পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে প্রয়োজনীয় সব তথ্যই আপনার সামনে হাজির করতে সক্ষম গুগল। গুগলের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে আমরা সহজেই জেনে নেই যেকোনো অজানা জবাব। দুনিয়ার বৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন গুগল পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানি, কোকাকোলার পরই এর অবস্থান।
আজকের টেক জায়ান্ট গুগলের শুরুটা এমন বড় কিছু ছিল না। শুধু ছিল নতুন কিছু একটা করার চেষ্টা। ল্যারি আর ব্রাইন নেহাত গবেষণা প্রকল্প হিসেবে এর কাজ শুরু করেন। তাদের তত্ত্ব ছিল, তখনকার কৌশলগুলোর থেকে নতুন কৌশলে কোনো একটা সার্চ ইঞ্জিন বানানো যা ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের একটা হিসাবের ভিত্তিতে আরো ভালো ফলাফল দেবে। এই ব্যতিক্রমী চেষ্টাই গুগলকে এনে দেয় সেই বিখ্যাত এলগরিদম, যার মাধ্যমে গুগলের সার্চ ইঞ্জিন সবচেয়ে সহজলভ্য ও সঠিক তথ্যদাতা হয়ে ওঠে।
১৯৯৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ‘google.com’ ডোমেইনটি রেজিস্টার্ড হয়। ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুই বন্ধু একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে গুগলের প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট এটি পাবলিক লিমিটেড হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সেই সময় ল্যারি পেজ, সের্গেই ব্রাইন ও এরিক স্কমিট গুগলে ২০ বছর একসাথে কাজ করতে একমত হন। সময়ের সাথে নিত্যনতুন পণ্য ও সেবা যোগ করে গুগলে প্রতিনিয়ত তাদের আকার ও উপযোগিতা বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। আজকের পৃথিবীতে গুগল এক অবধারিত নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সাথে নতুন নতুন কোম্পানি কিনে তার বহুমুখিতা সুদৃঢ় করেছে।
গুগল সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ডেটা সেন্টারে প্রায় এক মিলিয়ন সার্ভার চালায়। এক বিলিয়নের ওপর সার্চের অনুরোধ এবং প্রায় ২৪ পেটাবাইট ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে।
২০০৬ সালে কোম্পানিটি যখন মাউন্ট ভিউতে স্থানান্তরিত হয়, তখন থেকেই এটি সবদিকে বাড়তে শুরু করে। তথ্য খোঁজার পাশাপাশি বর্তমানে ইমেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, অফিস প্রোডাক্টিভিটি প্রভৃতি বিষয়ে গুগলের সেবা রয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন প্রযুক্তি আর পণ্য দিয়ে গোটা ভূগোলের চেহারা পালটে দিচ্ছে গুগল।
পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের ছবি, সড়ক নির্দেশনা ও মানচিত্রের জন্য গুগল নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেবা দেয় google map-এর সাহায্যে।
ইমেইল সাইট gmail, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম google , ভিডিও শেয়ারিং সাইট youtube-ও গুগলের।
google translate আরেকটি মজার বিষয়, যার মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা অনুবাদে সাহায্য পাওয়া যায়।
আজকের যুগের স্মার্টফোনের সংজ্ঞা বদলে দেওয়া অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমও গুগলের মালিকানাধীন। এই অপারেটিং সিস্টেমের জন্য রয়েছে গুগলের অ্যাপস স্টোর যেখানে লাখ লাখ অ্যাপ্লিকেশন বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়।
এ ছাড়াও গুগল ক্রোম ব্রাউজার, গুগল ক্যালেন্ডার, বুকস, ব্লগস, ইমেজ সার্চ প্রভৃতি সেবাগুলো গুগল দিয়ে থাকে। গুগল গ্লাস, গুগল কার, ক্রোমবুক প্রভৃতি গেজেটও গুগল তৈরি করে।
ইন্টারনেট দুনিয়ার শাসনকর্তা এই গুগল সম্প্রতি বাংলাদেশেও তার কার্যক্রম শুরু করেছে। ৯.৭৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (২০১১ পর্যন্ত) এই কোম্পানি প্রায় ৩২৪৬৭ (২০১১ পর্যন্ত) জন কর্মী নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইন্টারনেট দুনিয়া। আর প্রতিদিন নতুন চেহারা নিয়ে এই বিস্তৃত ভূগোলককে সংকুচিত থেকে আরো সংকুচিত করে এনে দিচ্ছে আমাদের হাতের মুঠোয়।