বিশ্ব জুড়ে স্বর্ণের জন্য বিখ্যাত দেশের কথা বলতে গেলে যে দেশটির কথা সবার আগে বলতে হয় তা হলো দুবাই। দুবাইবাসীরা নিজেরাই তাদের দেশকে স্বর্ণের দেশ বলে দাবি করেন। প্রথমদিকে স্বর্ণের জন্য বিখ্যাত দুটি দেশ ছিল ভারত এবং চীন। তবে এই দেশ দুটিকে ছাড়িয়ে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে দুবাই। প্রতিবছর স্বর্ণ কেনার জন্যই বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক পর্যটক দুবাইয়ে ভিড় করে। তাদের সবারই প্রধান আকর্ষণ স্বর্ণের তৈরি বিভিন্ন অলঙ্কারদি।
অনেকে আবার পুরণো স্বর্ণ বিক্রি করে নতুন স্বর্ণ কিনে আনে। যেমন নাইজেরিয়ারর এগাছি পরিবারের কথাই ধরা যাক না। প্রতিবছর স্বর্ণ কেনাবেচার উদ্দেশ্যে তারা পরিবারসহ দুবাই ভ্রমন করেন। নাইজেরিয়ার এই পরিবারের কাছে স্বর্ণ এতটাই প্রিয় যে এই পরিবারের কর্তা তার হুইসকির বোতলটিও তৈরি করে এনেছেন স্বর্ণ দিয়ে। মিসেস এগাছির কাছে স্বর্ণ এতটাই প্রিয় যে, স্বর্ণ পরিধাণ ছাড়া তিনি তার দিন শুরু করতে পারে না। এ বছরে তাদের দুবাই ভ্রমনটি ছিল পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যের জন্য। তাদের তিন বছরের সন্তানটির জন্য তার নাম লেখা একটি লকেট তৈরি করে আনা হয়েছে এবার। নিজের নামে স্বর্ণের লকেট পেয়ে সেও বেশ আনন্দিত।
মিসেস এগাছির ভাষ্যমতে, ‘শুধু আমরা নই নাইজেরিয়ার অনেক পরিবার আছে যারা স্বর্ণ ভালোবাসেন। অনেকে আবার দুবাই থেকে স্বর্ণ এনে এখানে ব্যবসা করে। আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মূলত স্বর্ণই উপহার দিয়ে থাকি। আমার এবং আমার পরিবারের জন্য স্বর্ণ সত্যিই খুব মূল্যবান একটি জিনিস। তাই আমরা স্বর্ণ কিনতে ভালোবাসি। এই পন্যটি নাইজেরিয়া থেকে দুবাইতে ভালো পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা।’
এগাছি পরিবারের মতো কাইয়ু একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। প্রতি বছর তিনি দুবাই ভ্রমন করেন স্বর্ণ কেনার উদ্দেশ্য নিয়ে। নাইজেরিয়ায় তার ছোট একটি অলঙ্কারের দোকান আছে। তিনি যখন স্কুলে পড়তেন তখন তার এক সহপাঠির বাবা দুবাই থেকে তার মেয়ের জন্য বিভিন্ন স্বর্ণের অলঙ্কার পাঠাতেন। পরবর্তীতে তিনি এগুলো স্কুলে এনে বিক্রি করতেন। মুলত ওই সহপাঠিকে দেখে কাইয়ুর স্বর্ণ ব্যবসার ইচ্ছা জাগে।
দুবাই এয়ারপোর্টে সর্বক্ষণ স্বর্ণ চোরাচালান ঠেকানোর জন্য একটি মনিটরিং ডিপার্টমেন্ট আছে। আর যারা বৈধ উপায়ে স্বর্ণ আনে তাদের লম্বা সাড়ির ভিড় ঠেকাতে এয়ারপোর্ট কর্মকর্তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু কেন সবাই স্বর্ণ কেনার জন্য দুবাইকে বেছে নেয় এই প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গেল।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুসারে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মোট প্রবাহের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই আসে ক্ষুদ্র দেশ দুবাই থেকে। দিনে দিনে দুবাই স্বর্ণের জন্য এতটাই বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছে যে, গত বছর দুবাইয়ে ভ্রমনে আসা ১৪ মিলিয়ন মানুষ যারা অন্তত একরাতের জন্য হলেও দুবাইয়ে অবস্থান করেছিলেন এবং ওই সময়টিকেই স্বর্ণ ব্যবসার জন্য কাজে লাগানো হয়েছিল।
দশ থেকে ১৫ বছর আগেও দুবাই স্বর্ণের জন্য বেশ বিখ্যাত ছিল কিন্তু বর্তমান সময়ে এই স্বর্ণেকে কেন্দ্র করে ব্যবসাও শুরু করেছেন ব্যবসায়িরা। তবে দুবাইয়ের স্বর্ণের একটি বিশেষত্ব আছে এখানকার স্বর্ণের তৈরি জিনিসপত্র নিঃসন্দেহে নির্ভেজাল হয়। আর যেহেতু এখানে সবচেয়ে কম দামে সেরা জিনিস পাওয়া যায়, তাই স্বর্ণ দোকানিরা বিক্রির সময় কোন দরকষাকষি পছন্দ করেন না।