Site icon Trickbd.com

ঐশীর মৃত্যুদণ্ড : শুরু হচ্ছে হাইকোর্টের প্রক্রিয়া

Unnamed

পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী
স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে তাঁদের মেয়ে
ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য
ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শিগগিরই শুরু হচ্ছে।
একই সময়ে শুরু হবে নিম্ন আদালতের দেওয়া
রায়ের বিরুদ্ধে ঐশীর করা আপিলের শুনানি।
ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য প্রস্তুত করা
হয়েছে ৭২০ পৃষ্ঠার পেপার বুক। চাঞ্চল্যকর এই
মামলার শুনানি এখন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার
সিনহার অনুমোদনের অপেক্ষায়।
সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র জানায়, নিম্ন
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ঐশীর করা আপিল ও
রাষ্ট্রপক্ষের ডেথ রেফারেন্স আবেদনের
শুনানির জন্য ঐশীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন
বিষয়ক (ডেথ রেফারেন্স) ৭২০ পৃষ্ঠার পেপার
বুক প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের
অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির
ফয়েজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঐশীর
মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধান
বিচারপতি অনুমতি দিলে শুনানির জন্য হাইকোর্টের
কার্যতালিকায় আনা হবে।’
হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখার
সুপারিনটেনডেন্ট বলেন, ‘ঐশী রহমানের ৭২০
পৃষ্ঠার পেপার বুকের কাজ শেষ হয়েছে। আমরা
কয়েকটি ভাগে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পেপার
বুক তৈরি করি।’
তবে ঐশীর আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা এনটিভি
অনলাইনকে বলেন, ‘ঐশীকে নিম্ন আদালত
যে রায় দিয়েছেন, তাতে অনেক ধরনের ক্রটি
রয়েছে। আমরা আপিল করেছি। আশা করি,
আপিলে ঐশী খালাস পাবেন।’
এসব পেপারবুক কীভাবে প্রস্তুত করা হয়
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র
আইনজীবী ফৌজদারি মামলার বিশেষজ্ঞ এস এম
শাহজাহান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মামলা দায়ের
থেকে শুরু করে নিম্ন আদালতের রায়সহ সকল

নথি পেপার বুকে থাকে। এ ছাড়া আসামিপক্ষ আপিল
দায়ের করলে সেখানে নতুন যুক্তি ও নিম্ন
আদালতের রায়ে কী ভুল ছিল তা উপস্থাপন করা
হয়।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে
ঐশী রহমান হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেন।
আপিলে তিনি বলেছেন, তাঁর বিচার প্রক্রিয়া ছিল
ভুলে ভরা। মিথ্যা সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে
তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বয়সের
ক্ষেত্রে মামলার বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করেননি
আদালত।
মামলার বাদী ঐশীর চাচার মতে, ঐশীর জন্ম
১৯৯৬ সালে।

এতে ঘটনার সময় ঐশীর বয়স হয়
১৬ বছর। তাই বয়স অনুযায়ী শিশু আদালতে ঐশীর
বিচার হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া ঘটনার সময় তিনটি
ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে মর্মে
তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ
করলেও তিনি আসামি ঐশীর হাতের আঙুলের ছাপ
আদালতে হাজির করেননি।
মামলার বিবরণে জানা য়ায়, গত বছরের ১৫
নভেম্বর পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর
স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে মেয়ে
ঐশী রহমানকে দুবার মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।
প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা
করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অনাদায়ে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তবে একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যটি
সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে।
একই সঙ্গে ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই
বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার
অপর আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস
দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ
আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন।
বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন,
‘রাষ্ট্রপক্ষ ঐশীর প্রকৃত বয়স প্রমাণ করতে
সক্ষম হয়েছে। আর সে যে সাবালিকা, এটাও
প্রমাণ হয়েছে।’ আসামিপক্ষ ঐশীর বয়সের

পক্ষে যা যুক্তি দিয়েছে, তা যথাযথ নয় বলে
মন্তব্য করেন আদালত।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘ঘটনার দিন ঐশী
নেশাগ্রস্ত ছিল। তার ক্রিমিনাল ইনটেন্ট (অপরাধ
সংঘটনের ইচ্ছা) ছিল। হঠাৎ করেই কোনো
উত্তেজনা ছিল না, পূর্বপরিকল্পিতভাবে সে তার
বাবা-মাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে। সে সুকৌশলে
কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তার বাবা-মাকে
হত্যা করেছে।’
২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশীকে প্রধান আসামি
করে তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর
হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক
আবুল খায়ের।
পরে গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকার ৩ নম্বর
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ বি এম সাজেদুর
রহমান তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ
মামলায় বিভিন্ন সময়ে ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে ৩৭ জন
আদালতে সাক্ষ্য দেন।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের
চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ
শাখার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না
রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের
ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায়
একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই দিন পল্টন
থানায় আত্মসমর্পণ করেন ওই দম্পতির মেয়ে
ঐশী রহমান।
» আরো টপিক্স পরুন…