আমরা সবাই কমবেশী মিথ্যা বলি; যদি বলা হয় যে “আমি জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলিনি” তাহলে এটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় মিথ্যা হবে।
যাই হউক আজ আমরা সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করার গ্যাজেট “লাই ডিটেক্টর” সম্পর্কে জানবো এবং আপনি চাইলে অল্প কিছু ইলেক্ট্রনিক্স কম্পোনেন্ট দিয়ে নিজেই ঘরে বসে এমন একটি “মিনি লাই ডিটেক্টর” তৈরী করতে পারেন।
লাই ডিরেক্টর আসলে কি?
লাই ডিটেক্টর হলো এমন একটা সিস্টেম [শুধু সার্কিট বলছি না] যেখানে কোন মানুষের প্রশ্নের বিপরীতে দেওয়া উত্তরগুলো রিলেটিভলি সত্য কিনা সেটা নির্ণয় করা হয়, বিষয়টা অনেকটাই শরীরের ইন্টারনাল সিগন্যালকে ফিজিকালি সিগন্যালে পরিণত করার মতোন ব্যাপার স্যাপার। আমরা যখন কোন প্রশ্নের উত্তর দিই তাখন সবার আগে আমাদের ব্রেইন প্রশ্নটাকে এনালাইসিস করে এবং আপনার মনের মতোন উত্তর তৈরী করে।
ধরুন আপনাকে আমি দুইটা প্রশ্ন করবো (১) আপনার নাম কি (২) আপনি কি পর্ণোগ্রাফি দেখেন??
এখন আমাদের অবচেতন মন প্রথম প্রশ্নের উত্তরে সত্যটা অনায়েসেই দিয়ে দেয় তবে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে লাজ্জাবনত মিথ্যা উত্তর তৈরী করে।
এখন সত্য আর মিথ্যা যদিও শুনতে সমান তবে ব্রেইনের সিগন্যাল বিবেচনাতে আপনার শরীর সত্যের জন্য যেমনটা রিএ্যাক্ট করে মিথ্যার জন্য ভিন্ন রিএ্যাক্ট করে, আর এই রিএ্যাকশনটাকে ফিজিক্যালি প্রকাশ করাই হলো লাই-ডিটেকশন; আর পুরো সিস্টেমে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির সমন্বিত রূপই হলো লাই ডিটেক্টর।
লাই ডিটেক্টর আসলে কতোটুকু কাজ করে?
বস্তুত চূড়ান্ত সত্যতা হলো যে বাস্তবিক লাই ডিটেক্টর শতভাগ নির্ভূল রেজাল্ট দেখাতে পারেনা কেননা অদ্যাবধি আপনার-আমার ব্রেইনকে ট্রাক করতে পারে এমন কম্পিউটার/সিস্টেম তৈরী সম্ভব হয়নি; আমাদের ব্রেইন’ই হলো স্বয়ং মিনি সুপার কম্পিউটার।
যেহেতু লাই-ডিটেক্টরের ওপর একজন মানুষের ব্রেইনের বিচার ছেড়ে দেওয়া যায় না তাই এটাকে প্রুফ হিসেবে ধরে নেওয়া কঠিন তবে এটাকে কমপ্লিমেন্টারী এভিডিয়েন্স [সহায়ক উপাত্ত] হিসেবে গ্রহন করা যেতেই পারে।
লাই ডিটেক্টর কিভাবে তৈরী করা হয়?
লাই ডিটেক্টর কোন একটি নির্দিষ্ট ডিভাইস নয় বরং একাধিক যন্ত্রকে একসাথে জুড়ে তৈরী করা একটি সিস্টেম; যেখানে ব্লাড সার্কুলেশন- থার্মাল সেন্সর-হার্ট বিট রেটিংস-টেম্পারেচার থার্মোমিটার-বডি মুভমেন্ট সেন্সর ইত্যাদি নানা অত্যাধুনিক সিস্টেম একসাথে সংযুক্ত থাকে।
ঘরে বসেই তৈরী করুন নিজের মিনি লাই ডিটেক্টর:
বিষয়টাকে মজা মনে করলে মজা আর সিরিয়াস মনে করলে সিরিয়াস হতে পারেন কেননা সায়েন্সে নিউরনের মতোন যেমন সূক্ষ সিরিয়াস কোষ আছে তেমনি ফিকশানের মতোই আকাশ পথে চাঁদে পাড়ি দেবার কল্প-গল্পও আছে!
লাই ডিটেক্টর তৈরীতে আমাদের যেসব কম্পোনেন্ট লাগবে
(১) TR1=TR2=TR3= BC547 [আপনি একইরূপ অন্য n-p-n ট্রানজিস্টার ব্যবহার করতে পারেন]
(২) R1=R2= 1M ohm [ M ohm হলো মেগা ওহম; রেজিস্টার হবে কোয়াটার ওয়াটের]
(৩) R3= 10k ohm
(৪) R4= 470 ohm
(৫) R5= 47k ohm
(৬) C1= 100nF [ সিরামিক ক্যাপাসিটার]
(৭) VR1= 47k [এটা ভ্যারিয়েবল রেজিস্টার যা দেখতে অনেকটা ফ্যানের রেগুলেটরের ভেতরের অংশের মতো; এটার তিনটি লেগ বা পিন পয়েন্ট]
(৮) L1= Green LED, L2= Red LED
(৯) Battery = 9v DC
(১০) Finger Pad= যেকোন পাতলা কপার প্লেট বা ঐ জাতীয় কোন সুপরিবাহক প্লেট
এবার সার্কিট ডায়াগ্রাম অনুযায়ী সংযোগ করুন:
কিভাবে কাজ করে?
আমরা যখন মিথ্যা কথা বলি তখন আমরা প্রায়ই নার্ভাস হয়ে যাই, সেই সময় আমাদের শরীরের ইন্টার্নাল ইফেক্টের জন্য শরীর ঘেমে যায় ফলে চামড়ার রোধও কমে যাবে তথা পরিবাহকত্ব বেড়ে যায়। উপরের সার্কিটের Finger Pad একই হাতের যেকোনো দুটি আঙ্গুল [যেমন তর্জনী এবং মধ্যমা] দিয়ে VR1 ঘুরিয়ে এমনভাবে সেট করুন যেন তাতে L1 জ্বলে; এবার ভিক্টিমকে প্রশ্ন করুন তাতে মিথ্যা কথাতে যদি তিনি ঘাবড়ে যান তবে L2 এর লালবাতি জ্বলে উঠবে। এখানে সবুজ বাতি সত্য এবং লাল বাতি মিথ্যার নির্ণয়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
হি হি হি হি!!!!
উপরের বিষয়টাতে আপনি হয়তো হাসছেন, তাহলে তো মানুষ মিথ্যা বলায় ছেড়ে দিতো। আসলে এই যে আপনি এতো কনফিডেন্ট হয়ে বলছেন অথচ এমনও হতে পারে যে আপনিই লাই-ডিটেক্টরের ফাঁদে নিজের মিথ্যা কথাটা স্বীকার করতে বাধ্য হলেন। একটা সমীক্ষাতে দেখা গিয়েছিলো যারা নিজেরা কখনোও হিপ্নোটাইজ হন না বলে গর্ব করেন তারাই অতি অল্প সময়ে অবচেতন মনের কাছে হেরে গিয়ে হিপ্নোটাইজড হয়ে পড়েন….সো ডোন্ট কিপ আলট্রা কনফিডেন্ট!
ছোটকালে আমরা যেমন বাবার ধমকে চোখের জল আর নাকের জল এক করে ফেলতাম তেমনি আপনার প্রশ্ন করার স্টাইল’ই ভিক্টিমকে সত্য বলাতে বাধ্য করে; এখানে লাই ডিটেক্টর এমনি একটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে মাত্র। উপরের সার্কিট’টি কোন পূর্ণাঙ্গ লাই ডিটেক্টর নয় বরং একটি সামগ্রিক লাই ডিটেকশনের একটি ক্ষুদ্রতম ইলেকট্রনিক্স ইলিমেন্ট মাত্র।
লেখার শেষে সহজ কিছু সূত্র বলে দিই “যদি কেউ আপনার প্রশ্নের উত্তরে মাত্রাতিরিক্ত এবং বারংবার কপালের মধ্যাঞ্চল কুচকায় এবং গলাতে ঢোক গিলে কিংবা তার শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যায়, প্রাসঙ্গিক বিষয় রেখে উল্টোপাল্টা কথা বলে, কিছুক্ষণ পর পর ভারী নিঃশ্বাস ছাড়ে, চোখের পাতার পলক অনিয়ত হয়, স্বাভাবিকের চেয়ে কথা বলতে বেশী সময় লাগে তবে তিনি হয়তো মিথ্যা বলছেন”। তবে এটাও জেনে রাখুন যে সন্দেহ করা পাপ তাই সত্য-মিথ্যাকে যাচাই করার আগেই কাউকে দোষারোপ করবেন না।
ফেসবুকে আমি→ নিশান আহম্মেদ নিয়ন
আল্লাহ হাফেজ
not bad
তাই আপনার পোস্ট পাবলিশ হয় নি।
http://BDHridoy24.wapkiz.com
পারচেস কেনার মতে এতো ডলার নাই আমার কাছে??