আসসালামু আলাইকুম,
আমরা বাঙালি জাতি। বাঙালি জাতির সমাজ সংস্কৃতি অন্যান্য
জাতির থেকে আলাদা। আর আজকে আমি
আপনাদের সাথে আমাদের বাঙালি জাতির একটা দিক
নিয়ে আলোচনা করব। সেটা হলো গিয়ে পদবী।
অর্থাৎ বাঙালি জাতির বিভিন্ন পদবী। তাও আবার ধর্ম
ভিত্তিকভাবে ভাগ করে পদবীগুলো তুলে ধরা
হলো। যাতে আপনাদের বিষয়টা বুঝতে সহজ হয়।
আমাদের দেশে প্রধান চারটি ধর্ম। তার মধ্য এক
নম্বরে হলো – ইসলাম, দ্বিতীয় নম্বরে হলো
– হিন্দু, তৃতীয় নম্বরে হলো – বৌদ্ধ এবং চতুর্থ
নম্বরে হলো – খ্রিস্টান ধর্ম। তো বাঙালি জাতির
পদবীগুলো এই ধর্ম ভিত্তিকভাবে ভাগ করা। যা
নিচে তুলে ধরা হলো।
.
বাঙালি মুসলমানদের পদবীসমূহ :
বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত বাঙালি
মুসলমানদের পদবীসমূহ বেশ বৈচিত্রপূর্ণ। এখানে
যেমন ধর্মীয় প্রভাব বিদ্যমান তেমনই ঐতিহ্যবাহী
পেশাকেও পদবী হিসেবে গ্রহণের রেওয়াজ
বিদ্যমান।
.
ধর্মীয় পদবীসমূহ : খন্দকার, সৈয়দ, মীর,
আনসারী, গাজী, চিশতী, পীর, ফকির, মাস্তান/
মাস্তানা, মোল্লা, শাহ, খাজা, মির্জা।
.
ভূ-স্বামী হিসেবে প্রাপ্ত পদবী : খন্দকার,
আখন্দ/আকন্দ গোমস্তা, চৌধুরী, জায়গীরদার,
তরফদার/তপদার, তালুকদার, চাকলাদার, ডিহিদার, ঠাকুর,
পন্নী, ভূঁইয়া/ভূঁঞা।
.
পেশা হিসেবে প্রাপ্ত পদবী : কাজি, কানুনগো,
কারকুন, গোলন্দাজ, দেওয়ান, নিয়াজী,
পটোয়ারী, মণ্ডল (পদবী), মলঙ্গী, মল্ল
(পদবী), মল্লিক, মাতুব্বর, মুন্সি/মুন্সী, মুহুরী,
মৃধা, লস্কর, সরকার (পদবী), হাজারী, প্রামাণিক,
পোদ্দার, মজুমদার, সরদার (পদবী), হাওলদার,
শিকদার, জোয়ার্দার, ইনামদার।
.
সম্মানসূচক পদবী : খাঁ/খাঁন/খান, পাঠান (পদবী),
প্রধান (পদবী), বিশ্বাস (পদবী), শেখ, মিঞা/মিয়া/
মিয়াজী।
.
অন্যান্য : লোহানী, ঢালী, মুস্তাফী/মুস্তফী।
.
বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত বাঙালি
মুসলমানদের মত হিন্দুদের পদবীসমূহ বেশ
বৈচিত্র্যপূর্ণ এখানে যেমন ধর্মীয় জাতিভেদ
প্রথার প্রভাব বিদ্যমান তেমনই ঐতিহ্যবাহী
পেশাকেও পদবী হিসেবে গ্রহণের রেওয়াজ
বিদ্যমান।
.
ব্রহ্মক্ষত্রিয় : সেন রাজাদের শিলালিপি থেকে জানা
যায়, তাঁরা ছিলেন চন্দ্রবংশীয় ‘ব্রহ্মক্ষত্রিয়’ (যাঁরা
আদিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন, পরে কোনো কারণে
ক্ষত্রিয়ের পেশা গ্রহণ করেন)। কোনো
কোনো ঐতিহাসিকের মতে, সেনরা প্রথমে জৈন
আচার্য বংশোদ্ভূত ছিলেন। পরে শৈবধর্ম গ্রহণ
করেন। কিন্তু এই মত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
.
ব্রাহ্মণদের পদবীসমূহ : উপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়/
গাঙ্গুলী, চট্টোপাধ্যায়/চ্যাটার্জি, বন্দোপাধ্যায়/
ব্যানার্জি/বাড়ুজ্যে, মুখোপাধ্যায়/মুখার্জি,
চক্রবর্তী, শর্মা, দেব শর্মা, ভাঁদুড়ি, ঘোষাল,
কৃষ্ণ/কৃষ্ণণ, ঠাকুর চক্রবর্তী, ঠাকুর, বাগচী,
গোস্বামী, আচার্য, ভট্টাচার্য, মৈত্র, চৌধুরী (উপাধি),
রায়চৌধুরী (উপাধি), রায় (উপাধি), বিশ্বাস (উপাধি), মল্লিক
(উপাধি), মুস্তাফি (উপাধি)।
.
কায়স্থদের পদবীসমূহ : গুপ্ত, মিত্র, সিংহ, রুদ্ৰ, কর,
বিশ্বাস, দে, ঘোষ, বসু, গুহ, গুহরায়, দাস/দাশ,
নন্দী, সেন, ভদ্র।
.
ভূ-স্বামীদের প্রাপ্ত পদবী :
চাকলাদার, রায়, চৌধুরী, ঠাকুর, বর্মন, মণ্ডল, মল্লিক,
রায়চৌধুরী, দস্তিদার, খাস্তগীর, মহলানবীশ।
.
বৈশ্য কপালী : ভৌমিক।
.
নমঃশূদ্র বা নমঃস্বেজ : ভক্ত, বারুই, করাতী।
.
পেশা হিসেবে প্রাপ্ত পদবী : কানুনগো, কারিগর,
কর্মকার, শীল, গোঁসাই, ত্রিবেদী, দেওয়ান,
পালাকার, পোদ্দার, প্রমাণিক, ভাঁড়, মজুমদার, মালাকার,
সরকার, হাজরা, হালদার।
.
অন্যান্য : গুণ, বালা, জলদাস, জলধর, দাসগুপ্ত, পাল,
সাহানী/সোহানী বর, খাঁ, রং।
.
বাঙালি বৌদ্ধদের পদবীসমূহ :
বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত
বাঙ্গালী মুসলমান ও হিন্দুদের মত বৌদ্ধদেরও
পদবীসমূহ বেশ বৈচিত্রপূর্ণ। এখানে যেমন
পেশাকেও পদবী হিসেবে গ্রহণের রেওয়াজ
রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়
যে, ভিনদেশীয় পদবীকে গ্রহণ করা হচ্ছে
কিছুটা পরিমার্জন করে।
.
ভূ-স্বামী হিসেবে প্রাপ্ত পদবী : চৌধুরী,
দেওয়ান।
.
পরিমার্জিত পদবী : বড়ুয়া, মুৎসুদ্দী।
.
অন্যান্য : পাল।
.
বাঙালি খ্রিস্টানদের পদবীসমূহ :
বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত
বাঙ্গালী মুসলমান, হিন্দু ও বৌদ্ধদের মত
খ্রিস্টানদেরও পদবীসমূহ বেশ বৈচিত্রপূর্ণ।
এখানে যেমন ধর্মীয় প্রভাব বিদ্যমান তেমনই
ঐতিহ্যবাহী পেশাকেও পদবী হিসেবে
গ্রহণের রেওয়াজ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে
আবার দেখা যায় যে, ভিনদেশীয় পদবীকে
গ্রহণ করা হচ্ছে কিছুটা পরিমার্জন করে।
.
পর্তুগীজ পদবীসমূহ : গোমেজ/গমেজ, ডি
কস্তা, রোজারিও/ডি রোজারিও।
.
পেশা হিসেবে প্রাপ্ত পদবী : মন্ডল, মল্লিক,
সরকার, হালদার।
.
অন্যান্য : দত্ত।
.
তাহলে আজকে আমরা আমাদের বাঙালি জাতির ধর্ম
ভিত্তিক পদবীগুলো সম্পর্কে জেনে নিলাম।
আজকের মত আমার এখানেই পোস্টটি শেষ।
এইরকম আরো পোস্ট পেতে আমার সাথেই
থাকুন।