টেলিকাইনোসিস(Telekinesis) অর্থ “মনের শক্তি দিয়ে কোন বস্তুকে চালনা করা”। বিষয়টা শুনতে মজার হলেও আদতে এটা অনেকের কাছেই কাল্পনিক শোনাতে পারে কিংবা জাদু রহস্য মনে হতে পারে।
দেখুন আমি আপনাকে কোন কল্পকাহিনী শোনাতে আসিনি কিংবা আজাইরা প্যাচাল করতেও কিবোর্ড ধরিনি, আজ আমি আপনার লাইফ বদলে দিবো এটাই আমার লেখার উদ্দেশ্য!!
আসুন মজার কিছু খেলা খেলি…..
(১) দুইজন বন্ধু মিলে একটা খেলা খেলুন। আপনি আপনার বন্ধুকে চোখ বন্ধ করে শরীরটাকে নির্ভার করে দিতে বলুন এবার দাড়ানো অবস্থাতে তার হাত দুটোকে সামনের দিকে আহ্বান করুন (প্রথমেই তাকে বলে নিন যে তিনি যেন হাত দুটি শক্ত করে না রাখেন এবং হাত দুটিকে ইচ্ছাকৃত সামনের দিকে না আনেন; মোটকথা তাকে নির্ভার হতে বলুন) এবার নিজের হাত দুইটা হাতছানির মতোন করে তার হাত বরাবর ডাকুন এভাবে “আয়…আয়…আয়….আয়” একটা সময় দেখবেন আপম ইচ্ছাতেতে তার হাত সামনের দিকে চলে এসেছে। হয়তো খেলার শুরুতে হাসি আসতে পারে তবে একজন সম্মোহক হিসেবে আপনাকে ভারী এবং গম্ভীর কন্ঠ এবং তেমনি সিরিয়াস কনসানট্রেট মাইন্ডেড হতে হবে।
এবার তাকে চোখ খুলতে বলুন এবার অবাক করে দিন!!
(২) নিকটে থাকা একজন ব্যক্তির কপালের মাঝ বিন্দু বরাবর হাতের শাহদাত আঙ্গুল এমনভাবে রাখুন ( কপাল ছুইতে হবেনা তবে কাছাকাছি হলে ভালো হয়) এবং খুব অল্প অল্প করে আঙ্গুটি কম্পিত করুন দেখবেন ঐ ব্যক্তিটি অস্বস্তি ফিল করছে এবং একটা সময় বলবে আমার কপালের মাঝে চিনচিন করছে।
এগুলা হয়তো অনেকেই জানেন এবং এই খেলাগুলি ছোট থাকতে অনেকে করে থাকতে পারেন। আবার প্রথমবার করলে হয়তো আপনি অসফলও হতে পারেন তবে ট্রাস্ট মি এইসব নিছক সাধারণ খেলাগুলিই আপনাকে অসাধারন কেউ একজন বানিয়ে দিতে সক্ষম….
লেটস গো ফরোয়ার্ড!
কোন বস্তুকে মনের শক্তিতে এক জায়গা হতে আরেক জায়গায় সড়ানো অর্থাৎ কোন বাস্তুর ওপর আপনার ব্রেইনের প্রভাবের নামই হলো টেলিকাইনোসিস। আবার কোন মানুষের ব্রেইনের ওপর আপনার ব্রেইনের প্রভাবের নাম হলো হিপ্নোসিস।
টেলিকাইনোসিস এবং হিপ্নোসিস দুটো আলাদা বিষয় তবুও আমি তাকে একই সমান্তরালে আলোচনা করা যায়; আমি টেলিকাইনোসিস নিয়ে ২টা পর্ব করতে চাই যেখানে প্রথমে আমি (১) কোন মানুষের ব্রেইনের ওপর আপনার ব্রেইনের প্রভাব আলোচনা করবো এবং (২) কোন বস্তুর ওপর আপনার ব্রেইনের প্রভাব আলোচনা করবো।
তাহলে প্রথম পর্বে আপনাকে স্বাগতাম!!
(১) কারো সাথে কথা বলার সময় তার চোখের দিকে নিবিঢ় এবং ধীরভাবে তাকিয়ে কথা বলুন মোটেই বিক্ষিপ্ত হবেন না; দেখবেন সেই মানুষটি আস্তে আস্তে আপনার প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
তাইবলে এটা স্যার বা স্বয়ং আপনার বাপের ওপর এক্সপেরিমেন্ট করতে যাবেন না তাহলে হীতে বিপরীত হতে পারে কেননা তাদের মানসিকতা আর অবচেতন মন আপনার জন্য ভিন্নভাবে তাদের ব্রেইনে অবস্থান ও প্রতিকৃতি তৈরী করে রেখেছে তাই তাদের চোখে চোখ কথা বলতে গেলে উল্টে ঝাড়ি শুনতে হবে।
এটা সমবয়সী বা অপরিচিত কারো ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল দিতে পারে; তবে সবকিছুই নির্ভর করবে আপনার ধীর স্থির মানসিকতা এবং সম্মোহক দৃষ্টি।
(২) রিলেশনশিপের ক্ষেত্রেও কথা বলার সময় ছেলেদের ঠোটের হালকা বাকা করে ইষৎ হাসি এবং চোখের সম্মোহিত চাহনি যেমন থুতনী বরাবর তীর্যক দৃষ্টি বিপরীত লিঙ্গ’কে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করে [এই বিষয়ে ডিটেইলস লেখা বোধহয় প্রাসঙ্গিক হলেও দৃষ্টিকটু হতো তাই এড়িয়ে গেলাম]।
(৩) সমবয়সীদের সাথে কথা বলার সময় তাদের কাধের মাংসপেশিতে হাত রেখে কথা বললে তারা দ্রুতই আপনাকে আপন করে নিবে এবং আপনার ওপর আস্থা রাখবে তাই কোন বিশেষ কথা বলার সময় এটা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে। মূলত কারো কাধে হাত রাখলে এটা ব্রেইন’কে এমন সিগন্যাল পাঠায় যেন অপর পক্ষ আপনার বিশ্বস্ত কেউ তাই অবচেতন মন সেই সিগন্যাল অনুযায়ী পবর্তিত হয়।
(৪) হ্যান্ডশেক করার সময় একটু দৃঢ় মুঠি বান্ধন এবং হালকা ঝাকুনী অবচেতন মন আপনাকে অপর পক্ষের প্রতি বিশ্বস্ত এবং বিশ্বাসভাজন হিসেবে উপস্থাপন করে।
(৬) কারো সাথে কথা বলায় সময় চেষ্টা করবেন গলাটা খুব সামান্য একটু উচু করে কথা বলতে (তাইবলে এমন নয় যেন আপনাকে রাজহাস মনে হয় বরং এটা যেন কেউ ধরতে না পার) তাহলে সে যখন আপনার কথা শুনবে এবং আপনার প্রতি কনসানট্রেট করবে তখন অজান্তেই তার ঘাড়টাও একটু উচু হয়ে যাবে এতে করে মস্তিষ্কে একটা আলাদা সিগন্যাল তৈরী হয় এবং আপনার কথা মেনে চলার বা লীড গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরী হয়।
বিষয়টা আমার মুখে শুনতে আজাইরা লাগলেও এটা কিন্তুু আমরা প্রায় ফলো করে থাকি যেমন খুতবা দেবার সময় ইমাম সাহেবের মিম্বারে দাড়ানো [ইসলাম এমনই একটা ধর্ম যাতে আল্লাহ তাআলা এতো বৎসর পূর্বেও মানুষের সাইকোলজি সম্পর্কে এতো স্বচ্ছ জ্ঞান দিয়েছেন] কিংবা আরও উদাহরণ হিসেবে আপনার চেয়ে লম্বা করো সাথে মারামারি করতে দ্বিধাবোধ করা ইত্যাদি এটার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
(৭) আপনি যদি সমান্তরালে বসে করো চোখের দিকে বাকা নজরে (চোখের কোণ দিয়ে) দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকেন তবে অপরপক্ষের ভেতর অস্বস্তি কাজ করে, আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন যে মানুষের আড়চোখে দৃষ্টিক্ষমতা রাতে সোজাসুজি দৃষ্টিক্ষমতার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী।
(৮) কথা বলার সময় অন্যের কপালের মাঝ বিন্দু বরাবর তাকিয়ে কথা বললে তিনি সম্মোহিত হয়ে পড়েন তবে তার জন্য পূর্বে যথার্থ প্র্যাকটিস এর প্রয়োজন।
(৯) কারো হাত তার নাক বরাবর তুলে রক্ত ধমনীর তথা হাতের শিড়ার ওপর একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ক্রমান্বয় চাপ প্রয়োগে তিনি দ্রুতই তন্দ্রাছন্ন হয়ে পড়েন এবং সম্মোহিত হয়ে পড়েন।
আপনার হয়তো কথাগুলো শুনে বেশ আজব আর অদ্ভুত মনে হতে পারে, হয়তো মনে মনে একগাল হেসেও নিয়েছেন তাইনা?
অথচ এগুলা সবই সায়েন্স হয়তো সবগুলার ব্যাখ্যা ফিজিওলজি এবং নিইরোলজি দিতে পারেনি তবে এমন বিষয়গুলি যে মানব শরীরে এবং মানব মনে তথা ব্রেইনে প্রভাব বিস্তার করে তা স্বীকৃত প্রমাণিত।
বললাম তো টেলিকাইনোসিস আর লিখলাম হিপ্নোসিস!!
আমি আগেই সেই বিষয়টা বলেছি যে আমি দুই পর্বে এটাকে বিভক্ত করে লিখবো যাতে সবাই সাম্যক জানতে ও শিখতে পারেন তবে কবে সেই টেলিকাইনোসিস এর ২য় পর্ব প্রকাশ করতে পারবো সেটা দিন তারিখ বলতে পারলাম না।
তাই আগে ভাগে কিছু জিনিস বলে দিই…..
অনেকেই দেখেন টেকিকাইনোসিসে হাত দিয়ে কোন হালকা বস্তু যেমন কাগজ বা প্লাস্টিক কাপ ইত্যাদি বিক্ষিপ্তভাবে নড়াতে পারেন। আচ্ছা আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে মানুষ একটি নির্দিষ্ট পরিমান ফ্রিকুয়েন্সির শব্দ শুনতে পায় এবং সেই সীমার বাইরে মানুষ কোন শব্দ শুনতে পারেনা তা হউক শ্রাব্যতার সীমার নিচে বা ওপরে। আবার আপনি হয়তো জানেন যে জেডবিমানের শব্দ আপনার ঘরের কাচের গ্লাসকে পর্যন্ত ভেঙ্গে চুরচুর করে দিতে সক্ষম।
আসলে এখানে টেলিকাইনোসিস করা ব্যক্তির এমনই উৎপন্ন করা ফ্রিকুয়েন্সি যা আমরা শুনতে পাইনা সেটাই ঐ হালকা বস্তুকে বিক্ষিপ্তভাবে নড়িয়ে দেয়।
এটা তো গেল হালকা বস্তু কিন্তু ভারী বস্তু যেমন ট্রেনকে মনের শক্তি দিয়ে তারা কিভাবে নাড়াতে পারেন?
দেখুন এখানে আদতে মনের শক্তি বলে কিছু নেই তবে ব্রেইনের একটা বিরাট টুইস্ট আছে সেটা স্বীকার করতেই হবে; আর আমি অতিপ্রাকৃত শক্তির গল্প বলছি না আমি আপনাকে সায়েন্স শেখাচ্ছি (হউক তা থিসিস বা কনসেপ্ট কিংবা ফিকশান)। আপনার সামনের চেয়ার অনু পরমানু দিয়ে গঠিত, আবার মাঝের বাতাস সেটাও একইরূপ নানা পদার্থের অনু পরমানু দিয়ে গঠিত আর আপনার হাতও অনু পরমানু দিয়ে গঠিত তাই বিষয়টাকে এভাবে বিচার করলে মাধ্যমের ক্ষুদ্রতম কণাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আপনিও পারবেন দূরের বস্তুকে না ছুয়েই যা ইচ্ছা তাই করতে।
বিষয়টা চরম গোলমেলে হয়ে গেল তাইনা… আবোল তাবোল মনে হচ্ছে???
আসলেই ভাই এই কোয়ান্টাম ফিজিক্সটা চরম ফাজিল যেই আলোকে নিয়ে একটা নয়া আবিষ্কার করি তেমনি আলো হয়ে যায় কণা আবার যখনই আলোর একটা অসংগতি খুজে পাই তখনই আলো নাকি তরঙ্গ হয়ে যায়!!!
দেখুন অনু পরমাণু তো আর জ্বীন ভূত নয় যে তার শক্তি দিয়ে আপনি বস্তুকে বশ করবেন তাই এখানে আসল বিষয়টা হইলো এইসব অনু পরমানুর ভেতর থাকা মৌলিক কণা আর তারও ভেতরে থাকা ফোটন কণা যা কিনা নয়তো বস্তু আর নয়তো তরঙ্গ সেটাকে দিয়েই এমনটা করা সম্ভব।
তাহলে সায়েন্স কেন এটাকে স্বীকার করেনা??
আসলে সায়েন্স শুধু প্রমান পেলেই ক্ষান্ত হয়না বরং সে চায় সবকিছুকে গাণিতিক সূত্র আকারে তুলে ধরতে তাই যদিওবা টেলিকাইনোসিস আপনার চোখের সামনে প্রমান দেওয়া হয় তবুও সায়েন্স তাতে নাক সিটকোবে!!
লাইফ নাকি পাল্টে যাবে কোই পাল্টালো???
আসলে আপনার এবং সফলতার মাঝে তফাত হইলো এই হিপ্নোসিসের অভাব, বলতে পারেন হিপ্নোসিস হলো ভাইটামিন (ভিটামিন) আর সফলতা হইলো সুস্বাস্থ্য।
মনে হচ্ছে ফাজলামি করছি? আসলে এখানে হিপ্নোসিস হলো কনসানট্রেশন (এটাকে সেল্ফ হিপ্নোসিস বলে), আপনার পড়াশোনাতে সফল না হওয়া কিংবা কোন বিশেষ কাজে সফল না হওয়ার জন্য দায়ী এই বিক্ষিপ্ত মন, সুতরাং আলাদিনের জাদুর দৈত্য বশ না করে আপনার মনকে বশ করতে পারলেই ম্যাজিকাল কিছু করে ফেলা পসিবল।
“সবার আগে পড়াশোনার শুরুতে নিজের মনটাকে শান্ত করুন এবং মাথা হতে সকল দুশ্চিন্তা মুছে ফেলুন। আপনি পারবেন কি পারবেন না সেটা নিয়ে ভাববেন না, আপনার কাজ শুধু চেষ্টা করা এবং আপনি সেটা নিরবিচ্ছিন্নভাবে করতে থাকুন।পড়াশোনা সময়ে মাথা শুধুমাত্র ১৮০ ডিগ্রী ঘোরাবেন এর বেশী নয় সুতরাং আপনার পিছে তুফান আসলেও আপনি টলবেন না। কানের আপনার পড়াশোনা শব্দ ছাড়া আর কিছুর দিকেই কর্ণপাত করবেন না এমনকি এতোটাই সেন্সিটিভ হয়ে যান যেন শুধুমাত্র নিজের নিঃশ্বাস ফেলানোর শব্দটাও শুনতে পারছেন”
মনটাকে উপরের কমান্ডের মতোই ট্রেইন করুন। উপরের কমান্ডটি শুধুমাত্র পড়াশোনা নয় বরং যেকোন কাজেই ইউটিলাইজ করতে পারেন। এখন যদি বলেন “ভাইয়া আমার তো মনোযোগই আসেনা তাইলে ক্যামনে কি??” তাহলে একটা কাসার পাত্রে স্বচ্ছ পানি নিয়ে সেই পানির উপরিপৃষ্ঠের দিকে ৫/১০ মিনিট মোমবাতি জ্বালিয়ে একটানা তাকিয়ে থাকুন, এভাবে একটানা ৩/৪ সপ্তাহ করুন আশা করা যায় মনোযোগ বাড়বে।
ভাইয়া কাসার পাত্র ক্যান….কোন যাদু মন্তর আছে নাকি?
আপনি যদি আমাকে এমন কথাতে কথাতে পোস্ট মর্টাম করেন তাহলে কি আর বলবো….আপনি হয়তো জানেন পানির পোলারিটি আছে অর্থাৎ পানিতে সমযোজী বন্ধন থাকলেও তাতে পানির পারমানবিক বিন্যাসে দুটো আলাদা চার্জিত পোল থাকে এবং ধাতব পদার্থেও ইলেকট্রোন ভাসমান সমুদ্রের মতো থাকে তাই পানির উপযুক্ত আনবিক বিন্যাসে উক্ত ইলেক্টরোনের ডেনসিটি বিশেষ তাৎপর্য্যপূর্ন!
সবশেষ প্রশ্নটি যদি হয় ভাইয়্যা আপনি এত্তোসব ক্যামনে জানেন তাহলে বলবো “পড়”!
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন; আল্লাহ হাফেজ