সবাই চায় তার ওয়েব সাইটটি গুগল কিংবা বিং-এর সার্চে সবচে উপরের দিকে থাকুক। সেটা করতে গিয়েই একটি টার্ম খুব প্রচলিত, সেটা হলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)। অর্থ্যাৎ সার্চ ইঞ্জিনগুলো কিভাবে আপনার ওয়েব সাইটকে এনালাইসিস করছে, এবং কিভাবে সেটা সার্চের ফলাফল হিসেবে নিয়ে আসছে, সেটা অপটিমাইজ করা।
এর মূল উদ্দেশ্য হলো, কোনও কিছু দিয়ে গুগলে গিয়ে সার্চ করলে যেন আপনার পৃষ্ঠাটি প্রথমে চলে আসে। তাতে, আপনার পৃষ্ঠায় ট্রাফিক বেশি আসবে। বেশি মানুষ আপনার ওয়েব সাইট ভিজিট করবে।
যদিও পুরোপুরি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করা একটি বেশ জটিল বিষয়। তবুও কিছু ছোট ছোট পদক্ষেপ আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারে। আর যারা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) নিয়ে আউটসোর্সিং/ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজ করতে চান, তারা বেসিক বিষয়গুলো এখান থেকে জেনে নিতে পারেন। আমরা পরবর্তীতে আরো জটিল বিষয়ের আলোচনা করবো।
ইন্টারনেটে অনেক ওয়েব সাইট রয়েছে যেগুলো এই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) নিয়ে আলোচনা করে এবং টিপস দিয়ে থাকে। আমি সেখান থেকে বেছে বেছে কিছু টিপস (যেগুলো আমার কাছে মনে হয়েছে গ্রহনযোগ্য) লিখে দিচ্ছি।
download (71) সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর টিপস
১. প্রথমেই আপনি যে কাজটি করতে পারেন, তাহলো আপনার ওয়েব সাইটটির একটি গ্লোবাল অবস্থান (ranking) জেনে নিতে পারেন। এর জন্য মোটামুটি একটি ওয়েব সাইট হলো অ্যালেক্সা.কম (http://alexa.com)। বিখ্যাত অ্যামাজন.কম এই ওয়েব সাইটটি পরিচালনা করে থাকে। সেখানে গিয়ে আপনি যদি আপনার ওয়েব সাইটের ঠিকানাটি লিখে দিন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন আপনার সাইটের অবস্থান (ranking) কোথায়। তবে একটি বিষয় এখানে বলে রাখা ভালো যে, অ্যালেক্সাতে আপনার ওয়েব সাইটের অবস্থান একদম নিরঙ্কুশ সঠিক নয়। তবে মোটামুটি একটা ভালো গাইডলাইন পাওয়া বটে। আপনার লক্ষ্য হবে সেই অবস্থানটিতে উপরের দিকে ওঠা; অর্থ্যাৎ ১ হলো সর্বোচ্চ অবস্থান। দশ হাজার হলো নীচের দিকের অবস্থান।
২. আপনার ওয়েব সাইটটি গুগল সার্চ ইঞ্জিনে রেজিস্ট্রেশন করুন। এটা করতে বিভিন্ন রকমের সফটওয়্যার পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার না করে, সরাসরি নিজেই কাজটি করতে পারেন এই ঠিকানায় – http://www.google.com/addurl/?continue=/addurl
৩. প্রতিটি ওয়েব পেজের একটি টাইটেল থাকে। সেই টাইটেলটি থেকে সার্চ ইঞ্জিন বুঝতে পারে, এই পৃষ্ঠাটি কিসের উপর নির্মিত। এখানে আরেকটি কথা বলে নেয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের রয়েছে রোবট – যা বিভিন্ন সময়ে গিয়ে বিভিন্ন ওয়েব সাইট সয়ংক্রিয়ভাবে পড়ে নিয়ে আসে। আমরা মানুষ যখন ইন্টারনেট ব্রাউজ করে ওয়েব পেজ ব্রাউজারে লোড করি, একই ভাবে রোবটগুলো (মূলত সফটওয়্যার) বিভিন্ন ওয়েব সাইটে গিয়ে সবগুলো পৃষ্ঠা নিজের কাছে নিয়ে আসে। তারপর বিভিন্ন রকম অ্যালগরিদমের ভিত্তিতে সেই পৃষ্ঠাটিকে এনালাইসিস করে থাকে। পৃষ্ঠার টাইটেল হলো তেমন একটি প্যারামিটার। এটা অনেকটা আপনার বাড়ির নামের মতো – বাড়ির নাম যদি হয় “নিরিবিলি” – তাহলে রোবট ধরেই নেবে এই বাড়িটি হবে শান্ত ধরনের। আর আপনার বাড়ির নাম “নিরিবিলি” দিয়ে কাজে দেখালেন হট্টগোল – তাহলে আপনি মরেছেন।
তাই টাইটেলটি হতে হবে অর্থবহ। কিন্তু টাইটেলে অযাচিত কীওয়ার্ড দিয়ে ভরে রাখবেন না। তাহলে ওগুলোকে স্প্যাম হিসেবে গণ্য করা হবে। আবার প্রতিটি পেজের টাইটেল যেন আবার একই না হয়।
৪. যতটা সম্ভব আপনার যে কোনও পৃষ্ঠায় অন্য কিছু পুরনো পৃষ্ঠার লিংক দিন। যেমন ধরুন, আমি এই পৃষ্ঠাটি লিখছি। খেয়াল করুন, বিভিন্ন জায়গায় আমি লিংক দিয়ে দিচ্ছি। এই লিংকগুলো থেকে রোবটগুলো বুঝতে পারে, এই পৃষ্ঠাটি ঠিক কিসের উপর তৈরী করা। রোবটগুলোতে আর আমাদের ভাষা ততটা বুঝতে পারে না (কিছুটা পারে)। তাই এমন লিংক থেকে বুঝতে পারবে, কোথায় কোথায় এবং কোন কোন পৃষ্ঠার জন্য লিংক দিচ্ছেন। তার অর্থ হলো, এই পৃষ্ঠাতে নিশ্চই তেমন সব জরুরী বিষয় রয়েছে। নইলে আপনি লিংক দেবেন কেন, তাই না? এই যুক্তিতে রোবটগুলো বুঝতে পারবে – আপনার তৈরী পৃষ্ঠাটি কিসের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
৫. অন্যান্য ভালো ওয়েব সাইটের সাথে সখ্যতা করুন। অর্থ্যাৎ, ভালো কোনও ওয়েব সাইট যদি আপনার ওয়েব সাইটকে তার কোনও লেখায় কিংবা পৃষ্ঠায় লিংক দেয়, তাহলে রোবট বুঝতে পারে – আপনার ওয়েবপেজটি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরুন, সিএনএন কিংবা বিবিসি যদি আপনার কোনও পৃষ্ঠার লিংক তাদের কোনও পেজে ব্যবহার করে, তাহলে তার মূল্য অনেক বেশি হবে। তাই ভালো ভালো ওয়েব সাইটগুলোর সাথে কাজ করার চেষ্টা করুন।
৬. এবারে উল্টোটা দেখে নিন। উপরের যেখানে বললাম যে, অন্য কোনও সাইট যদি আপনার সাইটের রেফারেন্স দিয়ে থাকে, তাহলে আপনার সাইটটির মান ভালো। এবারে আপনি করলেন কি, চালাকি করে নিজেই কিছু সাইট বানিয়ে কিংবা আপনার বন্ধুদের সাইট থেকে নিজের সাইটে লিংক দিলেন। অনেক সময় অনেকেই টাকার বিনিময়ে লিংক এক্সচেঞ্জ করে থাকে। এই ধরনের ওয়েবপেজগুলো রেপুটেশন ভালো নয়। আপনার সাইট যদি সেই খারাপ বেপুটেশনের কোনও ওয়েব সাইটের সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে তার জন্য আপনার সাইটিও ক্ষতিগ্রস্থ্য হতে পারে। তাই, অসৎসঙ্গ পরিহার করুন।
৭. ছবি সাথে “ALT” ট্যাগটি ব্যবহার করুন। রোবটগুলো ছবি দেখে বুঝতে পারে না, এটা কিসের ছবি। কিন্তু আপনার ALT ট্যাগটি দিয়ে বলে দিতে পারেন, এই ছবিটি কিসের। তাতে অনেক উপকারে আসবে।
৮. মাঝে মাঝে কিছু কিছু শব্দ বোল্ড করতে পারেন। কিন্তু খুব বেশি নয়। কারন সেটা পাঠককে যেমন বিরক্ত করে, সেটা রোবটগুলোকেও বিরক্তি তৈরী করে।
৯. আপনার সাইটটি যদি অনেক বড় হয়, তাহলে একটি “সাইট ম্যাপ” তৈরী করতে পারেন।
মনে রাখবেন, একটি ওয়েব সাইট মানুষের জন্য যতটা সুবিধার হবে, সার্চ ইঞ্জিন তাকেই খুঁজে বের করতে চাইবে। এই সরল বিষয়টি মাথায় রেখে কাজে নেমে যান।
তবে আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করা শেখানো না। যারা ফ্রিল্যান্স কাজ করতে চান, তাদের একটি বড় চাহিদা হলো এই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করা। হাজার হাজার ওয়েব সাইট তাদের পৃষ্ঠাকে সার্চ ইঞ্জিনের সবচে প্রথমে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই আপনার কাজ পেতে কোনও সমস্যা হবে না। যারা নতুন নতুন এই লাইনে আসছেন, তাদেরকে একটি ধারনা দেয়ার জন্য এই লেখা। আপনাদের যে কাজটি বেশি করতে হবে তাহলো, ওয়েব পেজটি পড়ে সেখান থেকে যথার্থ কী-ওয়ার্ডগুলো বের করতে হবে। অর্থ্যাৎ আপনাকে বুঝতে পারতে হবে, ওই পেজটি কোন বিষয়ের উপর লেখা – ওটা কি একটি কসমেটিক্স পণ্যের উপর, নাকি ওটা কোনও টিকিৎসা সংক্রান্ত ওয়েব পেজ। তারপর কী-ওয়ার্ডগুলো সেই পেজে বসিয়ে দিতে হবে।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, সেগুলো কোথায় কিভাবে বসাবো! যারা আপনাকে কাজ দেবে, তারা আপনাকে একটি টুলস বা তাদের ওয়েব সাইটের এক্সেস দিয়ে দেবে। সেটা হবে পরের ধাপ। আজকের মতো শুধু এটুকু বুঝলে চলবে যে, কাজটি ততটা কঠিন নয়। এখানে যে বিষয়গুলোর অবতারণা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই ঠিক করতে হবে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে। বিষয়টা একবার ধরে ফেলতে পারলে – খুবই সহজ একটি কাজ। আমি চেষ্টা করবো, পরের কোন একটি লেখায় একটি উদাহরন দিতে। তাহলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হয়ে যাবে।
আপনি যদি মোটামুটি ইংরেজী জানেন, এবং ইন্টারনেট ও ওয়েবপেজ নিয়ে কিছুটা ধারনা থাকে, তাহলে এই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজশনে নজর দিতে পারেন।
যেকোন ডিজাইনের সাইট বানাতে বা সাইটে SEO করাতে যোগাযোগ করুন 01785829489