আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ
(সা.), হযরত মুসা (আ.) এবং নূহু (আ.)
মহানআল্লাহ তায়ালার নির্দেশে
কাফিরদের বিভিন্ন অলৈাকিক দৃশ্য
দেখিয়েছেন। নবী রাসূলদের এমন
দৃশ্যকে আরবি ভাষায় ‘মযিজা’ বলা
হয়।
মক্কার কাফেররা শেষ নবী হজরত
মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিশ্বাস
স্থাপনের শর্তস্বরূপ কয়েকটি
অলৌকিক কাজ (মুজিযা) সম্পাদনের
দাবি করে। এ বিষয়ে পবিত্র
কোরআনে কারিমের সূরা বনি
ইসরাইলে বিশদ বর্ণনা এসেছে।
সেখানে তাদের উত্থাপিত
দাবিগুলো ছিল—
১. কখনও আমরা আপনার ওপর ঈমান আনব
না, যতক্ষণ না আপনি আমাদের জন্য এই
জমিন থেকে এক প্রস্রবন (ঝরণা)
প্রবাহিত না করবে।
২. খেজুরের অথবা আঙ্গুরের একটা
বাগান তৈরি, তাতে অসংখ্যা
নদী-নালা বইয়ে দিবে।
৩. কিয়ামতের আলামত স্বরূপ
আসমানকে টুকরো টুকরো করে
ফেলা এবং তাদের (কাফেরদের)
সমানে স্বয়ং আল্লাহ ও
ফেরেশতাদের এনে দাঁড় করানো।
মক্কার কাফেরদের এসব দাবির
বিষয়ে সূরা বনি ইসরাইলে অারও
বলা হয়েছে, কিংবা থাকবে
আপনার স্বর্ণ নির্মিত ঘর; অথবা
আপনি আরোহন করবেন আসমানে-
কাফেরদের এমনসব উদ্ভট দাবীর
প্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা হজরত
মুহাম্মদ (সা.) কে আদেশ করেন, ‘বল!
মহান পবিত্র আমার মালিক
(আল্লাহতায়ালা) আমিতো কেবল
(তার পক্ষ থেকে) একজন মানুষ, একজন
রাসূল বৈ কিছুই নই।
’কামেল বুজুর্গদের দ্বারা অলৌকিক
কারামাত বলা হয়। আর নবীরা
আল্লাহতায়ালার হুকুমে প্রচলিত
সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম যা করেন
সেটা মুজিযা।
মুজিযা মূলতঃ নবী-রাসূলের সত্যতা
প্রমাণের জন্য আল্লাহর সাক্ষ্য।
বিষয়টি এভাবেও বলা যায়, যিনি
আল্লাহর নবী বলে দাবি করেন, তার
সত্যতা প্রমাণ করাই মুজিযার
উদ্দেশ্য। তবে ওই মুজিযা—
১. আল্লাহর দিকে আহবান বা
বিশ্বাস স্থাপনের উদ্দেশ্যে হতে
হবে।
২. কাজটি প্রচলিত সাধারণ নিয়মের
ব্যতিক্রম হবে।
৩. অনুরূপ কাজ অন্যের পক্ষে অসম্ভব
হতে হবে।
৪. এমন ব্যক্তির দ্বারা কাজটি হতে
হবে যিনি নিজেকে নবী বলে
দাবি করেন।
৫. তার ঘোষণার সমর্থন জ্ঞাপন হবে।
৬. মুজিযা নবীর দাবির পরিপন্থী
হবে না।
বর্তমানে আর কেউ কোনো মুজিযা
প্রদর্শন করতে পারবে না। কেউ
আশ্চর্যজনক কিছু করলে বা করে
দেখালে সেটা হবে তার কারামত।
কারণ মুজিযা নবী-রাসূলদের সঙ্গে
সম্পর্কিত। যেহেতু দুনিয়ায় নবী
আগমনের ধারা বন্ধ তাই মুজিযাও
বন্ধ। প্রত্যেক নবীর কোনো না
কোনো মুজিযা ছিল।
সাধারণ মুজিযার বাইরে
আল্লাহতায়ালা কোনো কোনো
নবী-রাসূলকে বিশেষ মুজিযাও
প্রদান করেছিলেন। যেমন- হজরত মুসা
(আ.)-এর লাঠি ও হাত উজ্জ্বল হয়ে
যাওয়া।
হজরত মূসা (আ.) যখন তার লাঠিটি
মাটিতে নিক্ষেপ করতেন, তখন তা
প্রকাণ্ড অজগরের রূপ ধারণ করত। আবার
যখন তিনি সেটি ধরতেন, তখন তা
লাঠিতে রূপান্তরিত হতো।
অনুরূপভাবে তিনি তার ডান হাত
উক্ত হাত এক বিশেষ ধরণের আলো
বা রশ্মি বের হয়ে চারিদিক
আলোকিত করে ফেলত। এটাই ছিল
মূসা (আ.)-এর মুজিযা।
হজরত মুসা (আ.)-এর অন্যান্য
মুজিযাগুলো হলো—
১. মাঠির আঘাতে লোহিত সাগরের
পানিকে বিভক্ত করে বনি
ইসরাইলিদের জন্য রাস্তা তৈরি
করে দেয়া।
২. পাথর খণ্ডের মধ্যে হতে বনি
ইসরাইলের বারটি গোত্রের জন্য
বারটি ঝর্ণা প্রবাহিত করা।
৩. আসমান হতে মান্না-সালওয়া
(বিশেষ আসমানী খাদ্য) নাজিল
হওয়া প্রভৃতি অন্যতম।
হজরত ঈসা (আ.)-এর মুজিযা বা
আলৌকিক ঘটনা হল—
১. দূরারোগ্য ব্যাধি আরোগ্য করা।
২. মৃতকে জীবিত করা।
৩. মাটি দিয়ে পাখি তৈরি করে
উড়িয়ে দেয়া।
৪. অন্ধকে দৃষ্টিদান।
৫. বোবাকে বাকশক্তি দান।
৬. কুষ্ঠকে আরোগ্য করা।
শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে বহু
আলৌকিক ঘটনার ছাড়াও যে
সর্বশ্রেষ্ঠ মুজিযা প্রদান করা
হয়েছে, সেটা হলো পবিত্র
কোরআনে কারিম।