বাংলাদেশি নাটক ইন্ডাস্ট্রি কে বলা হয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের প্রান। আশির দশক থেকে বাংলাদেশে সেরা সেরা নাটক নির্মাণ হয়ে আসতেছে। এক সময় মানুষ বিটিভিতে সাপ্তাহিক নাটক দেখার জন্য সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করতো। আজকে আমি আলোচনা করব নব্বইয়ের দশকে বিটিভিতে প্রচার হওয়া হুমায়ূন আহমেদের লেখা নাটক “কোথাও কেউ নেই” নিয়ে
নাটক : কোথাও কেউ নেই
প্রচার সাল : ১৯৯২
পরিচালক : বরকত উল্লাহ
লেখক: হুমায়ূন আহমেদ
IMDb rating: 9.7
প্রচার নেটওয়ার্ক: বিটিভি
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হয়েছিল জনপ্রিয় কথাসাহিত্য হুমায়ুম আহমেদের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত নাটক কোথাও কেউ নেই। প্রচার শুরু হওয়ার পরে থেকেই দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নাটকটি।
বাকের ভাই ছিলেন গুন্ডা প্রকিতির লোক। তার সঙ্গে সবসময় বদি এবং মজনু নামের দুইজন সঙ্গী চলাফেরা করত। সে এলাকার মাস্তান প্রকৃতির লোক হলেও তাকে এলাকার প্রায় সবাই পছন্দ করত। বাকের ভাই মুনা নামের একটি মেয়েকে পছন্দ করত। মুনা ছিল নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ে তার বাবা-মা ছিলোনা । মামার বাড়িতে থেকে সে চাকরি করত এবং তার মামাতো ভাইবোন দের দেখাশোনা করতো।
ঘটনাপ্রবাহে বাকের ভাই এলাকার এক প্রভাবশালী নারীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এক সময় ওই মহিলার বাড়ির দারোয়ান খুন হলে চক্রান্ত করে তার দায় বাকের ভাইয়ের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। এরকম ঘটনা নিয়ে আগাতে থাকে ধারাবাহিক নাটকটির গল্প।
নাটকটি যখন বিটিভিতে প্রচার করা হচ্ছিল তখন এক পর্যায়ে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়ে যাবে এটা দর্শকমহলে জানাজানি হয়ে গেলে চরম সমালোচনা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হতে থাকে।
তারপর দর্শকরা লেখক হুমায়ূন আহমেদেকে বিভিন্ন ভাবে অনুরোধ করতে থাকে যাতে বাকের ভাইকে ফাঁসি না দেয়া হয়। এমনকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ওই নাটকটি দেখেছিল এবং হুমায়ূন আহমেদকে সে অনুরোধ করেছিল তাতে গল্পটা পরিবর্তন করা হয়।
হুমায়ূন আহমেদ যখন ঘোষণা দেন তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকবে গল্পের কাহিনী বদলাবে না তখন তাকে দর্শকরা বিভিন্ন সময় হুমকি দিতে থাকে এবং একসময় তার বাসার সামনে আন্দোলন এবং সমাবেশ করে। শেষ পর্যন্ত লেখক হুমায়ূন আহমেদ পুলিশের সহায়তা নিতে বাধ্য হয়। এ খবড় তখনকার বেশ কিছু পত্রিকায় ঢালাও ভাবে ছাপানো হয়েছিল। ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজন মিছিল করেছিল এবং স্লোগান দিয়েছিল।
বাকের ভাইয়ের ফাঁসি কেন কুত্তাওয়ালী জবাব চাই
বাকের ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রদর্শিত এই ধারাবাহিক নাটকটি এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে ধারাবাহিকটির প্রতিটি পর্বই দর্শকরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করেছেন।
নাটকটির অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছে প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদি স্যার। এছাড়াও মুনা চরিত্রে অভিনয় করেছে কালজয়ী অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, বদি চরিত্রে অভিনয় করেছে প্রয়াত নাট্য অভিনেতা আব্দুল কাদের, মজনু চরিত্রে অভিনয় করেছেন লুৎফর রহমান জর্জ শিশু শিল্পীর লীনা চরিত্রে অভিনয় করেছে হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে শীলা আহমেদ। এছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাহফুজ আহমেদ শহীদুজ্জামান সেলিম এবং আরো অনেকে।
প্রচার হওয়ার প্রায় তিরিশ বছর পরে এসেও এখনো দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় কোথাও কেউ নেই নাটক এবং এর কলাকৌশলীরা। এখনো আসাদুজ্জামান নূর দর্শকদের কাছে বাকের ভাই’ নামে পরিচিত।