উইজা বোর্ড বা প্লানচেটের নাম শুনেছেন কখনও?
ঐ যে হরর হলিউড মুভিতে একটা সাংকেতিক কাঠ বোর্ডের ওপর কয়েকজন হাত নিয়ে আত্মাকে ডাকে; আত্মার সাথে কথা বলে….জানেন তো?!
আসুন আজ আমরা উইজা বোর্ড সম্পর্কে কিছু আলোচনা করি; ধূর কি দেখেন আসেন তো…….
উইজাবোর্ড কি?
উইজাবোর্ড হলো এমন একটা সাংকেতিক বোর্ড যাতে ইংরেজি ২৬ টি লেটার, 0-9 পর্যন্ত সংখ্যা এবং YES, NO, GOODBAY লেখা থাকে। উইজাবোর্ডে আত্মার সাথে কমিউনিকেট করতে সাধারনত তিনজন ব্যক্তির প্রয়োজন হয় যারা একটি ত্রিকোণাকার কাঠের খন্ডের ওপর সমন্বিতভাবে হাত রাখে এবং আত্নাকে আহ্বান করে; আত্না উপস্থিত হলে সেই কাঠের খন্ডটি অটোমেটিক বিভিন্ন লেটার বা শব্দের মাধ্যমে উপস্থিত ব্যক্তির বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয় তথা যোগাযোগ করে।
ইসলাম কি বলে?
ইসলাম ধর্মে মানুষের মৃত্যুর পর আত্মা পৃথিবীতে থাকে না বরং আল্লাহর নির্দেশে সেটি বিশেষ স্থানে রক্ষিত থাকে সুতরাং ইসলামিক দৃষ্টিতে উইজাবোর্ড বা আত্মার সাথে কমিউনিকেশন করা অসম্ভব এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা ইসলাম বিরুদ্ধ হতে পারে ( কেননা মানুষ যখন ইসলামী বিশ্বাসের বাইরে চলে যায় তখন শয়তান তাকে প্ররোচিত করার মোক্ষম উপায় পেয়ে যায় এবং তাকে বিভ্রান্ত করে)।
আসলেই উইজাবোর্ড কি কাজ করে??
আবার প্রফোশনার প্যারানরমাল এক্সপেরিমেন্টার যারা অন্যদের সাথে তাদের মৃত রিলেটিভদের আত্নার যোগাযোগ করানোর মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন তারা বিভিন্ন ট্রিকের সহায়তা নিয়ে থাকেন; আপনি জানলে হয়তো অবাক হবেন যে আমেরিকার মতোন একটি দেশে প্যারানরমাল বিষয়গুলি শিল্প এবং ব্যবসার একটি জনপ্রিয় ইলিমেন্ট।
আবার যারা উইজাবোর্ডে বসেন তাদের সবার যদি চোখ বন্ধ থাকে কিংবা চোখ বেধে দেওয়া হয় তাহলে কিন্তু আর উইজাবোর্ডে কোন অতিপ্রাকৃতিক বিষয় খেয়াল করবেন না।
আবার ভিন্নদিকে ধর্মীয় দৃষ্টিতে আমাদের আশে পাশেই অগণিত জ্বীনের বাস তাই উইজাবোর্ড এক্সপেরিমেন্টের সময় তারা মানুষের সাথে অদৃশ্যভাবেই উপস্থিত হয়ে বিভ্রান্ত করে মাত্র; উল্লেখ্য জ্বীন জাতির কিছু বিশেষ ক্ষমতার জন্য তারা অনেক সময়ই মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম যা মানুষের পক্ষে আপাত অসম্ভব।
সায়েন্স কি বলে?
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও উইজাবোর্ডের বাস্তব প্রমাণ বা স্বীকৃতি নেই বরং নিউরোসায়েন্স মতে মানুষের অবচেতন মনই এমন প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী।
তবে কল্পবিজ্ঞান কিন্তু এখানেই থেমে নেই বরং তারা বিভিন্ন লজিক মিলিয়ে মিলিয়ে একটি সূত্র করতে চায়…..চাইলে আপনিও লজিকাল মাইন্ড নিয়ে উইজাবোর্ড বিষয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন, করবেন নাকি???!!!!
আমাদের মাথার ব্রেইন পরিচালিত হতে কিছু শক্তির প্রয়োজন; সেই শক্তি পরিমাপে একটি ইলেকট্রিক বাল্ব পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব। আমাদের এই ব্রেইনের মাঝেও আছে বিভিন্ন লো রেঞ্জের ফ্রিকুয়েন্সি, যেটা আলফা-বিটা-ডেলটা-থেটা শ্রেণীতে 0.5 Hz থেকে 30 Hz অবধি হতে পারে।
আমাদের চারিদিকেও আছে অসংখ্য ফ্রিকুয়েন্সি যেমন মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি-এফএম ফ্রিকোয়েন্সি ইত্যাদি ইত্যাদি (যদিও তা ভ্যালুর দিক থেকে অনেক অনেক হাই ফ্রিকোয়েন্সি); তাই কোনভাবে এটা হতেও পারে যে এনভায়রনমেন্ট হতে এক্সটারনাল ফ্রিকোয়েন্সি মানুষের ইন্টার্নাল ফ্রিকোয়েন্সির ওপর ইফেক্ট করে; কিংবা আমাদের চারিপাশে থাকা ইনভিজিব্যাল বিংসগুলি আমাদের ব্রেইনের ফ্রিকুয়েন্সির ওপর প্রভাব বিস্তার করে মাত্র এবং কমিউনিকেশন করতে চায়।
আবার টেকপ্রেমী হ্যাকারেরা পিছিয়ে থাকবে কেন তারা উইজাবোর্ড হ্যাক করার জন্য ইলেকট্রনিক্সের সহায়তার ভৌতিক উইয়ার্ড আবহ তৈরী করতে পারে; তারা উইজাবোর্ড এবং উইজাবোর্ড ইন্ডিকেটরের সাথে আর্ডুইনো যুক্ত করে ইচ্ছামত প্রোগামিং সেট করে দিতে পারে যাতে আপনার মনে হবে সত্যি সত্যিই আত্না এসে উপস্থিত হয়েছে।
পরিশেষ:
সবশেষে লজিকাল মাইন্ড নিয়ে এটাই বলা যায় যে উইজাবোর্ড দ্বারা আত্নার সাথে কমিউনিকেট করার বিষয়টি আদতে আপাত অবৈজ্ঞানিক এবং অবাস্তব; এতে করে আপনার ক্ষতি বৈকি ( ধর্মীয় দৃষ্টিতে) লাভ হবেনা; কিন্তু আপনি যদি রিসার্চ করতে চান তবে জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত রাখুন, নিশ্চয়ই আপনি জ্ঞান অর্জনে সফল হতে পারবেন।
ফেসবুকে আমি→নিশান আহম্মেদ নিয়ন
আল্লাহ হাফেজ