Site icon Trickbd.com

জেনে নিন কালার ব্লাইন্ড কি বিস্তারিত+আপনার চোখে এই সমস্যাটি আছে কিনা পরীক্ষা করে নিন ।বিস্তারিত পোষ্টে

Unnamed

আসসলামুয়ালাইম

পরম করুনাময়,অসীম দয়ালু মহান আল্লাহপাকের নামে শুরু করছি।কেমন আছেন সবাই?আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।প্রতিবারের মতো আজকে ও নতুন একটি টপিক নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।তো চলুন শুরু করা যাক।

বিস্তারিতঃ

আজকে আমি আলোচনা করবো আমাদের চোখের একটি সমস্যা কালার ব্লাইন্ড নিয়ে। আমরা জানি এই কালার ব্লাইন্ড সমস্যার কারনে আমরা বিভিন্ন সরকারি চাকরি(ডিপেন্স জব,বিসিএস সহ অন্যান্য) ক্ষেত্র অযোগ্য হয়ে থাকি। আজ আমি এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পোষ্টটি সম্পুর্ন দেখবেন। প্রথমে আসি কালার ব্লাইন্ড কি?

মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় তাহলে কালার ব্লাইন্ড কী?

 কালার ব্লাইন্ডনেস হোল চোখের দৃষ্টিশক্তির এমন একটি অবস্থা যখন আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক আলোতে বিশেষ কিছু রঙের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পান না। নীল, সবুজ, হলুদ বা লাল রং আলাদা করে চেনা কিংবা এইসব রঙের সংমিশ্রণ রয়েছে এমন রং দেখে বুঝতে পারা তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। মূল রংটি আসলে কি সেটি বুঝতেই তাঁদের হিমশিম খেতে হয় আবার মজার ব্যাপার হোল অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তাঁরা ভুল রং দেখছেন ! মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় এইসব মানুষই কালার ব্লাইন্ড। এই ব্যাপারটির অন্য একটি নামও আছে আর তা হোল “কালার ভিশন ডেফিসিয়েন্সি” (CVD)।

 “কালার ব্লাইন্ড কী?” প্রশ্নটির একদম সহজ উত্তর হোল- কিছু বঞ্চিত মানুষজন রয়েছেন যারা আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো পৃথিবীর সব রং দেখতে পান না। অনেক রকমের রং উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত এইসব মানুষই কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধ !  

কালার ব্লাইন্ডঃ কেন হয় বর্ণান্ধতা?

“কালার ব্লাইন্ড কেন হয়?”

প্রশ্নটির সাথে বায়োলজি আর জেনেটিক সায়েন্সের অনেকগুলো ধারণা সম্পর্কিত।  কালার ব্লাইন্ড হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন চোখের রেটিনার  “রড”(Rod) আর “কোন” (Cone) কোষ  সম্পর্কিত ধারণা।

  মানুষের চোখের ভিতরে রেটিনা নামক একটি পাতলা স্তর রয়েছে যেটি দুই ধরনের আলোকসংবেদী কোষ বা ফটোরিসেপ্টর (Photoreceptor) বহন করে । এদের নাম হোল  রডকোষ এবং কোনকোষ। কোনকোষ আমাদের বিভিন্ন রং চেনাতে সাহায্য করে এবং এই কোষের মাধ্যমেই আমরা বিভিন্ন রঙের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারি। অর্থাৎ আমরা চারপাশে  রঙিন যা কিছু দেখি সবই কোনকোষের অবদান। আর অপরদিকে রডকোষগুলো আমাদেরকে আলো শনাক্ত করতে এবং আলোর ধরন বুঝতে সাহায্য করে কিন্তু রং চেনানোর ব্যাপারে রডকোষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

কালার ব্লাইন্ড হওয়ার ব্যাপারটি কোনকোষের সাথে জড়িত। আমাদের চোখে তিন ধরনের কোন কোষ রয়েছে। এই তিন ধরনের কোনকোষ তিনটি মৌলিক রং শনাক্ত করতে পারে। এরা হোল লাল, সবুজ ও নীল। চোখের রেটিনায় কোনোভাবে যদি এই তিন রকমের কোনকোষের যেকোনো একটির ঘাটতি দেখা যায় তাহলেই কালার ব্লাইন্ডনেস তৈরি হয়। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় যখন কোনো ব্যক্তির চোখের রেটিনায় এই তিন রকমের কোনকোষই অনুপস্থিত থাকে। দুঃখের বিষয় হোল  ওই  ব্যক্তি এই ধরনের সমস্যার কারণে সব রঙই ধূসর বা সাদা-কালো দেখবেন।  এমনকি নিজের রক্তটাও তিনি সাদা কালো দেখবেন! কি সাংঘাতিক ব্যাপার!  

কালার ব্লাইন্ড কেন হয়ঃ জেনেটিক বা বংশগত  কোনো  কারণ আছে কি ?

কালার ব্লাইন্ড হওয়ার পেছনে জেনেটিক আর বংশগত- উভয় কারণই রয়েছে।

জেনেটিক কারণঃ

সাধারণত নারীদের থেকে পুরুষদের কালার ব্লাইন্ড হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আর পুরো ব্যাপারটাই সেক্স লিঙ্কড জিনের ইনহেরিটেন্সের কারণে হয়ে থাকে।

তাহলে “সেক্স লিঙ্কড জিনের ইনহেরিটেন্স” এই ব্যাপারটা কী?

  জেনেটিক সায়েন্সের ভাষায়, প্রত্যেক পুরুষের দেহে একটি X ক্রোমোজোমের সঙ্গে অবশ্যই একটি Y ক্রোমোজোম থাকে । সুতরাং বলা যায় যে, পুরুষের দেহে XY ধরনের ক্রোমোজোম থাকে। আবার প্রত্যেক নারীর দেহে সব সময়েই দুটি X ক্রোমোজোম থাকে অর্থাৎ নারীদের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের গঠন হচ্ছে XX । আর জেনেটিক সায়েন্সের মতে, লাল আর সবুজ রঙের রিসেপ্টরের জন্য যেই জিন নারী বা পুরুষ উভয়ের  জন্যই  রয়েছে সেটির অবস্থান X ক্রোমোজোমে। কালার ব্লাইন্ড হওয়ার পেছনে X ক্রোমোজোমের এই রিসেপ্টর জিনকেই দায়ী করা যায়। যেহেতু পুরুষের দেহে একটি মাত্র X ক্রোমোজোম থাকে, তাই কোনোভাবে যদি এই X ক্রোমোজোমের জেনেটিক কোডে কোনোরকম ব্যাঘাত ঘটে তাহলে X ক্রোমোজোমটির আর কোনো ব্যাকআপ থাকে না। আর এই ত্রুটিপূর্ণ জেনেটিক কোডের কারণেই পুরুষদের মধ্যে লাল-সবুজ রঙের বর্ণান্ধতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। অপরদিকে নারীদেহে দুইটি X ক্রোমোজোম থাকায় একটি X ক্রোমোজোমের জেনেটিক ব্যাঘাত ঘটলেও অন্য X ক্রোমোজোমটি ব্যাকআপ দিতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে দুইটি X ক্রোমোজোমেরই জেনেটিক কোডে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা কম। তাই এই ক্ষেত্রে কালার ব্লাইন্ড এর সংখ্যাটাও  তুলনামুলক ভাবে কম। আর এটাই কালার ব্লাইন্ড হওয়ার জেনেটিক কারণ।

বংশগত কারণেও কিন্তু  কালার ব্লাইন্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন ধরুন, কোনো বাবা-মা উভয়ই কালার ব্লাইন্ড। উদাহরণের কল্পিত বাবা-মায়ের  যদি কোনো মেয়ে সন্তান থাকে তাহলে মেয়েটির কালার ব্লাইন্ড হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। কারণ মেয়েটির বাবা-মা উভয়ের X ক্রোমোজোমের জেনেটিক কোডে ব্যাঘাত ঘটার ফলে কালার রিসেপ্টর অনুপস্থিত। আর মেয়েটির ক্রোমোজোমের গঠন  যেহেতু তার বাবা এবং মায়ের থেকে একটি করে X ক্রোমোজোম নিয়ে গঠিত (XX) , সেক্ষেত্রে মেয়েটির ক্রোমোজোমের

গঠনেও কালার রিসেপ্টর অনুপস্থিত। তাই মেয়েটির কালার ব্লাইন্ড হওয়ার সম্ভাবনাও শতভাগ। এই X ক্রোমোজোমের লেনদেনের ফলেই কিন্তু বংশগত কারণে কালার ব্লাইন্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।        

কালার ব্লাইন্ড হওয়ার আর কি কারণ থাকতে পারে?

       বংশগত বা জেনেটিক কারণ ছাড়াও কালার ব্লাইন্ড হওয়ার অন্য কারণ থাকতে পারে। যেমনঃ

কালার ব্লাইন্ড  এর চিকিৎসাঃ

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কালার ব্লাইন্ডনেসের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নি। কিন্তু তাই বলে এই সমস্যার একেবারেই যে কোনো প্রতিকার নেই তা কিন্তু নয়। প্রতিনিয়ত  কালার ব্লাইন্ডনেস নিয়ে গবেষণা হচ্ছে আর তার সাথে কালার ব্লাইন্ডদের রঙিন জীবন উপভোগ করার সম্ভাবনাও বাড়ছে। এই যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এনক্রোমা নামক একটি প্রতিষ্ঠান কালার ব্লাইন্ডদের জন্য তৈরি করে ফেলেছে এনক্রোমা গ্লাস। কালার ব্লাইন্ড মানুষজন যাতে রঙের দেখা পায় সেই জন্যই তাঁদের এই প্রয়াস। 

কালার ব্লাইন্ড টেষ্ট

চলুন আজ আমরা নিজে নিজে কালার ব্লাইন্ড পরীক্ষা করি।আমি কয়েকটি ছবিকে ৩টি লেবেলে সাজিয়েছি। আপনি কত লেবেল পর্যন্ত পার করতে পারছেন অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন

১ম লেবেল



২য় লেবেল




৩য় লেবেল



উপরের সব কয়টি ছবিতে কি লেখা আছে যদি ধরতে পারেন তাহলে বুঝবেন আপনার সাধারন কালার ব্লাইন্ড হতে মুক্ত।

টিউনটি পূর্ব প্রকাশিত আমাদের সাইটে। আমার পোস্ট এ যদি আপনার সামান্য হলেও উপকার হয়ে থাকে তাহলে আমাদের সাইট টি ভিজিট করে আসবেন।আমাদের সাইটের লিংক

TechBD25.com

কুইজের উত্তর দিয়ে জিতে নিন আকর্ষনীয় পুরষ্কার

আজ এই পর্যন্ত।আশা করি টিউনটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। যদি ভালো লাগে তাহলে টিউনটিকে একটি লাইক এবং অনুপ্রেরণামুলক একটা মন্তব্য দিয়ে যাবেন।যাতে পরবর্তী পোষ্ট করার আগ্রহ পায়। সবাই ভালো থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ

সৌজন্যেঃ TechBD25.com