উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। কারণ হচ্ছে তাদের প্রতি ভার্সনে আপডেটকৃত নিত্যনতুন সব ফিচার ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করে রাখে। তারা তাদের প্রতিটি ভার্সনের প্রতিটি আপডেটে নিত্যনতুন ফিচার নিয়ে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় উইন্ডোজ এর সর্বশেষ ভার্সন Windows 11 একাধিক ডেস্কটপ বা Split এর মতো একটি ফিচার নিয়ে এসেছে। আর এই ফিচার নিয়েই মূলত আমরা আজকের এই টপিকে আলোচনা করব। অনেকেই হয়তো এই ফিচারটি দেখে থাকবেন কিন্তু এইটা আসলে কী? এর সুবিধা কী? বা এটি কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তা জানেন না।
Windows 11 এর Split বা একাধিক ডেস্কটপ মুড কী?
এই ফিচারটি মুলত যারা মাল্টিটাস্কার তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার। যেটির মাধ্যমে সহজে আলাদা আলাদা ডেস্কটপ এবং আলাদা আলাদা স্ক্রিন লেআউট ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ আমরা যেভাবে পিসির মধ্যে একাধিক অ্যাপ বা এক অ্যাপের একাধিক উইন্ডো ব্যবহার করে থাকি সে পদ্ধতির একটি আপডেট ফিচার। সাধারণত আমরা পিসিতে বিভিন্ন অ্যাপ এক অ্যাপের একাধিক উইন্ডো রান করলে সেগুলো মিনিমাইজ করে বা মেক্সিমাইজ করে সবগুলো রান করি এবং ব্যবহার করি একসাথে একই ডেস্কটপ বা স্ক্রিনের মধ্যে। আর এটিও বলতে গেলে প্রায় একই রকম কাজ করে। তবে এটির বিশেষত্ব হচ্ছে আপনি যদি প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম বা অ্যাপ আলাদা আলাদা ডেস্কটপে আলাদাভাবে রান করতে চান এক ডেস্কটপের মধ্যে করতে চান না। তাহলেই আপনি এই ফিচারটির মাধ্যমে এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আর এই সুবিধাটি কিভাবে বা কোন পদ্ধতিতে ব্যবহার করবেন চলুন তা নিচে থেকে দেখে নেওয়া যাক।
Windows 11 এর Split বা একাধিক ডেস্কটপ মুড ব্যবহার করার পদ্ধতিঃ
Split বা একাধিক ডেস্কটপ মুড এর ফিচারটি Windows 11 অপারেটিং সিস্টেমে বিল্ট-ইন হিসেবে রয়েছে। এর মাধ্যমে কাজকে আরো সহজে সম্পাদন করা যায়। এই ফিচারটি দুই রকমের আছে। আর আমরা এই দুটো পদ্ধতিই দেখবো যে এগুলো কোনটা কী এবং কিভাবে কাজ করে।
প্রথম পদ্ধতি ড্র্যাগ উইন্ডোজ বা উইন্ডোজ টানাঃ
প্রথম পদ্ধতিটি হলো উইন্ডোজ ডেস্কটপ মুড। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালিত পিসির টাস্কবারে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন সাদা এবং ধূসর রংয়ের আইকন দেখা যায়। এটিতে যদি ক্লিক করেন তাহলে ঠিক উপরের স্ক্রিনশটের মতো দেখা যাবে। এখানে Desktop 1, Desktop 2 ও New Desktop নামে তিনটি আলাদা ডেস্কটপের মতো দেখাচ্ছে। ডেস্কটপ ১ এবং ২ এর পাশাপাশি আপনি আরও ডেস্কটপ বাড়াতে নিউ ডেস্কটপের মাধ্যমে। এগুলোতে আপনি আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে পারবেন।
ধরুন আমি ডেস্কটপ ১ একটি প্রোগ্রাম ব্যবহার করব তাই আমি সেটিতে ক্লিক করলাম। এখানে আমি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড প্রোগ্রাম ব্যবহার করব। আর ডেস্কটপ ২ তে আমি অ্যাডোবি ফটোশপ ব্যবহার করব। তাই ডেস্কটপ ২ তে ক্লিক করে সেটিতে অ্যাডোবি ফটোশপ অপেন করলাম যা উপরের স্ক্রিনশট ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন। উল্লেখ্য আমি একটি ডেস্কটপে এক একটি আলাদা প্রোগ্রাম ওপেন করেছি। তাই ডেস্কটপ ১ প্রবেশ করলে সেটিতে যেটা ওপেন করেছি সেটা ওপেন দেখাবে আর ডেস্কটপ ২ তে যেটি ওপেন করেছি শুধুমাত্র সেটি দেখাবে। তবে আপনি যদি ডেস্কটপ ১ এর মধ্যে ২ এর মধ্যে চালুকৃত ওপেন করা প্রোগ্রামটি ওপেন করতে চান তাহলে তা আপনাকে ১ থেকে ২ ডেস্কটপে নিয়ে যাবে।
আবার ধরেন আমি এক ডেস্কটপ মুডে একাধিক অ্যাপ রান করেছি। এখন আমি এগুলোকে চাইলে আলাদা আলাদাভাবে ডেস্কটপে ব্যবহার করতে পারি এর জন্য আমাকে টাস্কবারে থাকা সাদা এবং ধূসর রংয়ের আইকনটিতে ক্লিক করতে হবে। তারপর আপনার যত প্রোগ্রাম চালু থাকবে সেগুলো উপরের স্ক্রিনশটের মতো দেখতে পারবেন এগুলো সব এখন ডেস্কটপ ১ এর মধ্যে চালু অবস্থায় রয়েছে। এখন আপনি যদি এখান থেকে চালু কৃত কোনো প্রোগ্রাম অন্য ডেস্কটপে নিতে। তাহলে সেটিকে ক্লিক করে চেপে ধরে রেখে টেনে বা ড্রাগ করে অন্য ডেস্কটপে ছেড়ে দিন। এখন দেখুন সেটি আগের ডেস্কটপ থেকে নতুন ডেস্কটপে চলে এসেছে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি স্ন্যাপ লেআউটঃ
এই স্ন্যাপ লেআউটটি উইন্ডোজের প্রায় প্রত্যেকটি ভার্সনেই ছিলো। তবে এটি Windows 11 এর মধ্যে প্রবর্তিত নতুন একটি ফিচার যা আপনাকে আরও সহজ উপায়ে স্প্লিট স্ক্রিন বা একাধিক উইন্ডো ব্যবহার করতে সহায়তা করবে। যদিও এটি সক্রিয় বা অ্যাক্টিভ থাকে তবে কিছুকিছু Windows 11 অপারেটিং সিস্টেমে এটি অ্যাক্টিভ থাকে না। তাই আপনাকে এই স্ন্যাপ লেআউটটি ব্যবহার করতে হলে প্রথমে কম্পিউটারে সেটিংস থেকে চালু বা ইনেবল করে নিতে হবে।
এর জন্য উপরের স্ক্রিনশটের মতো প্রথমে আপনার কম্পিউটারের সেটিংস অপশনে যান। এখানে আপনাকে System অপশনে ক্লিক করতে হবে। তারপর উপরের স্ক্রিনশটেরত মতো Multitasking লেখাটিতে ক্লিক করুন।
উক্ত অপশনে প্রবেশ করার প্রথম যে অপশনটি দেখতে পারবেন তার নাম হচ্ছে Snap Windows এখানে ডান পাশে থাকে চালুর আইকনে ক্লিক করে এটি On করে দিন।
স্ন্যাপ লেআউট অপশনটি চালু করার পর এটি ব্যবহার করতে আপনাকে যেকোনো প্রোগ্রাম বা অ্যাপ ওপেন করে সেটির ডান পাশের কোণে দেখুন Close এবং Minimize বাটনের মাঝামাঝি যে Maximize বাটন রয়েছে সেটির উপর মাউসের কার্সর নিতে হবে। নিলেই দেখবেন ঠিক উপরের স্ক্রিনশটের মতো চলে আসবে। এখানে লক্ষ্য করুন চারটি ক্যাটাগরির লেআউট রয়েছে। আপনি এখান থেকে আপনার ইচ্ছেমতো যেকোনো একটি লেআউট নিতে পারেন।
প্রথম লেআউটটি হচ্ছে আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিনটিকে আপনি দুটি সমান ভাগে ভাগ করে পাশাপাশি দুটি উইন্ডো বা প্রোগ্রাম বা অ্যাপ পরিচালনা করতে পারার অপশন। যার মাধ্যমে আপনি কম্পিউটার স্ক্রিনে দুটো আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম একই সময় একসাথে দেখতে পারবেন এবং কাজ করতে পারবেন।
দ্বিতীয় লেআউট বলতে গেলে প্রায় প্রথমটির মতো কম্পিউটার স্ক্রিনকে দুই ভাগে ভাগ করা। তবে এখানে পার্থক্য হচ্ছে সমান ভাগে ভাগ না করে ডান দিকেরটি বাম দিকের তুলনার ছোট হবে। অর্থাৎ বাম দিকের স্ক্রিনটি বেশি বড় হবে। আর বাম দিকের স্ক্রিনটি ছোট হবে। এটির মাধ্যমে আপনার যে প্রোগ্রাম বা অ্যাপের স্ক্রিন একটু বড় প্রয়োজন সেটি আপনি বড় করে দেখতে পারবেন।
তৃতীয় লেআউটটি হচ্ছে আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিনটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করবে। স্ক্রিনের বাম দিকটি একটি একক উইন্ডো হবে আর ডান দিকটি আবার দুই ভাগে সমানভাবে বিভক্ত হবে। আপনি আপনার তিনটি প্রোগ্রাম বা অ্যাপের কাজ এই লেআউটের মাধ্যমে করতে পারবেন। যেটি আপনার বড় স্ক্রিনে প্রয়োজন সেটিকে বাম পাশের স্ক্রিনে রাখবেন বাকি দুটো ডান পাশের স্ক্রিনে রাখবেন।
সর্বশেষ চতুর্থ পদ্ধতিটি আপনার কম্পিউটার স্ক্রিনটিকে চার ভাগে সমানভাবে ভাগ করবে। আপনি একই সময়ে মোট চারটি উইন্ডো বা প্রোগ্রাম বা অ্যাপের কাজ করতে পারেন এতে করে প্রোগ্রাম বা অ্যাপগুলিকে বারবার মিনিমাইজ এবং ম্যাক্সিমাইজ না করে অনেক সময় বাঁচাতে পারবেন।
আর এইভাবে সহজে আপনি আগের অপারেটিং সিস্টেমগুলির মতো একাধিক প্রোগ্রামকে এক স্ক্রিনে দেখতে রিসাইজ করার মতো আর ঝামেলায় পড়তে হবে না। যদি আপনার পিসির উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম একদম সর্বশেষ হালনাগাদ বা আপডেটের হয়ে থাকে মানে উইন্ডোজ ১১ হয়ে থাকে তাহলে উপরোল্লিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি আপনার চাহিদামতো যেকোনো একটি লেআউট ব্যবহার করে এক স্ক্রিনের মধ্যে একাধিক প্রোগ্রাম বা অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। উল্লেখ্য আপনি কিন্তু চাইলে উইন্ডোজ ১১ অপারেটিং সিস্টেমেএ কোনো প্রোগ্রামকে নিজের মতো করে রিসাইজ বা ম্যাক্সিমাইজ করতে পারবেন ঠিক উইন্ডোজ এর পূর্বের ভার্সনগুলির মতো। এই ছিলো মূলত আমার আজকের টপিক। আশা করি যাদের এতোদিন উইন্ডোজ ১১ এর এই ফিচার নিয়ে জানার এবং ব্যবহার করার পদ্ধতি নিয়ে অনেক কৌতুহল ছিলো তা আজকে কেটে গেছে। আর আগে থেকে বিষয়টি জানেন বা বুঝেন তাদের এটি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ রইলো।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি আমার টিপস এন্ড ট্রিকসগুলি ভিডিও আকারে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছি। আশা করি চ্যানেলটি Subscribe করবেন।
সৌজন্যে : বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং বর্তমান সময়ের বাংলা ভাষায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ক টিউটোরিয়াল সাইট – www.TutorialBD71.blogspot.com নিত্যনতুন বিভিন্ন বিষয়ে টিউটোরিয়াল পেতে সাইটটিতে সবসময় ভিজিট করুন।