আমরা যারা প্রযুক্তি নিয়ে একটু অনুসন্ধান করি, তারা অবশ্যই কোন সময় আইপি অ্যাড্রেস (IP address) এর কথা শুনে থাকবো। কিন্তু, হয়তোবা এখনো আমরা অনেকেই আইপি অ্যাড্রেস সম্বন্ধে জানিনা। আপনি যদি এখনও IP address সম্পর্কে না জেনে থাকেন, তবে আপনার জন্যই আজকের এই ব্লগটি।
আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আপনারা আইপি অ্যাড্রেস বা আইপি ঠিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ। আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন, আইপি অ্যাড্রেস কি, IP Address কাকে বলে, আইপি অ্যাড্রেস কিভাবে কাজ করে, IP Address এর কাজ কি ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে। একটি আইপি ঠিকানা কিভাবে কাজ করে এবং কোন একটি ডেডিকেটেড প্রাইভেসি সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনার সুরক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ, সেটি জানতে হলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি দেখতে থাকুন।
IP Address (আইপি অ্যাড্রেস) কি?
IP এর পূর্ণ রূপ হলো- Internet Protocol এবং IP Address এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে, Internet Protocol Address। প্রত্যেকটি IoT ডিভাইস বা ইন্টারনেট সংযুক্ত প্রত্যেকটি ডিভাইসের ইন্টারনেটে পরিচয় বহন করার জন্য একটি আলাদা ইউনিক নাম্বার থাকে, যে নাম্বারটিকে আইপি (IP) অ্যাড্রেস বলে।
একটি IP address বা Internet protocol ঠিকানা, কিছু সংখ্যার একটি সিরিজ, একটি নেটওয়ার্কের অনেকগুলো ডিভাইসের মধ্যে থেকে যেকোনো ডিভাইসকে শনাক্ত করে। কম্পিউটার গুলো ইন্টারনেটের পাশাপাশি অন্যান্য নেটওয়ার্কে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে।
“ইন্টারনেট প্রটোকল” হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে কমিউনিকেশন করার জন্য এমন একটি নিয়মের সেট, যেটির মাধ্যমে ইন্টারনেটে একাধিক ডিভাইসের মধ্যে যোগাযোগ হয়ে থাকে। যেখানে একটি আইপি ঠিকানা ইন্টারনেটে একটি নেটওয়ার্ক বা ডিভাইসকে শনাক্ত করে।
IP Address গুলো প্রত্যেকটি ডিভাইসের জন্য আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। যে সমস্ত ডিভাইসগুলো ইন্টারনেটের সাথে কমিউনিকেট করতে পারে, সেগুলোর সমস্ত গুলোতেই একটি করে ইউনিক আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে। আমরা যখন ইন্টারনেটে কোনো একটি বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য অথবা কোন একটি বিষয়ে পাবার জন্য কোন সার্ভারে রিকোয়েস্ট পাঠাই, তখন আমাদের সেই তথ্যগুলো সঠিকভাবে সেই সার্ভারে পাঠানো এবং আবার পুনরায় আমাদের ডিভাইসে আসার ক্ষেত্রে কাজ করে আইপি অ্যাড্রেস। এখানে IP Address মূলত আমাদের ডিভাইসের ঠিকানা নির্দেশকারী হিসেবে ব্যবহার হয়।
IP Address-কে আপনার বাসার টেলিফোন নাম্বার এর সাথেও তুলনা করা যায়। যেখানে আপনার বাসার টেলিফোন নাম্বারে কোন ব্যক্তি যদি ফোন করে, তবে অবশ্যই সেই ফোনটি আপনার কাছেই আসবে। এখানে লক্ষ্য করুন যে, একটি মেইন লাইনের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে টেলিফোনের সংযোগ দেওয়া হয়; কিন্তু যখন দুজন ব্যক্তির সাথে টেলিফোনে আলাপ করা হয়, তখন কোন ব্যক্তির কথোপকথন অন্য ব্যক্তির কাছে যায় না। কেননা, এখানে তাদের দুইজনের লাইনের মাঝে একটি ইউনিক নাম্বার রয়েছে; আর সেটি হচ্ছে টেলিফোন নাম্বার। একাধিক ব্যক্তি একই টেলিফোন লাইন ব্যবহার করলেও আপনার বাড়ির নাম্বার অনুসারে এখানে কিন্তু কথোপকথন হচ্ছে। যদিও দুই ব্যক্তির মাঝে কথোপকথনের এখানে আরো অনেকগুলো ফ্যাক্টর রয়েছে, যেখানে আমি সংক্ষেপে বললাম।
আপনি যখন কারো সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন, তখন একটি নাম্বার আপনার ফোনকে শনাক্ত করে এবং উভয়ের মাঝে আপনারা কথোপকথন শুরু করেন। ঠিক তেমনিভাবে, আপনি যখন অনলাইনে যুক্ত থাকেন, তখন আপনাকে সনাক্ত করার জন্য আইপি অ্যাড্রেস ঠিক একই কাজ করে। যে কারণে, ইন্টারনেট সংযুক্ত প্রত্যেকটি ডিভাইসের জন্য একটি করে ইউনিক আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে। ইন্টারনেটে কোনো একটি বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান বা অনেক তথ্য নেওয়ার জন্য আইপি অ্যাড্রেস কাজ করে। যেখানে আইপি অ্যাড্রেস আপনার ডিভাইসকে অনুসরণ করে ঠিক আপনার ডিভাইসে পরবর্তীতে তথ্য পাঠিয়ে দেয় (যেটি আপনি চেয়েছিলেন)।
আইপি অ্যাড্রেস কিভাবে কাজ করে?
কিন্তু ডিজিটাল ভাবে যদি এই কাজটি করা হয়, তবে এক্ষেত্রে IP ঠিকানা প্রযোজ্য। যেখানে একটি ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইস রয়েছে, ভার্চুয়াল অর্থে সেখানে একটি IP ঠিকানা রয়েছে। একটি IP address আপনার নিজের কম্পিউটার ওয়েবসাইট, একটি নেটওয়ার্ক সার্ভার, আপনার স্মার্টফোন এবং ওয়েবক্যাম শনাক্ত করতে পারে। আর যে কারণেই আমরা ইন্টারনেটে কোনো তথ্য প্রেরণ করলে অথবা কোন একটি বিষয়ের জন্য রিকোয়েস্ট করলে, Internet Protocol অনুসারে আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত ডিভাইসটিতে তথ্যটি প্রেরিত হয়
Internet Protocol Address কোন একটি ডিজিটাল ডিভাইসে তথ্য প্রেরণ এবং গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: ইন্টারনেটে প্রতিটি সক্রিয় ডিজিটাল ডিভাইস এর আইপি অ্যাড্রেস ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
প্রথমে TCP/IP.
IP address বা Internet protocol Address ইন্টারনেটের আর্কিটেকচার এর একটি অংশ মাত্র। ইন্টারনেটের পরিভাষায় IP হল TCP/IP-এর একটি অংশ।
Transmission Control Protocol/Internet Protocol বা TCP/IP হলো: ইন্টারনেটজুড়ে ডিভাইসগুলোকে সংযুক্ত করার জন্য নিয়ম এবং পদ্ধতির একটি সেট। এ পদ্ধতিতে ইন্টারনেটে কোন ডেটা প্রেরণ করার জন্য সেই ডেটাকে ডাটা প্যাকেটে বিভক্ত করা হয় এবং রাউটার গুলির একটি উৎপত্তিস্থল থেকে গন্তব্যে পাঠানো হয়। যে পদ্ধতিতে ইন্টারনেটের সমস্ত কার্যকলাপ সম্পাদিত হয় এবং যেটিকে ইন্টারনেটে যোগাযোগের ভিত্তি হিসেবে বলা যায়।
আমরা যখন ইন্টারনেটে কোন একটি ডেটা প্রেরণ করি, তখন সেগুলো ছোট ছোট প্যাকেটের একটি সিরিজে বিভক্ত হয় এবং যা তারপরে ইন্টারনেটে বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়; এবং যা পরবর্তীতে গন্তব্যের ঠিকানায় সঠিক ক্রমে পুনরায় একত্রিত হয়।
ইন্টারনেটে কোন ডেটা প্রেরণের সময় প্রটোকল এর IP (Internet Protocol) Address অংশ প্রতিটি প্যাকেটের সঠিক গন্তব্য নির্দেশ করে। যেখানে ইন্টারনেটের প্রতিটি গেটওয়ে সেই ডেটাটি কোথায় যাবে এবং সেই বার্তাটি কোথায় ফরওয়ার্ড হবে, সেটি নির্দেশ করে আইপি অ্যাড্রেস।
ইন্টারনেটে একটি প্যাকেটের যাত্রা
আমরা সবাই ইতিমধ্যেই জেনে আসলাম যে, ইন্টারনেটে আমরা কোন একটি তথ্যের জন্য রিকোয়েস্ট করলে সেই তথ্যটি একটি প্যাকেট এর আকারে চলে যায় এবং পরবর্তীতে সেই ডাটা প্যাকেট হিসেবেই আমাদের কাছে আবার ফেরত আসে। কিন্তু, ইন্টারনেটে পাঠানো আমাদের এই তথ্যগুলো ডেটা প্যাকেটের আকারে কিভাবে যায়, চলুন তবে সে বিষয়ে একটু ধারণা নেওয়া যাক।
মনে করুন, আপনি ইন্টারনেটে কোনো একটি মেসেজ বা ই-মেইল পাঠাচ্ছেন, ভিডিও দেখছেন অথবা কোন একটি ওয়েব সাইট লোড করছেন। এবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার পাঠানো সমস্ত ডেটাকে প্যাকেটে বিভক্ত করা হয়। সর্বোপরি বলতে গেলে, সাধারণত এটি কিভাবে কাজ করে তা আপনার জানার প্রয়োজন নেই। ইন্টারনেটের ডিজাইন সম্পর্কে একটি দুর্দান্ত জিনিস হল যে, এই স্ট্রাকচার টিকে সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে সম্পূর্ণভাবে হাইড রাখে। আমরা তার চাইতে বরং ইন্টারনেট পাঠানো সেই ডেটা প্যাকেটের দিকে নজর দেই।
কোন একটি ডেটা প্রেরণের জন্য ইন্টারনেটে পাঠানো সেই ডেটা প্যাকেটের সর্বোচ্চ আকার 1500 Bytes। প্রতিটি প্যাকেটে একটি হেডার এবং একটি ফুটার সহ একটি মোড়ক রয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটের মোড়কে থাকা তথ্য সেই প্যাকেটের ডেটার ধরন, সেই ডেটাটি কোথা থেকে এসেছে, সেই ডেটাটি কোথায় যাচ্ছে এবং সেই ডেটা অন্যান্য প্যাকেটের সাথে কিভাবে ফিট হবে ইত্যাদি জানিয়ে থাকে।
ইন্টারনেটে ডেটার প্যাকেট স্থানান্তর বা ভ্রমণের সময় তারা একটি স্রোতের মতো করে চলে যায়; কিন্তু সমস্ত প্যাকেট একই পথ দিয়ে যায় না। এক্ষেত্রে ইন্টারনেটের যদি সে সময় যানজট থাকে, তাহলে সেই বার্তাটির প্যাকেট বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ব্যাকবোনের (Network backbone) বা বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। তারপর প্যাকেটগুলো গন্তব্যে পৌঁছানোর পর প্রাপক কম্পিউটার প্যাকেটগুলোকে মূল ডেটাতে পুনরায় রূপান্তরিত করে।
এখানে প্রতিটি প্যাকেটে আইপি অ্যাড্রেস সম্বলিত থাকায়, ইন্টারনেটে সেই প্যাকেট এর উৎপত্তি এবং গন্তব্য স্থল খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়। এখানে প্রতিটি প্যাকেটের মোড়কে IP-address যুক্ত থাকার কারণে, একজনের তথ্য অন্যজনের কাছে যায়না।
এবার আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আইপি অ্যাড্রেস কোন কাজে লাগে। আশা করছি, আমি আপনাকে বোঝাতে পেরেছি।
আইপি অ্যাড্রেস কত প্রকার?
দুই ধরনের আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে। এগুলো হলো: IPv4 এবং IPv6। আপনি যদি সংখ্যা গণনা করতে থাকেন, তাহলে এদের পার্থক্য সনাক্ত করা সহজ হবে। IPv4 দ্বারা বোঝানো হয়েছে: Internet Protocol Version 4 এবং যা ৩২ বিটের আইপি অ্যাড্রেস।
IPv4 ঠিকানায় ০ থেকে ২৫৫ পর্যন্ত চারটি সংখ্যার একটি সিরিজ রয়েছে: যেমন IPv4 শুরু হয়েছে 0.0.0.0 এবং শেষ 255.255.255.255 তে। এখানে সবগুলো নাম্বার ক্রমান্বয়ে সাজালে সর্বোচ্চ 4294967296 টি ইউনিক আইপি অ্যাড্রেস পাওয়া যাবে। আর তাহলে, IPv4 ঠিকানায় আমরা সর্বোচ্চ 4294967296 টি ডিভাইসকে শনাক্ত করতে পারি বা IPv4 ব্যবহার করে আমরা এতগুলো ডিভাইসে IP address দিতে পারি।
বর্তমানে প্রতিনিয়ত ডিজিটাল ডিভাইস গুলোর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু, সেখানে IPv4 দিয়ে কিন্তু সমস্ত ডিভাইসগুলোতে একটি করে ইউনিক IP (Internet Protocol) Address দেওয়া সম্ভব নয়। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য সামনে এসেছে IPv6 বা Internet Protocol Version 6।
IPv6 ঠিকানা 128-bit গঠিত। IPv6 ঠিকানা গুলোকে কোলন দ্বারা পৃথক করা হয় এবং চারটি হেক্সাডেসিমেল সংখ্যার আটটি গ্রুপ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এর উদাহরণ হিসেবে একটি Internet Protocol Version 6 অ্যাড্রেস হলো: 2574:0baa1:0b23:2aba:8b2a:32ac:5ac2:a4c3।
আইপি ঠিকানার অংশ
একটি আইপি অ্যাড্রেস এর দুইটি অংশ থাকে। এগুলো হলো: Network ID (নেটওয়ার্ক আইডি) এবং Host ID (হোস্ট আইডি)। Network ID হলো অ্যাড্রেস এর প্রথম তিনটি নাম্বার এবং Host ID হলো অ্যাড্রেস এর চতুর্থ নম্বর।
আপনি যদি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত না জেনে থাকেন, তাহলে আপনি আমার পূর্বের এই আর্টিকেলটি দেখতে পারেন।
আইপি অ্যাড্রেস কোথা থেকে আসে?
IPv4 অ্যাড্রেস এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮০ সালের দিকে এবং যখন ইন্টারনেট ছিল শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীর জন্য একটি প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। যেখানে IPv4 ব্যবহার করে আইপি অ্যাড্রেস এর নাম্বারের কম্বিনেশন করে সর্বোচ্চ 4.3 বিলিয়ন ইউনিক অ্যাড্রেস বানানো সম্ভব। আর এটি আপনার কাছে হয়তোবা অনেক বেশি শোনাচ্ছে। কিন্তু, সমস্ত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট এবং সমস্ত IoT ডিভাইস গুলো একত্রিত করে Internet Protocol Version 4 অ্যাড্রেস ইতিমধ্যে শেষ হবার পথে গিয়েছে।
The Internet Engineering Task Force বা (IETF), যারা ইন্টারনেট টেকনোলজি Backbone ডিজাইন করে থাকে। IPv6 Protocol এড্রেস দিয়ে 340 ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন আইপি অ্যাড্রেস বানানো সম্ভব। যার অর্থ হচ্ছে, Internet Protocol version 6 (IPv6) দিয়ে তৈরি আইপি এড্রেস গুলো শেষ করা প্রায় অসম্ভব।
পাবলিক এবং লোকাল আইপি অ্যাড্রেস
দুই ধরনের আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে। এগুলো হলো: External বা public IP address; এবং local বা Private address। আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আপনাকে একটি External বা public IP address দিয়ে থাকে। আপনি যখন ওয়েবে সার্চ করেন, তখন আপনার আইএসপি আপনার এক্সটার্নাল আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে আপনাকে ওয়েবসাইটের সাথে সংযোগ স্থাপন করে দেয়। আপনি হয়তোবা এখনো পর্যন্ত Public vs local IP address সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারেননি। চলুন তবে, আপনাকে এবার (পাবলিক বনাম লোকাল আইপি অ্যাড্রেস) সম্পর্কে একটু সোজা ভাষায় বোঝানো যাক।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি কোন একটি ISP এর কাছ থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন নিলেন। এক্ষেত্রে, আপনি আপনার বাড়িতে একটি রাউটার এর অধীনে একাধিক ডিভাইস অবশ্যই ব্যবহার করবেন। এ সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনার রাউটার তার সাথে সংযুক্ত প্রত্যেকটি ডিভাইসকে একটি করে ইউনিক আইপি অ্যাড্রেস প্রদান করবে। যেদিকে আমরা local IP address বলে থাকি। local IP address শুধুমাত্র রাউটার থেকে আপনার ডিভাইস পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে। আর রাউটারের কাছে রয়েছে Public IP Address এবং যেটির মাধ্যমে রাউটার ইন্টারনেটে বিভিন্ন সার্ভার এর সাথে যোগাযোগ করে।
আপনি ইন্টারনেটে কোনো একটি রিকোয়েস্ট পাঠানোর পর, local IP আপনার রাউটার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং Public IP Address রাউটারের পরবর্তী ধাপে কাজ করে। ইন্টারনেট থেকে কোন একটি তথ্য নিয়ে আসার পর রাউটার আবার আপনার local IP address অনুসরণ করে আপনার ডিভাইসে সেই তথ্যটি পাঠিয়ে দেয়। local IP address বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাউটার দ্বারা অটোমেটিক ভাবে নির্ধারিত হয়।
Public IP address ইন্টারনেটের সকল জায়গায় প্রদর্শিত হয়। আপনার local IP address টি আপনার ডিভাইসটিকে তার নেটওয়ার্কে উপস্থাপন করে এবং আপনার Public IP address ইন্টারনেটের কাছে আপনার রিকোয়েস্টের রিপ্রেজেন্ট করে।
এছাড়া আইপি অ্যাড্রেস আরো দুই ধরনের রয়েছে: এগুলো হলো, Dynamic IP address এবং Static IP address। চলুন তবে, এবার Dynamic IP address এবং Static IP address সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা যাক।
Dynamic vs Static IP address
আপনার আইপি অ্যাড্রেস Dynamic IP অথবা Static IP হতে পারে। আপনি যদি আপনার বাসায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নিতে চান, তবে অবশ্যই Dynamic IP address এবং Static IP address এর কথা শুনে থাকবেন। চলুন তবে, আপনাকে এবার Dynamic vs Static IP address সম্পর্কে কিছুটা ধারনা দেওয়া যাক।
Static IP address হল আপনাকে দেওয়া একটি নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস, যে আইপি অ্যাড্রেস টি ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় কখনও পরিবর্তন হবে না। আপনি যখন একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিলেন, তখন আপনারা ISP আপনার রাউটারের একটি আইপি অ্যাড্রেস বরাদ্দ করে দেয়। এক্ষেত্রে আপনি যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তখন আপনার আইপি অ্যাড্রেস কখনো পরিবর্তিত হয় না।
Static IP address গুলো সবসময় ব্যবহার করা হয় কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে, কেননা যেহেতু তাদের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো সর্বদা নির্ভরযোগ্য-ভাবে অ্যাক্সেস-যোগ্য হতে হবে।
অন্যদিকে, Dynamic IP address হল সাময়িকভাবে প্রদান করা আইপি অ্যাড্রেস। ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় আপনার আইএসপি আপনাকে যদি কিছুক্ষণ অথবা কয়েকদিন পর পর একটি করে নতুন আইপি দিয়ে থাকে, তবে এটিকে আমরা Dynamic IP address বলবো। যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনার আইপি অ্যাড্রেস বার বার পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থাৎ, ডায়ানামিক আইপি অ্যাড্রেস কে আমরা পরিবর্তনশীল আইপি ঠিকানা ও বলতে পারি।
কিন্তু, আপনার বাড়ির আইপি অ্যাড্রেস গুলো কখনো একই থাকতে হবে না। কেননা, আপনি যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, কিন্তু আপনার যখন ইন্টারনেটে প্রবেশ করা প্রয়োজন, তখনই IP Address এর প্রয়োজন পড়ছে এবং সে সময়ে থাকা ডায়নামিক আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে ইন্টারনেটে তথ্য আদান-প্রদান হতে পারবে। তবে, বাড়িতে ও Dynamic IP ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহারে কিছু কিছু সার্ভিসে সমস্যা হতে পারে।
আসলে আইপি অ্যাড্রেস এর কাজ কি?
আইপি অ্যাড্রেস মূল কাজ হলো: নেটওয়ার্ক জুড়ে থাকা সমস্ত ডিভাইসগুলোর মধ্যে সঠিক ডিভাইসে তথ্য পাঠানো এবং গ্রহণ করা। IP ঠিকানা অনন্যভাবে ইন্টারনেটে প্রতিটি ডিভাইস সনাক্ত করে; যেখানে একটি ব্যতীত অন্য একটি ডিভাইসে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। আইপি অ্যাড্রেস কম্পিউটিং ডিভাইসগুলো কে (যেমন পিসি, মোবাইল, ট্যাবলেট, স্মার্ট ওয়াচ ইত্যাদি) এবং ওয়েবসাইটগুলোকে তার গন্তব্যে সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করে দেয় এবং ওয়েবসাইটগুলোকে এটি জানতে দেয়, ওয়েবসাইটটিতে কে কানেক্ট হচ্ছে।
আইপি ঠিকানার কারণে আপনি আপনার অবস্থানের ভিত্তিতে বিভিন্ন পরিষেবা উপভোগ করতে পারেন। এর মধ্যে যেমন: আপনার অবস্থানের ভিত্তিতে কোন একটি ওয়েবসাইটের ভাষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তন, আপনার দেশে Available স্ট্রিমিং ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম গুলো আইপি অ্যাড্রেস এর ভিত্তিতে তাদের পরিষেবা কোন দেশের জন্য শুধুমাত্র Available করতে পারে।
যদিও আপনার আইপি অ্যাড্রেস আপনার সুনির্দিষ্ট অবস্থান প্রদান করবে না, কিন্তু তবুও আপনার আইপি অ্যাড্রেস অনুসরণ করে এর খুব কাছাকাছি যাওয়া যেতে পারে। আপনার একটি IP ঠিকানা আপনার শহর, টিউনাল কোড, আপনার আইএসপি ইত্যাদি শনাক্ত করা যেতে পারে। তবে আপনি যদি চান যে, আপনি বর্তমানে কোথায় আছেন সেটি অন্য কেউ জানুক, তাহলে আপনি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। আপনি আপনার অবস্থান বা আপনার IP ঠিকানা লুকানোর জন্য VPN ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
শেষ কথা
বন্ধুরা, এই ছিল মূলত IP address বা Internet Protocol Address নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল। আশা করছি আপনারা IP Address কি, এটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদিও একটি ব্লগে আইপি অ্যাড্রেস এর সমস্ত বিবরণ দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা, একটি IP address-এর অনেকগুলো পার্ট রয়েছে এবং এগুলো অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ধন্যবাদ আসসালামু আলাইকুম।