অনেক কষ্ট করে ম্যানেজ করলাম রিসেন্টলি লঞ্চ হাওয়া Walton PRELUDE N41.
মূলত ল্যাপটপ এর রিভিউ ইউনিটি ম্যানেজ করার পূর্বে আমি এক ঝলকের স্পেসিফিকেশন ইন্টারনেট থেকে দেখে নিই,
এবং স্পেসিফিকেশন গুলো দেখার পর আমার মনে হয়েছিল এটি সাধারণ একটি ল্যাপটপ এই বাজেট সেগমেন্টে
কিন্তু আনবক্সিং এরপর থেকে এমন কিছু ফিচার দে দেখেই চলেছি যা
দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
গত কয়েকদিন যাবত এর নবন্য ডিজাইন সেকশন থেকে শুরু করে একে একে প্রত্যেকটি সেকশন এই ল্যাপটপটি আমাকে জাস্ট ইমপ্রেস করেছে।
তো সেজন্য গত কয়েকদিন যাবৎ বেশকিছু টেস্টিং এবং রিয়েল লাইফ ইউজিং এরপর আজকে আপনাদের সাথে এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করার জন্য হাজির হলাম তো চলুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
বক্সে থাকা ল্যাপটপের ব্যাগের কথা না বললেই নয়, আমার জীবনে দেখা ওয়ান অফ দা বেস্ট ল্যাপটপ ব্যাগ এটি।
যে ব্যাগ গুলি মূলত ল্যাপটপের সাথে এসে থাকে, অনেক বেশি চেন অফারিং,
ডিজাইন!
অনেক লিখতে হবে তাই সময় কম তাই ডিজাইনের বেপারে বলতে গেলে।
বর্তমানে ২৫ হাজার টাকা বাজেটে এই ল্যাপটপটি দী বেস্ট ডিজাইন অফার করছে।
এর থিকনেস দেখে কৌতূহলবশত হাতের কাছে থাকা স্কেল দিয়ে এর থিকনেস মাপতে গিয়ে দেখি ১.২ সেন্টিমিটার।
অফিশিয়াল থিকনেস হল ৪০ মিলিমিটার।
এবং এই ২৫,০০০ টাকার ল্যাপটপ টি মেটাল বিল্টডেট আর অ্যালুমিনিয়ামের সমন্বয়ে, যেখানে নামিদামি ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ড ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বাজেটে রেঞ্জেও কোনভাবে মেটাল প্রবেশ করাতে পারছে না।
সেখানে দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন ২৫ হাজার টাকার একটি ল্যাপটপ এ মেটাল ব্যবহার করে সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে।
এছাড়াও ল্যাপটপটিতে কোন রকম ফ্যান ব্যবহার করা হয়নি, যার কারণে হয়তোবা এটিকে আরেকটু থিন করা গেছে।
আর এর হিট ট্রান্সমিশনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বেশকিছু হিটিং সিং আর অবিয়াসলি মেটাল বডি যার কারণে ট্রান্সমিটেড হয় এবং খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়।
কিবোর্ড!
ল্যাপটপের কিবোর্ড এককথায় বেশ ভালো ছিল, আর এর টাইপিং এক্সপেরিয়েন্সো মোটামুটি অনেক ভালো।
আরে ট্রাক প্যাড টি ছিল বেশ বড় ধন্যবাদ ওয়ালটনকে যে তারা পূর্বের ফিডব্যাক টি কে প্রাধান্য দিয়ে এবারের টাচপ্যাড টি কে বেশ বড় করেছে।
আরে ফিনিশিং টি মেট না হয়ে একটু পলিস হতে পারত তাহলে আরো ভালো লাগত। আর অভারঅল ইউজিং এক্সপেরিয়েন্স ও আমি পার্সোনালি সাচ্ছন্দ বোধ করতাম।
তবে টাচপ্যাডের পারফরম্যান্স ছিল বেশ ভালো,
সফটওয়্যার!
ল্যাপটপটিতে উইন্ডোজ টেন প্রো এবং একইসঙ্গে microsoft-এর উইন্ডোজ প্রিসিশন ড্রাইভার সাপোর্ট থাকায়, এর অভার অল ইউজিং এক্সপেরিয়েন্স অনেক ভাল ছিল।
ডিসপ্লে!
ডিসপ্লে হলো এই ল্যাপটপের বেস্ট পার্ট, ল্যাপটপকে হাতে পাওয়ার পূর্বে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ফুল এইচডি রেজুলেশন এর ডিসপ্লে দেখে আমি ভেবেই নিয়েছিলাম।
হয়তোবা এর ইমেজ কোয়ালিটি ডিসপ্লে অভার অল কোয়ালিটি খুব একটা ভালো হবে না।
কিন্তু সেই ভাবনা কে লাথি মেরে দিয়ে এই ল্যাপটপটি ডিসপ্লেটি আমাকে মুগ্ধ করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা মূল্যে এর ল্যাপটপ গুলিতে অধিকাংশ সময় ব্যবহার করতে দেখা যায়।
যদি সে গুলোতে ভাল হার্ডওয়ার ব্যবহার করা হয়ে থাকে Tn & va প্যানেল যুক্ত স্ক্রীন আসে যেমন এটিতে এসেছে।
এবং এই ডিসপ্লে গুলোতে সবচেয়ে বড় যে ইস্যু থাকে সেটি হচ্ছে নেগেটিভিটি ইস্যু, এবং অবশ্যই কালার গুলো ইন একুরেট থাকে।
এবং আমরা যদি একটু ভালো আইপিএস ডিসপ্লে যুক্ত ল্যাপটপ কিনতে চাই সে ক্ষেত্রে আমাদের এটলিস্ট ৪৫ থেকে ৫০হাজার টাকা গুনতে হবে। তাও সে ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের ল্যাপটপের প্রসেসর অথবা অন্যান্য সেকশনে সেক্রিফাইস করতে হয়।
সে ক্ষেত্রে একদিকে যেমন এই ল্যাপটপটিতে ৯৯ শতাংশ এসআরজিবি কালার গ্রেনিং সমৃদ্ধ আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে এবং যার রেজুলেশন হচ্ছে ফুল এইচডি প্লাস।
আর সেইসঙ্গে ২৫ হাজার টাকা বাজেটে বেস্ট প্রসেসর টি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হচ্ছে ইন্টেল সেলেরণ n4100।
আপনারা বিশ্বাস করবেন কি জানিনা আমার ডেইলি ড্রাইভার Asus ROG Zephyrus Duo 15 যেটার দাম চার লক্ষ টাকা।
সেটার সঙ্গে আমি মাত্র ২৫ হাজার টাকার একটি ল্যাপটপের সঙ্গে ডিসপ্লেতে কমপেয়ার করছি আর রেজাল্ট দেখে আমি পুরাই টাস্কি খেয়ে গেছি।
ডিসপ্লে কোয়ালিটি হালকা পার্থক্য লক্ষ্য করেছি তবে সেটা খুবই আহামরি ছিলো না, কোথায় চার লক্ষ আর কোথায় মাত্র ২৫ হাজার টাকা আপনারাই বলুন।
আপনি যদি এখন আমাকে প্রশ্ন করেন এই ৪ লক্ষ টাকার ল্যাপটপের ডিসপ্লে আর ওয়ালটনের মাত্র ২৫ টাকা দামের ল্যাপটপ ডিসপ্লে এক জায়গায় কুড়ি আপনি কত পারসেন্ট ভিন্নতা লক্ষ্য করেছেন।
তাহলে আমি বলব খুব বেশি হলে Asus ROG Zephyrus Duo 15 এর চাইতে ডিসপ্লেতে খুব বেশি হলে ২০ পার্সেন্ট পিছিয়ে থাকবে ওয়ালটন এর এই ল্যাপটপটি।
তাই সবশেষে এটাই বলব এই বাজেটে আমার মনে হয় না আর কোন কোম্পানি এরকম ডিসপ্লে অফার করছে।
আর এই সেম ডিসপ্লে যদি আমাকে একটি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দামের ল্যাপটপ ও দিত তাহলে আমি চোখ বন্ধ করে নিয়ে নিতাম। মোটেও অসন্তুষ্ট হতাম না।
তো আশা করছি বুঝতে পারছেন Walton Prelude N41 কোন লেভেলের ডিসপ্লে প্রোভাইড করছে আমাদেরকে।
এই ল্যাপটপের স্পিকার সাউন্ড কোয়ালিটি ছিল বেশ ভালো,
দুটি স্পিকার আছে দুটিই ছিল লাউড আলটিমেটলি হেয়ারিং এক্সপেরিয়েন্স টা বেশ ভালো ছিল।
হার্ডওয়ার।
ল্যাপটপটিতে প্রসেসর সেকশনে ব্যবহার করা হয়েছে
Intel® Celeron® Processor N4100 (4M Cache, up to 2.40 GHz …
GPU Intel UHD graphics 600
থাকছে ৪ গিগাবাইটের DDR4 অন বোর্ড RAM এবং এতে স্টোরেজঃ হিসাবে ২৫৬ গিগাবাইটের SATA M.3 SSD ব্যবহার করা হয়েছে।
এবার কথা বলা যাক ল্যাপটপটির রিয়েল লাইফ ইউজেস নিয়ে।
মূলত এ ল্যাপটপটির ইউজেস সিনারি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট উপভোগ করা , তারপর অফিস রিলেটেড কাজ করা আই মিন মাইক্রোসফট অফিসে কাজ করা, দেন হচ্ছে এডোবি ফটোশপ জাতীয় কোন এক সফট্ওয়ারে হালকা গ্রাফিক্সের কাজ করা এবং অবশ্যই বেশ ভালো পরিমাণ ওয়েবসাইট সারফেস করা।
ল্যাপটপটির বুট টাইম ছিল ৫-৬ সেকেন্ডের মধ্যে, ভালো ডিসপ্লে স্পিকার এবং ক্যাপাবিল প্রসেসর এর কারণে এর মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট উপভোগ করা বেশ উপভোগ্য ছিল।
এডোবি ফটোশপে কিউ এইচডি রেজুলেশনের একটি ফাইল খুব ভালোভাবে হ্যান্ডেল করতে পারছিল এটি। তবে একটিতে 4k রেজুলেশন পর্যন্ত পিএইচডি ফাইল এডিট করা যাবে খুব ইজিলি।
ভিডিও এডিটিং এর ক্ষেত্রে এতে লাইট ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার গুলো ফর এক্সাম্পল ফিলমোরা ইজিলি ব্যবহার করা যেতে পারে তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সাজেস্টেড রেজুলেশন থাকবে 1080p
আর এটি করলে ল্যাপটপের পারফরমেন্স প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
ওয়েবসাইট সার্ফিং এর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ৪ গিগাবাইট রেম ব্যবহৃত হওয়ায়, এতে গুগল ক্রোমে ৮ থেকে ১০টি ট্যাব খুব ভালোভাবে হ্যান্ডেল করা যাচ্ছিল, তার থেকে বেশি করলে হয়তো বা সমস্যা হতে পারে।
মিডিয়াম টু হাই ইউজে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ ছিল ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মতো। হ্যাঁ অবশ্যই একটু কম মনে হতে পারে।
এটি যেহেতু একটি স্টুডেন্ট ফোকাস ল্যাপটপ তাই এর পারফর্মেন্স কে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
ল্যাপটপটিতে তেমন একটা হিটিং ইসুও লক্ষ্য করিনি আর এর মেটাল বডি হওয়ার জন্য হিট ট্রান্সমিশনটি অনেক ভাল ছিল।
ল্যাপটপ টির লেফট সাইডে থাকছে টুয়েলভ ভোল্ট ডিসি ইনপুট তারপর একটি ইউএসবি ও পয়েন্ট টাইপ এ পোর্ট।
একটি মিনি এইচডিএমআই পোর্ট তারপর থাকছে একটি ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট।
ল্যাপটপ টির রাইটসাইটে থাকছে একটি ৩.৫ মিলিমিটার অডিও জ্যাক, ইউএসবি টাইপ এ পোর্ট ফাইনালি একটি মাইক্রো এইচডি কার্ড স্লট।
ওয়ারলেস কানেক্টিভিটি এর কথা বলতে গেলে এতে ওয়াইফাই হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ইন্টেল ডুয়েল ব্র্যান্ড ২ এসি ওয়াইফাই।
এবং এতে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়েছে ব্লুটুথ ভার্শন 4.2।
ওয়াইফাই এর পারফর্মেন্স এবং রেঞ্জ উভয়ই ভালো ছিল।
এবং এই ল্যাপটপটিতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি ২ মেগাপিক্সেল এর ফুল এইচডি রেজুলেশন এর একটি ক্যামেরা স্পেশাল ওয়েবক্যাম।
ল্যাপটপটিতে সফটওয়্যার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে উইন্ডোজ ১০ প্রো।
আর উইন্ডোজ টেন প্রো এর সঙ্গে এর অপটিমাইজেশন বেশ ভালো ছিল যার ফলে পারফরমেন্স অনেক ভাল ছিল।
প্রথমেই বলে নিই আপনার বাজেট যদি একদমই 25 হাজার টাকা ফিক্সট হয়ে থাকে তাহলে এই ল্যাপটপ টি চোখ বন্ধ করে কিনতে পারেন।
তো এখন আসা যাক আসল কথাই কাদের জন্য এই ল্যাপটপটি।
ল্যাপটপ টি টার্গেটেড ইউজার বেস হচ্ছে এমন একজন জনগোষ্ঠী যাদের উদ্দেশ্য থাকে এই বাজেটে একটি ডিসেন্ট ল্যাপটপ কিনা।
যেটি মূলত ব্যবহার করা হবে ডে টু ডে নরমাল টাক্স এ শুধু মুভি কিংবা মিডিয়া কন্টাক্ট ইনজয় জন্য কিনলে এই ল্যাপটপের দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হলেও এর অসাধারণ ডিসপ্লের জন্য আমি এটি কেনার সাজেস্ট করতাম।
যাই হোক আজকের মতো এই পর্যন্তই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন নিজের খেয়াল রাখুন আল্লাহ হাফেজ।