[ট্রিকবিডি টেকনোলজির একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম; পোস্টে নিউরো সায়েন্স এর প্রকৃতি উপলব্ধি করতে কিছু কিছু শব্দ বা বাক্য হয়তো ভায়োলেট/নন জেন্টাল মনে হতে পারে, আদতে পোস্টের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে সেগুলি ব্যবহার করা হয়েছে; ভিজিটরগণের সদয় উপলব্ধি এবং অনুধাবন কাম্য]
গল্প:
সাত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সময় দেখতে মোবাইল হাতে নিয়ে খানিকটা অবাক হলাম, Mona নামে একটা মেসেজ এসেছে; এই নামে তো কোন নাম্বার আমার মোবাইলে সেভ নেই তাহলে এই Mona টা আবার কে??
ভাবলাম প্রমোশনাল মেসেজ কিন্তু মেসেজের লেখাটা পড়ে মাথাটা হালাক চক্কর দিলো “সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দাও নইলে আমি তোমাকে খাবো…আমি আসছি”। ধূর ফালতু…যত্তোসব; ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খালি পেটে একটা জ্ঞানের বাত্তি না জ্বলালে আবার আমার ঠিকমতো মাথায় কাজ করে না,তাই দোকানে গিয়ে একটা সিগারেট কিনে সবেমাত্র ঠোটে ধরলাম ওমনি আবার মোবাইল টিং টং বেজে উঠলো; এবারের মেসেজ “প্রায় পৌছে গিয়েছি….তোমার পেটের ভেতর একটু পরই মোচড় দিবো”। হাফডান স্টিক জ্বালিয়েই রুমে ফিরলাম….ও মা গো, সত্যিই সত্যিই পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো; টানা তিনবার বাথরুমে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছি, খানিকটা ভয় পেয়েছি বললেও ভুল হবেনা। এরপর চুপিচাপি সন্ধ্যাবেলা পাঁচতলা বাসার ছাদে আবার একটা স্টিক জ্বালালাম, শ্যালিকা(অশুদ্ধ ভাষায় পড়ুন) Mona নিশ্চয়ই আমাকে ফলো করে আবার মোবাইলটা টিং টিং করে জানান দিলো “আমি পৌছে গিয়েছি… আজ রাতে তোমার বুকের ওপর উঠে তোমাকে খুন করবো”। কিসের সিগারেট আর কিসের পিনিক পড়িমরি করে নিচে দৌড় দিলাম। রাত একটা পর্যন্ত ভয় আর টেনশনে চোখ দুটো এক করতে পারলাম না, এরপর কখন জানি চোখ বন্ধ হয়ে গেল টের পাইনি।মাঝরাতে বুকের ওপর চাপা একটা ভার অনুভব করলাম, কে যেন উবুড় হয়ে চাপা দিচ্ছে অনেকটা দুইপা জড়ো করে বুকের ওপড় হাটু গেড়ে বসলে যেমন অনুভব হয় আরকি। চোখ খুলতেই কিচ্ছু নেই…সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার, মিনিট পাঁচেক দম নিলাম নিয়ে সারাটা রাত জেগেই কাটালাম আর প্রতিজ্ঞা করলাম আর সিগারেট খাবো না। পরদিন একটাও সিগারেট খায়নি আর সারাদিনে Mona নামেও কোন মেসেজ আসেনি, সন্ধ্যাবেলা মোবাইলে আরেকটা মেসেজ আসলো যেখানে Mona লিখেছে “গুড বয়…..আমি চলে যাচ্ছি”।
শিক্ষা:
এটা একটা কাল্পনিক গল্প যেখানে Mona একটা কাল্পনিক চরিত্র; গল্পের ভূত-পেত্নীর মাহাত্ম্য বয়ান করছি না তবে “ভয়” নামক জিনিসটার প্রোপার পজিটিভ ইউটিলাইজেশন নিশ্চিত করছি। দেখুন বিজ্ঞান বলুন আর বাস্তবতা বলুন “ভূত” নামক দৈত্যটাকে অদ্যাবধি কেউ কখনো দেখেনি তবে “ভয়” নামক অনুভূতিটা যে সাইকোলজি থেকে ফিজিওলজি পর্যন্ত বিস্তৃত সেটা মেডিকেল সায়েন্স কবেই তো স্বীকার করেছে।
আমরা এই ভয়’টাকেই কাজে লাগিয়ে সমাজ সংস্কার করবো।
ট্রেন্ড এন্ড টনিক:
আমরা কিছুদিন আগেও ব্লু হোয়েল নামের গেমটার কথা শুনেছি, যেটা নিয়ে এতো বেশী গুজব তৈরী হয়েছিলো যে কেউ মার্ডার করে হাতে তিমির ছবি একে দিলেই সেটা সুইসাইড হয়ে যাবে এমন অবস্থা; এখন আমার মোমো নামের হোয়াটসএপ গেমটাকে ইচ্ছাকৃত এতোটাই ভাইরাল করা হচ্ছে যেন পাবলিক এইসব নিয়ে পাকনামি করতে পারে।
আবার আমি যখন পিচ্চি ছিলাম তখনকার সময়ে এমন একটা আতঙ্ক ছিলো যে একটা ছায়ামানব নাকি ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে নিয়ে বাতাসে গায়েব হয়ে যায়…..আমাকে নিয়ে তখন আম্মার কত্তো টেনশন, সব সময় কোলে কোলে রাখতেন।
আসলে সেই গুজব আর আতঙ্কের আড়ালে একটা কুচক্রী ছেলেধরা দল ছিলো যারা বাচ্চাদের চুরি করে বিক্রি/পাচার করতো।
এইসবই হলো ট্রেন্ড….সময়ের সাথে সাথে ট্রেন্ড থাকবেই থাকবে; এটা হিউম্যান ইভল্যুশনের একটা বিকৃত বিহ্যাভিয়ার।
তো আমরা এই ট্রেন্ডটাকে পজেটিভলি এমনভাবে ব্যবহার করবো যাতে “সমাজ হতে সকল খারাপ মানুষ দূর করবো” এই মোটিভে তাই এটাকে টনিক বলা চলে!
কিভাবে করবো জয়??
আমাদের সকলের আশে পাশেই ঘুরে ফিরছে বিভিন্ন খারাপ মানুষ কেউ ঘুষখোর, কেউ তাদের স্ত্রীকে অকারনে মারপিট করে কিংবা কেউ দূর্নীতি অথবা সন্ত্রাসী ; ঠিক এইসব মানুষকে টার্গেট করে ছড়িয়ে দিন ভাইরাস।
সবার আগে এইসব খারাপ মানুষের তালিকা করে তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন যেমন মোবাইল নাম্বার, ফেসবুক আইডি, ইমেইল ইত্যাদি ইত্যাদি; এইবার তাদের ন্যাচারাল লাইফ সম্পর্কে যতোটা পারেন ইনফরমেশন গ্যাদার করুন এবং সেগুলি এনালাইসিস করে ঐ ব্যক্তি স্বত্ত্বার একটা কাল্পনিক সম্ভাব্য প্রতিকৃতি মনে মনে আঁকুন।
যেমন তিনি কিসে ভয় পান- কতোটা ভয় দিলে তালে এনাফ কাবু করা যাবে-তার দূর্বল জায়গা কোনটি-তার পূর্বের কোন সিক্রেট বিষয় কিংবা লুক্কায়িত গোপন কাজ যেটা সবার সামনে এক্সপোজ হলে তার মান সম্মান নষ্ট হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এবার ছক মতোন আপনার এট্যাক ধীরে ধীরে শুরু করে দিন, আপনার এট্যাকিং এক্টিভিটি ব্যক্তি বিশেষে বিভিন্ন প্রকার হবে, সহজকথায় ব্যক্তির প্রকৃতি-চরিত্র বিশ্লেষণ করে আপনাকেই নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখতে হবে (যেমন উপরে গল্প আমি একটা ডেমো দিলাম)।
আর হ্যা, আপনাকে কিন্ত সবটা সময় আপডেটেড থাকতে হবে যেমন যেমন কেউ আপনার মেসেজ পেয়ে সীম পাল্টে ফেললে তার নতুন নাম্বার সংগ্রহ করা, কিংবা মোবাইল ব্যবহার বাদ দিলে পুরান আমলের ডাকে চিঠি পাঠানো ইত্যাদি অলটারনেটিভ আইডিয়া আপনার মাথাতেই পয়দা করতে হবে….
এনোনিমাস হউন:
মনে করুন আপনি এইসব কাজ একটা দূর্নীতিবাজ পুলিশের সাথে করছেন এবং কোনভাবে সে আপনাকে পাকড়াও করলো…এইবার ভাবুন তো কেমন হবে অবস্থা? এইজন্যই আপনাকে এনোনিমাস হতে হবে। নিজের ব্যক্তিগত নাম্বার ব্যতিরেকে প্রাইভেট ইন্ডিভিজ্যুয়াল নাম্বার,আইপি ডায়ালিং কিংবা ফলস নাম্বার ব্যবহার করুন; আবার ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইপি বদল তথা প্রক্সি ফ্লাডিং, ম্যাক চেঞ্জ কিংবা এনড্রোয়েডের রুট এক্সেসে আইএমইআই পাল্টে নিন।
মেসেজ পাঠাতে বাল্ক মেসেজ ব্যবহার করুন এবং সিকিউরিটির জন্য ডিপোসেবল হোস্টিং হতে বাল্ক প্রাইভেট বাল্ক মেসেজ গেটওয়্যে তৈরী করে নিন ( আমি সব ইলিমেন্টই বলে দিলাম, এবার কষ্ট করে সাগর পাড়ে ঝিনুক কুড়ানোর কাজটা তো আপনাকেই করতে হবে)।
সত্যিই কি এভাবে সমাজের সকল খারাপ মানুষ ভালো হয়ে যাবে??
সত্যি বলতে না, এভাবে কখনো স্থায়ীভাবে শতভাগ সমাজ সংস্কার সম্ভব না তবে দ্রুত ইফেক্টিভ পদ্ধতিতে আশা করা যায় বেশীরভাগ খারাপ মানুষ ভালো হয়ে যাবেন ; যেমন ব্লু হোয়েল গেইম খেলে আদতে যদি ১০ জন সুইসাইড করে তবে তার বিপরীতে ১০০০ মানুষ সচেতন হয়েছিলো, এমনকি গোটা দুনিয়াকে নীরবে নাড়িয়ে দিয়েছিলো এই সাইকোলজিক্যাল গেইম’টি; আপনাকেও এমনি একটা নীরব ভাইরাস খ্যাত গেইমের নায়ক হতে হবে।
দেখুন আমরা আসলে “ভয়” জিনিসটাকে ভয় পাই তাই এটাকেই কাজে লাগিয়ে আপনার কাল্পনিক তৈরী ভাইরাসটাকে এমনভাবে ভাইরাল করুন যেন একজনের ইফেক্টে তার পাশের আরো ১০ জন ভালো হয়ে যায়।
আর একটা মানুষ যখন ভালো মানুষ হওয়ার আস্বাদ অনুভব করেন তখন তিনি আর শত লোভ লালসাতেও খারাপের ধারে কাছেও যাবেন না, যেমন বাস্তবতা বিচারে এমন অনেক পরিশ্রমী হত দরিদ্র মানুষ পাবেন যাদের সামনে লাখ টাকা ফেলে রাখলেও তার ভেতরে লোভ জাগবে না কিংবা সে টাকা চুরি করবে না; কেননা তার ভেতরে নৈতিকতার সফটওয়ার ডিফল্টলি ইনস্টলড হয়ে আছে।
তবুও আপনি যদি মাত্র ১ জনকে মানুষকেও ভালো করতে পারেন তবে সেটাই আপনার স্বার্থক সাফল্য!
গ্রুপ হয়ে কাজ করুন:
সাধারনত একার পক্ষে এতোসব ইনফরমেশন সংগ্রহ করা, এনালাইসিস করা এবং নিয়মিত আপডেটেড থাকা প্রায় অসম্ভব তাই আপনারা ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে এনোনিমাস’লি এমন একটা টিম/গ্রুপ তৈরী করতে পারেন যারা এই ভাইরাসটাকে ভাইরাল করবে।
এমনকি বিষয়টাকে সত্যাসত্য ভাইরাল ও পপুলার করতে আপনার পরিচিত ফ্রেন্ড কাউকে ভিক্টিম বানিয়ে লোকের সামনে প্রেজেন্টেশনও করতে পারেন।
সাইকোলজি কি বলে??
শেষকথা:
এটা এক প্রকার টেক এডভেঞ্চারাল ফিকশান তাই এটাকে নিয়ে ফ্যান্টাসটিক কিছু করতে পারেন বটে কিন্তু সারাদিন এটা চিন্তা করতে করতেই মাথাতে পেইন তুলবেন না; এটাকে ভালো কাজে ব্যবহার করে আপনি হয়তো সেলিব্রেটি হতে পারবেন না তবে মনের দিক থেকে নিশ্চিত সেল্ফ স্যাটিসফেকশন পাবেন।
ফেসবুকে আমি→ নিশান আহম্মেদ নিয়ন
সবশেষে একটাই অনুরোধ করবো “সালাত কায়েম করুন”
আল্লাহ হাফেজ