Site icon Trickbd.com

কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রজন্ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এনালগ কম্পিউটার থেকে আধুনিক কম্পিউটার। সকল তথ্য কম্পিউটার জেনারেশন সম্পর্কে।

Unnamed


আসসালামু আলাইকুম।
সবাই কেমন আছেন?
গত কালকের মতো আজকেও নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।
গত পোস্টে আমরা কম্পিউটারের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছিলাম। আজকের পোস্টে আমরা কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রজন্ম বা জেনারেশন সম্পর্কে জানতে পারবো। তাই অনুরোধ থাকলো পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার। তো পোস্ট টি শুরু করা যাক।

কম্পিউটার প্রজন্ম (Computer Generations)

ENIAC source: Wikipedia
কম্পিউটার আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে এর প্রযুক্তিগত উন্নতি, কাজের গতি এবং আকৃতিগত পরিবর্তন বা বিবর্তন ঘটতে থাকে। এ বিবর্তন ও বিকাশের এক একটি ধাপকে প্রজন্ম বলে। কম্পিউটার শিল্পের ক্রমবিকাশের লক্ষ্যে এটি নির্মাণ কাঠামোরূপে কাজ করে। বিবর্তনের অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে কম্পিউটার আজ বর্তমান অবস্থায় এসেছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন কম্পিউটারকে উন্নত থেকে উন্নততর করেছে। একটি প্রজন্ম থেকে আর একটি প্রজন্মের পরিবর্তনের সময় সমস্যাগুলোর সমাধান করে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটিয়ে এক একটি প্রজন্মের আত্মপ্রকাশ ঘটানো হয়। তবে নতুন বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি পুরানো বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে যায়। নিম্নে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার (First Generation Computer) [১৯৪০-১৯৫৬]

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হতো। হাজার হাজার ডায়োড ভাল্ভ, রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হতো বলে এরা আকারে অনেক বড় ছিল। কয়েকটি ঘর জুড়ে থাকত ঐসব কম্পিউটার, যা বর্তমানে অকল্পনীয়। চালু অবস্থায় কম্পিউটার ভীষণ গরম হয়ে যেত। তাই না পুড়ে যাবার জন্য মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হতো। এগুলো ছিল। সীমিত তথ্য ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এবং পরিচালনার জন্যে অত্যধিক বিদ্যুৎশক্তি প্রয়োজন হতো। ভালভের কার্যকালও খুব কম। এ কম্পিউটারগুলো ব্যয়বহুল হলেও কম নির্ভরযোগ্য ছিল। কাজের গতি ছিল মন্থর। ১৯৪৩ সালে নির্মিত সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার হলো ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Calculator) কম্পিউটার। এটি তৈরি করেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার মূর স্কুল অব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক জন মশলী (John Mauchly) এবং তার প্রকৌশলী জে. প্রেসপার ইকার্ট (J. Presper Eckert)। ১৯৪৩ সালে এ কম্পিউটারের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৪৫ সালে এর কাজ শেষ হয়। আটলান্টিক মহাসাগরের ওপারে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্রের পথ পরিমাপের জন্য দ্রুতগতির হিসাব যন্ত্রের প্রয়োজন উপলব্ধি করে। লক্ষ্য স্থানের দূরত্বের উপর নির্ভর করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপণের কোণ পরিবর্তন করতে হয়। এজন্য ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Calculator) কম্পিউটারের জন্ম হয়। ১৯৫৪ সালের শেষে বোস্টনে প্রথম আবির্ভূত হয় IBM-650। এটি ছিল এ প্রজন্মের ব্যাপকভাবে সমাদৃত কম্পিউটার। উদাহরণ- IBM-650, MARKII, ENIAC, EDVAC, EDSAC ইত্যাদি। এসব কম্পিউটারে প্রথমে মেশিনের ভাষায় এবং পরে ১৯৫২-৫৩ সালে অ্যাসেম্বলি ভাষায় প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

(i) ভ্যাকুয়াম টিউব ও বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক বর্তনীর ব্যবহার;
(ii) ধীরগতিসম্পন্ন গণনাকারী যন্ত্র;
(iii) আকারে অনেক বড়;
(iv) পাঞ্চকার্ডের মাধ্যমে ইনপুট-আউটপুট ব্যবস্থা করা হয়;
(v) মেশিন ভাষার নির্দেশ প্রদান;
(vi) মেমরি হিসাবে ম্যাগনেটিক ড্রামের ব্যবহার।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Second Generation Computer) [১৯৫৭-১৯৬৩]

১৯৪৮ সালে আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরিতে উইলিয়াম বি. শকলি (Wiliam B. Shokly), জন বার্ডিন (John Berdeen) এবং এইচ. ব্রিটেন (H. Britain) সম্মিলিতভাবে ট্রানজিস্টর তৈরি করেন। এ ট্রানজিস্টর কম্পিউটারের উন্নতিতে বিপ্লব এনে দেয়। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে ভ্যাকুয়াম টিউব এর পরিবর্তে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হতো। ট্রানজিস্টর আবিষ্কার হওয়ার পর কম্পিউটার প্রযুক্তির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। এ প্রজন্মের কম্পিউটার গরম হতো না। ১ম প্রজন্মের কম্পিউটার থেকে এটি আকারে ছোট এবং কম বিদ্যুৎ খরচ হয়। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে প্রথম হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের ব্যবহার শুরু হয়, যেমনঃ- FORTRAN(1956) , ALGOL (1958), COBOL (1959)। এ প্রজন্মের একটি কম্পিউটার IBM-1620 দিয়ে ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহার সূচনা করা হয়। এ কম্পিউটারটি ঢাকার পরমাণু শক্তি কমিশন কেন্দ্রে সুদীর্ঘ কয়েক বছর চালু ছিল।
উদাহরণঃ IBM-1401, CDC 1604, RCA – 301 , RCA 501, BCR 300, GE 200 Honey Well 200, 1600, IBM 1620 ইত্যাদি।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ

(i) ট্রানজিস্টরের ব্যবহার শুরু হয়।
(ii) ম্যাগনেটিক কোর মেমরির ব্যবহার ও সহায়ক মেমরি হিসাবে ম্যাগনেটিক ডিস্কের উদ্ভাবন;
(iii) উচ্চগতিসম্পন্ন ও উন্নতমানের ইনপুট-আউটপুট ব্যবস্থার প্রচলন;
(iv) মেশিন ভাষার পরিবর্তে উচ্চস্তরের ভাষার (যেমন– COBOL, FORTRAN N, ALGOL ইত্যাদি) ব্যবহার।

(v) টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে ডাটা প্রেরণের ব্যবস্থা।
(vi) অধিক নির্ভরযোগ্যতা;
(vii) বাস্তবিক ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের শুরু।

তৃতীয় প্রজনোর কম্পিউটার (Third Generation Computer) [১৯৬৪-১৯৭০]

Source:digitalworld839.com
রবার্ট নয়েস (Robert Noyce) ও জ্যাক কিলবি (Jack Kilby) প্রায় একই সময় পৃথকভাবে বড় সার্কিট ক্ষুদ্র করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ছোট সার্কিটকে আইসি (IC) বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (Integrated circuit) বলা হয়। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে IC ব্যবহার শুরু করা হয়। ফলে কম্পিউটারের আকার ও দাম কমে যায়। তবে গতি বেড়ে যায়। এ প্রজন্মে মিনি কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এ প্রজন্ম থেকেই কম্পিউটারের সাথে মনিটর ব্যবহার শুরু হয়। সাথে সাথে কম্পিউটারের স্মৃতি ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটে। ৩য় প্রজন্মের কম্পিউটারে ভাষার উন্নতিতে প্রোগ্রামে দক্ষতা অর্জনে সহজতর অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে প্রিন্টারের প্রচলন শুরু হয়।
উদাহরণঃ IBM 360, IBM 370, PDP-8, PDP-II ইত্যাদি।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ

(i) কম্পিউটারে একীভূত বর্তনীর (IC) প্রচলন;
(ii) আকৃতিতে ছোট, দাম কম এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি;
(iii) মুদ্রিত আকারে লাইন প্রিন্টারের ব্যবহার;
(iv) আউটপুট হিসেবে ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিটের প্রচলন;
(v) উচ্চতর ভাষার বহুল ব্যবহার;
(vi) মিনি কম্পিউটারের উদ্ভব,
(vii) অর্ধপরিবাহী স্মৃতির ব্যবহার।

৪র্থ প্রজন্মের কম্পিউটার (Fourth Generation Computer) [১৯৭১–২০১০]

১৯৭১ সাল থেকে চতুর্থ প্রজন্ম শুরু হয়েছে বলে ধরা হয়। LSI (Large Scale Integration) ও VLSI (Very Large Scale Integration) মাইক্রোপ্রসেসর এবং সেমিকন্ডাক্টর মেমরি (Semiconductor memory) দিয়ে এ প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরি হয়। VLSI এর মাইক্রোপ্রসেসর নিয়ে গঠিত ছোট কম্পিউটারকে মাইক্রোকম্পিউটার overline 964 । আমেরিকার জন ব্ল্যাংকেন বেকার ১৯৭১ সালে কেনব্যাক (Kenbak) নামক প্রথম মাইক্রোকম্পিউটার তৈরি করেন। পরে ১৯৭৭ সালে মাইক্রোকম্পিউটার পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৯৮১ সালে আইবিএম কোম্পানি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রথম মাইক্রোকম্পিউটার তৈরি শুরু করে। ৪র্থ প্রজন্ম থেকে মাইক্রোকম্পিউটার চালু হয়। ফলে কম্পিউটারের আকার ছোট হয়। তবে কম্পিউটারের গতি অত্যধিক বেড়ে যায়। এ প্রজন্মে কম্পিউটারের স্মৃতি উদ্ভাবিত হতে থাকে, যেমন- ROM ( Read Only Memory) PROM, EPROM C Programming language এবং DOS, Windows, Unix Operating System এ প্রজন্মের কম্পিউটারে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। উদাহরণ : IBM 3033, IBM 4300, IBM S / 36 , Sharp PC-1211, Apple II, Pentium 1 – 4 , ইত্যাদি।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ

(i) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ( Artificial Intelligence) ব্যবহার;
(ii) বহু মাইক্রোপ্রসেসর এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ বিশিষ্ট একীভূত বর্তনীর;
(iii) ট্রানজিস্টরগুলোতে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার;
(iv) উন্নত মেমরি তথা ম্যাগনেটিক বাবল মেমরির ব্যবহার;
(v) মানুষের কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে প্রদত্ত নির্দেশের অনুধাবন; (vi) ডাটা ধারণক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি;
(vii) অত্যন্ত শক্তিশালী ও উচ্চগতিসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার;
(viii) সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার (Fifth Generation Computer) [২০১১–বর্তমান]

source: guyhowto
এ প্রজন্মের কম্পিউটার ৪র্থ প্রজন্মের কম্পিউটার হতে অধিক শক্তিশালী। Super VLSI (Very Large Scale Integration) চিপ ও অপটিক্যাল ফাইবারের সমন্বয়ে এ প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরি। এ ধরনের কম্পিউটারে অত্যন্ত শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর ও প্রচুর পরিমাণ ডাটা ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ করার গবেষণা চলছে। বর্তমানে ৪র্থ প্রজন্মের কম্পিউটার ছাড়াও ৫ম প্রজন্মের কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। ৫ম প্রজন্মের কম্পিউটারে মানুষের কণ্ঠস্বর শনাক্ত করার ক্ষমতা ও কণ্ঠে দেয়া নির্দেশ বুঝতে পেরে কাজ করার ক্ষমতা থাকবে। ৫ম প্রজন্মের কম্পিউটারে নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হয়েছে।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

(i) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পূর্ণ;
(ii) অধিক সমৃদ্ধশালী মাইক্রোপ্রসেসর;
(iii) – বর্তনীতে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার;
(iv) মানুষের কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে প্রদত্ত নির্দেশের অনুধাবন;
(v) সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন;
(vi) Super VLSI (Very Large Scale Integration) চিপ অবতারণা করা হয়েছে;
(vii) KIPS ( Knowledge Information Processing System) এর ব্যবহার;
(viii) এই ধরনের কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে ১০-১৫ কোটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে;
(ix) শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে। ফলে এই প্রজন্মের কম্পিউটার শুনতে পারবে ও কথা বলতে পারবে।
(x) এই প্রজন্মের কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকবে। ফলে কম্পিউটার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করতে পারবে।
(x) ভিজুয়্যাল ইনপুট বা ছবি থেকে ডাটা গ্রহণ করতে পারবে।

এই পোস্টটি লিখতে আমার অনেক ব্যক্তি, বই, ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে হয়েছে।
সকল ক্রেডিটঃ মোঃ কামরুল হাসান
তথ্য সূত্রঃ
1. Wikipedia.com
2. Digitalworld839
3.guyhowto

Thanks you. bye.