সম্পূর্ণ নতুন অনেকেই ব্লগিং করতে ইচ্ছুক । আজ সম্পূর্ণ নতুনদের জন্য ব্লগিং গাইডলাইন দেওয়ার চেষ্টা করলাম । ব্লগ সাইটের মাধ্যমে যদি কেউ আয় করতে চান তাহলে প্রথমে আপনার সাইটকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে । আপনার সাইটটি যখন মানুষকে আকৃষ্ট করবে কিংবা আপনার সাইটের প্রতি মানুষের আগ্রহ ওচাহিদা বাড়বে, কেবল তখনই আপনার ব্লগটি থেকে আয়ের পরিকল্পনা করতে পারবেন ।

 

ব্লগ থেকে কিভাবে আয় হতে পারে

ব্লগিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে আয় করার উপায় বের করতে পারেন । এটা অনলাইনে আয় করার জন্য অন্য যেসব কাজ রয়েছে তা থেকে অনেকটা সহজ । ব্লগ এবং ব্লগিং এর মাধ্যমে কিভাবে আয় করতে পারবেন এই বিষয় গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো………………

 

এডসেন্সের মাধ্যমে আয়

আপনার ব্লগের ভালো ভিজিটর থাকলে এবং অন্যান্য সব দরকারি বিষয় গুলো ঠিকমতো থাকলে গুগল অ্যাডসেন্সে এর জন্য এ্যাপ্লাই করতে পারেন । অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভ হলে সেখান থেকে আয় করতে পারবেন । এ আয়টা মূলত আপনার ব্লগে কি পরিমান ভিজিটর রয়েছে তার উপর নির্ভর করে । একটি নতুন ব্লগ তৈরি করার পর ব্লগে ভিজিটর বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে । তাহলে আপনার আয়ও বৃদ্ধি পাবে ।

 

সিপিএ-এর মাধ্যমে আয়

আপনার ব্লগে ভিজিটর থাকলে সিপিএ মার্কেটপ্লেস গুলোতে নিশ-সম্পর্কিত অফার নিয়ে কাজ করার জন্য আবেদন করতে পারেন । অনলাইনে প্রচুর পরিমাণ সিপিএ মার্কেট প্লেস রয়েছে । এসব সিপিএ মার্কেটপ্লেসেই বিভিন্ন নিশ সম্পর্কিত অফার রয়েছে । আপনার ব্লগে ভালো ভিজিটর থাকলে সেসব নিশের অফার প্রমোট করে ভালো আয় করতে পারেন ।

 

আফিলিয়েশনের মাধ্যমে আয়

আপনার ব্লগের বিষয় সম্পর্কিত প্রোডাক্টের আফিলিয়েশন লিংক, ব্লগের ভিজিটরদের কাছে প্রমোট করতে পারেন । যেমন ধরুন, আপনার ব্লগটি বিউটি প্রডাক্ট এবং কিভাবে ত্বকের পরিচর্যা করা যায় সে পরামর্শ দিয়ে সাজিয়েছেন । এখানে ভিজিটর থাকবে সাধারণত ইয়াং জেনারেশনের মেয়েরা অথবা অন্য মহিলারা । এই ভিজিটররা যখন আপনার ব্লগটিকে পছন্দ করা শুরু করবেন, তখন তাদের কাছে বিভিন্ন বিউটি প্রোডাক্ট, হতে পারে সেটা বিউটি সোপ অথবা অন্য কোনো প্রসাধনী । এজন্য কি করবেন? বিভিন্ন পোস্টে হয়তো লিংক দিলেন কিংবা ব্লগে বিজ্ঞাপন দিয়ে দিলেন । এতে আফিলিয়েশন এর মাধ্যমে ভালো আয় করতে পারবেন ।

 

নিজস্ব পণ্য বিক্রয় করে আয়

আপনার ব্লগটি যদি বিউটি প্রডাক্টের দরকারি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে হয়, তাহলে সেই ব্লগের ভিজিটরদের কাছে মেয়েদের কাছে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন । শুধু বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে দিলেই ভাল অর্ডার পেয়ে যাবেন । এভাবে কোনো সেবাও বিক্রি করতে পারবেন । ব্লগ যে কোনো রকমের হতে পারে,যেমন- ভিডিও ব্লগ, অডিও ব্লগ কিংবা রাইটিং ব্লগ- এর যে কোনটা দিয়ে আয় করা সম্ভব । তবে শুধু ব্লগ তৈরী করলেই হবে না, ভিজিটর থাকতে হবে, পণ্যের ব্যাপারে ভিজিটরদের মনে আগ্রহ ও চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে ।

 

যখন ব্লগিং শুরু করবেন

ব্লগিং শুরু করার জন্য আপনাকে সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করতে হবে । ব্লগিং শুরু করার জন্য কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, সেগুলো হলো…………

 

১। কোন বিষয় নিয়ে ব্লগিং করবেন, এর টপিকস ঠিক করে ফেলুন ।

 

২। যে ধরনের টপিকস এর উপর ব্লগটি তৈরি, সেটি যাতে সহজে বোঝা যায়, এরকম ওয়ার্ড দিয়ে ডোমেইন নেম বাছাই করুন ।

 

৩। আপনি কাস্টম ডোমেইন দিয়ে ব্লগার এর মাধ্যমে ব্লগ তৈরী করতে পারেন এবং ডোমেইন ও হোস্টিং দিয়ে ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমেও ব্লগ তৈরি করতে পারেন ।

 

৪। Blogger এবং WordPress দিয়ে ব্লগ তৈরি করলে ভালো হবে । আপনার যদি নিজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে তো কোন সমস্যা হবে না । আর যদি অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিতে পারেন । প্রয়োজনে youtube-এর সাহায্য নিন, খুবই সহজ কাজ ।

 

৫। ব্লগ সাইটটির অনপেজ এসইও খুব ভালোভাবে সম্পন্ন করুন । সেজন্যও youtube এর সাহায্য নিতে পারেন । অথবা গুগলে সার্চ করতে পারেন, অনপেজ এসইও চেকলিস্ট । যে রেজাল্ট আসবে সে অনুযায়ী নিজের সাইট প্রস্তুত করুন ।

 

৬। ব্লগিং টপিকস- সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখা গুগলে সার্চ করে পড়ে নিন । টপিকস সম্পর্কিত কমপক্ষে ২০টি সাইট গুগল থেকে খুঁজে বের করুন । সেই ২০টি সাইটের লেখা পড়ে অন্যদের লেখার ধরন, লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আইডিয়া নিন ।

 

৭। নিজের সাইটেও কি কি বিষয় নিয়ে লিখবেন সে বিষয়টি সম্পর্কে যখন একটি ধারণা পেয়ে যাবেন, তখন আপনার ব্লগে পোস্ট করার ২০টি লেখার বিষয় ঠিক করে ফেলুন ।

 

৮। এবার আর্টিকেলকে এসইও সহায়ক করা সম্পর্কে শিখে নিতে হবে । প্রয়োজনে ইউটিউব এর সহায়তা নিতে পারেন ।

 

৯। আর্টিকেল লেখার জন্য যে ২০টি বিষয় ঠিক করেছেন, সেই ২০টি বিষয় নিয়ে আস্তে আস্তে আর্টিকেল প্রস্তুত করতে থাকুন । আর্টিকেল লেখার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার । বিষয়গুলো হচ্ছে…..

 

ক) আর্টিকেলটি কমপক্ষে ৫০০-১০০০ শব্দের হতে হবে ।

খ) আর্টিকেল গুলোতে প্যারাগ্রাফ, সাবটাইটেল, পয়েন্ট ব্যবহার করুন ।

গ) আর্টিকেল গুলোতে তিনটি বৈশিষ্ট্য রাখার চেষ্টা করবেন- ইউনিক, ভ্যালুয়েবল ও এঙ্গেজমেন্ট ।

১০। আর্টিকেলগুলো এবার এসইও সহায়ক করে লিখুন ।

 

১১। আর্টিকেলগুলো নিজের ব্লগে এসইও সহায়ক করে পোস্ট করুন । এ সম্পর্কে youtube থেকে আইডিয়া নিতে পারেন । আর্টিকেলগুলো এসইও সহায়ক করার জন্য নিম্নে কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হলো……..

 

ক) আর্টিকেল টাইটেলে কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন ।

খ) আর্টিকেল বিস্তারিত লেখার প্রথম প্যারায় অবশ্যই কিওয়ার্ড ব্যবহার করবেন ।

গ) লেখায় অবশ্যই ছবি ব্যবহার করবেন ।

ঘ) ব্যবহৃত ছবিতে নাম ও অল্টার ট্যাগ-এ কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন ।

ঙ) আর্টিকেলটির ভিতরের কোন লাইনে ব্লগের অন্য লেখার সাথে ইন্টার্নাল লিংকের মাধ্যমে সম্পর্ক যুক্ত করুন ।

চ) আর্টিকেলটি পোস্ট এর সময় ফিচার্ড ইমেজ যুক্ত করুন । ফিচার্ড ইমেজ দেখে যাতে আর্টিকেল এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানা ও বোঝা যায় ।

ছ) সবশেষে আর্টিকেলে কমপক্ষে তিনটি ট্যাগ ব্যবহার করুন, আরও বেশী করতে পারেন ।

১২। যে ২০টি লেখা আর্টিকেল প্রস্তুত করেছেন এবার আস্তে আস্তে প্রতিদিন দুটি করে ব্লগে পোস্ট করুন এবং মার্কেটিং শুরু করে দিন । এভাবে ২০টি লেখা আর্টিকেল ব্লগে পোষ্ট করা সম্পন্ন হয়ে গেলে ২- ৩দিন পর পর একটি করে নতুন আর্টিকেল পোস্ট করুন ।

 

ব্লগ সাইট মার্কেটিং পরিকল্পনা

ব্লগ তৈরি করলেই সফল হওয়া যায় না । যত বেশি সংখ্যক মানুষকে আপনার ব্লগের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে পারবেন, ততবেশি ব্লগের সফলতা পাবেন । ব্লগের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হলে ব্লগে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ও ইউনিক কন্টেন্ট থাকতে হবে, তেমনি ব্লগে যে কনটেন্ট গুলো রয়েছে, সে ব্যাপারে অন্যদের জানানোর জন্যে মার্কেটিংটা জোর দিয়ে করতে হবে ।

 

কিভাবে মার্কেটিং করবেন?

বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন- ফেসবুক, টুইটার, লিংকডিন, ইনস্টাগ্রাম, ইত্যাদিতে আপনার ব্লগের পোস্ট গুলো শেয়ার করুন । আপনার পরিচিত জনদের এবং বন্ধু-বান্ধবদের জানান আপনার ব্লগটি সম্পর্কে । এছাড়া এসইও করতে হবে । অনপেজ এসইও এবং অফ পেজ এসইও দুটোই করতে হবে । অফ পেজ এসইও এর মধ্যে ফোরাম পোস্টিং, গেষ্ট রাইটিং, লিংক বিল্ডিং, ব্যাকলিংক ইত্যাদি করতে হবে । তবেই আপনি আপনার ব্লগের সফলতা পাবেন । এ বিষয়ে আপনি youtube এর সাহায্য নিতে পারেন ।

 

সবশেষে বলবো, আপনি ব্লগের সম্বন্ধে যদি সামান্যও জেনে থাকেন তাহলে এর থেকে বেশি জানার জন্য রিসার্চ করুন । যে সম্পর্কে জানেন না সেটা জানতে গুগোল-এ সার্চ দিন, ইউটিউবে সার্চ দিন । দেখবেন আপনি আস্তে আস্তে ভাল ফলাফল পেতে শুরু করেছেন । আজ এ পর্যন্তই । ভাল লাগলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না । আল্লাহ হাফেজ ।।

Leave a Reply