প্রথমে অনেক ‘ইস’, ‘যদি…’র আক্ষেপ। সেই
আক্ষেপ কাটতে না কাটতে শুরু হয়ে গেল
পরাজয়ের ব্যবচ্ছেদ। কাল বিশ্বকাপের
সুপার টেনে পুরো ম্যাচে আধিপত্য ধরে
রেখেও শেষ পর্যন্ত ভারতের কাছে ১
রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটীয়
বিশ্লেষণে একটা প্রশ্নই উঠে এল বারবার
—কেন অমন শট খেলতে গেলেন
মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক?
৩ বলে ২ রান দরকার। অমন সময়ে দুটি
সিঙ্গেল বের করে নিলেই জয় হাতের
মুঠোয়। অথচ মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ
দুজনই টানা দুটি ফুলটস বলে উড়িয়ে মারতে
গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে লেগে ক্যাচ! সে
সময় ধারাভাষ্য দিতে থাকা সুনীল
গাভাস্কারের মতে যেটি ‘গ্ল্যামারাস শট
খেলতে গিয়ে আত্মহত্যা’।
বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীও
ভাবনা অনেকটা একই। দলের দুই সিনিয়র
খেলোয়াড়, এত এত ম্যাচ খেলার
অভিজ্ঞতা যাঁদের, তাঁরাই কিনা
স্নায়ুচাপে অমন কাবু হয়ে পড়লেন! মুশফিক
সমীকরণটাকে এত সহজ করে দেওয়ায়
কিছুটা ‘রেহাই’ পাচ্ছেন। কিন্তু গত বেশ
কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের
স্তম্ভ হয়ে ওঠা মাহমুদউল্লাহ কীভাবে একই
ভুল করলেন? একই রকম বল, একই শট, একই
জায়গায় ক্যাচ দিয়ে আউট!
স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্নটা কাল ম্যাচ
শেষেই উঠল। মহেন্দ্র সিং ধোনি কিন্তু
এটিকে ভুল হিসেবে মানছেন না। ভারত
অধিনায়ক বরং ক্রিকেটের গৌরবোজ্জ্বল
অনিশ্চয়তার আড়ালেই ব্যাখ্যা খুঁজেছেন
মাহমুদউল্লাহর ওই ‘গ্ল্যামারাস’ শটের।
নিজে ফিনিশার হিসেবে বেশ ভালো
খ্যাতি কুড়িয়েছেন, অভিজ্ঞতা থেকেই
ওই সময়ে মাহমুদউল্লাহর মনোভাবের
ব্যাখ্যা দিয়েছেন ধোনি, ‘অনেক সময়ই
এমন হয়। আপনি বড় শট খেলে ম্যাচটা শেষ
করতে চাইবেন। হাতে উইকেট থাকায়
আপনার মাথায় এটাও থাকবে, আপনি না
পারলেও অন্যরা ম্যাচটা শেষ করতে
পারবে। আর যদি ভালো ব্যাটিং করতে
থাকেন, তাহলে শট খেলতেই চাইবেন।’
পার্থক্য হলো, কাল শটটা কাজে এল না।
ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারলে এতক্ষণে
মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে অনেক গল্প রচিত
নিয়ে। সেটি না হওয়াতেই যত প্রশ্ন উঠছে।
তবে এই কষ্টকর অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ
অলরাউন্ডারের জন্য ভবিষ্যতে কাজে
আসবে বলে মনে করেন ধোনি,
‘মাহমুদউল্লাহর জন্য এটা একটা শিক্ষা।
আসলে ক্রিকেটই এমন। যদি ছক্কা হতো,
সবাই বলত কী অসাধারণ শট! কী সাহস!
ক্রিকেটটা আসলে এমনই।’
মুহূর্তের ওই সিদ্ধান্ত কাল বাংলাদেশের
পক্ষে আসেনি, এই যা! বাংলাদেশ
সমর্থকদের হতাশার পাশে আশাও এখানেই
—কাল হয়নি, ভবিষ্যতে হবে। ওই যে বলে
না, হয় আপনি জিতবেন, না হলে শিখবেন।