প্রথমেই একটি কথা স্পষ্ট করে রাখি, এই লেখাটা সিম্ফনির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ অনুযায়ী সম্পূর্ণ কাগজে-কলমের স্পেকের ওপর ভিত্তি করে, ছবিগুলোও অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নেয়া। আমি স্মার্টফোনটি নিজে ব্যবহার করিনি। রিয়েল লাইফ এক্সপ্রেরিয়েন্সকে এই লেখা উপস্থাপন করে না। লেখাটি পড়ার সময় এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে অনুরোধ করা হলো।

সাম্প্রতিক সময়ে সিম্ফনির পক্ষ থেকে তাদের স্মার্টফোনগুলোতে বেশ এগ্রেসিভ প্রাইসিং দেখতে পাচ্ছি আমরা। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নতুন একটি স্মার্টফোন তারা বাজারে নিয়ে এসেছে, যার মডেল হলো Symphony Innova 30। স্মার্টফোনটি দুটি ভ্যারিয়েন্টে আনা হয়েছে, 6/128 ও 8/128, ভ্যাট ছাড়া যাদের নির্ধারিত মূল্য যথাক্রমে ১১,৭০০ টাকা ও ১২,৭০০ টাকা।

৯ মাস আগে Symphony Z60 Plus যখন প্রায় একই ধরণের স্পেক দিয়ে একটু বেশি দামে এসেছিলো, আমি বলা যায় স্মার্টফোনটির উচ্ছসিত প্রশংসা করেছিলাম। কিন্তু Syphony Innova 30 নিয়ে এই লেখাতে সে উচ্ছসিত প্রশংসার পুনরাবৃত্তি হবে না- এজন্য যে স্মার্টফোনে স্বতন্ত্রতার অভাবটা দিনদিন বাড়ছে, আর এজন্য যে এখানে থাকছে 108 MP UHD ক্যামেরা। তার অর্থ এই নয় যে এটি একটি খারাপ স্মার্টফোন, বরং এই দামে অন্তত কাগজে-কলমে বাজারের বেস্ট ভ্যালু ও পারফর্মেন্স প্যাকড প্যাকেজ এটা অফার করছে।

সিম্ফনি Z ও Innova সিরিজ থেকে একই বাজেট রেঞ্জে ডিভাইস আনছে। সে হিসেবে সিরিজ দুটোর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকা উচিৎ ছিলো বলে মনে করি। কিন্তু কাগজে-কলমের স্পেকে অন্তত Innova 30 যতটা না Innova 10-এর উত্তরসূরী মনে হচ্ছে, তার থেকে বেশি মনে হচ্ছে Z60 Plus-এর মত Z70 Plus হিসেবে আনা বেশি যথাযথ হত।

বর্তমানে বাজেট রেঞ্জের স্মার্টফোনগুলো এমন একটা পর্যায়ে আছে, যেখানে বৈচিত্রের অভাবটা অনেক বেশি। Innova 30-ও সেখানে কোন বৈচিত্র যোগ করছে না। এটা আরো একটি ডিভাইস যেখানে থাকছে আইফোন-ish ডিজাইন, 6.56″ ডিসপ্লে সাইজ, 90 Hz রিফ্রেশ রেট, HD+ রেজ্যুলেশন, 5000 mAh ব্যাটারী, 18W ফাস্ট চার্জিং ও Unisoc T616 চিপসেট।

ডিজাইন থেকে শুরু করি। সিম্ফনির আনা সবচেয়ে বেশি আইফোন-ish ডিজাইনের স্মার্টফোন এটি। তিনটি ক্যামেরার পাশাপাশি ফ্ল্যাশ লাইটের পজিশনও আইফোনের সাম্প্রতিক প্রো মডেলগুলোর অনুরূপ থাকছে। আইফোনের অনুরূপ করার চেষ্টা করার ব্যাপারটা বাজেটে নতুন না। একটু আগেই যেটা বললাম, বাজেট স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে ‘নিজস্বতা’ ব্যাপারটার অভাব বর্তমানে। Mirror White কালারটি সুন্দর মনে হচ্ছে, Reflective Green ও Space Green নাম দেয়া হয়েছে অন্য দুটো কালার ভ্যারিয়েন্টের।

নোটিফিকেশন লাইট ফিচারটি মোটামুটি হারিয়ে গিয়েছিলো, বর্তমানে তা আবার আমরা নতুন রূপে ফিরে আসতে দেখছি ওয়ালটন ও সিম্ফনির সাম্প্রতিক স্মার্টফোনগুলোতে। সিম্ফনির ক্ষেত্রে তারা এই ফিচারটির নাম দিয়েছে Smart Blink Light। চার্জিং, ফোন-কল ও নোটিফিকেশনের বার্তা দিতে এটা গ্লো করবে। এটা একদিকে স্টাইলিশ, অন্যদিকে কিছু পরিস্থিতিতে কাজেরও।

বিল্ড ম্যাটেরিয়াল হিসেবে থাকছে PMMA প্লাস্টিক। রিইউজেবল হিসেবে সিম্ফনি একে সাধারণ প্লাস্টিকের তুলনায় পরিবেশবান্ধব বলছে। তবে এখানে লক্ষ্যণীয় যে, তারা ‘রিইউজেবল’ টার্মটা ব্যবহার করছে, ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ না। অর্থাৎ ‘তুলনামূলক’ কোন এডভান্টেজ যদিও থাকে, তারপরও দিনশেষে এটা প্লাস্টিকেরই একটি প্রকারভেদ।

সামনের দিকে এতে থাকছে 6.56″ HD+ (1612*720) রেজ্যুলেশনের একটি IPS Incell ডিসপ্লে, যা 90 Hz রিফ্রেশ রেট সমর্থন করে। 90.7% স্ক্রিন টু বডি রেশিওর সাথে ক্যামেরার জন্য থাকছে পাঞ্চহোল কাটআউট। 450 nits ব্রাইট সর্বোচ্চ ব্রাইটনেস, যেটা দিনের আলোতে আউটডোর সিচুয়েশনে কিছুটা মুশকিলে ফেলবে। তবে বাজেট বিবেচনায় ডিসপ্লেকে সন্তোষজনক বলা যায়।

এক্সটেরিয়রে আসলে স্মার্টফোনটির ওজন 193 গ্রাম এবং থিকনেস 8.45 সেন্টিমিটার। থাকছে সাইড-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং অনেক স্মার্টফোনে যেটা দেখা যায় না, নয়েজ ক্যানসেলেশন মাইক্রোফোন থাকছে এখানে।

পারফর্মেন্সের দিক থেকে Symphony Innova 30 ভালো কিছু অফার করছে। যদিও আমি প্রিফার করতাম Innova 10-এর ধারাবাহিকতায় ইনোভা সিরিজে মিডিয়াটেক চিপসেটের ব্যবহার হলে, এটা সত্য যে Unisoc T616-এর কাছাকাছি পাওয়ারফুল অন্য কোন প্রসেসর এই বাজেটে দেয়া মুশকিল। এমনকি Helio G88 দিলেও সেখানে স্টোরেজ টাইপ সর্বোচ্চ eMMC 5.1 সমর্থন ছিলো, যেখানে Unisoc T616 এর সাথে সিম্ফনি uMCP5 প্রযুক্তির মেমোরি ও স্টোরেজ ব্যবহার করেছে, যা মূলত UFS মেমোরি ও LPDDR4x র‌্যামের সমন্বিত একটি প্রযুক্তি। সাথে 6 GB ও 8 GB র‌্যাম অপশন মিলিয়ে পারফর্মেন্সের দিক থেকে এই বাজেটে Innova 30 সর্বোচ্চটাই দিচ্ছে।

আগ্রহীদের জন্য Geekbench Browser থেকে Geekbench 6-এর কিছু টেস্ট স্কোরের স্ক্রিনশট যুক্ত করে দিচ্ছি। বেসিকালি আর সব T616 ডিভাইসের মতই।

র‌্যামের কথা আসলে সিম্ফনিকে বিশেষভাবে প্রশংসা করতেই হবে এজন্য যে বিভিন্ন কোম্পানি যেখানে ভার্চুয়াল র‌্যাম নিয়ে মিসলিডিং মার্কেটিংয়ের পন্থা বেছে নিয়েছে, সিম্ফনি সেখানে এখন পর্যন্ত এদিকে যায়নি, শুধুমাত্র হার্ডওয়্যার র‌্যাম তারা উল্লেখ করছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও তারা এটা ধরে রাখবে এবং অন্য কোম্পানিগুলোরও উচিৎ অন্তত মিসলিড হওয়ার আশঙ্কা থাকে এমনভাবে ভার্চুয়াল র‌্যামকে মূল র‌্যামের সাথে এক করে প্রচার করা থেকে বের হয়ে আসা।

এবং আমার ভালো লাগতো যদি ক্যামেরার বেলাতেও এমন প্রশংসা করতে পারতাম, কিন্তু দুঃখজনকভাবে পারছি না। শুরুর দিকে বলেছিলাম উচ্ছসিত প্রশংসার পুনরাবৃত্তি না করার একটা কারণ হলো 108 MP UHD ক্যামেরা। সমস্যা কি এখানে? সমস্যা হলো সিম্ফনি UHD কথাটা সফটওয়্যারভিত্তিক হাই রেজ্যুলেশন ইমেজ প্রস্তুত করার সুপার রেজ্যুলেশন প্রযুক্তির দিকে ইঙ্গিত করতে ব্যবহার করে।

108 MP UHD ক্যামেরা নিয়ে সিম্ফনির বিবরণের ফ্রেজিং যদি লক্ষ্য করেন, “The advanced image-processing engine captures 108MP of rich data, creating high-quality images with striking details, realistic colors, and significantly less noise. Photographers have the creative freedom they need to zoom, crop, enlarge, and ultimately bring their vision to life.”

দেখুন এখানে 108 MP লেন্সের কথা বলা হয়নি, ইমেজ প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে 108 MP ডাটা ক্যাপচার করার কথা বলা হয়েছে। মূলত লোয়ার রেজ্যুলেশন ক্যামেরা থেকে একাধিক ইমেজের সমন্বয় করে এই প্রযুক্তি কাজ করে। আর বাই দা ওয়ে, আমি শুধু এই বিবরণের ভিত্তিতে কোন কন্সপিরেসি থিওরি দাঁড় করাচ্ছি না, সিম্ফনি UHD কথাটা আগে থেকেই এই অর্থে ব্যবহার করে আসছে। Innova 10-এর বিবরণে এই বিষয়টি আরেকটু স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিলো:

যখন আমি Innova 30 এর প্রকৃত ক্যামেরা নিয়ে আলাদাভাবে জানি না, ধারণা করতে পারি এটা 50 MP-এর আশেপাশে হবে। এখন 50 MP তো খারাপ শোনায় না, তাহলে 108 MP UHD বলার কী প্রয়োজন? ব্যাপারটা সিম্পল, আরো লোয়ার রেজ্যুলেশন ক্যামেরাকে যদি 52 MP UHD বলা হয়, তাহলে 50 MP-এর মহত্ব বোঝাতেও তেমন কোন পথ নিতে হবে। এই জায়গাতে আমি মার্কেটিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন আশা করবো, ভার্চুয়াল র‌্যামকে মূল র‌্যামের মধ্যে মেলানো আর এটার মধ্যে তফাৎ দেখি না আমি।

যাইহোক, ক্যামেরার ক্ষেত্রে মেগাপিক্সেলের গুরুত্ব এখন যেকোন সময়ের থেকে কম। মেগাপিক্সেল মূলত ছবির রেজ্যুলেশন, তথা ডিটেইলের পরিমাণ নির্ধারণ করে। এটুকু ঠিক যে এই ফোনে আপনি 108 MP রেজ্যুলেশনে ছবি তুলতে পারবেন। কিন্তু 4K রেজ্যুলেশন যেখানে 8.3 MP-এর সমতূল্য, সেখানে 108 MP এর বাস্তবিক কোন প্রয়োজন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অন্যদিকে এর প্রসেসিং পাওয়ারের লিমিটেশনের জন্য ভিডিও দিনশেষে সামনের 8 MP ক্যামেরায় যেমন সর্বোচ্চ 1080p সমর্থিত, পেছনের 108 MP ক্যামেরাতেও তাই।

সারমর্ম কী? সারমর্ম হলো মেগাপিক্সেল ক্যামেরার কোয়ালিটি নির্ণয়ের মূল পরিমাপক নয়, এবং অনেক সময় মেগাপিক্সেল ‘মেগাপিক্সেল’-ও নয়। রিয়েল লাইফ এক্সপ্রেরিয়েন্স কেমন হয়, ক্যামেরাতে দেখার মূল বিষয় এটাই।

ব্যাটারী তো এখন 5000 mAh ছাড়া অন্যকিছু প্রায় দেখাই যায় না। এখানেও তাই। 12 nm চিপসেট, HD+ ডিসপ্লে মিলে ভালো ব্যাকআপ আশা করতেই পারেন। 18 W ফাস্ট চার্জিংও আছে, বাজেট বিবেচনায় এর থেকে ফাস্ট চাওয়াও ঠিক হবে না। পৌনে দুই ঘন্টার মধ্যেই ফুল চার্জ হয়ে যাওয়ার কথা।

সফটওয়্যারের প্রসঙ্গে আসলে থাকছে Android 13। সিম্ফনির ইন্টারফেস স্টকের কাছাকাছি হয়ে থাকে, তবে কিছু দরকারী বাড়তি ফিচার Innova 30-এর সাথে থাকছে। যার মধ্যে আছে অ্যাপ লক, প্যারালাল অ্যাপ, ডাইনামিক আইল্যান্ড, থ্রি ফিঙ্গার স্ক্রিনশট, সাইড অ্যাপ্লিকেশন বার এরকম ফিচারগুলো। আর হ্যা, সিম্ফনি কালেভদ্রে সিকিউটি আপডেট দেয়া ছাড়া নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট দেয় না।

সিকিউরিটি সেকশনে সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও ফেস আনলক থাকছে। সেন্সর সেকশনে গ্রাভিটি, প্রক্সিমিটি ও লাইট সেন্সরের পাশাপাশি কম্পাস সেন্সরের দেখা মিলবে, যেটা এই বাজেটে সবসময় দেখা যায় না। তবে জাইরোস্কোপ সেন্সর থাকছে না এখানে।

এইতো ছিলো Symphony Innova 30 নিয়ে। মনে হচ্ছে প্রাইস টু পারফর্মেন্সের দিক থেকে আবারো সেরা কিছুই নিয়ে এসেছে সিম্ফনি। যদি স্পেক অনুযায়ী রিয়েল লাইফ আউটপুট দিতে পারে, তাহলে এটা একটা অসাধারণ ডিল হবে।

অফিসিয়াল ওয়েবপেজ

একটি GR+ BD পরিবেশনা

2 thoughts on "Symphony Innova 30: 6/128 ও 8/128 ভ্যারিয়েন্টে এগ্রেসিভ প্রাইসিংয়ের সাথে সিম্ফনির নতুন স্মার্টফোন"

  1. Mehedi Contributor says:
    আপনার কথায় সম্মতি জানাতে হচ্ছে কারন স্পেসিফিকেশন আর দামের দিক থেকে বর্তমানে symphony বেশ বাজেট ফ্রেন্ডলি ফোন রিলিজ করতেছে💜
    অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে লিখে পোস্ট করার জন্য 💜
    1. তাহমিদ হাসান Author Post Creator says:
      কৃতজ্ঞতা সুন্দর মন্তব্যের জন্য 🖤

Leave a Reply