্যান্ডসকে
হারিয়েছে। আয়ারল্যান্ডকে তো প্রায়
গুঁড়িয়েই দিচ্ছিল, বৃষ্টি এসে বাঁচিয়েছে
তাদের। আর সবশেষ তামিমের অসাধারণ
সেঞ্চুরিতে ওমান কে লজ্জা দিয়ে বুক
ফুলিয়ে উঠে গেল মূল পর্বে। ভারতের
সমর্থকরা অবশ্য কষ্ট পেয়েছেন এতে।
জায়গা করে নেয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার
ক্ষেত্রেও তাই পাকিস্তান অনেক
পিছিয়ে আছে টাইগারদের চেয়ে।
নিরিপত্তা ইস্যুতে মাত্র দুদিন আগেও
ভারতে খেলতে আসাই অনিশ্চিত ছিল
আফ্রিদিদের। মাত্র গত পরশু ভারতের
মাটিতে পা রেখেছে পাকিস্তান। খেলা
হচ্ছে আবার ইডেনে। যে মাঠ সাকিবদের
কাছে অনেকটা মিরপুরের মতই। কলকাতার
দর্শকরাও যে গলা ফাটাবে বাংলাদেশের
জন্য তা বলাই বাহুল্য। তাই কন্ডিশন, দর্শক
কিছুই যাচ্ছে না পাকিস্তানের পক্ষে।
তার সঙ্গে আছে নিরাপত্তা নিয়ে
পাকিস্তানে জল ঘোলার ঘটনা। তাদের
জন্য প্রস্তুতি ম্যাচের ভেন্যু পর্যন্ত
পরিবর্তন করতে হয়েছে ভারতকে। এতকিছুর
পর কি আর খেলায় মন রাখা যায়?
সাম্প্রতিক দলগত ফর্মের বিচারে
বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পাচ্ছে না
পাকিস্তান। দেশের মাটিতে একের পর এক
সাফল্য টাইগারদের। ওয়ানডেতে অন্তত
এশিয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে
টাইগাররা। বাকি ছিল ছোট ভার্সনের
টি-২০। সেখানেও এবার সফল বাংলাদেশ।
শক্তিধর শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানকে এশিয়া
কাপে হারানে যার জ্বলন্ত প্রমাণ। সে
হিসেবে পাকিস্তানের পেরে ওঠার কথা
নয় টাইগারদের সঙ্গে।
হ্যাঁ, এ কথা সত্য, মোহাম্মদ আমের আছেন
তাদের দলে। তিনি বিশ্বমানের বোলার।
চমৎকার সুইং করাতে পারেন বলে। আরও
কত কি। কিন্তু তাকে পড়তে এখন আর কোন
ঝামেলা হওয়ার কথা নয় টাইগারদের।
এশিয়া কাপের খেলায় তাকে সুন্দরমত
খেলে দিয়েছে ছেলেরা। তাই আমের জুজু
আর কাজে আসছে না পাকিস্তানের। আর
পাকিস্তানের অন্য বোলাররা কিন্তু সবাই
গড়পড়তা বল করে থাকেন। আহামরি কিছু
করতে পারছেন না কেউই।
কালকের ম্যাচের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ
ঘটনা বাংলাদেশের সেনশেসন কার্টার
দলে। মুস্তাফিজ দলে থাকা মানে
প্রতিপক্ষের ওপর বাড়তি একটি চাপ সৃষ্টি
হওয়া। তাকে কিভাবে সামলাবে
পাকিস্তান তা নিয়ে হয়তো প্রচুর
হোমওয়ার্ক করতে পারে তারা, কিন্তু
মুস্তাফিজকে মোকাবেলা করা সত্যিই
কঠিন।
পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য কোন
ব্যাটসম্যানই বর্তমানে তেমন ফর্মে নেই।
হাফিজ তার ছায়া হয়ে আছেন। আকমলরা
আসছেন যাচ্ছেন। আর অধিনায়ক শহীদ
আফ্রিদি তো অবসর না নিয় কেন এখনও
খেলে যাচ্ছে তা নিয়েই তীব্র সমালোচান
মুখে আছেন। তাই তাদের ব্যাটিং নিয়ে
কোন ভয় আছে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে
বাংলাদেশের দিকে দেখুন, তামিম দূরন্ত
ফর্মে। সৌম্যও দ্রুত নিজেকে ফিরে পাবার
চেষ্টায় আছেন। সাব্বিরও প্রতি খেলায়
নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। সাকিব-
মুশফিক ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে
রেখেছেন। আর আছেন চমৎকার ফিনিশার
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যার ব্যাটে ইতোমধ্যে
বেশ কিছু জয় দেখেছে বাংলাদেশ।
সব মিলিয়ে কাল পাকিস্তানে মোটেও
ফেবারিট নয়। বরং টাইগারদের অনেক
বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। আর
তাসকিন-সানির বোলিং নিয়ে আইসিসির
বাড়াবাড়িও নিশ্চই তাতিয়ে রেখেছে
টাইগারদের। যার যথাযোগ্য জবাব দেয়ার
জন্য বিশ্ব মঞ্চকেই বেছে নিতে পারে
টাইগাররা। তাই সাবধান পাকিস্তান।