লাইলী মজনু কাব্য থেকে
লাইলী মজনু যখন পাঠশালায়
লেখা পড়া করতেন তারা তখনই
প্রতিজ্ঞা করেন প্রেমের আগুনে
তাদের শরীর পুড়ে পতঙ্গের মত
হয়ে যাবে তবু তারা সারাজীবন
চির প্রেমের বন্ধনে থাকবেন ।
একে অপরকে সারা আর অন্য
কোন মানব প্রেমে জরাবেন না।
পাঠশালা থেকে লাইলী সখীদের
সাথে একবার বাড়ি ফেরার পথে
ঠিক করল মজনুর সাথে দেখা
করবে কিন্তু কি ভাবে হঠাৎ করে
বুদ্ধি খাতিয়ে সখিদের বল্ল
তোমরা আগে আগে যেতে থাক
আমি পিছু আছি তোমাদের সাথে
এক সংঙ্গে যাওয়া সম্ভব নয়
আমার পায়ে কাঁটা ফুটেছে । পরে
লাইলীর সংঙ্গের সখীরা আগে
চলেগেলেন আর লাইলী পিছু
নিলেন মজনুর সাথে দেখা করার
জন্য ।
লাইলী আর মজনু প্রায় সময়
পাঠশালা থেকে বাড়ি ফেরার
পথে মজনু লাইলীকে বলতেন
লাইলী নিশ্চয় আমি আমার
জিবনে কোন পূর্ণ করেছি আর সে
পূর্ণের ফল হিসেবে তোমাকে
পেয়েছি।
অবশ্যই আমার কোননা কোন
পূর্ণের ফল হলে তুমি ।
মজনু লাইলীকে বলতেন লাইলী
ছাড়া মজনুর জীবন ব্যর্থ । আর
লাইলী মজনুকে বলতেন আমার
জীবন যৌবন বন্ধু সবই তোমার
এবং তা শুধু তোমারই থাকবে
তুমি বীনে অন্য পুরুষ নয় ।
লাইলী আর মজনু পাঠশালা
থেকে ফেরার পরে দুজন দুজনার
বাড়ি চলে যাবার পরে যখন
রাত্রী বেলা দুই জন দুই জনের
ঘরে শুয়ে থাকতেন তখন তাদের
চোখে ঘুম আসত না আর তখন
তারা
চিন্তা করতেন কখন সকাল হবে
কখন সূর্য উঠবে আর তখন তারা
একে অপরকে দেখে মনের
জ্বালা মেটাবে ।
পাঠশালায় সকল সংঙ্গীদের মন
লেখা পড়ায় থাকলেও তাদের মন
দুজন দুজনের দিকে থাকত ।
পাঠশালায় সকল সংঙ্গী সখীরা
শাস্ত্র পাঠ করত । লাইলী আর
মজনু তারা দুজন দুজনকে দেখত
আর প্রেমপাঠে ব্যস্ত থাকত ।
এ ভাবে তাদের প্রেম চলতে
থাকে । হঠাৎ করে একদিন লাইলী
মা তাদের প্রেমের কথা জানতে
পারেন ।
লাইলী মজনুর প্রেমের কথা
লাইলী মাকে জানালেন
লাইলীর সাঠে পাঠ শালায়
থাকা তার সহপাঠীরা ।
পাঠশালায় গিয়ে লাইলী মজনুর
সাথে প্রেম করে এ ঘটনা প্রথমে
জানে লাইলীর মা অর্থাৎ
লাইলী মজনু প্রেমের কথা যখন
লাইলীর মা জানতে পরলেন তখন
থেকেই লাইল পাঠশালা যাওয়া
বন্ধ করে দেন এবং লাইলীকে
লাইলীর মা ঘরে বন্দী করে
রাখেন।
এবং লাইলীর মা লাইলীর ঘরের
আশে পাশে কঠড় পাহারার
ব্যবস্থা করলেন ।
লাইলীর মা লাইলীকে গৃহ বন্দী
করার পড়ে লাইলীর ঘরে থাকা
লাইলীর যাবতীয় কাগজ খাতা
কলম সব সরিয়ে নেন এবং কালির দোয়াত
ভেঙে দেন।
লাইলীর মা লাইলীকে
বোঝানোর চেষ্টা করতেন
কিশোরী বয়সের প্রেমের কথা
কেউ জানলে আর তাকে কেউ
বিয়ে করবে না । কিন্তু তার মায়ের কোন
কথায় মন দিতনা । তার মন শুধুই মজনুর পনে
চেয়ে থাকত।
এদিকে মজনুও থেমে নাই তার
প্রিয়তমা গৃহ বন্দী শুনে বা
জানার পরেও মজনু লাইলীর
সাথে দুইবার ছদ্মবেশে দেখা
করলেন ।একবার অন্ধ ছদ্মবেশে
আরেক বার ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে
দেখা করলেন।
যখন মজনু অন্ধের ছদ্মবেশে
গেছেন তখন লাইলী তার মাকে
বললেন অন্ধ মানুষ যদি খাদে
পড়ে তাই বলে মাকে লাইলী
আসে
মজনুর দর্শন করতে শুধু দুজন
দুজনকে দর্শন করলো কোন কথা
নয় কারন কথা বল্লে যদি
দুষ্টলোকে দেখেফেলে তাই কথা
বল্লো না।
লাইলীর বাবা জানতে পাড়লো
মজনু তাদের বাড়ি ভিখারি
বেশে লাইলীর সাথে দেখা
করতে গেছে আর তখন লাইলীর
বাবা পাড়ার
ছেলেদের বলেছিল মজনু যাতে
আর কখন লাইলীর সাথে দেখা
করতে তাদের বাড়িতে না যেতে
পারে তাই লাইলীর বাবা
বলেছিল মজনুকে মেরে ফেলতে ।
কিন্তু পাড়ার ছেলেরা মজনুকে
পাগল পাগল বলে ঢিল মেরে
মেরে তাকে ঐ নগর ছাড়া করে ।
মজনু তখন থেকে প্রেমোম্মাদ
থাকে তখন মজনুর বাবা অনেক
খোজার পরে পেল কিন্তু মজনু
তার বাবাকে না চিনতে পেরে
জিজ্ঞাসা করল কি নাম তোমার
মহাশয় ।
মজনুর বাবা কিছুতেই যখন
ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে
আনতে সক্ষম হচ্ছে না তখনই
বাবা মিথ্যে কথা বললেন
মজনুকে । মজনুর বাবা মজনুকে বললেন লাইলী
মজনুকে ডাকছে এ কথাশুনে মজনু বাড়িতে
আসলেন ।
মজনু যখন বাড়িতে ফিরে দেখেন
লাইলী বাড়িতে নাই তখন মজনু
আবার পাগলামী কান্না শুরু
করেন ।
মজনু সে প্রতিবেশি গুরুজনদের
সাথে পরামর্শ করে লাইলীর
পায়ের ধুলো নিয়ে মজনুর চোখের
পাশে দিয়ে মেখে দেন এবং
মজনুকে জানান হয় ওতা লাইলীর
পায়ের ধুলো আর সাথে সাথে
মজনু কান্না বন্ধ করে দিল যাতে
করে চোখের পানি দিয়ে ধুলো
না ধুয়ে যায় ।
মজনুর বাবা লাইলীর পায়ের
ধুলো এনে যখন মজনুর চোখের
নিচে দিয়ে লাগিয়ে দিলেন
তখন থেকে মজনু কান্না বন্ধ করে
দিলেন কারন কাদঁলে যদি
লাইলীর পায়ের ধুলো মুছে যায়
তাই মজনুর কান্ন বন্ধ ।
এখন আর মজনু না কাদঁলেও তার
হাতের ধারালো নখ দিয়ে তার
বুকের মাংস খুবলে নেওয়া শুরু
করল ।
মজনুর বাবা আমীর সাহেব
লাইলীর বাবার কাছে গেলেন
লাইলী ও মজনুর সাথে বিয়ের
প্রস্তাব নিয়ে কিন্তু লাইলীর
বাবা মালিক কিছুতে এ বিয়েতে
রাজি হলেন না । লাইলীর বাবার
একটি কথাই মজনু একজন উম্মাদ
আর কোন বাবায় জেনে শুনে তার
মেয়েকে কোন উম্মদের সাথে
বিয়ে দিবে না । তখন মজনুর
বাবা লাইলীর বাবাকে বল্লেন
আজ মজনু উম্মাদ লাইলীর জন্য
তাই লাইলর সাথে মজনুর বিয়ে
হলে মজনু সুস্থ হয়ে যাবে। এবং
মজনুর বাবা লাইলীর বাবাকে
আর বল্লেন যদি মালিক তার
কন্যাকে মজনুর সাথে বিয়ে দেন
তাহলে মজনুর বাবা লাইলী
বাবাকে বহু মূল্যের রজত কাঞ্চন
দেবে ,দাস দাসী দেবে,দুইশ উট
দিবে পাচশ ষাড় দিবে এবং
পঞ্চাশটি হাতি দিবে উপহার
হিসেবে। অনেক বোঝানর পরে
লাইলীর বাবা বিয়েতে রাজি
হোলেন।
মজনুর বাবা মজনুকে চুল নখ
কাটিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে
যখন লাইলীদের বাড়ি নিলেন
তখন মজনু লাইলীদের বাড়ির কুকুর
টিকে বুকে টেনে নিয়ে চুম্মন
করল আর তা দেখে লাইলী বাবা
আবার মজনুর বাবাকে না করে
দিল যে মজনু অনেক উম্মাদ তাই
তার সাথে লাইলীকে বিয়ে
দেবেন না ।
এর মধ্যে লাইলীর মা লাইলীকে
জোড় করে অন্য ছেলের সাথে
বিয়ে দিবেন বলে লাইলীকে
জানান আর এ কথা শোনার পরে
লাইলী তার মাকে বলে দিল মা
এ জীবন যৌবন ও সতীত শুধু
একজনের আর তা হোল মজনুর ।
লাইলী তার মাকে আর বল্ল মা
এক রাজ্য যেমন দুই রাজা থাকতে
পারে না তেমন এক নারীর মনে
দুটি পুরুষ স্থান পায় না । কারন
মা তোমার মেয়ে মনে প্রাণে শুধু
মজনুর আর বিয়ের কথা বলছো সে
অনেক আগেই মজনুর মনের সাথে
লাইলীর মনের বিয়ে হয়ে গেছে ।
তার পরেও লাইলীর বাবা মা
লাইলীকে জোড় করে অন্য
ছেলের সাথে বিয়ে দেন কিন্তু
লাইলী বিয়েতে বাধ্য হোলেও
সে মনে প্রাণে মজনুকে স্বামী
বলে মনে করেন ।
তাই লাইলীর বাবা মা জোড়
করে যে ছেলেটির সাথে
লাইলীকে বিয়ে দিলেন সেই
ছেলেটিকে লাইলী বাসর ঘরে
তার পা দিয়ে আঘাত করলে
ছেলেটি লজ্জায় লাইলীকে
ত্যাগ করে চলে যান ।
বনে জংঙ্গলে গুরে বেরায় মজনু
একদিন হঠাৎ স্বপ্নে লাইলীকে
দেখতে পান আর ঘুম ভাংঙার
পরে মজনু সত্যসত্য লাইকে
দেখতে লাইলীদের বাড়িতে যান
। মজনুকে দেখে লাইলীদের
বাড়ির দারোয়ান তাকে আঘাত
করতে যায় তখন মজনু তার
হাতদিয়ে দারোয়ানের আঘাত
ফেরান ।
ঘটনাক্রমে অন্য এক রাজ্যের
রাজা নয়ফলরাজ নামক রাজা
যানতে পারলো লাইলী ও মজনুর
প্রেমের কথা তখন নয়ফলরাজ
মজনুকে ডেকে নেওয়ায় এবং নয়
ফলরাজ মজনুকে কথা দেয় অবশ্যই
লাইলীকে তার কাছে এনে দেবে
বলে ।
নয়ফলরাজ লাইলীর বাবার কাছে
পত্র লেখে অতি শিগ্রই যেন
লাইলীর সাথে মজনুর বিয়ের
ব্যবস্থা করা হয় এবং মজনুর সাথে
লাইলীর বিয়ে দেয় না হোলে
যুদ্ধ করবে বলে পত্র পাঠিয়ে
দিলেন ।
কিন্তু তাতে কোন লাভ
হোল না লাইলীর বাবা পত্র
লেখলেন তারাও তার থেকে কম
নয় তারা নয়ফলরাজের সাথে যুদ্ধ
করবে কিন্তু লাইলীকে মজনু
সাথে বিয়ে দেবে না বলে পত্র
লেখে নয়ফলরাজের কাছে
পাঠিয়ে দিলেন ।
পরে নয়ফলরাজ তার সৈন্য নিয়ে
হামলা বা যুদ্ধ করলেন লাইলীর
বাবার সাথে এবং সে যুদ্ধে
রাজা নয়ফলরাজের জয় লাভ
হোল ।নয়ফলরাজ সে যুদ্ধে জয়
লাভ করে লাইলীকে মজনুর সাথে
বিয়ে দেবে বলে সাথে করে
নিয়ে আছে।
কিন্তু নফলরাজ মজনুর জন্য
যুদ্ধকরে লাইলীকে জয় করলেও
যখন সে লাইলীর রুপ দেখল তখন
সে নিজেই লাইলীর রুপে পাগল
হয়ে গেল এবং সে চাইলো
কৌশলে মজনুকে বিষ পান
করিয়ে মেরে ফেলতে কিন্তু
এখানে ভাগ্যের কি নি দারুন
খেলা রাজা নয়ফলরাজ যে
কর্মচারিকে বলে মজনুকে বিষ
দিতে আর তাকে মধু দিতে বলে
সে কর্মচারি ভুল করে রাজা
নয়ফলরাজকে বিষ দেয় আর
মজনুকে দেয় মধু আর তাতে
নয়ফলরাজার মৃত্যু হয় ।
অবশেষে সেখান থেকে আবারও
লাইলীর পিতা মাতা লাইলীকে
নিয়েচলে গেলেন ।
রাত্রি বেলা লাইলী একা ঘরে
শুয়ে আছে সে যৌবনে জ্বালায়
কাতর তাই তার এক সখীকে
ডেকে এনে দুজনে কথা বলে
রাত্রি পাড় করতে চাইছেন সে
সময় লাইলী তার সখীর হাতে
হাত রেখে বললেন সখীগো
লাইলীর মনে যৌবন জোয়ার
জেগেছে । রতি জেগেছে অথচ
প্রেমিক নেই । এ দশা অসহ্য ।
বিষাক্ত নাগিনী ছোবল মারলে
বিষে যেমন শরীর জর জর তেমনি
যৌবনাবেগের জ্বালায় লাইলী
কাতর ।
লাইলীর মা পর দিন সকালে
আবার লাইলীর সামনে বিয়ের
প্রস্তাব নিয়ে গেলেন । লাইলী
তার মাকে বলে দিলেন হয় মৃত্যু
না হয় মজনুর সাথে মিলন এ দুটি
ছাড়া লাইলীর জীবনে আর কিছু
প্রয়োজন নাই ।
লাইলীরা স পরিবার যাচ্ছিলেন
বনের পাশ দিয়ে সেখানে
লাইলীদের উট অসুস্থ হয়ে
পড়াতে লাইলী পরিবারের
সকলের চখু আরালে যান মজনুকে
দেখতে লাইলী বনের এক কোনে
দেখতে পান মজনু মৃত মানুষের মত
অসচেতন হয়ে পড়ে আছে । লাইলী
দৌড়ে মজনুর কাছে গেল এবং সে
মজনুকে ডাক দিল । লাইলীর
ডাকে মজনু চেতন হোলেন ।
মজনুকে লাইলী বললেন তুমি
আমাকে বিয়ে কর এবং বিয়ের
পরে আমাকে তোমায় সেবা
করার সুযোগ দেও । তাতে
আমাদের দুজনের সুখ শান্তি
ফিরে আসবে ।
মজনু লাইলীকে
বল্লো গোপনে যদি তোমাকে
আমি বিয়ে করি আমাদের সে
বিয়ে এ সমাজের কেউ যে মেনে
নিবে না লাইলী ।এ সমাজ
আমাকে শাশ্তি দিবে । তাই বলে
মজনু লাইলীকে প্রত্যাখ্যান
করলো ।
অবশেষে লাইলী মজনুর বিরহে
মৃত্যু বরণ করলেন । লাইলীর মা
লাইলীকে গোলাপ জ্বলে শেষ
গোছল করিয়ে দিয়ে লাইলীর
শরীরে চন্দন দিয়ে সাজিয়ে
কাফন পড়ালেন । মিত্যুর আগে
লাইলী তার মাকে বলেছেন
লাইলীর মৃত্যুর পড়ে যেন লাইলীর
মিত্যুর সংবাদ মজনুকে দেওয়া
হয়। তাই লাইলীর মা বনে গিয়ে
লাইলীর মত্যুর সংবাদ মজনুকে
দিয়ে মেয়ের শেষ অনুরোধ
রাখলেন ।
লাইলীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে মজনু
বনে থেকে চলে গেলেন
লাইলীদের এলাকায় আর
সেখানে মজনু ছোট বড় সকল
মানুষের
কাছে লাইলীর কবরের সন্ধান
চাইলে সকলে মজনুকে বলে মজনু
যদি লাইলীকে সত্যই ভালবাসে
ও লাইলী মজনুর প্রেম যদি সত্য
হয়ে থাকে তাহলে লাইলীর কবর
মজনু নিজেই একা একা খুজে
বাহির করতে পারবে ।
সত্য সত্য তাই হলো মজনু একা একায় লাইলীর
কবর খুজে পেল এবং লাইলীর কবরে মথা
রেখে মজনু শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেন ।