এনএফসি প্রযুক্তি এর বিভিন্ন বাস্তব প্রয়োগের জন্য অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করতেছে। এনএফসি প্রযুক্তি কী? এটা কীভাবে কাজ করে? এটা দিয়ে আপনি কী করতে পারেন? এগুলো ব্যাখ্যা করার জন্যই এই আর্টিকেল লিখলাম। এটা সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক!
এনএফসি প্রযুক্তি কী?
NFC এর পূর্ণরূপ হলো ‘Near Field Communication’। মুলত, একটি এনএফসি সাপোর্টেড ডিভাইজকে আরেকটি এনএফসি সাপোর্টেড ডিভাইজের সাথে কানেক্ট করার জন্য এটি একটি পদ্ধতি। এটা প্রায় ৪ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ওয়্যারলেস সংযোগ প্রদান করে। এটা পদ্ধতিতে কানেক্ট করা দুটি ডিভাইজ একে অপরের সাথে দ্বীমুখি যোগাযোগ স্থাপন করে এবং একে অপরের মধ্যে বিভিন্ন ডাটা শেয়ার করতে পারে। এটি কিন্তু মোটেও আপনার ফোনের ওয়াইফাই-হটস্পট কিংবা আপনার ফোনের নেট ওয়ার্কের উপর নির্ভর করে কানেক্ট হয় না।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়্যারলেস পেমেন্ট এর জন্য এটি অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আপনি যদি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ইউজ করে থাকেন তাহলে হয়তো আপনি আপনার ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে একটি ওয়াইফাই এর মতো চিন্হ দেখে থাকবেন! এটিই এনএফসি এর চিন্হ। বর্তমানে অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই এনএফসি সাপোর্ট রয়েছে। আর আপনার ফোনে এনএফসি সাপোর্ট থাকলে আপনি গুগল পে এর মতো পরিসেবা ইউজ করে আপনার সম্পূর্ণ ওয়ালেটকেই ডিজিটালাইজ করে ফেলতে পারেন!
চেক করুন আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এনএফসি সাপোর্ট আছে কি না
খুব সাধারণ ভাবেই যদি Settings>>Wireless & Networks>> এ গিয়ে ‘NFC’ নামে কোনো অপশন খুজে পান তাহলেই বুঝবেন আপনার ফোনে এনএফসি সাপোর্ট রয়েছে। আর যেসব ফোনে এটা থাকে সেসব ফোনে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এটা ফোনের রিয়ার প্যানেলেই দেওয়া থাকে।
এনএফসি কিভাবে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কাজ করে?
অন্যান্য ওয়্যারলেস কানেকশন গুলোর মতো এনএফসি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমেই কানেক্ট হয়। এটিও ওয়্যারলেস যোগাযোগের একটি স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি, তাই একই এনএফসি প্রোটোকলে আবদ্ধ ডিভাইজগুলি একে অপরের মধ্যে ডাটা আদান প্রদান করতে পারে। তবে ব্লুটুথের সাথে এর পার্থক্য এই যে এটা ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডুকেশনের ম্যাধ্যমে কাজ করে।
এনএফসি এর ব্যবহার
1. এনএফসি ট্যাগ:
এনএফসি ট্যাগ অনেকটা QR কোডের মতো একটা সিস্টেম। আপনি যেমন QR কোড স্ক্যান করেন তেমনি ভাবে আপনি আপনার ফোনে এনএফসি এনাবল থাকা অবস্থায় আপনার ফোনকে কোনো এনএফসি ট্যাগ এম্বেড করা বস্তুর নিকটে নিয়ে গেলে ঐ ট্যাগে এম্বেড করা ডাটা গুলো আপনার ফোনে দেখানো হবে। যেমন ধরুন আপনি কোনো শপিং মলে শপিং করতে গেলেন! এখন মল কতৃপক্ষ এনএফসি ট্যাগ ইউজ করে তাহের আজকের অফারগুলো আপনার ফোনে দেখাতে পারে। এর জন্য আপনাকে জাস্ট আপনার ফোনে এনএফসি এনাবল রেখে তাদের এনএফসি ট্যাগের কাছে নিয়ে যেতে হবে। একই ভাবে কোনো রেস্টুডেন্ট কতৃপক্ষ তাদের প্রতিটি টেবিলে এনএফসি ট্যাগ লাগিয়ে তাদের খাবারের মেনু ডিজিটালাইজ করতে পারে।
2. এনএফসি পেমেন্ট:
এই পদ্ধতি ইউজ করে আপনি আপনার সম্পূর্ণ ওয়ালেটকে ডিজিটালাইজ করতে পারেন। এর জন্য আপনি গুগল পে এর মতো সার্ভিস ইউজ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে পেমেন্ট করার জন্য আপনাকে আপনার ক্রেডিট কার্ড ডিটেইলস দিয়ে গুগল পে অ্যাপে লগইন করে কোনো এনএফসি সাপোর্টেড পেমেন্ট মেশিনে পেমেন্ট করতে হবে। এভাবে আপনি এনএফসি ইউজ করে ওয়্যারলেস পেমেন্ট করতে পারেন।
3. এনএফসি ডাটা ট্রান্সফার:
এনএফসি ব্যবহার করেও আপনি ব্লুটুথের মতই ফাইল শেয়ার করতে পারেন। তবে এনএফসি অনেক স্লো কানেকশন প্রদান করে। যেখানে 2.0 ভার্সনের ব্লুটুথ ১০ মিটার দুরুত্ব পর্যন্ত 1 Mbit/s স্পিড প্রদান করে। সেখানে এনএফসি মাত্র 106 Kbit/s থেকে 424 Kbit/s পর্যন্ত স্পিড প্রদান করে। এনএফসি ডাটা ট্রান্সফার মোটেও কোনো জনপ্রিয় সিস্টেম নয়।
অ্যান্ড্রয়েডে এনএফসি এর কিছু অসুবিধা
- প্রতিটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজে এনএফসি সাপোর্ট থাকে না। তবে বর্তমানে এটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে অ্যান্ড্রয়েডে এনএফসি দিন দিন কমন হয়ে উঠতেছে।
- প্রতিটি ডিভাইজে এনএফসি চিপ একই স্থানে থাকে না। ফলে এর অবস্থান জানা না থাকলে কানেক্ট করতে কিছুটা অসুবিধা হয়। কেননা এটা সর্বোচ্চও ৪ সেন্টিমিটার এরিয়ার মধ্যে কানেক্ট হয়।
- ডাটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে এটা অনেক কম স্পিড প্রদান করে।
এনএফসি ইউজ করা কী নিরাপদ?
এনএফসি কানেকশন বাতাসের মধ্য দিয়ে ঘটে ফলে প্রায়সই ‘ম্যান-ইন-দা-মিডিল’ অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। তবে যাই হোক, এনএফসি কানেকশন অনেক কম দুরুত্বের মধ্যে হওয়ায় এ ধরনের অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। আর কোনো প্রতারক যদি এনএফসি এর ম্যাধ্যমে আপনার ডাটা চুরি করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে আপনার ডিভাইজের এনএফসি চিপের ৪ সেন্টিমিটারের মধ্যে এসে অ্যাটাক দিতে হবে। যেটার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে! আর ওয়্যারলেস পেমেন্টের ক্ষেত্রে এনএফসি কোনো ভাবেই আপনার ক্রেডিট কার্ড নম্বর ট্রান্সমিট করবে না। পরিশেষে সম্পূর্ণ সিস্টেমটিকেই নিরাপদ বলা যায়।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের আর্টিকেল, ভালো লাগলে কমেন্ট করবেন এবং সেই সাথে আমার ব্লগ ভিজিট করার অনুরোধ রইলো, ধন্যবাদ।