তাবিজ এই শব্দটার সাথে আমরা সবাই পারিচিত;এই তাবিজ নিয়ে আমরা নানা-নানীর মুখেও বহু গ্রাম্য গল্পও শুনেছি যার মাঝে লুকিয়ে আছে কতোই না রহস্য আর কালো জাদুর কালিমা। আজকের এই বিজ্ঞানের যুগে বাস করেও আমরা অনেকে তাবিজে বিশ্বাস করি….আসুন এই তাবিজ নিয়েই আজ কিছু সত্য তথ্য আর সায়েন্স ফিকশানের গল্প করি!
ইসলাম কি বলে?
ইসলামে শিরক সম্পূর্ণ হারাম এবং চরম গুনাহার কাজ ; আবেগ নয় বরং যুক্তি তর্ক আর দলিল বিচারে তাবিজ/মাদুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিরক।অনেক তাবিজ কুফরি কালামের অন্তর্গত হওয়ায় সেটাও নিঃসন্দেহে হারাম।
অর্থাৎ সোজাসাপ্টা কুরআনের আয়াত লেখা তাবিজ/ শয়তানের নামে লেখা তাবিজ উভয় প্রকার তাবিজ যাতে বিশ্বাস করা হয় যে এটা পরিধান করলে আপনার ভালো/মন্দ হবে এমনটা নিশ্চিতরূপে শিরক এবং হারাম।
অনেকে বলে থাকেন যে অমুক সাহাবী তার সন্তানের গলায় কুরআনের আয়াত বেধে দিয়েছেন তারা এটা বলেন না যে [জানেন না অথবা জেনেও মানেন না] ঐ সন্তানটির ভালো মতো কথা বলতে পারতো না অর্থাৎ একটু বাক প্রতিবন্ধকতা থাকায় সাহাবী এমনটা করেছিলেন যদিওবা বাকি সন্তানদের তিনি কুরআনের আয়াত শিক্ষা দিয়েছিলেন। যদি কেউ আপনার নিকট এটা নিয়ে তর্ক করে তবে স্পষ্ট আয়াত/হাদীস বা দলিল চাইবেন; এমনকি শুধু সহীহ হাদীস নয় বরং তার প্রেক্ষাপটও জানতে চাইবেন তাহলে দেখবেন তাবিজ হুজুর পালানোর পথ খুজবে….
সোজাসাপ্টা তাবিজ ইসলামে হারাম[ আমি ফতোয়া দিচ্ছি না তবে কুরআন- হাদীসের মতাবাদে কথাটা জোর দিয়ে বললাম]। কুরআন শরীফ লকেট বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে লাভ নেই বরং কুরআনের শিক্ষা অন্তরে ধারন করতে পারলেই লাভ আসবে।
সায়েন্স কি বলে?
বিজ্ঞান তাবিজের উপকারিতা আজও খুজে পায়নি আর না তো কুফরি কালাম/কালো জাদুর প্রমান পেয়েছে তাই সায়েন্সের দৃষ্টিতে এটা কুসংস্কার [ আমি সায়েন্সের কথা বলছি, এখানে আবার কুরআন টেনে কথা বলবেন না কেননা ইসলামে কালো জাদুর সত্যতা আছে সেটা মুসলিম মাত্রই মেনে নিবেন]। তবে সায়েন্সের ফিকশানগুলা প্যারালাল ওয়ার্ল্ড,এন্টি ম্যাটার-এন্টি পার্টিকেল ইত্যাদি বিষয়ে যেহেতু থিসিসে বিশ্বাস করে তাই বিজ্ঞানের পেছনের দরজা গিয়ে মিশেছে প্যারানরমাল ওয়ার্ল্ডে!
সাইকোলজি কি বলে??
মনে করুন আমি ব্যবসায়ে খুব বেশী লস খেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছি এবং সুইসাইড করতে যাচ্ছি; এমন সময়ে একজন হুজুর/তান্ত্রিক যদি একটা তাবিজ দিয়ে বলে যে তুমি আগামী একমাস সময়ে অনেক টাকা ব্যবসাতে লাভ করবে এবং তাতে যদি আমার মনোবল ফিরে পাই তবে দোষ কি তাতে? একটা ছোট তাবিজ তা হউক অকাজের তবুও তাতে যদি আমি মেন্টালি ডেভলপ হতে পারি এবং সেই মেন্টালি ইমপ্রুভমেন্ট-ইনআরশিয়াতে আমি উন্নতি লাভ করি তবে নিশ্চয়ই তাবিজ মন্দ নয়!
এখানে বিশ্বাস এবং মোটিভেশনই আসল কথা ; তবে একজন মুসলিম হলে ইউনুস (আঃ) এর চরম বিপদের দিনেও ধৈর্য্য আর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইসলাম প্রচারে পাথর নিক্ষিপ্ত হওয়ার পরও মনোবল কি শ্রেষ্ঠ মোটিভেশনের দৃষ্টান্ত হতে পারে না?
কিন্তু একজন হিন্দু/ক্রিশ্চিয়ান কেন এটা মানবে তাইনা?
আমি কোন হিন্দুকে কুরআন মানতে বলছি না আর না তো কালিমা পড়ে মুসলিম হতে বলছি তবে “ইসলাম ধর্মের দৃশ্যত পজেটিভ দিকগুলা মেনে নিলে তারাই লাভবান হবে” একইদিকে স্বামী বিবেকানন্দের জীবের প্রতি মাহাত্ম্যকে আমি একজন মুসলিম হলেও ধন্যবাদ জানাতে কুন্ঠাবোধ করবো না।
ক্রিস্টাল রেডিও এমুলেট কি?
ক্রিস্টাল রেডিও হলো এমন এক প্রকার ডিভাইস যা বাহ্যিক পাওয়ার সোর্স ছাড়াই বাতাসের আয়ন হতে রেডিও এক্টিভিটি রিসিভ করতে পারে।
বিষয়টা সহজ করে বলি, বাতাসের ভেতর আছে বিভিন্ন রেডিও ওয়েভ-আয়ন(আধানযুক্ত পরমানু) এখন ক্রিস্টাল রেডিও ডিভাইস ঐ আয়নগুলো স্বকীয়ভাবে গ্রহণ করে সার্কিটে একটি অতি ক্ষুদ্র তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। এই ডিভাইসটিকে তাবিজ করে বানানোই হলো ক্রিস্টাল রেডিও এমুমেট।
প্রচলিত যে আপনার এই তাবিজটি সাথে রাখলে চারিপাশের পজেটিভ এনার্জি গ্রহন করে আপনার ভেতর পজেটিভ মাইন্ড, আপনার শরীর- মনকে রিলাক্স করে আপনার শারীরিক-মানসিকীক উন্নতি করতে সক্ষম; এছাড়াও ক্ষতিকর রেডিয়েশন,বিটা-অসিলেশন ইত্যাদি হতে আপনাকে সুরক্ষিত করে আপনাকে লাইফে সফলতা এনে দিবে।
এমনকি যারা এগুলা বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে সেখানে এমন বহু ব্যক্তি পাওয়া যাবে যারা এটা হতে উপকৃত হয়েছেন এমন নজির রয়েছে [ তবে টিভিসি বিজ্ঞাপন যে আদতে বলদ বানানোর উপায় এটা আমরা সবাই জানি]
আসুন সায়েন্স দিয়ে বিচার করি
আমাদের চারিপাশে বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন রেডিও ওয়্যেভ-আয়ন আছে (এগুলা ক্যাটায়ন ও অন্যায়ন হিসেবে থাকে)। আবার আমাদের শরীর হাইড্রোকার্বন তথা সমযোজী যৌগ হলেও যে পুরোটাই নিউট্রাল এমন নয়। আমাদের শরীরের ভেতরের সিংহভাগ উপাদান হলো পানি (যদিও পানি সমযোজী যৌগ তবুও তাতে অল্প একটু পোলারিটি আছে) আর লবন দ্রবিভূত থাকায় সেটি ১০০% আয়নিক ধর্ম ধারন করে [বিষয়টাকে উপলব্ধি করতে কারেন্ট শক খাওয়ার কথা বিবেচনা করুন]। আবার আমাদের শরীরে মাটি হতে ইলেকট্রোন বাহিত হয় [যদিও ভূমির বিভব শূন্য তথাপি মাটি হলো ইলেকট্রোনের সমুদ্র]। সুতরাং এটা নিশ্চিত যে আমাদের শরীরে না চাইতেও আমরা নেগেটিভ এনার্জি তথা নেগেটিভ চার্জ বহন করি। আবার চারিপাশের রেডিয়েশন তো আছেই। এখন এই ডিভাইস’টি চারিপাশের পজেটিভ চার্জকে আকর্ষন করে আপনার শরীরের নেগেটিভ চার্জের সাথে মিলিয়ে -1+1=0 করে দিতে পারে।
হয়তো বিষয়টা একটু আধ্যাত্মিক মনো হতে পারে তাহলে ভাবুন একটা লোহার খাচায় আপনি আটকা আছেন এখন বাইরের থেকে টেসলা কয়েল হলে আপনার দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে কি হবে??? বিদ্যুৎ আপনার শরীরকে না ছুয়ে ঐ খাচার লোহার বডি দিয়েই মাটিতে পৌঁছাবে এবং আপনি সুরক্ষিত থাকবেন…ইটস নক রকেট সায়েন্স।
সত্য শুনতে তিতা:
তাইবলে এটাও নয় যে এটাকে তাবিজ করে গলাতে পড়লে আপনার ভেতর বাইরের সকল পজেটিভ চার্জ ঢুকে যাবে এবং আপনি লাইফে সফল হবেন। আমাদের সফলতা নির্ভর করে নিউরনের ওপর; আপনি মেডিটেশন হতে উন্নতি লাভ করতে পারেন এবং সেল্ফ মোটিভেশনের মাধ্যমে নিজের ভেতরের পজেটিভিটি’কে প্রকাশ করতে পারেন।
এমন তাবিজ শিরক কিনা সেটা নিচের ফটোটি দেখলেই বুঝবেন যেখানে ক্রিশ্চিয়ান প্রতিকৃতি ধারন করা হয়েছে [বিষয়টা মুসলিমদের জন্য শিরকের হলেও এটা ক্রিশ্চিয়ানদের নিশ্চয়ই ধর্মীয় পজেটিভ সাইন]
এটার সায়েন্টিফিক দিক বিচারে আমি কখনোই এটাকে তাবিজ করে গলায় পড়তে উৎসাহিত করবো না; তবে এটাকে একটি গ্যাজেট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে যেমনটা আমরা হাতে ঘড়ি ব্যবহার করি। এটাকে আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিনতে গেলে ১০০-২০০ ডলার যা বাংলাদেশী টাকাতে ৮০০০-১৭০০০ টাকা লাগতে পারে; একজন ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক্স প্রেমী হিসেবে আমি আপনাকে জানাচ্ছি যে এমন সার্কিট বানাতে আপনাকে বড়জোর ৪০-৫০ টাকা খরচ করতে হবে। অনেক সময় ব্লাক ডায়োড ব্যবহার করা হয় কারনটা জানেন??? কারন ঐ ক্রিস্টাল এর কোড আমাদের থেকে লুকিয়ে রাখা হয় যাতে আমরা নিজেরা না বানাতে পারি।
আমি আপনাকে ইলিমেন্ট বলে দিলাম (১) যেকোনো ক্রিস্টাল ডায়োড (২) কালার কোড বিবেচনা করে উপযুক্ত মানের রেজিস্টার (৩) সিরামিক ক্যাপাসিটার [ডিভাইস বিবেচনাতে আপনি মাইলার/পোলারিক ক্যাপাসিটর ব্যবহার করতে পারেন]।
শেষকথা :
সফলতা তাবিজে নয়; তন্ত্র মন্ত্রে নয় নয়তো কাগজ-কালিতে….সফলতা নির্ভর করে ব্রেইনে। আপনাকে সফল হতে হলে ব্রেইনকে ব্যবহার করতে হবে; আপনার নিজেকে নিজের জন্য আদর্শ মডেল হিসেবে তৈরী করুন।
[আপডেট: নিজে গুগলের মতোন একটি ওয়েবসাইট তৈরীর টিউটোরিয়াল ইনশাল্লাহ প্রতিশ্রুতি মতো দ্রুতই পাবেন ]
ফেসবুকে আমি →নিশান আহম্মেদ নিয়ন
আল্লাহ হাফেজ