নারায়ণগঞ্জে প্রধান শিক্ষককে কান
ধরে উঠবোস নিয়ে প্রতিবাদের মধ্যেই
এবার রাজশাহীতে এক মাদ্রাসা
শিক্ষককে মাদ্রাসাতেই বেধড়ক
পেটাতে পেটাতে বিবস্ত্র করল
প্রভাবশালী আলীগ নেতা। বুধবার
দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। তবে ওই শিক্ষক
বৃহস্পতিবার সকালে গোদাগাড়ী
থানায় অভিযোগ করলে ঘটনাটি
গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে। সন্ধ্যায়
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ নিয়ে
মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করেনি
পুলিশ।
থানায় করা অভিযোগ ও
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা
যায়, গোদাগাড়ী উপজেলার
পিরিজপুর আলিম মাদ্রাসায় সহকারী
শিক্ষক (গণিত) হামিদ হোসাইন আজাদ
বুধবার প্রথম সাময়িক পরীক্ষার দায়িত্ব
পালন করছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার
দিকে পিরিজপুর গ্রামের নেফাজ
উদ্দিন, মাসুদ রানা, মোজাম্মেল হক ও
দুলালসহ ১০-১২ জন লাঠিসোটা নিয়ে
মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকে আজাদকে
পেটাতে শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে
টেনেহিঁচড়ে মাদ্রাসা ভবন থেকে
বের করে মাঠে নিয়ে যায়। মারতে
মারতে তার পরনের জামা-কাপড়
গেলেও তাকে মারধর করা হয়। শিক্ষক ও
শিক্ষার্থীদের সামনেই প্রায় ১০
মিনিট ধরে এ নির্যাতন চললেও তাকে
রক্ষায় ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।
পরে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে তাকে
উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে
ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে
নিয়ে তার মেরুদণ্ডের এক্স-রে করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, এ নিয়ে
উত্তেজনা চলায় ঘটনার এক ঘণ্টা আগে
থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ
করলেই নেফাজ উদ্দিন তার লোকবল
নিয়ে আজাদের ওপর হামলা চালায়।
হামিদ হোসাইন আজাদ যুগান্তরকে
বলেন, মাদ্রাসার পাশেই পাইপ
লাইনের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে
খাবার পানি সরবরাহের কাজে একটি
গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মালিকানা
নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী নেফাজ
উদ্দিনের সঙ্গে তার শ্বশুর হারুনুর
রশীদের বিরোধ রয়েছে। নলকূপটি
বর্তমানে তার শ্বশুরের নিয়ন্ত্রণে
আছে। প্রতিপক্ষ শ্বশুরের ওপর প্রতিশোধ
নিতেই তার ওপর হামলা করেছে।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা সুপার
সালাম বলেন, এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা।
মাদ্রাসা কক্ষ থেকে শিক্ষককে
টেনেহিঁচড়ে বের করে ব্যাপক মারধর
করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।
ঘটনার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে
আতংক বিরাজ করছে। বিষয়টি
উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে
জানানো হয়েছে। মাদ্রাসা
পরিচালনা কমিটির সভাপতি
সাবিয়ার রহমান মাস্টার বলেন,
‘শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীরা এখন বিষয়টি
মীমাংসার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে
আমরা আইনের আশ্রয় নেব। ঘটনাটিকে
ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে
গোদাগাড়ী থানার ওসি এসএম আবু
ফরহাদ জানান, ‘শিক্ষককে মারধরের
সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন
অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এ
ব্যাপারে কথা বলতে নেফাজ
উদ্দিনের মোবাইলে কয়েক দফা ফোন
দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী
কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ
আলী এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে
দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি
জানিয়েছেন।