ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন – হোস্টিং কিনতে চাচ্ছেন?
তার আগে দেখে নিন অতি প্রয়োজনীয় টিপস….
ডোমেইন কেনার আগে
ট্রেডমার্ক এড়িয়ে চলুন
ডোমেইন কেনার আগে সর্বাগ্রে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যে এই নামটির সাথে কোন প্রকারের ট্রেডমার্কগত জটিলতা রয়েছে কিনা। যদি এ ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে বর্তমানে কোন সমস্যার উদ্ভব না ঘটলেও ভবিষ্যতে ঘটবে না এমনটি বলা যাবে না। তবে এ সমস্যা এড়িয়ে চলার জন্য USPTO এবং Trademarkia এই দুইটি ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন। যদি এই দুটি ওয়েবসাইটে চেক করার পর দেখেন যে, আপনি যে নামটি নির্বাচন করেছেন তার সাথে এ ধরনের কোন সমস্যা নেই, তাহলে এবার দ্বিতীয় বিষয়টির দিকে নজর দিন।
চুরিকৃত ডোমেইন কেনা থেকে বিরত থাকুন
একটি ওয়েবসাইট তৈরীর সকল ধাপেই যে কোন ধরনের অনৈতিকতা বর্জন করে চলা উচিত। কারণ আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আপনার কষ্টে তৈরী করা ওয়েবসাইটটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেকেই নিজের ওয়েবসাইটকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলার জন্য অন্য কারো হ্যাককৃত বা চুরি করে ডোমেইন কিনে থাকেন।
যদি আপনিও এমনটা ভেবে থাকেন তাহলে আমি এটাকে আপনার সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত বলবো। যদি এমন চিন্তা মাথায় এসেও থাকে, তাহলে সেটাকে ঝেড়ে ফেলুন। কারণ আপনি এমনটি করলে খুব শীঘ্রই এমন সময় আসবে যখন আপনার কষ্টে উপার্জিত অর্থ অন্য কেউ নিয়ে যাবে।
বানানের দিকে লক্ষ্য রাখুন
যদি আপনি এমন কোন ডোমেইন নেম খুঁজে পেয়ে থাকেন যা আপনার কাছে সব দিক থেকে উপযুক্ত মনে হয়, তাহলে আরেকবার লক্ষ্য করুন যে ডোমেইনটির বানান সঠিক আছে কিনা। সাধারণভাবেই বলা যায় যে, আপনি যদি এমন কোন ডোমেইন ক্রয় করেন যাতে বানান ভুল রয়েছে তাহলে সেটাকে অর্থের অপচয় ব্যাতীত আর কিছুই বলা যায় না। আপনি কখনও ভবিষ্যতে এ ধরনের ডোমেইন রিসেল করতে পারবেন না।
চেক করে নিন ডোমেইনটি ব্লাকলিস্টেড কিনা
আপনি যদি আপনার সংগ্রহে বেশ কিছু ডোমেইন কিনে রাখতে এবং পরবর্তীতে সেগুলিকে রিসেল করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ডোমেইনটি গুগল বা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা ব্লাকলিষ্ট করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। যদি তা হয়ে থাকে তাহলে আপনি ওই ডোমেইন কিনলেও কোন সার্চ ইঞ্জিন সেটিকে ইনডেক্স করবে না এবং উক্ত ডোমেইনে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে না।
সাধারণত একটি ওয়েবসাইটকে র্যাংক করানোর জন্য যদি ব্লাকহ্যাট এসইও’র মতো কোন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তখন সার্চ ইঞ্জিন উক্ত ডোমেইনটিকে ব্লাকলিষ্ট করে। এক্ষেত্রে আপনি BannedCheck.com থেকে আপনার ডোমেইনটি ইতিমধ্যে ব্লাকলিষ্ট হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
ডোমেইনের ইতিহাস জেনে নিন
ডোমেইন কেনার আগে অবশ্যই একবার Archive.org তে চেক করে দেখুন যে এই ডোমেইনটি ইতিপূর্বে কোন কোম্পানী ব্যবহার করেছে কিনা। যদি করেও থাকে তাহলে তারা কি কাজে ডোমেইনটি ব্যবহার করতো তার বিস্তারিত তথ্য আপনি এখান থেকে পেয়ে যাবেন।
আপনি যদি ভুলবশত এমন কোন কোম্পানীর ব্যবহৃত ডোমেইন কেনেন যাদের ব্যবসায়িক সুনাম মোটেও ভালো নয় সেক্ষেত্রে আপনার কোম্পানীর উপরেও তার প্রভাব পড়তে পারে।
দাম যাচাই করুন
সব ওয়েবসাইটে ডোমেইনের দাম এক রকম হয় না। আমি একটি ডোমেইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন রকমের দাম হতে দেখেছি। এজন্য আপনাদেরও বলব ডোমেইন কেনার আগে অবশ্যই সেটির রেজিষ্ট্রেশন মূল্য এবং নবায়ন মূল্য যাচাই করে নিন।
নাম যাচাই করার জন্য DNPric.es এই ওয়েবসাইটটিতে যান এবং আপনার কাঙ্খিত ডোমেইনের নাম লিখে সার্চ করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রস্তাবকৃত মূল্য তুলনা করে দেখুন এবং সেখান থেকে যেটি আপনার কাছে সাশ্রয়ী এবং লাভজনক মনে হয় সেটি থেকেই ক্রয় করুন।
ডোমেইন কোথা থেকে রেজিস্ট্রেশন করবেন
◼ বাংলাদেশি প্রভাইডারের কাছ থেকে ডোমেইন নেয়া ভালো, কারন আপনি বিদেশি কোম্পানীর চেয়ে ভালো সার্ভিস পাবেন এরকম অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন বাংলাদেশে আছে। তাছাড়া বিদেশি কোম্পানীর কাছে ডোমেইন নিতে আপনাকে ডলারে পেমেন্ট পরিশোধ করতে হবে। যেখানে বাংলাদেশি প্রভাইডারের কাছ থেকে নিলে আপনি টাকায় বিকাশে বা রকেটে পেমেন্ট করতে পারবেন।
◼ ডোমেইনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি এবং বিদেশী কোম্পনীর কোন ডিফারেন্স নেই। বিদেশী কোম্পানী আপনাকে যেখান থেকে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিবে, বালাদেশী কোম্পানী সেখান থেকেই রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিবে।
◼ বাংলাদেশী প্রভাইডারের কাছে ডোমেইন নিলে একটি কথা তাকে আগে জিজ্ঞাসা করতে হবে, সে কি আপনাকে ডোমেইনের ফুল কন্ট্রোল প্যনেল দিবে? ফুল কন্ট্রোল প্যানেল না দিলে আপনি তার কাছ থেকে ডোমেইন কিনবেন না।
◼ ডোমেইনটা হোস্টিং এর সাথে রিলেটেড। তাই হোস্টিং যে কোম্পানী থেকে নিবেন, সেখান থেকেই ডোমেইন নেয়া বেটার। তাতে আপনি ডোমেইন এবং হোস্টিং সার্ভিস একই সাথে পাবেন।
◼ লোভনীয় অফারে ডোমেইন কিনতে হলে আগে ভালে করে অফার সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা নিন।
◼ সাধারনত একটি ডোমেইনের মূল্য ৬০০-১২০০ টাকা হয়ে থাকে। এই প্রাইসের নিচে আপনাকে কেউ ডোমেইন অফার করলে আগে ভালো করে জিজ্ঞাসা করুন তার কি কি কন্ডিশন আছে।
হোস্টিং কেনার আগে যে সকল বিষয় বিবেচনা করতে হবে
ডোমেইন ক্রয় করার পর আপনাকে অবশ্যই হোস্টিং ক্রয় করতে হবে। হোস্টিং ছাড়া আপনি শুধু ডোমেইন দিয়ে একটি ওয়েবসাইট লাইভ করতে পারবেন না। ডোমেইন সার্ভিস সকল কোম্পানী প্রায় একই রকম দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রায় বেশিরভাগ কোম্পানীর হোস্টিং বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন মানের। তাই হোস্টিং কেনার আগে আপনাকে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
বাজেট: ওয়েবসাইট করার আগে সবারই ডোমেইন হোস্টিং এর পেছনে একটা বাজেট করতে হয়। এই সময়ে হোস্টিং এর পেছনে ভালো বাজেট করবেন। আপনি কোন ধরনের সাইট করবেন। সাইটে ডেইলি ভিজিটর সংখ্যা কেমন থাকবে এটার উপর হোস্টিং বাজেট ঠিক করতে হবে। বাজেট ঠিক করার পর, সেইম বাজেটে আপনাকে ভালো মানের হোস্টিং যে কোম্পানী প্রভাইড করবে তার কাছ থেকে নিবেন।
হোস্টিং স্পেস: আপনার ওয়েবসাইট করতে কত পরিমান স্পেস প্রয়োজন সেটা ঠিক করে সে অনুযায়ী হোসিং প্যাকেজ বা প্ল্যান ক্রয় করুন।
ব্যন্ডউইথ: আপনার ওয়েবসাইটে যত পরিমান ডাটা বা ফাইল থাকবে এবং যত পরিমান ভিজিটর আসবে তার উপর ব্যন্ডউইথ খরচ হবে। পার ভিজিটর এবং পার পেইজ ভিউ অনুযায়ী ব্যন্ডউইথ খরচ হতে থাকবে। মনে করেন ১ জিবি ব্যন্ডউইথে আপনার সাইটে ১০০০ ভিজিটর আসতে পারবে । তাহলে সাইটে ভিজিটর অনুযয়ী ব্যন্ডউইথ নিতে হবে। আপনার সাইটে ১০-১০০ জিবি ব্যন্ডউইথ নিয়ে নিতে পারেন। প্রয়োজনে আনলিমিটেড ও নিতে পারেন।
হোস্টিং আপটাইম: হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপটাইম একটি খুবই গুরুত্বর্পূন বিষয়। হোস্টিং আপটাইম অনুযয়ী আপনার সাইট লাইভ থকবে। ৯৯.৯% এবং ১০০% আপটাইম দেখে আপিনি হোস্টিং নির্বাচন করবেন। অনেক কোম্পনী আপনাকে বলবে ৯৯.৯% আপটাইম। কিন্তু অপনি প্রকৃতপক্ষে সেটা পাবেন না। তাই হোস্টিং কেনার আগে আপনাকে হোস্টিং আপটাইম চেক করে নিতে হবে। এজন্য কোম্পানীর ইউজেস পলিসি পেজ দেখতে পারেন।
মানি ব্যক গ্যারান্টি: হোস্টিং এর ক্ষেত্রে মানি ব্যক প্যারান্টি একটি গুরুত্ববহ বিষয়। আনেক কোম্পনীই ৩০ দিন মানি ব্যক গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। এটা দেখে নিবেন। সাধারনত মানি ব্যক গ্যারান্টি দেয়া কোম্পানীগুলো সার্ভিস ভালো দিয়ে থাকে।
হোস্টিং কোম্পানীর অবস্থা: হোস্টিং কেনার আগে তাদের প্রতিষ্ঠানের অবস্থা জানার চেস্টা করুন। তাদের কাস্টমার কেয়ারে কথা বলুন। তাদের সার্ভিস ব্যবহার করে এমন করোর ফিডব্যক নিতে পারলে ভালো হয়। তাদের সার্ভারের অবস্থান জানুন। সকল কিছু বিবেচনা করে ফাইনাল অর্ডার করুন।
সাপোর্ট: হোস্টিং এর জন্য সাপোর্ট একটা গুরুত্ববহ বিষয়। আপনার হোস্টিং এ কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিলে তাদের সাপোর্ট আপনাকে নিতে হবে। সাপোর্ট পেতে আপনাকে কয়েকদিন সময় লাগলে আপনি আপনার সাইটের লক্ষ লক্ষ ভিজিটর হারাবেন। আর আপনি রিসেলার হলে তো কথাই নাই। আপনার ক্লাইন্ট আপনাকে সমস্যা জিজ্ঞাসা করবে কিন্তু আপনি কোন উত্তর দিতে পারবেন না।
হোস্টিং এর ধরন: আপনার কাজে কোন ধরনের হোস্টিং প্রয়োজন সে অনুযায়ী অর্ডার করুন। উইন্ডোজ এবং লিনাক্স হোস্টিং এর মধ্যে আপনার কোনটি দরকার জেনে নিন নেয়ার আগে।
ফিচারসমূহ: হোস্টিং নেয়ার আগে তাদের প্রদানকৃত ফিচারসমূহ জেনে নিন। আপনার প্রয়োজনের সাথে মিল হলে তখন সেখান থেকে হোস্টিং ক্রয় করুন।
লিমিটিশন: আপনি ছোট কোন প্যকেজ নিলে সকল লিমিটেশন আপনার প্যাকেজে উল্লেখ থাকবে। নিন্তু আনলিমিটেড প্যাকেজ নিলে আপনাকে লিমিটেশন জেনে নিতে হবে। মানে রাখবেন পৃথিবীতে সব কিছুরই একটা লিমিট আছে। আপনার কাছে আনলিমিটেড হবে সেটাই যেটার লিমিট আপনি ক্রোস করতে পাবেন না।
সার্ভার লোড: শেয়ারড হোস্টিং নেয়ার আগে সার্ভার কনফিগারেশন এবং সার্ভার লোড সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সার্ভার ওভারলোড হলে আপনার সাইট লোড হতে আনেক সময় লাগবে।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো খেয়াল করে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনলে আপনাকে ঠকতে হবে না। আশাকরি ভালো মানের হোস্টিং এবং ডোমেইন সার্ভিস পাবেন।
তথ্য সূত্রঃ ন্যাক্স ব্লগ এবং হৈচৈ বাংলা
========= [ ধন্যবাদ ] ===========