Site icon Trickbd.com

ধানের মাজরা পোকা কি? মাজরা পোকা কি কি ক্ষতি করতে পারে এবং তা কিভাবে দমন করতে হয়। দেখে নিন।

Unnamed



আশা করি সবাই ভাল আছেন। আপনাদের দোয়ায় আমিও অনেক ভালো আছি।
বর্তমানে অনেক অঞ্চলে ধান প্রায় কাটার উপক্রম হয়ে গেছে। এ সময়ে ধানের যত্ন না নিলে অধিক ফসল আশা করা সম্ভব নয়। তাই আজকে আমি ধানের মাজরা পোকা দমনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব।

মাজরা পোকা ধানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই পোকা ধানগাছের কাণ্ডে ঢুকে কাণ্ডকে নষ্ট করে ফেলে। ফলে ধানের ফলন কমে যায়। মাজরা পোকার আক্রমণে ফলন কমে যায় ১৩ থেকে ২৬ শতাংশ। তবে ব্যাপক আক্রমণ হলে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ফলনের ঘাটতি হতে পারে। ফলে ধান চাষের জন্য মাজরা পোকা দমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাধারনত তিন ধরনের মাজরা পোকা বাংলাদেশের ধান ফসলের ক্ষতি করে। যেমন-
(১) হলুদ মাজরা।
(২) কালো মাথা মাজরা এবং
(৩) গোলাপী মাজরা ।

মাজরাপোকা কে চিনবেন কীভাবে?



স্টেম বোরার পাতার উপরিতলে 15-80 টি বাদামি রঙের ডিম দেয়।

কচি লার্ভাগুলি রেশমের সুতোর পাতার সাথে নিজেদের ঝুলিয়ে রাখে ও খাদ্যের জন্য অন্যান্য গাছপালায় উড়ে যায়। পূর্ণবয়স্কগুলি উদ্ভিদের ঝাড় ও কাণ্ডে প্রবেশ করে।

মাজরাপোকা আপনার ফসলের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক কেন?

মাজরাপোকা অত্যন্ত ক্ষতিকারক কীট, কারণ এটি ফসলের প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষতি করে ফসলের সার্বিক মান ও ফলনকে প্রভাবিত করে। 20% থেকে 70% পর্যন্ত ফলনের ক্ষতি হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ের শুরুর দিক থেকে ফুল ধরার আগে পর্যন্ত ধানগাছগুলিকে এই পেস্ট সর্বাধিক প্রভাবিত করে।

মাজরা পোকার কীড়াগুলো কান্ডের ভেতরে থেকে খাওয়া শুরু করে এবং ধীরে ধীরে গাছের ডিগ পাতার গোড়া খেয়ে কেটে ফেলে। ফলে ডিগ পাতা মারা যায়। একে  ‘মরা ডিগ’ বা ‘ডেডহার্ট ’ বলে। গাছে শীষ আসার পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের ক্ষতি হলে মরা ডিগ দেখতে পাওয়া যায়। থোড় আসার আগে মরা ডিগ দেখা দিলে বাড়তি কিছু কুশী উৎপাদন করে গাছ আংশিকভাবে ক্ষতি পূরণ করতে পারে। 

ক্রিসেক রোগের অথবা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনার সাথে মাঝে মাঝে মাজরা পোকা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত মরা ডিগ বলে ভুল হতে পারে। মরা ডিগ টান দিলেই সহজে উঠে আসে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত গাছের কান্ডে মাজরা পোকা খাওয়ার দরুণ ছিদ্র এবং খাওয়ার জায়গায় পোকার মল দেখতে পাওয়া যায়। 

শীষ আসার পর মাজরা পোকা ক্ষতি করলে সম্পূর্ণ শীষ শুকিয়ে যায়। একে ‘সাদা শীষ’, ‘মরা শীষ’ বা ‘হোয়াইট হেড’ বলে। খরায় বা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনা হোয়াইট হেড-এর মত দেখা যেতে পারে। কীড়া যদি পাতার খোলের ভেতরে খায় এবং কান্ডের ভেতরের অংশ সম্পূর্ণভাবে কেটে না দেয় তাহলে ধানগাছের আংশিক ক্ষতি হয় এবং শীষের গোড়ার দিকের কিছু ধান চিটা হয়ে যায়।

মাজরা পোকার আক্রমণ হলে, কান্ডের মধ্যে কীড়া, তার খাওয়ার নিদর্শন ও মল পাওয়া যায়, অথবা কান্ডের বাইরের রং বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কীড়া বের হয়ে যাওয়ার ছিদ্র থাকে। গাছে মাজরা পোকার ডিমের গাদা দেখলে বুঝতে হবে গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হলুদ মাজরা পোকা পাতার ওপরের অংশে ডিম পাড়ে এবং গোলাপী মাজরা পোকা পাতার খোলের ভিতরের দিকে ডিম পাড়ে। হলুদ মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর হালকা ধূসর রঙের একটা আবরণ থাকে। কালোমাথা মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর মাছের আঁশের মত একটা সাদা আবরণ থাকে, যা ডিম ফোটার আগে ধীরে ধীরে গাঢ় রং ধারণ করে।
 
মাজরা পোকার কীড়াগুলো ডিম থেকে ফুটে রেরুবার পর আস্তে আস্তে কান্ডের ভেতরে প্রবেশ করে। কীড়ার প্রথমাবস্থায় এক একটি ধানের গুছির মধ্যে অনেকগুলো করে গোলাপী ও কালোমাথা মাজরার কীড়া জড়ো হতে দেখা যায়। কিন্তু হলুদ মাজরা পোকার কীড়া ও পুত্তলীগুলো কান্ডের মধ্যে যে কোন জায়গায় পাওয়া যেতে পারে।

আলোর চার পাশে যদি প্রচুর মাজরা পোকার মথ দেখতে পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে ক্ষেতের মধ্যে মথগুলো ডিম পাড়া শুরু করেছে। 

মাজরা পোকা কিভাবে দমন করা যায়?:



১.  নিয়মিতভাবে ক্ষেত পর্যবেক্ষণের সময় মাজরা পোকার মথ ও ডিম সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেললে মাজরা পোকার সংখ্যা ও ক্ষতি অনেক কমে যায়। থোর আসার পূর্ব পর্যন্ত হাতজাল দিয়ে মথ ধরে ধ্বংস করা যায়।

২.  ক্ষেতের মধ্যে ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখির বসার সুযোগ করে দিলে এরা পূর্ণবয়স্ক মথ খেয়ে এদের সংখ্যা কমিয়ে ফেলে।

৩.  মাজরা পোকার পূর্ণ বয়স্ক মথের প্রাদুর্ভাব যখন বেড়ে যায় তখন ধান ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদ বসিয়ে মাজরা পোকার মথ সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়। 

৪.  যে সব অঞ্চলে হলুদ মাজরা পোকার আক্রমণ বেশী, সে সব এলাকায় সম্ভব হলে চান্দিনার (বি আর ১) মত হলুদ মাজরা পোকা প্রতিরোধ সম্পন্ন জাতের ধান চাষ করে আক্রমণ প্রতিহত করা যায়। 

৫.  ধানের জমিতে শতকরা ১০-১৫ ভাগ মরা ডিগ অথবা শতকরা ৫ ভাগ মরা শীষ পাওয়া গেলে অনুমোদিত কীটনাশক   (যেমন- ডায়াজিনন ৬০ ইসি, কার্বোফুরান ৫জি, ফেনিট্রথিয়ন ৫০ ইসি ইত্যাদি) ব্যবহার করা। 

৬. একই গ্রুপের কীটনাশক একই পোকা দমনের জন্য পর্যায়ক্রমে বা প্রতি মৌসুমে ব্যবহার না করে বিভিন্ন গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

৭. যেসব এলাকায় প্রতিবছর এই পোকার আক্রমণ হয় সেসব এলাকায় আমন ধান কাটার পর নাড়া চাষ/পুড়িয়ে পুত্তলি নষ্ট করা যায়।

এভাবে আপনি আপনার ফসলের মাজরা পোকা তেমন করতে পারবেন।
আজ এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।