Site icon Trickbd.com

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৪ টি ভুল বিশ্বাস। যার কারণে তিনি এতই বিতর্কিত ।

Unnamed

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার কার্যালয়ে বসে আসলে কী করবেন তা এখনও কেউই নিশ্চিত নন।

নিউ ইয়র্কের এই ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিবিদ তার নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় নানা বিতর্কিত কথা বলেছেন এবং বেশ কিছু নীতি ওলট-পালট করে দিয়েছেন।

এখানে তার ২৪টি বিশ্বাস তুলে ধরা হলো :

১. যুক্তরাষ্ট্রের উচিত রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওয়াটারবোর্ডিং বা পানিতে চুবানো পদ্ধতির ব্যবহার করা। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি এবং অন্যান্য ‘শক্ত জিজ্ঞাসাবাদ’ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। গত জুনে তিনি এ কথা বলেন। এই পদ্ধতি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ আছে।

২. মেক্সিকো সীমান্তে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের ব্যয় মেক্সিকোকেও বহন করতে হবে। ট্রাম্প বলেছেন, ক্ষমতায় বসার প্রথম দিন থেকেই তিনি মেক্সিকো সীমান্তে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ শুরু করবেন। কারণ তার মতে, মেক্সিকো থেকে আসা অভিবাসীরা অপরাধী এবং ধর্ষক। বিবিসির হিসেব মতে ওই প্রাচীর নির্মাণ করতে ২.২ বিলিয়ন থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলার খরচ পড়বে।

৩. মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত নয়। ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্ডিনোতে সন্ত্রাসী হামলার সময় ট্রাম্প লিখেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করবেন।
পরে অবশ্য তিনি তার বক্তব্য বদলে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং অস্থিতিশীল অঞ্চলগুলো থেকে তিনি মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সাময়িকভাবে স্থগিত করবেন। যে অঞ্চলগুলোর সন্ত্রাস রপ্তানির ইতিহাস রয়েছে।

৪. আরব-আমেরিকানরা ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলায় উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকবার দাবি করেছেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলার পর নিউজার্সিতে হাজার হাজার আরব-আমেরিকান উল্লাস করেছিলেন। অবশ্য কোনো গণমাধ্যমে এমন কোনো খবর বের হয়নি।

৫. ওবামাকেয়ার একটি ‘ধ্বংসযজ্ঞ’। আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের সকল নাগরিককে জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসার জন্য যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বরং এর দায়িত্ব রাজ্যগুলোর ওপর ছেড়ে দেবেন। এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টিকে স্বাধীনভাবে চলতে দেবেন।

৬. জলবায়ু পরিবর্তন শুধু আবহাওয়াগত সমস্যা। ট্রাম্পের বিশ্বাস বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি গাঁজাখোরি গল্প। তার মতে, শিল্প-কারখানা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর পরিবেশগত বিধি-নিষেধ বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় তাদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

৭. সাদ্দাম হোসেন এবং গাদ্দাফি এখনও ক্ষমতায় থাকলে বিশ্ব পরিস্থিতি আরো ভালো থাকত। তিনি সিএনএনকে বলেছন, লিবিয়া এবং ইরাক দুটি দেশেরই অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক খারাপ। আর সাদ্দাম হোসেনকে ভয়ানক লোক

হিসেবে আখ্যায়িত করে ট্রাম্প বলেন, সাদ্দাম সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরো ভালো করতেন।

৮. অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে যে ১ কোটি ১৩ লাখ অনিবন্ধিত অবৈধ অভিবাসী আছেন তাদের সকলকেই ট্রাম্প বিতাড়ন করতে চান। তবে এ চিন্তা বাস্তবায়ন করতে গেলে ১১৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। ফলে এখন তিনি বলছেন, অপরাধ করার রেকর্ড রয়েছে এমন অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানো হবে আগে। তবে যেকোনো অবৈধ অভিবাসীই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

৯. সিরিয়ার শরণার্থীরা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার উদারহণ দিয়ে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আর এ কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

১০. ভ্লাদিমির পুতিন একজন সত্যিকার নেতা। নিজ দেশের ওপর পুতিনের নিয়ন্ত্রণের প্রশংসা করেন ট্রাম্প। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের ধরনের সমালোচনা করেন তিনি।

১১. সকলের জন্যই কর কমানো উচিত। ট্রাম্প বর্তমান সাত স্তরের আয়কর ব্যবস্থাকে তিন স্তরে নামিয়ে আনতে চান। এবং নিম্ন আয়ের আমেরিকানদের আয়কর মওকুফ করে দিতে চান। তিনি ব্যবসায় কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চান। এ ছাড়া বহুজাতিক কম্পানিগুলোকেও কর মওকুফের ব্যবস্থা করে দিতে আগ্রহী ট্রাম্প।

১২. হেজ ফান্ড ম্যানেজাররা ‘খুনি’। ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনের মতো ট্রাম্পও বলেছিলেন, হেজ ফান্ড ম্যানেজার এবং অতি ধনীরা যথেষ্ট পরিমাণে কর দিচ্ছেন না। তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনাগুলো প্রকাশ করার পর বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন মধ্যবিত্তের পাশাপাশি হেজ ফান্ডের ম্যানেজাররাও কম কর দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

১৩. বাণিজ্যবিষয়ক বেশ কিছু ইস্যুতে চীনের লাগাম টেনে ধরা উচিত। তিনি বলেন, নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন বন্ধ এবং পরিবেশ ও শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন। এ ছাড়া আমেরিকানদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ এবং হ্যাকিংয়ের প্রতি চীনাদের শিথিল মনোভাবের ব্যাপারেও তিনি সমালোচকের দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেন।

১৪. দ্য ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার বা কালোদের জীবনেরও মূল্য আছে এই আন্দোলনকে তিনি সমস্যা হিসেবেই বিবেচনা করেন। কালোদের ওপর পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তিনি অন্যায্য মনে করেন। তার মতে, আফ্রিকান-আমেরিকানরা বরং আরো বেশি হারে সাদাদের এবং পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে হত্যা করছে।

১৫. তিনি ১০ বিলিয়ন ডলারের মালিক
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব সংবলিত ৯২ পৃষ্ঠার যে দলিল গত বছর ব্লুমবার্গ প্রকাশ করেছিল তার হিসেব মতে, ট্রাম্প ২.৯ বিলিয়ন ডলারের মালিক। তবে সম্প্রতি ফোবর্স বলেছে, ট্রাম্পের সম্পদের পরিমাণ হবে ৩.৭ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য ট্রাম্প নিজে দাবি করেছেন তিনি ১০ বিলিয়ন ডলারের মালিক।

১৬. যুদ্ধফেরত সেনা সদস্যদের স্বাস্থসেবা বিভাগকে ঢেলে সাজানো দরকার। তিনি বলেন, দীর্ঘসূত্রিতার কারণে হাজার হাজার যুদ্ধফেরত প্রবীণ সেনা সদস্য চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। এ ছাড়া তিনি নিজে এ ধরনের সেনা সদস্যদের ট্রমা পরবর্তী চাপজনিত মানসিক বিশৃঙ্খলা এবং আবসাদের চিকিৎসায় অর্থ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। আর ক্রমাগত বেড়ে চলা যুদ্ধফেরত নারী সেনা সদস্যদের চিকিৎসার জন্য নারীদের স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।

১৭. লবিস্টদের তৎপরতা আরো সীমিত করা উচিত। চাকরি ছাড়ার পরপরই সরকারি কর্মকর্তা এবং কংগ্রেস সদস্যদের লবিস্ট হিসেবে কাজ শুরুর ওপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চান ট্রাম্প। এ ছাড়া বিদেশি সরকারের পক্ষ হয়ে প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তাদের তদবিরের ওপরও তিনি আজীবন নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চান।

১৮. তিনি একজন সত্যিকার ভালো মানুষ
সম্প্রতি ট্রাম্প তার বই ‘ক্রিপলড আমেরিকা’তে লিখেছেন, ‘আমি সত্যিকার অর্থেই একজন ভালো মানুষ। আমাকে বিশ্বাস করুন। ভালো মানুষ হওয়ায় আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত। তবে আমি আমার দেশকে পুনরায় মহান করে গড়ে তোলার ব্যাপারেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

১৯. অনাকর্ষণীয় কোনো নারীকে তিনি যৌন নিপীড়ন করতে পারেন না। ২০০৫ সালের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে ট্রাম্প নারীদের নিয়ে অশ্লীল সব মন্তব্য করছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। একটা পর্যায়ে তিনি দাবি করেন তার বিরুদ্ধে এক কুৎসিত নারী যৌন নিপীড়নের যে অভিযোগ এনেছেন তা মিথ্যা। কারণ সে নারী তার হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার মতো যথেষ্ট আকর্ষণীয় নন।

২০. টোকিও এবং সিউলের নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা উচিত। তিনি বলেন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার উচিত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর না করে বরং নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার গড়ে তোলা।

২১. ন্যাটো একটি প্রতারণা। কারণ সংস্থাটির সদস্যদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই এর জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করে। তবে পরে তিনি বলেন, তিনি এই জোট টিকিয়ে রাখার পক্ষেই আছেন।

২২. গর্ভপাত ঘটানোর দায়ে ডাক্তারদেরকে শাস্তি দেওয়া উচিত।

২৩. রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির নিয়মগুলো তার বিরুদ্ধে স্তূপীকৃত করা হয়েছে। দলটির ডেলিগেট সিস্টেমকে কুটিল এবং অন্যায্য বলে আখ্যায়িত করেছেন ট্রাম্প। তিনি রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির সঙ্গে এর মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বারবার সংঘাতে জড়িয়েছেন। কারণ তার দাবি প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নের দৌড়ে তার সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করা হয়েছে। তার মতে, সিনেটর টেড ক্রুজ এ কারণেই বেশ কিছু রাজ্যে তার চেয়ে বেশি সংখ্যক ডেলিগেট অর্জন করেছেন। একইভাবে হিলারি ক্লিনটনকে এগিয়ে থাকতে দেখে তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন।

২৪. ফেডারেল ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো উচিত। বর্তমানে শ্রমিকদেরকে প্রতিঘণ্টায় ৭.২৫ ডলার মজুরি প্রদানের যে রীতি প্রচলিত আছে তা বদলে মজুরির পরিমাণ বাড়ানো উচিত।