ক্রিশানের
ফিরে আসা
আহমেদ বায়েজীদ
স্পেসশিপের
দেয়ালে ধাক্কা দিয়ে ভাসতে ভাসতে অন্য
পাশে চলে এলো ক্রিশান।
জানালার
কাছে এসে থামলো।
জানালার
স্বচ্ছ
কাচে হাত
রেখে স্থির
করলো ভাসমান
শরীরটাকে।
আরেকটু
উঁচু হয়ে জানালার
সমান্তরালে রাখলো চোখ
দুটো। বাইরে গাঢ়
অন্ধকার ফুড়ে হাজার
মাইল দূরের তারার
হালকা আলো ছাড়া আর
কিছুই নেই। তবুও
একাকিত্ব আর এক
ঘেয়েমি কাটাতে মাঝে মাঝে বাইরে তাকিয়ে
থাকে ক্রিশান।
প্রতিবারই সেই একই
দৃশ্য দেখতে হয় তাকে।
কিন্তু তার মধ্যেও
বৈচিত্র্য খুঁজে নেয়
মানুষের মন। ক্রিশানও
সেটাই করে। যখনই
বাইরের অসীম
শূন্যতায় চোখ রাখে,
মনে মনে ভাবে নতুন
কিছু দেখছে। উদাস
মনে ভাবতে থাকে প্রকৃতির
রহস্যের কথা। এতটাই
আনমনা হয় যে তখন
স্পেসশিপের মৃদু
আওয়াজটাও
শুনতে পায় না। বিশাল
একটা স্পেসশিপে একা একজন
মানুষের সময়
কাটানোর জন্য এর
চেয়ে ভালো কোনো পদ্ধতি জানা নেই
ক্রিশানের। যদিও
গোটা অভিযানের
বেশির ভাগ সময়টাই
তার শীতল
ঘুমে কেটেছে।
সঙ্গী রোবটগুলোকেও
ঘুম
পাড়িয়ে রেখেছে ক্রিশান।
কোনো প্রয়োজন হলেই
করে।
রোবটগুলো দেয়া হয়েছে তার
সময় কাটানোর
সঙ্গী হিসেবে। কিন্তু
জেনেশুনে মেশিনের
সাথে আড্ডা দেয়ার
মিছেমিছি খেলা ভালো লাগে না ক্রিশানের।
তাই কাজ
না থাকলে সেগুলোর
সিস্টেম অফ
করে রাখে। আর
যতক্ষণ
জেগে থাকে নানা চিন্তা করে সময়
কাটায়।
হঠাৎ
একটি উল্কা ছুটে যেতে দেখে মনটা খুশি
হয়ে
উঠলো ক্রিশানের।
মহাকাশে উল্কার
ছোটাছুটি নিত্যনৈমিত্তিক
একটি ব্যাপার, বা এর
মধ্যে উপভোগেরও
কিছু নেই। তবুও
কী এক
অজানা কারণে মনটা খুশি হয়ে উঠলো জানে না
ক্রিশান।
হয়তোবা অনন্ত
শূন্যতার মাঝে একটু
বৈচিত্র্য চোখে পড়ায়।
অথচ প্রথম যেদিন
স্পেসশিপে চড়েছিল
ক্রিশান সেদিন
কী উত্তেজনাই
না ছিল চোখে-মুখে!
ক্রিশানেরে মনে আছে,
তাকে যখন শীতল
ঘুমের
ট্রেনিং দেয়া হয়েছে তখন
সে বলেছিল,
পুরোটা সময়
সে মহাকাশ দেখেই
কাটিয়ে দেবে। ঘুমের
দরকার হবে না। অথচ
এতগুলো বছর পর
মনটা ছটফট
করছে কখন এই
যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে।
পা রাখবে প্রিয়
পৃথিবীর মাটিতে।
কেমন আছে পৃথিবী?
মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন
করে ক্রিশান।
নিশ্চয়ই অনেক
পরিবর্তন
হয়েছে তার। আগের
সেই পরিচিত
মানুষগুলোও
গিয়ে দেখবে একদল
নতুন, অপরিচিত মানুষ
বসবাস
করছে পৃথিবীতে।
যাদের কেউই
ওকে চিনবে না।
বিজ্ঞান একাডেমির
যে কর্মকর্তারা ওকে রিসিভ
করবে, সফল
একটি অভিযানের
জন্য অভিনন্দন
জানাবে, তাদের মধ্যেও
হয়তো থাকবে না পরিচিত
কোনো মুখ। পৃথিবীর
হিসেবে আর মাত্র
সাতটি দিন। তারপরই
আবার ক্রিশান
দেখা পাবে পৃথিবীর।
মনের সুখে বিচরণ
করবে নিজের প্রিয়
জায়গাগুলোতে।
ধীরে ধীরে অতীতে হারিয়ে যায়
ক্রিশান।
ও ছিল বিজ্ঞান
একাডেমির
সেরা ছাত্র।
গুরুত্বপূর্ণ
একটি মহাকাশ
অভিযানের জন্য
ওকেই বাছাই
করে কর্তৃপক্ষ।
ক্রিশানও
সানন্দে রাজি হয়।
কিছুদিন চলে ট্রেনিং।
তারপর এই অসীম
গন্তব্যে যাত্রা। এই
অভিযানটি একদিকে যেমন
সম্মানজনক,
অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ।
পৃথিবীর মহাকাশ
কন্ট্রোল
নেটওয়ার্কের আওতার
বাইরে এই অভিযান।
অর্থাৎ অভিযান শুরুর
লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। এতে পরবর্তীতে লিখতে উৎসাহ পাবো।