চমৎকার সব ফ্রি ব্লগিং প্লার্টফর্ম, এডসেন্স সাপোর্ট করছে বাংলা আর পাঠকদের কাছে বাংলা ব্লগগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রীতিমত আলোর গতিতে – বাংলায় ব্লগিং শুরু করার জন্য এর চেয়ে ভাল সময় আর হয় না। আমাদের মাতৃভাষায় ব্লগিং এর বিপ্লব এখন দ্বারপ্রান্তে আর উদ্যোগ নেয়ার সময় এটাই। তাই অনেকেই বাংলায় ব্লগ তৈরী করার জন্য কোমরে গামছা বেধে মাঠে নেমে পড়েছে।
কিন্তু মাঠে নামার পর নতুন যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে তা হল কি নিয়ে লিখব? এটা বেশ পুরোনো প্রশ্ন আর ব্লগারদের দুঃস্বপ্নের কারনও বটে। কোন টপিক বা নিশ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় আর কোনটাই বা আমার বেছে নেয়া উচিত এই প্রশ্ন প্রায় ব্লগারদের মুখেই শোনা যায়।
নিজের ব্লগ এর জন্য সঠিক নিশ খোজা মুখের কথা নয় – করতে হয় প্রচুর রিসার্চ আর জানতে হয় নিজের দক্ষতা। এটা এক দুই দিনে সম্ভবও নয়। আমার মতে টানা এক সপ্তাহ সময় নেয়া উচিত ব্লগিং এর জন্য সঠিক নিশটা খুঁজতে। নিঃসন্দেহে কাজটা একই সাথে কষ্টকর এবং বিরক্তিকর।
তো, আজ আমি কিছু কথা বলে এই বিরক্তিকর কাজটাকে সহজ করার চেষ্টা করব। আমার এই কর্মের ফল হতে পারে দুই রকমের – হয় পাঠক সমাজ একটু হলেও উপকৃত হবে আর না হয় তাদের কানের পোকা নড়ে উঠবে! ? ?
ব্লগিং নিয়ে আরো কিছু পোস্টমর্টেম:
- ব্লগ এবং ওয়েব সাইটে পোষ্ট এবং কমেন্টের মাধ্যমে ট্রাফিক আনা: কতটা কার্যকর, নির্ভরযোগ্য এবং স্থায়ী? | নিজ সাইটে ট্রাফিক আনার অনন্য কৌশল
- এডসেন্সের জন্য বাংলা ব্লগিং: এপ্রুভ পাওয়ার জন্য কিছু অসাধারণ কৌশল | আর নয় ভিনদেশী ভাষা, ব্লগিং হবে এবার মাতৃভাষায়
নিশ – এইডা আবার কি?
নিশ খোজার আগে নিশ সম্পর্কে জেনে নেয়া আবশ্যক। যে বিষয় নিয়ে আয় করার উদ্দেশ্যে ব্লগিং শুরু করা হয় সেটাই হল নিশ। যেমন ট্রিকবিডির নিশ হল টেকনোলজি।
এরপরও যদি আপনি নিশ কি তা বুঝতে না পেরে থাকেন তাহলে অনলাইন থেকে ব্লু হোয়েল গেমসটা ডাউনলোড করে ছাদ থেকে লাফ দিন। যে মানুষ এইটুকু আইকিউ নিয়ে ব্লগিং করতে আসে তার জীবন রাখার চেয়ে না রাখাই ভাল। * ? ? ?
(* মজা করে বললাম, কেউ কিছু মনে করবেন না আবার!)
নিশ খোজা
নিজের ব্লগের জন্য সঠিক নিশের সন্ধান দুইভাবে পাওয়া যায়।
১. নিজের আগ্রহের দিকে মন দিয়ে।
২. লাভজনক একটি বিষয়কে নিশ হিসেবে বেছে নিয়ে।
নিজ আগ্রহ যখন নিশ
বেশির ভাগ প্রফেশনাল ব্লগারই নিজ আগ্রহকে নিশ হিসেবে বেছে নিতে বলেন। নিজের আগ্রহকে নিশ হিসেবে নেয়ার সুবিধা অনেক। আপনার আগ্রহের বিষয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আপনি বেশি পারদর্শী। তাই এই বিষয়ে ব্লগ খুললে আপনি ব্লগিং যেমন এনজয় করবেন তেমন ভাল কন্টেন্ট তৈরী করতে পারবেন।
এবার চলুন দেখা যাক কিভাবে নিজ আগ্রহের বিষয়টিকে নিশে পরিণত করবেন।
ধাপ- ১
আপনার আগ্রহের বিষয়গুলো একটি পাতায় লিখে ফেলুন।
যেমন বই পড়া, গান শোনা, আড্ডা দেয়া, মুভি দেখা, রিভিউ লেখা, খেলাধুলো ইত্যাদি।
ধাপ- ২
যে সব বিষয় নিয়ে ব্লগিং আদ্যো সম্ভব নয় সেগুলো বাদ দিয়ে দিন।
যেমন উপরের টপিকগুলোকে আমি ছাটাই করলাম- বই, মুভি, রিভিউ, খেলাধুলো।
ধাপ- ৩
এবার বাকি বিষয়গুলো নিয়ে রিসার্চ শুরু করুন। অনলাইন ঘেটে বের করুন কোন বিষয়টা বেশি লাভজনক। এক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করবেন:
- বিষয়টা কতটা জনপ্রিয়?
- আমার লক্ষ্য কি?
- প্রতিযোগীতা কেমন?
- বিষয়টা কতটা স্থায়ী?
- আয় কেমন হবে?
- এই বিষয়ে ব্লগিং করলে সফল হতে পারব কি?
এখন রিসার্চের পর দেখা গেল আমার বাছাই করা টপিকগুলোর মধ্যে খেলাধুলো বেশি লাভজনক। সুতরাং খেলাধুলোকেই আমি নিশ হিসেবে নিব।
লাভজনক বিষয় খোজা
যদি উপরের পদ্ধতি আপনার জন্য কাজ না করে, অর্থাৎ নিজ আগ্রহকে যদি নিশ হিসেবে নিতে ব্যর্থ হন তাহলে এবার অন্য উপায়ে নিশ খুঁজতে হবে। ব্লগিং করার জন্য প্রচুর সাবজেক্ট আছে যেগুলোর মধ্যে থেকে আপনি একটি বেছে নিতে পারেন। বাংলায় যেসব বিষয়ে ব্লগিং করলে সফল হওয়ার সম্ভবনা বেশি সেগুলো নিচে দেয়া হল:
অনলাইনে আয়
প্রযুক্তির বিপ্লবের সাথে সাথে বাড়ছে ফ্রিল্যান্সিয়ে আগ্রহীর সংখ্যা। প্রতিদিন অসংখ্য বাঙালী আউটসোর্সিং এর টিউটোরিয়াল খুজে চলেছে। উল্লেখ্য তারা যেসব টিউটোরিয়াল পাচ্ছে সেগুলো মোটামুটি সবই ইংরেজিতে। তাই যদি বাংলায় ভাল ফ্রিল্যান্সিং টিউটোরিয়াল লিখতে পারেন তাহলে আর পেছনে তাকাতে হবে না।
ব্লগিং
টেকনোলজির আরো একটি সাব-নিশ। এসইও, এফিলেট, ওয়ার্ডপ্রেস, ব্লগার ইত্যাদি নিয়ে আর্টিকেল লিখে খুব চমৎকার একটি ব্লগ তৈরী করে ফেলতে পারেন। আর যেহেতু ব্লগিয়ের দিকে নজর এখন সবারই তাই ব্যর্থ হওয়ার ভয় মোটেই নেই।
স্বাস্থ্য এবং লাইফ স্টাইল
যেকোনো একটাকে বা দুটোকেই বেছে নিতে পারেন। এই বিষয়গুলো খুব কমন তাই সবদেশেই জনপ্রিয়। বাংলায় অনেক ব্লগই এই নিশ ফলো করছে। আয় করার জন্য দুটো টপিকই বেশ কার্যকর। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আপনাকে বেশি কিছু জানতেও হবে না। হালকা পাতলা রিসার্চ করেই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ভাল কন্টেন্ট তৈরী করা সম্ভব।
খাদ্য
বাঙালী জাতি নাকি ভোজন রসিক। অথচ এই বিষয় নিয়ে ব্লগ নেই বললেই চলে। সবাই কেন এই টপিকটাকে এত ইগনোর করছে কে জানে? যাই হোক, এটা একটা বড় সুযোগ ফাকা মাঠে গোল করার। যদি আপনি ফুড লাভার হয়ে থাকেন তাহলে এই নিশটা বাছতে পারেন।
রিভিউ
সেলফোন, ল্যাপটপ, টিভি – যেকোনো বিষয় নিয়ে রিভিউ লেখাটা বেশ লাভজন। চাইলে গেমস, এপ, সফটওয়্যার নিয়েও লিখতে পারেন। এফিলেটে আয় করার জন্য এর থেকে ভাল নিশ আর হয় না।
পড়ালেখা
বাংলায় এই বিষয়েও ব্লগের ঘাটতি আছে। বিশেষ করে প্রশ্ন ফাস হওয়ার কারনে এখন তো এক রাত পড়ালেখা করেও অনেকে এ প্লাস পাচ্ছে। তবে বলাই বাহুল্য দিনে দিনে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে আর প্রশ্ন ফাস রোধে অনেক উদ্যোগই নেয়া হয়েছে। তাই স্টুডেন্টরাও লেখাপড়ার দিকে ঝুঁকছে। অনলাইনে তাই পড়ালেখার গাইডলাইন বা সাপোর্ট থাকাটা জরুরি। পড়ালেখা নিয়ে ব্লগ খোলাটা তাই মোটেই খারাপ বুদ্ধি না।
আরো কিছু নিশ
- রাজনীতি
- রাজনীতি বিষয়ক কার্টুন
- রাজনীতির খবর
- পলিটিক্যাল এনালাইসিস
- কৃষি বিষয়ক ব্লগ
- ব্যবসা বিষয়ক ব্লগ
- বাণিজ্যিক আইডিয়া
- স্টক এবং ট্রেড
- ইন্টারভিউ
- অনলাইন বিজনেস
- হাউ টু ব্লগ (How To Blog)
- রিলেশনশিপ
- কর্মসংস্থান
- ক্যারিয়ার গাইড
- কৌতুক, হাসির গল্প, ছবি
- খেলাধুলো বিষয়ক ব্লগ
খাটতে হবে প্রচুর
পরিশ্রম ছাড়া সফল হওয়া সম্ভব নয়। আর যেখানে শ্রম দেয়া হয় সেখান থেকে লাভটুকু অবশ্যই উঠে আসবে। ব্লগ তৈরী করার পর করতে হবে এসইও, সোস্যাল মার্কেটিং; লিখতে হবে চমৎকার সব আর্টিকেল আর সময় দিতে হবে প্রচুর। নিশ ব্লগগুলোকে তাই সময় খেকো বলা হয়।
ব্লগার শিখুন, ফ্রিতেই ব্লগিং শুরু করুন:
- পর্ব-১ ব্লগিং স্কুলঃ ব্লগার পরিচিতি ও ব্লগ খোলা!
- পর্ব-২ ব্লগিং স্কুলঃ ব্লগার ড্যাশবোর্ড পরিচিতি।
লিখেছেন – Sajjat Hossain Shanto
শেষ কথা
বিষয় যাই হোক না কেন, কাজ করার জন্য আগ্রহ থাকা চাই। আগ্রহ ছাড়া সফল হওয়া সম্ভব না। আর যে নিশেই আপনার ব্লগ থাকুক না কেন একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন- ব্লগটা যেন শুধু আয়ের উৎস না হয়ে বরং বাংলা ভাষার কাছে একটি সম্পদ হয়ে উঠে।
বেশ লম্বা একটি পোস্ট লিখে ফেললাম। অনেকেরই পড়ার ধৈর্য হবে না, শুধু হেডলাইনগুলোতে চোখ বুলিয়েই চলে যাবে। যাই হোক, এই বিরাট লেখাটা কারও একটু উপকারে লাগলেও আমি স্বার্থক। সকলকে ধন্যবাদ।