ইউটিউব থেকে আয় নিয়ে আমাদের অনেকের বিভ্রান্তি আছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেনা কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করতে হয়। আজ আমি আপনাদের এই বিভ্রান্তি গুলো দুর করার চেষ্টা করবো। আজ আমি আলোচনা করবো কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করা যায়। তো বন্ধুরা আর দেরি না করে চলুন শুরু করি
ইউটিউব থেকে আয়
১. গুগল এডসেন্স
অনেকে মনে করে ইউটিউব ভিডিওতে শুধু ভিউ আসলেই আয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ইউটিউব থেকে বেশিরভাগ আয় হয় গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে। গুগল আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখাবে এবং সেই বিজ্ঞাপনের উপর যত ক্লিক পড়বে তত আয় হবে। তবে গুগল এডসেন্স পেতে হলে আপনাকে ইউটিউব থেকে মনিটাইজেশন পেতে হবে। মনিটাইজেশন পাওয়ার জন্য আবার ইউটিউবের কিছু শর্ত আছে। চলুন ইউটিউবের মনিটাইজেশন শর্ত গুলো দেখে নিই।
ইউটিউবের মনিটাইজেশন শর্ত:-
- প্রথমে আপনার চ্যানেলে কমপক্ষে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
- এরপর ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচটাইম আপনাকে পুরন করা লাগবে।
- আপনার ভিডিও গুলো ইউটিউবের মনিটাইজেশন পলিসি অনুযায়ী হতে হবে।
এই শর্ত গুলো আপনি পুরন করতে পারলে মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরপর ইউটিউব আপনার চ্যানেল রিভিউ করবে এবং মনিটাইজেশন পাওয়ার মতো হলে দিয়ে দেবে। মনিটাইজেশন পাওয়ার পর ইউটিউব আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখাবে এবং সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক ও ইম্প্রেশনের উপর ভিত্তি করে আপনার এডসেন্স একাউন্টে অর্থ জমা হবে। তবে মনিটাইজেশন পাওয়ার পরেই আপনি টাকা পেয়ে যাবেন তা কিন্তু নয়। প্রথমে আপনার এডসেন্স একাউন্টে দশ ডলার পুর্ন হওয়ার উপর আপনার পোস্ট অফিসের ঠিকানাই ইউটিউব একটি এড্রেস ভেরিফিকেশন পিন পাঠাবে। পোস্ট অফিসের এড্রেস আপনাকে দেওয়া লাগবে। সেই কোড আপনার এডসেন্স একাউন্টে বসিয়ে এড্রেস ভেরিফাই করতে হবে। এরপর আপনার একাউন্টে একশ ডলার পুর্ন হলে তারপর আপনি ব্যাঙ্ক একাউন্ট অ্যাড করতে পারবেন এবং সেই একাউন্টে ইউটিউব টাকা পাঠিয়ে দেবে। তবে এমন ব্যাঙ্ক একাউন্ট হতে হবে যার মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রান্সফার করা যায়। পরবর্তীতে প্রত্যেক মাসে ইউটিউব অটোমেটিক আপনার একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেবে। এভাবেই ইউটিউব থেকে এডসেন্সের মাধ্যমে আয় হয়। আশাকরি আপনাদের বিভ্রান্তি কিছুটা দুর করতে পেরেছি।
২. স্পন্সর
গুগল এডসেন্সের পরে ইউটিউব থেকে আয়ের আরেকটি উপায় হলো স্পন্সর নিয়ে আয়। কিছু ছোট বড় কোম্পানি যাদের পন্য এখনো প্রচার হয়নি তারা তাদের পন্য প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন অথবা স্পন্সর দিয়ে থাকে। তবে স্পন্সর দেওয়ার মাধ্যমে পন্যের প্রচার অনেক বেশি হয়। তবে এর জন্য আপনার চ্যানেলের কন্টেন্ট অনেক জনপ্রিয় হতে হবে। কারন জনপ্রিয় না হলে কেউ আপনাকে স্পন্সর দেবে না। আবার যে কোম্পানি স্পন্সর দেবে সেই কোম্পানি যেনো আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে তার একটি সিস্টেম থাকতে হবে। স্পন্সর পেলে একসাথে অনেক ভালো পরিমাণে আয় হয়।
৩. আফিলিয়েট মার্কেটিং
ইউটিউব থেকে বর্তমানে আফিলিয়েট মার্কেটিং করে অনেকেই আয় করছে। যাদের চ্যানেলে প্রচুর ভিউ এবং সাবস্ক্রাইবার রয়েছে কিন্তু মনিটাইজেশন পায়নি তারা সাধারণত আফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করে। বর্তমানে এমাজন আফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্কের মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয়। এখন প্রশ্ন হলো আফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে কিভাবে আয় হয়? প্রথমে আপনাকে এমাজন আফিলিয়েট মার্কেটিং এ সাইন আপ করতে হবে। এরপর প্রতিটা পন্যের একটি আফিলিয়েট লিংক আপনাকে দেওয়া হবে। সেই লিংক থেকে যদি কেও পন্য কিনে তাহলে আপনি সেই পন্যের উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন। যদি চ্যানেল অনেক জনপ্রিয় হয় তাহলে আফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে অনেক টাকা আয় করা যায়।
৪. নিজস্ব বিজনেস প্রমোশন
আপনার যদি ছোট খাটো ব্যবসা থাকে এবং সাথে একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল থাকে তাহলে সেই চ্যানেলের মাধ্যমে নিজের ব্যবসা প্রচার করতে পারেন। ব্যবসা অনলাইন ভিত্তিক হলে সবথেকে ভালো হয়। নিজস্ব ব্যবসা আপনি আপনার চ্যানেলের প্রচার করতে পারেন এবং সেই ব্যবসা থেকে আয় করতে পারবেন। অনেকে আছে যারা ছোট খাটো অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা শুরু করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করে। যদি ভালো প্রচার হয় তাহলে আপনার ব্যবসা আস্তে আস্তে বড় হবে এবং পরবর্তীতে ব্যবসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। তবে প্রচারের পাশাপাশি ভালো সার্ভিস না দিলে আপনার ব্যবসা বেশিদিন টিকতে পারবেন। অতএব ভালো সার্ভিস নিজের ছোট্ট অনলাইন ভিত্তিক বিজনেস ইউটিউবের মাধ্যমে প্রচার করুন এবং মুনাফা আয় করুন।
৫. সুপার চ্যাট
বর্তমানে এটি বাংলাদেশে ব্যবহার যোগ্য না। তবে আশা করা যায় একদিন বাংলাদেশ থেকেও সুপার চ্যাটের মাধ্যমে আয় করা যাবে। যারা লাইভস্ট্রিম করে তাদের জন্য ইউটিউব সুপার চ্যাটের মাধ্যমে আয় করার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রশ্ন হতে পারে সুপার চ্যাট কি? যখন লাইভস্ট্রিম করা হয় তখন বহু লোক লাইভ চ্যাট করে। একসাথে অনেক মানুষ চ্যাট করার কারনে যে লাইভস্ট্রিম করে সে সবার চ্যাটের রিপ্লাই দিতে পারে না। তবে সুপার চ্যাটের মাধ্যমে একজন ভিজিটর কিছু টাকা দিয়ে নিজের কমেন্ট লিখতে পারে যা সরাসরি লাইভস্ট্রিমারের কাছে পৌছায়। ভিজিটর যত টাকা দিয়ে কমেন্ট করবে তার মতামত ততক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে এবং সেই কমেন্ট ইউটিউব অন্য কালারে ও হাইলাইট করে রাখবে। সাধারণত যারা গেম লাইভস্ট্রিম করে তারা এভাবে আয় করে। সুপার চ্যাট থেকে আশা অর্থের বেশিরভাগ চ্যানেল কর্তৃপক্ষ পায় এবং কিছু অংশ ইউটিউব রেখে দেই। তবে দুঃখের বিষয় হলো এটি বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি। তবে বাংলাদেশে পেইপাল যেহেতু চালু হবে তাই সুপার চ্যাট চালু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
৬. ইউটিউব শর্টস্
ইউটিউবের সাম্প্রতিক সময়ের বড় আপডেটের মধ্যে ইউটিউব শর্টস্ অন্যতম। আমরা অনেকেই টিকটক দেখতে পছন্দ করি। আমরা যেমন টিকটকে কম দৈর্ঘ্যের ভিডিও দেখি ঠিক তেমনি ইউটিউব শর্টস্ এ কম দৈর্ঘ্যের ভিডিও দেখা যায়। ইউটিউব শর্টস্ এর মাধ্যমেও আয় করা যায়। তবে এই ফিচারটি বাংলাদেশে ব্যবহার যোগ্য নয়। আপনার চ্যানেলে শুন্য সাবস্ক্রাইবার থাকলেও আপনি ইউটিউব শর্টস্ এর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। এমনকি ইউটিউব চ্যানেলে মনিটাইজেশন না থাকলেও। এখন প্রশ্ন হলো ইউটিউব শর্টস্ এর মাধ্যমে কিভাবে আয় হয়? আপনি যদি ইউটিউবে শর্টস্ ভিডিও আপলোড দেন তাহলে মাস শেষে আপনার ভিডিওর ভিউ অনুযায়ী আপনাকে রিওয়ার্ড দেওয়া হবে। তবে ভিডিওতে যত ভিউ পাবেন আপনার রিওয়ার্ডের অর্থের পরিমাণ তত বাড়বে। রিওয়ার্ড হিসেবে সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। বর্তমানে অনেক বড় বড় চ্যানেল পর্যন্ত ইউটিউবে শর্টস্ আপলোড করছে। এর জন্য শুধু কপিরাইট মুক্ত নিজের কন্টেন্ট হলেই চলবে। আবার আপনাকে কষ্ট করে বড় বড় ভিডিও তৈরি করা লাগছে না। টিকটকের মতো ইউটিউব শর্টস্ এ শর্ট ভিডিও আপলোড করে এভাবে আয় করতে পারবেন। এখন রিওয়ার্ড হিসেবে ইউটিউব আপনাকে যে টাকা দেবে সেটা হাতে পাবেন কিভাবে? যখন আপনাকে রিওয়ার্ড দেওয়া হবে সেটা ইমেইলের মাধ্যমে ইউটিউব আপনাকে জানিয়ে দেবে। এরপর সেটি আপনাকে ক্লেইম করতে হবে। ক্লেইম করার পর আপনার এডসেন্স একাউন্টে সেটি জমা হবে। যদি এডসেন্স একাউন্টে না থাকে তাহলে ইউটিউব এডসেন্স একাউ খুলতে বলবে। পরে আপনি এডসেন্স থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
৭. শর্টলিংক
নতুন চ্যানেলের ক্ষেত্রে এটি ইউটিউব থেকে আয়ের একটি পদ্ধতি হতে পারে। বর্তমানে অনেক লেজিট শর্টলিংক সাইট আছে যার লিংকে ক্লিক পড়লে তার জন্য টাকা দেই। এখন প্রশ্ন হতে পারে শর্টলিংক সাইট কি? শর্টলিংক সাইট হলো এমন এক প্রকারের সাইট যেখানে বড় বড় লিংক ছোট করা হয়। আমরা যখন কোনো ওয়েবসাইটের লিংক কপি করি তখন সেটা অনেক বড় দেখাই এবং দেখতে খারাপ লাগে। তাই এসব সাইটের মাধ্যমে লিংক ছোট করা হয়। কিছু সাইট আছে যেগুলো সেই সাইট থেকে ছোট করা লিংকে ক্লিক করলে আপনাকে টাকা দেবে। এরকম সাইট থেকে সাধারণত খুব বেশি আয় হয় না। তবে পার্শ্ব আয় হিসেবে শর্টলিংকের মাধ্যমে আয় করতে পারেন।
৮. রেফার
বর্তমানে অনেক অ্যাপ বা ওয়েবসাইট আছে যেখানে রেফার করার মাধ্যমে আয় করা যায়। রেফার করার মাধ্যমে সাধারণত অনেক বেশি আয় হয়। রেফার এবং আফিলিয়েট মার্কেটিং প্রায় একই কিন্তু আফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কেও একজন যখন পন্য কিনবে তার উপর কমিশন দেওয়া হয়। তবে রেফার করার ক্ষেত্রে শুধু লিংকে ক্লিক করে সাইন আপ করলেই আপনি কমিশন পাবেন। বর্তমানে এটি অনেক জনপ্রিয় পদ্ধতি। বিশেষ করে যাদের অনলাইন আয় বিষয়ক চ্যানেল আছে তারা এভাবে আয় করে। আপনিও যদি অনলাইন আয় বিষয়ক টিপস শেয়ার করে থাকেন তাহলে এভাবে আয় করতে পারেন।
এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা। কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। উত্তর দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
ধন্যবাদ সবাইকে