Part 1
জমিদার বাড়ি রহস্য
পার্ট ২
Rn Efty
ভুলেই গেছিলাম যে, কাওকে এপায়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়েছিল।
সন্ধায় বাসায় বসে বসে সংবাদ দেখছিলাম।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল।
দরজা খুলে দিতেই একজন ভদ্রমহিলা প্রবেশ করল।
বয়স ৬৫ বা ৭০।
পুরা সাদা মুখের চামড়া, কুচকিয়ে গেছে।
সাদা শাড়ি আর গহনার বাহার দেখে মনে বেশ আভিজাত্য আছে মহিলার।
আমি বললামঃকি চাই?
_আসলে আমি এসেছি রিও স্যারের সাথে দেখা করতে।
আমায় মেইল করা হয়েছিল।
_______ মেইলের কথা শুনে
মনে পড়ল।
বললামঃও হ্যা। আসুন।
মহিলা আমার হাতের লাঠি আর আমার খোড়া পা দেখে বললঃআপনি নিশ্চয় প্রফেসর?
_জি, ঠিকি ধরেছেন।
_রিও স্যার আছেন?
_হ্যা। আপনি বসুন।
_______ ৫ মিনিট বাদে রিও এসে বসল তার চির চেনা আরাম কেদারায়।
কি কারনে জানি না।
মক্কেলের কথা শোনার সময় রিও, এই চেয়ারে আরাম করে বসে।
হয়ত অনেক প্রিয় বলেই।
এবার ভদ্র মহিলা সালাম দিয়ে রিও কে বললঃআসলে প্রফেসরের লেখা সকল গল্প আমি পড়ি।
প্রফেসরের থ্রিলার দিয়ে শুরু করেছিলাম।
ওনি অনেক ভাল লিখেন।
ভেবেছিলাম হয়ত, রিও তার লেখা কল্পনা মাত্র।
কিন্তু ডাইমন্ড ভ্যালি রহস্য
কেস যখন সলভ করলেন
তখন তুষারের বাবার কাছেই
জানতে পেলাম রিও কল্পনা নয়, বাস্তব।
তখন থেকে আপনার সাথে দেখা করার ইচ্ছা হয়েছিল।
কিন্তু সুযোগ হয়নি।
চিঠিটাও অনেক আগে লিখে ছিলাম।
কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিলাম না।
_হ্যা। কাজের কথা আসি।(রিও)
_আসলে, আপনার কাজের ধরন দেখে অনেক অবাক হয়েছি।
তাই ভাবছি,যদি বলতেন, আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আপনার?
_আপনি কি আমায় পরিক্ষা নিচ্ছেন?
_না। আসলে আপনার জ্ঞানের বহর দেখে আমি অবাক হয়।
তাই যদি কিছু মনে না করেন।
_ওকে।
কথাটা বলে রিও ভদ্রমহিলার দিকে একটা ভাল করে দেখে নিয়ে বললঃ হা হা হা, আপনি থাকেন নিতান্ত গ্রামে।
সোখিন একজন মানুষ।
পুরনো জিনিস সংগ্রহের বাতিক আছে।
আসছে নিজের গাড়িতে করে।
আসার পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
নিজে ড্রাইভ করেন গাড়ি।
কোন ড্রাইভার নেই আপনার।
আর কিছু বলব?
_______ দেখলাম ভদ্রমহিলা প্রসংশায় পঞ্চ মুখ হয়ে উঠলেন।
তারপর ঘম্ভির হয়ে বললেনঃকি করে বুঝলেন?
_আসলে আপনার সম্পর্কে প্রথম যে তথ্য গুলো বলেছি।
ওটা চিঠি দেখে বুঝেছি।
______তারপর চিটির ব্যাখ্যা শুনিয়ে দিল, রিও।
এরপর হাসতে হাসতে বললঃহা হা হা, আপনার হাতের নখের ভিতর অস্পষ্ট কালি দেখা যাচ্ছে।
ওটা যে গাড়ির কালি সেটা বোঝা যাচ্ছে।
তাই বুঝলাম গাড়ি নষ্ট হয়েছিল।
আর আপনার ড্রাইভার নেই তাই নিজেকেই গাড়ি মেরামত
করতে হয়েছে।
এটা কি খুব কঠিন বলা?
_আরে। আপনি তো পুরাই জিনিয়াস, মিস্টার রিও।
_কাজের কথায় আসি।
_জি হ্যা। আমি মিসেসঃরাজভি জোহান।
থাকি নড়াইলের একটা প্রত্যন্ত অশ্চলে।
আমার পুর্ব পুরুষেরা তখন কার জমিদার ছিল।
এখন আর সে গুলি নেই।
শুধু জমিদার বাড়িটা খা খা হয়ে পড়ে আছে।
আমার স্বামি কর্নেল জোহান গত হয়েছেন বিশ বছর হল।
আমার তিন ছেলে মেয়ে।
দুই ছেলে আর্মিতে ছিল।
ছিল মানে BDR বিদ্রোহের সময় বড় ছেলে মারা যায়।
ছোট ছেলে এখন থাকে স_পরিবার সিলেটে।
এক মেয়ে আর্পা, সে তার স্বামির সাথে আমাদের জেলা শহরে থাকে।
জামায় ওখানকার সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাসের প্রফেসর।
মেয়ে অবশ্য সরকারি স্কুলের ম্যাথ টিচার।
আসলে মিস্টার রিও একগুলো আমি বলছি। কারন প্রথমে আমি আমার সম্পর্কে আপনাকে একটা স্পস্ট ধারনা দিতে চাই।
না হলে আপনি বিষয়টা বুঝে উঠতে পারবেন না।
_হ্যা। বলুন। আমি অনেক ভাল একজন শ্রোতা, বলল রিও
_আসলে জমিদারবাড়ি আমি একাই থাকি।
বাপ_দাদার নিবাস ফেলে রেখে যেতে পারি না।
আমার অবশ্য কোন ভাই বোন ছিল না।
তাই এ বিশাল জমিদারবাড়ির সকল সম্পতির মালিক আমি।
আমার বাড়িতে আমার সাথে থাকে একজন কেয়ার টেকার।
দুইজন মালি আর একজন রান্নার মেয়ে।
মোট পাচজন লোক এই বিশাল বাড়িতে থাকি।
_তো?
_এবার আসি আসল ঘটনায়।
আমি আমার জন্মের পর থেকে
কিন্তু কোন দিন কোন অস্বাভাবিক কিছুই দেখিনি।
_আপনি অস্বাভাবিক মানে কি বোঝাতে চাচ্ছেন?(রিও)
_আপনি কি ভুত প্রত বিশ্বাস করেন? মিস্টার রিও।
_সেটা, পরেই বলি। আপনার ঘটনাটা বলুন।
_হ্যা। বিষয়টা এমন যে কেউ কে কিছু বলতেই পারছি না।
আবার সমাধান করতে পারছিনা।
আসলে কোন জমিদারই তুলশি পাতা ছিলেন না।
আমি আপনাকে বুঝাতে পারব না যে, আসলে জমিদাররা আত্যাচারি হয়, নাকি জমিদার হলে অত্যাচার করতে হয়।
তবে আমার পুর্ব পুরুষে ডাইরি পড়ে যা পেয়েছি তাতে
অত্যাচারে তারাও কম ছিলেন না।
আমাদের জমিদার বাড়ির পাশে একটা গোলা ঘর আছে।
যে খানে মানুষ বন্ধি করে রাখা হত।
অনেক অত্যাচার করাও হত তাদের উপর।
এমনকি কখনো কখনো মেরেও ফেলত।
সেই থেকে অনেকেই নাকি সেখানে
রাতে কান্নার আওয়াজ ছাড়াও
অনেক কিছু শুনতে পেয়েছে।
কিন্তু আমি কখনো কিছু দেখিনি।
কারিন,কথা গুলো লোক মুখে শোনা।
তাই সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা ছিল না।
কিন্তু শেষ ছয় মাসে যা ঘটেছে তাতে
আমাকে বিশ্বাস করতেই হচ্ছে
ভুত বা আত্ত্বা বলে কিছু আছে।
যা আমাদের জমিদার বাড়িতেই আছে।
_ইন্টারেস্টিং। বলুন
_আসলে, প্রথম ঘটনা ঘটে আমার দারয়ানের সাথে।
তাকে সকাল বেলায় অজ্ঞান অবস্থায় আমার মালি ফুল বাগানের ভিতর আবিস্কার করে।
জ্ঞান হলে জানতে পারি, সে
রাতে কিশের শব্দ শুনে বাগানের দিকে গিয়ে যায়।
তারপর তার সে নাকি দেখেছে
গুদাম ঘরের ভিতর থেকে কেউ বের হয় আসছে।
চোর মনে করে সে, এগিয়ে যায়।
কিন্তু কাছে যেয়ে দেখে সেটা একটা রক্তাক্ত মানুষ।
তার সারা শরির রক্তে ভিজে আছে।
লম্বায় প্রায় সাড়ে পাচ ফুটের মত।
কিন্তু তার নাকি মাথা ছিল না।
গলার ওই খান থেকে কাটা।
আর সে জায়গা দিয়ে রক্ত ঝরে পড়ছে।
ভয়ে সে দোড় দেয়।
তারপর আর কিছু তার মনে নেই।
দুই দিনেই এলাকায় শাড়া পড়ে যায়।
এরপর আবার অভিশাপ পড়ে যায় বাড়িতে।
প্রায়ই বাড়ি আশে পাশে দুই এক জনকে অজ্ঞান অবস্থাতে পাওয়া যেত।
একই কাহিনী ভুত দেখেছে তারা।
আমার বাড়ি কাজের মেয়েটাও একদিন অজ্ঞান হয়েছিল।
সে নাকি বাড়ির পাশে আগুনের মত কিছু একটা দেখেছে।
যেটা নাকি দোড়ে বাড়ির এপাশ ওপাশ করিছিল?
_আগুনের সাইজটা কেমন ছিল?
_একটা আস্ত কুকুরের মত।
_ওকে, বলুন।
_আসলে বাসার মালি থেকে শুরু করে যখন সবাই ভয় পেয়ে চাকুরি ত্যাগ করতে চাইছিল।
তখন মনে হল এর একটা সমাধান করা উচিত।
তাই অনেক তান্ত্রিক, উজা এনেছিলাম।
আর ফলা ফল শুন্য।
এর পর আপনার কথা জানতে পারলাম।
তাই আপনার কাছে আসার প্লান করেছিলাম।
কিন্তু ঠিক সময় করে উঠিতে পারছিলাম না।
কিন্তু গত এক সপ্তাহ আগে
যা ঘটল তাতে আর বসে থাকতে পারলাম না।
_ঠিক কি ঘটেছিল।
_আসলে রাত আনুমানি দুইটা হবে।
একটা শব্দে আমার ঘুম ভেংগে যায়।
উঠে আমি শুধু দেখলাম আমার ঘর থেকে একটা ছায়া মুর্তি দোড়ে চলে গেল.।
ভুল দেখেছি মনে করতে পারতাম।
কিন্তু দরজা খোলা ছিল।
আর আমার স্পস্ট মনে আছে
আমি দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে ছিলাম।
আবার দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে যায়।
আবার একই ঘটনা ঘটল।
বিশ্বাস হবে না হয়ত আপনার মিস্টার রিও।
আমি এক রাতে তিন বার একই ঘটনার মুখো মুখি হয়েছি।
তাই আর দেরি না করে
আপনার কাছে এসেছি।
এমন একটা সিন্সেটিভ মেটার
যে বাইরের কাওকে বলতে পারছি না।
আবার মেনেও নিতে পারছি না।
_পুলিশে গিয়েছিলেন?
_এঘটনায় পুলিশ কি করবে বলুন?
_তা হলে আমি কি করব বলুন?
আমি তো তান্ত্রিক নয়।
জাস্ট গোয়েন্দা।
_সেটা জানি। তারপর কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি এর একটা কিনারা করতে পারবেন।
_এমন মনে হওয়ার কারন?
_আসলে, বললে গাজা খুরি গল্প মনে হবে।
তাও বলছি, আমার পুর্ব পুরুষের ডাইরি পড়ে প্রায় তিন বছর আগে জানতে পারি। তিনি স্পস্ট বলেছেন, আমাদের পুর্ব পুরুষেরা প্রজাদের যে সব
সোনা দানা কেড়ে নেয়
তার কোন হদিশ পাওয়া যায় নি।
তার ধারনা এগুলো এই বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছেন।
তাই যদি আপনাকে এটা খুজে দেওয়ার জন্য ডাকি নিশ্চয় যাবেন?
এতে এক কাজে দুই কাজ হয়ে যাবে।
_হা হা হা,,, তার মানে আপনি চাইছেনই, আমি সেখানে যায়।
_অনেকটা তাই।
_কোন সমস্যা নেই। তবে আমার হাতে কিছু কাজ আছে।
সে গুলো শেষ করতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে।
_ধন্যবাদ, মিঃ রিও।
_______ ভদ্রমহিলা চলে যেতে হো হো করে হেসে দিয়ে
বললামঃজমিদার বাড়িতে
অভিশাপ থাকে।
এটা অনেক ভুতের ফ্লিমে দেখেছি।
কিন্তু বাস্তবে কি ভুত আছে রে পাগলা?
_থাকতেও পারে। তবে সে ভুত
তোমার মত মাথা মোটা
লোকের সামনে আসবে কিসের দুঃখে?
_মানে?
_ভুতেরা জিনিয়াস হয়, মামা।
_মানে?
তুমি বিশ্বাস কর ভুত আছে ভাগিনা?
_ একটা কমপ্লিকেটেট প্রশ্ন হয়ে গেল মামা।
আসলে আমি ভুত বিশ্বাস আমি করি না।
তবে জীন, পরী বিশ্বাস করি।
আল্লহা যেমন আছেন, তেমন ডেভিলও আছে।
আপাতত এই ডেভিলকেই ভুত মনে করি আমরা?
_হ্যা।তারমানে তুমি নড়াইল যাচ্ছ?
_শুধু কি রিও যাচ্ছে?
প্রফেসর যাবে না?
_না। আমার এই ভুত দেখার ইচ্ছা নেই।
_আরে চল প্রসেসর।
আমার গ্রামের বাড়ি ওখানে।
তুমিতো কোন দিন যাও নি।
একবার চল।
পাগল করে দেওয়া প্রাকৃতিক
দৃশ্য দেখতে পাবে।।
তুমি তো চিত্র কলা পছন্দ কর।
তাহলে এস, এম সুলতানের জন্ম ভূমি দেখার সু্যোগ কেন হাত ছাড়া করবে?
_হুম। তা হলে যাওয়া যেতে পারে।
_কিন্তু এই যে তিনি বললে গুপ্ত ধনের কথা। সেটা কি আসলে সত্য?
_নট সিওর। তবে হতে পারে আমায় নেওয়ার একটা ফন্দি।
তবে যিনি আমায় ফন্দি এটে হলেও নিতে
চান।
তার ডাকে সাড়া দেওয়া শ্রেয় নয় কি?
_হুম। ভাববার বিষয়।
একসপ্তাহ আছে।
একটু ভেবে দেখ কি হতে পারে।
_হুম।
দুই দিন বাদেই রিওর ডাকে
ঘুম ভাংল।
এত সকাল সকাল কেন যে আমার ঘুম ভাংগালো বুঝলাম না।
এমনিতে ছয় মাস পর এমন লং ছুটি পেয়েছি।
ভার্সিটি বন্ধ তাই আরামে ঘুমচ্ছি।
কিন্তু রিওর কি হল?
ফ্রেস হয়ে রিও কাছে যেতেই বললঃ খবর শুনেছ?
এখনি নড়াইল যেতে হবে।
_কেন?
_মিসেসঃরাজভি জোহান খুন হয়েছে
গত রাতে।
_ কি বল?
_হ্যা। বাবাকে কাল রাতে
নড়াইল যাবার কথা বলেছিলাম।
কেসটার ব্যাপারেও বলেছিলাম।
তিনি বলেছিলেন তিনিও আসবেন।
কারন তিনিও অনেক দিন গ্রামের বাড়ি যাননি।
কিন্তু একটু আগে বাবা কল দিয়ে বললেন, রাজভি জোহানের লাশ পাওয়া গেছে ঘরের মেঝেতে।
শরিরে নাকি তেমন আঘাতের চিহ্ন নেই।
শুধু পিঠে একটা চিহ্ন পাওয়া ছাড়া ।
সেটা প্রথমিক ভাবে বাঘের থাবার মত মনে হয়েছে।
বাবাকে বলেছি লাশ যেন,
না সরানো হয়।
আমি যাবার পর পোস্টমর্টেমে পাঠানো হবে।
বাবাও পোছে যাবে আমি পোছানোর আগে।
_হুম।কমিশনার যাবে কেন?
_রাজকিয় পরিবার প্রফেসর।
পুরো দেশে তোলপাড় শুরু হয়ে যাবে।
তাই আগে থেকেই প্রশাসন
উঠে পড়ে লেগেছে।
_______ কি আর করা ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে গাড়িতে চেপে বসলাম।
রিও ড্রাইভ করছে।
সাধারন আমরা বাইকে যেতে
অভ্যস্ত।
কিন্তু কমিশনার ওখানে আছে।
তাই ইচ্ছা থাকা সত্বেও বাইকে যেতে পারলাম না।
গাড়িই নিতে হল।
দুপুর দেড়টা নাগাদ লোহাগড়া পোছে লাঞ্চ সেরে নিলাম।
রিও আবার গাড়ি চালাতে
লাগল।
বললাম কত সময় লাগবে?
_এইতো বিশ মিনিট; বলল রিও।
চলবে……..