সৃষ্টির সেই শুরু থেকে বেঁচে থাকার পাশাপাশি
মনের ক্ষুধা মেটাতেও পানির ওপরে নির্ভর
করে আসছে মানুষ। আর সেটা যদি হয় সাগরের
নীলচে লবণাক্ত পানি তবে তো কোনো
কথাই নেই! পানের উপযোগী না হলেও
মনকে সতেজ করে তুলতে যুগের পর যুগ
সাহায্য করে এসেছে সাগর। অসাধারণ সব
সৌন্দর্যের ভান্ডার সাজিয়ে রেখেছে নিজের
গভীর বুকের মাঝে। শুধু সৌন্দর্যই নয়, সাগরের
অতল গভীরতার ভেতরে লুকিয়ে আছে
অনেক অনেক রহস্যও! এমন কিছু অমীমাংসিত
রহস্য চুপটি করে লুকিয়ে আছে সাগরের মাঝে
যেগুলোর কোনো ধরণের সমাধান আজ অব্দি
পাওয়া যায় নি। আসুন জেনে নিই সাগরের এমনই কিছু
অদ্ভূত রহস্যের কথা।
১. ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল
পৃথিবীতে মোট ১২ টি এমন স্থান রয়েছে
বলে মনে করা হয় যেখানে এর চৌম্বকীয়
আকর্ষণ প্রচন্ড বেশি। আর এমনই এক স্থান
হচ্ছে ডেভিলস সী বা শয়তানের সাগরের
ভেতরে অবস্থিত ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল। জাপান আর
বোনিন দ্বীপের মাঝখানে সাগরের মাঝে
অবস্থিত এই স্থানটিকে জাপানীরা সবসময়ই
ড্রাগনের আস্তানা বলে ভেবে এসেছে।
জাপানিজ পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এখানে এক
ভয়ঙ্কর ড্রাগন বাস করে যার ক্ষুধা দূর করা
একেবারেই সম্ভব না। আর তাই প্রায়ই সেটা
নিজের কাছে আসা জাহাজ আর মানুষকে খেয়ে
ফেলে। নিজের ক্ষুধা মেটায়। সেই থেকে
এর নাম হয়ে গিয়েছে ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল। ১২০০
শতাব্দীর দিকে কুবলাই খান বেশ কয়েকবার
চেষ্টা করেছেন জাপানকে দখলে নিতে। এগোতে চেয়েছেন শয়তানের সাগরের মাঝ
দিয়ে। প্রতিবারেই ব্যাপক সংখ্যক মানুষ আর জাহাজ
হারাতে হয়েছে তাকে। শুধু তিনিই নন, আজ অব্দি
গিয়েছে এখানটায় এসে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের
বিপরীতে অবস্থিত হলেও ঠিক ওটার মতনই রহস্য
জমা হয়ে আছে ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেলকে ঘিরেও।
কারো কারো মতে মাঝে মাঝেই এক রহস্যময়
নারীকে দেখতে পাওয়া যায় সাগরের ঐ বিশেষ
জায়গাটিতে। ১৯৫০ সালে ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেলকে
অনিরাপদ বলে ঘোষণা দিলেও এরপর অনেকেই
চেষ্টা করেছেন এখানকার রহস্য ভাঙতে। আর
তাদের ভেতরে একজন ‘ল্যারি কুছে’ নিজের
বইয়ে জানান, ওখানে আর কিছুই না, রয়েছে এক
বিশাল আগ্নেয়গিরি। আর যতসব রহস্যময় উধাও
হওয়ার ঘটনা ঘটেছে আজ অব্দি সবগুলোর
পেছনে হাত রয়েছে একমাত্র ঐ সমূদ্র
আগ্নেয়গিরিরই!
২. বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল
ব্যাপারটা অনেকটা একই রকম। ঠিক গোল্ডেন
ট্রায়াঙ্গেলের মতনই আরেকটা ট্রায়াঙ্গেল
খুঁজে পাওয়া যায় সমূদ্রের ভেতরে। যেখানটায়
একের পর এক ঘটে যেতে থাকে অদ্ভূত সব
ঘটনা। হাওয়া হয়ে যেতে থাকে এক এক করে
অনেক মানুষ, বিমান, জাহাজ- সবকিছু! কি আছে এমন
ওখানে? কি ওটার রহস্য? আজও জানতে পারেনি
কেউ। শয়তানের ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচিত
রহস্যময় স্থানটিতে ভিনগ্রহবাসীদের হাত আছে
বলে মনে করেন অনেকে। নির্দিষ্ট করে
কোন স্থানটিতে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল আছে
সেটা বলা যায় না। তবে অতলান্তিক মহাসাগরের
ভেতরেই কোন একটা জায়গায় আছে সেটা।
অনেকের অনেক মত আছে একে নিয়ে।
তবে অনুসন্ধানকারী লেখক কুছে জানান কোন
একটামাত্র কারণকেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য
বলে মনে করাটা বোকামি। এরচাইতেও বড়
বোকামি হচ্ছে যতগুলো জাহাজ হারিয়েছে
সেগুলোর সবগুলোকে বারমুডা
ট্রায়াঙ্গেলের শিকার বলে ধরে নেওয়া।
হতেও তো পারে সেটা অন্য কোন কারণে
হারিয়ে গিয়েছে বা ধ্বংস হয়েছে। তবে যে যাই
বলুক, এখনো পর্যন্ত ব্যাপারটা ঠিক সেখানটাতেই
হয়েছিল।
৩. আর্কটিক সাগরের রহস্য
জাহাজ আর মানুষকে উধাও করে দেওয়ার ব্যাপারে
এগিয়ে আছে যে তৃতীয় সাগরটি সেটা হচ্ছে
আর্কটিক সাগর। প্রায়ই কোনো না কোনো
কারণে হুট করে উধাও হয়ে যাচ্ছে এর ওপর
দিয়ে ভাসতে থাকা জাহাজেরা। তবে মাঝে মাঝে
জাহাজগুলো বেঁচে গেলেও রক্ষা পাচ্ছেনা
এর ভেতরের মানুষ। ১৮৭২ সালে সাগরের ওপর
হঠাৎ মেরি ক্যালেস্টে জাহাজটিকে দেখতে
পাওয়া যায়। সওদাগরী জাহাজটিতে প্রচুর খাবার আর
ঠিক স্থানে ঠিক জিনিসপত্র বজায় থাকলেও কেবল
ছিল না ভেতরের মানুষগুলো। সবকিছু ফেলে
মাঝ সাগরে কোথায় গেল তারা? প্রশ্নের উত্তর
পাওয়া যায়নি আজও। সেই শুরু। এরপর এইচএমএস
সাপ্পোহ, ইউএসএস সাইক্লোপস, এমভি জয়তা,
ফ্লাইং ডাচম্যান, বেচিমো, ক্যারোল এ. ডেরিং,
লেডি লোভিবন্ড ও অক্টাভিয়াসের মতন বিখ্যাত
সব ভুতূড়ে জাহাজের জন্ম দিয়েছে সাগরটি।
কখনো মানুষ উধাও, কখনো মানুষ সহ জাহাজ।
কখনো ছায়াময় ভুতূড়ে জাহাজের উত্পত্তি আবার
কখনো পাগল কিছু মানুষকে উপহার দেওয়া-
এভাবেই এখন পর্যন্ত নিজের রহস্যকে বজায়
রেখেছে আর্কটিক। যেগুলোর উত্তর জানে
না কেউ!