জমিদার বাড়ি রহস্য
পর্ব ৭
আর,এন, ইফতি
©
ভাগিনার এসব কথার কোন অর্থ খুজে পায়না।
এমন সময় সাফিন বলে উঠলঃমিস্টার,রিও।
এখানে গাজার কি হল?
_হা হা হা। গাজা খেলে মানুষ ভুল বকে কি না?
_মানে?
_আপনার কাজ তো শেষ। দাড়িয়ে আছেন কেন?
_আপনার কাজ দেখব বলে?
_ওহ। বাট সাফিন সাহেব, রিও কিন্তু এখানে খুনি ধরতে আসেনি।
_কি জন্য এসেছে তাহলে।
_নিতান্তই মিসেস জোহান আমার ৯৩/২ তে গিয়েছিলেন
আমাকে ভুত দেখাবেন বলে।
তাই আসেছি মৃত মানুষের শেষ ইচ্ছা
পুরণ করতে।
_খুনি না ধরতে পারলে অনেকেই অনেক কিছু বলে নিজের ব্যর্থতা ঢাকার প্রচেষ্টা করে, মিস্টার রিও।
_হুম। বাট অনেকেই আছে নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য
একজনে দোষ অন্য জনের
ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজে শটকে পড়ে।
_আপনি মনে হয় জানেন না যে, ভিকটিমের হাতে, পায়ে, গায়ে কাজের মহিলা কমলা বানুর হাতের ছাপ পাওয়া গেছে।
আর তার স্বামির হাতের ছাপ
ঘরে বেশ কয়েক জায়গায় পাওয়া গেছে।
_তাতে কি প্রমান হয় তারা খুন করেছে?
_হ্যা। হয়।
_আপনি বাংলাদেশের বাঘা উকিলদের চিনেন না।
আপনার এই প্রমান তারা প্রথম তোপে সর্গে পাঠিয়ে দিবে।
_কি ভাবে?
_আপনি কি জানেন ভিকটিম ভদ্র মহিলার পুর্ব পুরুষ জমিদার ছিল?
_এটা কেমন প্রশ্ন? সেটা সবাই জানে।
_তাহলে এটাও জানেন নিশ্চয়, ভিকটিমের বাত রোগ ছিল।
_না।
_ তাহলে আর কি বলব?
_কমলা বানু প্রতিরাতেই মিসেস জোহানের হাত পা টিপে দিতেন। সেটা কমলা বানু প্রথম দিনেই আমায় বলেছে।
_বুঝলাম। কিন্তু তার স্বামি?
_আপনার তো বাংলা মুভির স্ক্রিপ রাইটার হওয়ার কথা ছিল।
কেন যে গোয়েন্দা হতে গেলেন?
_আপনি কিন্তু আমায় অপমান করছে.।
_এখানে অল্প মানুষ আছে।
কোর্টে শত মানুষের মাঝে হওয়ার
এখানে অল্প কয়েক জনের মাঝে
হওয়া কি শ্রেও নয়?
_মানে?
_আপনার বাড়ির আসবাব পত্র
পরিস্কার করার সময়
আপনার চাকরের হাতের ছাপ
ছাড়া কি আপনি ফেলুদার
হাতের ছাপ আশা করেন?
_হুম। বুঝেছি।
কিন্তু খুন করল কে?
_সেটা আমি কি করে বলব? আমিতো এসেছি ভুত দেখতে ভুত।হা হা হা…..
______ এবার দ্রুত সাফিন প্রস্থান করল।তারপর দেখলাম
কমলার আর তার স্বামির হাত কড়া খুলে দিলো।
এদৃশ্য দেখে আমার সাথে সুমনও হো হো করে হেসে দিল।
এবার আমরা তিন জন মিলে গোদাম ঘরের পাশে গেলাম।
চার পাশে ফুলের বাগান ঘেরা
ঘরটা।
যা লম্বায় প্রায় তিনশো ফুটের মত হবে।
আর প্রস্থ তার অর্ধেক।
উচচতা প্রায় ত্রিশ।
পাথরের দেওয়াল।
উপরেও পাথরের ছাদ।
আধা ঘন্টা ধরে রিও দেখলাম
টেপ দিয়ে এদিক ওদিক মেপে দেখে বললঃ জানো মামা।
টাকার জন্য যত গুলো খুন হয়েছ এ সমাজে।
তার থেকে বেশি খুন হয়েছে
না দেখা গুপ্ত ধনের আশায়।
আসলে কেউ সিওর ছিল না গুপ্ত ধন আছে কিনা।
তারপরও খুন হতে হয়েছে অনেককেই।
_এ কথা বলছ কেন? বললাম আমি।
_যাই হোক প্রফেসর।
ওসি সাহেব আর সাফিনকে আসতে বল।
_____ আমার আর যাওয়া লাগল না।
ঠিক তখনি কমিশনারকে সাথে নিয়ে সাফিন আর ওসি সাহেবসহ কয়েক জন পুলিশ হাজির হল।
_এটা কোন কিছু হল? বলল কমিশনার। তুমি নিজেও খুনি ধরছ না। আবার
আমার সদশ্যরা কাওকে আটক
করলে তাতে বিগড়ে দিচ্ছ?
_আমি কিন্তু বিগড়ে দেয়নি।
জাস্ট কোর্টে উকিল বাবুরা যে লজিক দেখাবেন সেটাই বলেছি।
তাতে যদি সাফিন সাহেব তার
_এখন কি করবে?
_ভুত ধরছি বাবা।
_মানে। আর ইউ গন টু ম্যাড?
_সেটা হতে পারলে কবেই হয়ে যেতাম।
কিন্তু পারছি কোথায়?
যাই হোক বাড়ির চাকর চাকর আর ভিকটিমের মেয়ে_জামাত এবং ছেলেকে এখানে ডাকুন।
_ওদের দিয়ে কি করবেন? বলল সাফিন।
_ভুতের নিত্য দেখাবো। ,,, একটু খেপেই বলল রিও। যেটা বলছি সেটা করুন।
_______ পাচ মিনিটে সবাই এসে হাজির।
রিও সবাইকে লক্ষ্য করে বললঃআপনারা সবাই কোন না কোন ভাবে এই বাড়ির সাথে জড়িত।
কিন্তু এই বাড়ির সম্মান আজ রাস্তা নেমে এসেছে।
কিন্তু কেন জানেন?
_কি কারনে,? বললেন আমিন জোহান।
_কারন আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন গুপ্ত ধনে ভয় থাকে?
_-______সবাই সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।
কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।
নিরবতা ভেংগে জহির সাহেব বললঃ হ্যা। জানি।
_বাড়ির ইতিহাস সবাই হয়ত কম বেশি জানেন।
কিন্তু ছাগলের ইতিহাস কেউ জানেন?
বুড়ো দারোয়ান বললঃ ছাগলের ইতিহাস আমি জানি।
_কি জানেন? বলেন।
_আমি যতদুর আমার দাদার মুখে শুনেছি।
তাতে এটা বলা যায়, পুর্ব জমিদারেরা ছাগ দুগ্ধ খেতে
পছন্দ করতেন।
তাই এই বাড়ির গোদাম গরের পিছুটাতে
একটা ছাগল রাখার ঘরও নাকি ছিল।
_হুম।দারুন, বলে যান। শুনতে বেশ ভালই লাগছে; বলল রিও।
_______ আমার মাথা এবার গরম হয়ে আসছে।
আরে বাপ এসেছি খুনের সমাধান করতে।
সেখানে কি সব আজাইরা ছাগলের গল্প শুরু করেছে।
দারোয়ান বলেই চলছেঃ আমি যত দুর জানি কি একটা আসুখে
সব ছাগল এক রাতেই মারা যায়।
তারপর সব গুলো ছাগল নাকি
ছাগল রাখা ঘরেই পুতে ফেলা হয়।
এর পর থেকে নাকি জমিদার আর কখনো ছাগ দুগ্ধ পান করেন নি।
আমার দাদার বাপ জমিদারের নায়েব ছিল।
তাই দাদা নাকি এ কথা তার বাপের মুখে শুনেছে।
_বেশ। মজা পেলাম;বলল রিও। ছাগল পুতে রাখা যায়গাটা কি জমিদারেরা সংরক্ষন করে ছিল।
এমন কিছু কি জানেন?
_না। তবে আমি যখন প্রথম চাকুরি নেয়।
তখন দেখেছি এই গুদাম ঘরের পিছে একটা বড় ছাগলের মুর্তিছিল।
আবশ্য ১২/১৫ বছর আগে সেটা ভেংগে সেখানে ফুলের চাষ করা হয়েছে।
তবে আমি ঠিক জানি না ছাগল গুলো ঠিক কোথা পুতে রাখা হয়েছিল।
_ মুর্তিটা ঠিক কোথায় রাখা হয়েছিল সেটা নিশ্চয় মনে আছে আপনার?
_হ্যা স্যার।
সেটা আছে।
_চলুন সেটাই দেখিয়ে দিবেন।
_জি স্যার।
π
বুক জোড়া রুদ্ধস্বাস।
আমরা যেন হিপটোনাইজ হয়ে গেছি।
কেউ মুখদিয়ে কিছু বলছি না।
শুধু দেখে চলেছি কি হচ্ছে আর
কি হতে যাচ্ছে।
একটু এগিয়ে গিয়ে দারোয়ান একটা গোলাপ ফুলের গাছ দেখিয়ে বললঃসম্ভাবত এখানেই একটা ছাগলের আর
তার পাশে একটা বাঘের মুর্তি ছিল।
রিও বললঃআপনি নিশ্চিত তো?
_জি স্যার।
রিও দেখলাম এবার হো হো করে হেসে দিয়ে বললঃওসি সাহেব, এবার জায়গা খুড়ে দেখুন। গুপ্ত ধনে কি ভয় আছে?
ওসি সাহেব এর অর্ডারে কয়েক জন এসে জায়গাটা খোড়া শুরু করে দিল।
বেশ ঘন্টা খানেক মাটি খোড়ার পর কিছুই পাওয়া গেল না।
এবার দেখলাম সাফিনের মুখে হাসি ফুটেছে।
সাফিন বললঃগাজার নোকা পাহাড় তলি না গিয়ে
দেখি জমিদার বাড়ি এসে গেছে,মিস্টার রিও।
অবশ্য কথাটা সাফিন শেষ করতে পারল না।
তার মাঝে কোদাল মাটিতে
চাপ দেওয়ার সাথে সাথে
টুং করে একটা শব্দ হল।
_একটু আস্তে কুড়ো;বলল রিও।কোদাল ভেংগে যাবে তো।
সাবধানে কাজ শেষ কর।
এবার সাফিনের মুখ মলিন হয়ে গেল।
আধা ঘন্টা খোড়ার পর বেরিয়ে আসল তিনটা
বক্স।
পুরু লোহা।
পারদ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া।
ততক্ষনে সাংবাদিক সাহেবেরাও চলে এসেছে।
পাচ মিনিটের মাঝে জমিদার বাড়ির পাশে ভিড় জমে গেলে।
রিও আমায় বললঃ চল। প্রফেসর। আমাদের কাজ শেষ।
এখন সরকারি জিনিস
সরকারি কামলারা সামলাক।
আমি কিছু বলার আগেই দেখলাম সাফিন বলে উঠলঃআসলে রিও স্যার।
বলতে কোন বাধা নেই।
আপনাকে প্রথমে আমার
মটেও ভাল লাগেনি।
_ওকে। ব্যাপার না; বলল, রিও।
এগুলো মনে রেখে কোন
লাভ নেই। ভুলে যান।
_স্যার। যদি খুনিকে………!
_ধরে দিতেই হবে তাইতো?
_জি, স্যার। বড্ড গোল মেলে।
খুনের কোন মোটিভ পাচ্ছি না।
_হুম।
আর কি করা?
দেখি কি করা যায়।
ওহ্যা মিস্টার আমিন; বলল,রিও।
আমিন জোহান মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বললঃজি, বলেন স্যার।
_আপনি গত পনের দিন ধরে ছুটিতে আছেন।
একমাসের ছুটি নিয়েছেন শুনলাম।
_জি, স্যার।
_কিন্তু, কেন? বলবেন কি.।
_আপনি কি বলতে চাইছেন
একটু ক্লিয়ার করে বলুন তো?
আপনি কি মনে করছেন, আমি আমার আম্মাকে খুন করেছি?
_এত রেগে যাবার কি আছে?
আমি কি সেটা বলেছি?
_জি না। আমি প্রায়ই এরুপ লং ছুটি নেয়।
রিও এবার হো হো করে হেসে দিয়ে জহিরের দিকে তাকিয়ে বললঃ কি ছোট জমিদার? এত হাসি পাচ্ছে কেন আপনার?
আমি অবশ্য অবাক হয়ে গেলাম।
কারন, জহির জমিদার হবে কেন?
সে তো জমিদার বাড়ির জামাতা মাত্র।
অবশ্য কথাটা আমার বলা লাগল না।
জহির নিজেই বললঃ আমি জমিদার বংশর জামায়।
জমিদার নয়, মিস্টার গোয়েন্দা।
_কি যেন বললেন শেষ শব্দটা ?বলল রিও।
_কেন, গোয়েন্দা?(জহির)
_হ্যা। নিজেই তো গোয়েন্দা বলছেন। আবার নিজেই সত্য টাকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন?
_মানে?
_আপনার খেল সেই গত রাতেই শেষ হয়ে গেছে;বলল রিও। নিজের হাতে খুন করেন নি।
তাই ভেবেছিলাম আপনাকে কিছু বলব না।
তাছাড়া আপনার খুনের ইচ্ছাও ছিল না।
আপনার ইচ্ছা ছিল শুধু ডাইরি হাতানো।
কিন্তু খুনিকে পালাতে হেল্প করাও কিন্তু খুনের শামিল।
_ইয়ে মানে।
_লুকিয়ে আর কি লাভ বলুন?
কি ঘটেছিল সেটা বলে দিলে
মনে হয় বেটার হয়।
_কি প্রমান আছে আপনার কাছে?
আমি খুনের সাথে জড়িত।
_আচ্ছা মানুষতো আপনি। ওকে।
আপনি জহির।
আপনার বাবা জাফর।আর আপনার দাদার নামও জহির।
আমি কি ভুল বলেছি?
_না। তাতে কি?
_এখানেইতো সব।
আমার কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনেন বুঝে যাবেন সব।
আপনি জহির, আপনার বাবা জাফর, দাদা জহির, আর আপনার দাদার বাবা জসিফ।
আর জসিফের বড় ভাই জিহান।
এবার দেখলাম জহির যেন থত মত খেয়ে গেল।
পাশ থেকে তার স্ত্রী বলে উঠলেনঃজিহান?
_জি ম্যাডাম। আপনার আম্মার দাদা জিহান; বলল রিও।
_কি বলেন এসব? বলল ভিকটিমের মেয়ে।
_হ্যা। উনিই হলেন জিহানের পালিয়ে যাওয়া ভাই জসিফের বংশধর।
আমি কি রাইট মিস্টার জহির?
জহির তার মুখ কাজুমাজু করে বলল ঃজি, আমিই জমিদার বাড়ির একমাত্র উত্তরসারি।
এই সম্পদের একমাত্র বৈধ মালিক।
_হা হা হা, তাহলে আর কি?
এবার সব খুলে বলুন।
সবাই অধির আগ্রহ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
_শয়তান মুর্তমান শয়তান আপনি মিস্টার রিও।
আমার সকল প্লান ভেস্তে দিলেন।
মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি এসে গিয়েছিল।
বাট ইউ আর দ্যা ডেভিল, যে আমার বৈধ সম্পদের মালিক
আমাকে হতে দিল না।
_হা হা হা, রিও ইজ রিও মিস্টার জহির।
চলবে……?
Like My Facebook Fan Page