Site icon Trickbd.com

▩ ▩ বৃদ্ধাশ্রমের বাবার সেই করূণ চিঠি ▩ ▩

Unnamed

কিছুদিন আগে একবার একটা বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলাম। বৃদ্ধাশ্রমে আগের দিন আগে মারা যান মতিয়ার সাহেব। ছেলে এসে তাকে নিয়ে। সেদিন সেই মারা যাওয়া লোকটির রুমে গিয়েছিলাম। সেখানে কিছু কাগজ ছিলো বৃদ্ধ লোকটির নিজ হাতের লেখা। যেগুলো এখনো তার ফ্যামিলির লোকজন নিয়ে যায় নি।

তোর মা আর আমার এক বুক রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছিলি তুই। তুই পৃথিবীতে আসবি তাই কত আনন্দে থাকতাম তোর মা আর আমি। আমি তোর মা’কে কখনোই কাজ করতে দেই নি তুই যাতে কষ্ট না পাস।
জানিস তোর নাম নিয়ে রাশিদার (মা) সাথে আমার প্রায় কথা কাটাকাটি লাগতো।
.
তোকে প্রথম যেদিন স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। অনেক ভয় পেয়েছিলি সেদিন। ভাবছিলি তোকে ওই ক্লাস রুমটায় বসিয়ে রেখে আমি চলে যাচ্ছি বাসায়, আর কোনদিন নিয়ে যাবো না । সেদিন ক্লাসে অনেক কেঁদেছিলি আব্বু আম্মু বলে। আমি ক্লাস রুমের বাহিরে বসেছিলাম সেদিন। ক্লাস শেষে তোকে যখন কাছে ডাকছিলাম। তুই দোঁড়ে এসে হাত বাড়িয়ে আমার কোলে উঠেই কান্না শুরু করেছিলি। তোর চোখের পানি দেখে আমার ও খারাপ লেগেছিলো সেদিন।
আস্তে আস্তে কিছুদিন পর স্কুলে তোর বন্ধু হয়েছিলো। প্রতিদিন এসে স্কুলের গল্প সেই মিষ্টি কন্ঠে বলতিস তোর আম্মুর কাছে।

খোকা তোর শরীরে একটা কাটা দাগ আছে। তোর ৪ বছর বয়সে এটা টের পেয়েছিলাম। সেদিন রাতে ঘুম হয়নি তোর মা আর আমার। কেনো এমন হলো। কি দোষ ছিলো আমাদের যার জন্য আল্লাহ আমাদের এই শাস্তি দিয়েছেন। ভাবতে ভাবতেই রাতটা কেটে গিয়েছিলো। আমার একজন ডাক্তার বন্ধু ছিলো ওর পরামর্শে পরের দিনেই ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য ঢাকার ওই সময়ের সবচেয়ে বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম তোকে।
ডাক্তার বলেছিলো অপারেশন করতে হবে না হলে সিরিয়াস খারাপ কিছু ঘটার সম্ভাবনা আছে। জানিস খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম সেদিন।
তোর মা কাঁদছিলো অনেক আর বলছিলো আমার বাবা টা ব্যাথা পাবে। তুমি অন্য কিছু করো। সেদিন মনকে শক্ত করে সবকিছু হ্যান্ডেল করেছিলাম। কারণ, খারাপ কিছু অপেক্ষা করবে তা না হলে। যেটা হয়তো দু’জনের একজন ও নিতে পারবো না।

তাই সেদিন অপারেশনটা করেই নিয়েছিলাম।

ব্যাংকের চাকুরী। তাই একটু বিজি থাকতে হতো আমাকে। কিন্তু, বাড়ি ফিরে তোকে একটু আদর করে কোলে নিব। খোকা তুই বিকেল হলেই বাড়ির উঠনো দাঁড়িয়ে থাকতিস কখন ফিরবো বাসায়। খোকা এটার জন্যও অনেক আগ্রহে থাকতাম কখন ফিরতে পারবো বাসায় । আসার সময় তোর পছন্দের সেই চকলেট আনতে ভুলতাম না। কারণ, খোকা আমার চকলেট না পেলে অভিমান করে থাকবো।

দীর্ঘ সময়টা পেরিয়ে গেলো। এর মাঝে তোর মা কে হারিয়েছি আমি। তার ভালোবাসার ঋণে আমি চির কৃতজ্ঞ। মানুষটা এত ভালো যে কোনদিন হয়তো গলা উঁচু করে কিছু বলে নি। করে নি তার নিজের জন্য কিছু আবদার। তাকে হারনোর পরেই বুঝেছি পরিবার থেকে অর্ধেক অংশ চলে গেছে।

তোর পড়াশুনো প্রায় শেষ। জব করবি বলছিলি। জব সরকারী জব। জবটা নিতেও প্রায় কিছুটা খরচাপাতি করেছিলাম। হয়তো এটা কখনো জানতিস না।
যখন বিয়ে করবি বলেছিলি। জিজ্ঞেস করেছিলাম। পছন্দ আছে কিনা।
মাথা নাড়িয়ে, হা বলেছিলি।

বৌ মা তোকে অনেক ভালোবাসে রে
আমি আর ক’দিন বাঁচবো বল?
আমিও তাই ভাবছিলাম খোকা। আমাকে ব্রদ্ধাশ্রমেই রেখে আসিস। এখানে থাকলে হয়তো বাসা নোংরা হয়ে যায় বাবা।
বৌমা হয়তো চায় না বাসা টা নোংরা না হোক।

মাঝে মাঝে তোকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করে রে। হাহাকার করে বুকটা। কিন্তু, চার দেয়ালের মাঝখানেই যে আমার নিয়তি ছিলো।
ভালো থাকিস খোকা আমার

চিঠিটা পড়ে অনেক ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম মানুষ এমন কেনো হয়। যে বাবা তার সন্তানকে কষ্ট করে এত বড় করে তোলেন।সীমাহীন আদর যত্নে বড় করেন। তার সাথে কোন ছেলে এমন করতে পারে??

আসলে নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে সবকিছুই সম্ভব।

Collected