মিতি ও রাসেলের বিয়ে হয়েছে
পরিবারের সম্মতিতে। বিয়ের এক মাস
পরেই মিতি আবিস্কার করলো রাসেল ভীষণ
খুঁতখুঁতে। কেবল বাসাতেই নয়, বরং কোন
আত্মীয় বা কলিগের বাসাতে গেলেও
মিতির নানা দোষ নিয়ে আলোচনা করে ও সবার সামনেই। মিতির রান্না ভালো না,
মিতি শুধু শপিং করে টাকা ওড়ায়, সারাক্ষণ
ফোনে কথা বলে ইত্যাদি, এমনকি একদিন
এক নারী কলিগের সামন এতো বলেই বসলো,
“ইশ! আমার বউটা যদি আপনার মত সুন্দর হতো!
মিতির ভীষণ কষ্ট হয়। কিন্তু কাউকে বলতেও পারে না ও! ওর শুধু মনে হয়, রাসেল তো তার
স্বামী, সবার সামনে এভাবে ওর দোষ
নিয়ে আলোচনা না করে, ও কি পারতো না
শুধু মিতিকে একা একটু বুঝিয়ে বলতে!আর
এতে তো রাসেলকে নিয়েও আত্মীয়রা
হাসাহাসি করে। সেটাও ভালো লাগে না মিতির। সম্পর্কটা এভাবেই দিন দিন
খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
পাঠক, রাসেল-মিতির ঘটনা একটা উদাহরণ
মাত্র! কিন্তু এমনটা ঘটে প্রায়শই। তাই একটু
খেয়াল রাখুন, নিজের স্ত্রী সম্পর্কে সবার
সামনে কিছু বিষয় আলোচনা থেকে বিরত থাকুনঃ
আপনার রান্নার সাথে তো ওর রান্নার
তুলনাই হয় নাঃ
কোথাও গেলেন, হতে পারে আত্মীয় বা
কলিগের বাসায়। সেই ভদ্রমহিলা হয়তো
অনেক ভালো রান্না করেন আর তা আপনার ভালোও লেগেছে। কিন্তু তাই বলে তার
প্রশংসা করার জন্যে নিজের স্ত্রীর
রান্নার সাথে তুলনা দিতে যাবেন না।
আপনার স্ত্রীকে খাটো করে হয়তো আপনি
অন্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছেন, কিন্তু
আপনার জন্যে সব সময় ভালোবেসে খাবার তৈরী করার মানুষটি কি এতে কষ্ট পান না?
যার প্রশংসা করছেন, তার প্রশংসাই করুন।
কেবল তাকে আপনি কষ্টই দেন না, বরং
নিজেও নিজের অজান্তেই সামনের
মানুষটির সামনে অনেকখানিই ছোট হয়ে যান!
ও ভীষণ ঝগড়াটেঃ
মান অভিমান হোক বা মনোমালিন্য,
দাম্পত্যে সবারই এমনটা থাকে। একটু আধটু
ঝগড়া ঝাঁটি বরং সম্পর্ককে মজবুত করতে
ভূমিকা রাখে। কিন্তু এটি আপনার ও আপনার স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটা
সবার সামনে বলে স্ত্রীর ওপর দায় চাপাতে
চান অনেকেই। যা আপনার সুন্দর
মানসিকতার পরিচয় দেয় না।
ইশ! আমার স্ত্রী যদি আপনার মতন হতোঃ
অন্য কোন নারীর সামনে এ কথাটা বলছেন আপনি। এর ফলে প্রথমত আপনার স্ত্রী যে
কী ভীষণ কষ্ট পান, তা কি আপনই জানেন?
আর যাকে বলছেন, তিনিও আপনাকে একজন
হীনমন্যতায় ভোগা অসুখী ব্যক্তি ভেবে
করুণা ছাড়া আর কিছুই করবেন না।
ও আগে পারতো এখন আর পারে নাঃ আপনার স্ত্রী হয়তো আগে গান গাইতেন,
লেখালিখি বা নাচ করতেন। বিয়ের পর
সাংসারিক ঝামেলায় হয়তো তার চর্চা
নেই। কিন্তু তাই বলে সবার সামনে তার
প্রতিভাকে ব্যর্থতায় ঢেকে দেবেন না।
কেননা তিনি যা প্রতিভার অধিকারী তার চর্চা করলে আবারো পারবেন। তাই তার
প্রতিভার সম্মান দিন।
আমার স্ত্রী তো আপনার স্ত্রীর মত সুন্দরী
নাঃ
এটির মত নোংরা কথা জগতে দ্বিতীয়টি
নেই। আপনার স্ত্রীর সামনেই যদি অন্য কোন নারীকে এ কথা বলার অভ্যাস থাকে।
তবে এটি তো আপনার স্ত্রীকে কষ্ট দেয়ই
আর সবার সামনে আপনাকে কিছুটা
চারিত্রিক ত্রুটিসম্পন্ন হিসেবেও প্রমাণ
করে।
আমার বাসার বাইরে বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতেই ভালো লাগেঃ
এর মানে আপনি যাই দাঁড় করাতে চান না
কেন, সবার সামনে এর একটাই মানে দাঁড়ায়,
দাম্পত্যজীবনে সুখী নন। এ কথাটি আপনার
মনেই রাখুন। ওকে সব পোষাক মানায় নাঃ
আপনার স্ত্রী হয়তো অতিরিক্ত মোটা বা
শুকনো। তাই বলে সবার সামনে তার ত্রুটি
নিয়ে আলোচনা করা কি উচিত বলুন? আপনার
স্ত্রীকে কোন বিশেষ পোষাক না মানালে
তাকে সেটি ঘরেই বলুন। ব্যক্তিগত কথা সবার সামনে প্রচারের কোন মহিমা নেই।
ওর চেয়ে ভালো মেয়েকে বিয়ে করতে
পারতাম আমিঃ
“পারতেন তো করেন নি কেন?” শুধু আপনার
স্ত্রীই নয়। এমন কথায় হাসবে অনেকেই।
এতে আপনার নিজের অসম্মান ছাড়া আপনার স্ত্রীর কোন অসম্মান নেই। এসব
কথা বলে যতটা না আপনার স্ত্রীকে কষ্ট
দিচ্ছেন আত্র চেয়ে সবার সামন এহাসির
পাত্রেই পরিণত হচ্ছেন আপনি।
ও তো অনেক খরচ করে, মিথ্যা বলেঃ
দয়া করে বাইরের মানুষকে নালিশ করা বন্ধ করুন। আপনার স্ত্রীকে ওরা পরিবর্তণ করতে
পারবে না। পারলে আপনিই পারবেন। তাই
খরচ কমাতে বাজেট করুন। মিথ্যা কমাতে
আপনার উপর আস্থা তৈরীর চেষ্টা করুন।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক একান্তই ব্যক্তিগত।
তাই নিজ স্ত্রীর সম্পর্কে সবার সামনে এমন কোন কথা বলবেন না, যা তাকে হেয় করে।
তিনি হেয় হলে কিন্তু আপনারও ইমেজ কমে
বৈ বাড়ে না। ভালো থাকুন।