*★★★আসসালামু আলাইকুম ★★★
কেমন আছেন সবাই। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন।
হার্টে যে কোন সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ হার্ট সমস্যায় ভুগছেন। যতো দিন গড়াচ্ছে ততই এই রোগটি যেন মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ শুধু উন্নত বিশ্ব নয়, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও হার্টের রোগী এতো পরিমাণে বাড়বে যে, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের হার্টের সমস্যা থাকবে।
তাই আমাদের প্রত্যেকেরই খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি কায়িক পরিশ্রমের দিকেও নজর দিতে হবে।
তাছাড়া হার্ট অ্যাটাক হলে প্রত্যেকেরই কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কেও ধারণা থাকা দরকার। আপনি একা থাকা অবস্থায় যদি আপনার হার্ট অ্যাটক হয় কিংবা অন্য যে কোন সময় যদি হার্ট অ্যাটাক হয় তাহলে আপনি কি করবেন?
নিচের বর্ণনা থেকে জেনে নিন এর বিস্তারিত-
অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণ বুকের বাম দিকের একেবারে মাঝে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। হার্ট অ্যাটাকের এটাই সবচেয়ে প্রাথমিক লক্ষণ। সাধারণ ভাবে প্রায় ২০ মিনিট ব্যথা থাকে।
ধীরে ধীরে তা উপরে বাম দিকের হাত ও কাঁধের সংযোগস্থল, ঘাড় ও চোয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। প্রচণ্ড ঘাম হওয়া এ সময় প্রচণ্ড ঘাম হয় ও ধীরে ধীরে চারদিক অন্ধকার মনে হতে থাকে।
একা থাকলে এমন লক্ষণ বুঝলে কখনই অবহেলা করবেন না। তাই পরিচিতদের খবর দিয়ে রাখুন। হার্টের রোগীরা সবসময় অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি পরিসেবার নম্বর হাতের কাছে রাখবেন। বাইরে রাস্তায় থাকলে সঙ্গে সঙ্গে পাশের কারও সাহায্য নিন।
১। অ্যাসপিরিন সঙ্গে রাখুন হার্ট অ্যাটাকের সময় অ্যাসপিরিন নিলে অনেকটা উপকার হয়। একা থাকা অবস্থায় অ্যাসপিরিন নিলে প্রাথমিক অবস্থায় অনেকটা সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়।
২। জোরে শ্বাস নিন বহুকাল ধরেই এই ব্যাপারটি চলে আসছে। চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন, জোরে জোরে শ্বাস নিলে হার্ট অ্যাটাকের সময় অনেকটা উপকার হয়।
৩। বুকে চাপ দিন হার্ট অ্যাটাকের সময় চিকিৎসকরা অনেক সময়ে দুই হাত দিয়ে হার্টের উপরে চাপ দেন, যাতে হৃকম্পনের স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে। বাড়িতে একা অবস্থায় নিজে থেকে এই পদ্ধতির ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪। কাশতে থাকা পুরনো হলেও এই টোটকা দারুণ কাজে দেয়। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। তবে অনেক সময় হার্টের সমস্যায় জোরে জোরে কাশলে কোনো জায়গায় সামান্য ব্লক থাকলে তা খুলে যায়।
হার্ট অ্যাটাকের পর অবশ্যই করণীয়ঃ
১) হার্ট অ্যাটাকের পর শারীরিক অন্যান্য জটিলতা না দেখা দিলে রোগী বিছানায় উঠা বসা বা সময়ের সাথে সাথে অল্প হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। হার্ট অ্যাটাক হলেই যে বাকি জীবন শুয়ে কাটিয়ে দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বরং সঠিক পরামর্শে সামান্য হাঁটা চলা রোগীর জন্য ভালো। তবে অবশ্যই আগের চাইতে বেশি বিশ্রাম নিতে হবে রোগীকে।
২) হার্ট অ্যাটাকের পরপর প্রথম দিকে তরল খাবার, এরপর নরম খাবার এবং পরবর্তীতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো সম্ভব। এতে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হবে না।
৩) পুরো রুটিন তৈরি করে খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ও ঔষধের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই রুটিনের বাইরে যাওয়া যাবেন না হার্ট অ্যাটাকের পরবর্তী ৪-৬ সপ্তাহ সময় পর্যন্ত।
৪) খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার এবং ফলমূল বেশি পরিমাণে খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। বিশেষ করে শাক সবজির তালিকা বড় করতে হবে প্রতিদিনের খাবারে।
৫) হাসপাতাল থেকে ফেরার প্রথম দিকে ঘরেই হালকা হাঁটাহাঁটি ও অল্প ব্যায়াম শুরু করা উচিত। এরপর সময়ের সাথে সাথে বাড়ির বাইরে হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করা উচিত। এবং প্রথম দিকে ৫-১০ মিনিট পরে প্রতি সপ্তাহে ৫-১০ মিনিট করে হাঁটাচলা ও ব্যায়ামের সময় বাড়ানো উচিত। তবে ব্যায়ামের ফলে যদি বুকে ব্যথা হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৬) শারীরিক অবস্থা ও মানসিক অবস্থা দুটোই ঠিক থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ৬ সপ্তাহ পর থেকেই স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারেন। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন, রোগীকে আগের মতো কাজের চাপ নিতে দেয়া চলবে না এবং বিশ্রামের ব্যাপারে অবহেলা করা চলবে না।