শুরু করছি আসছে ভালবাসা দিবস নিয়ে ।
এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ ইতিহাসটির বয়স সতের শত সাঁইত্রিশ বছর হলেও ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে এর চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিক কালেই। দুই শত সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারির কথা।
ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস
২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন।
পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়।
ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।
কিন্তু এ ভালবাসা দিবস নামে এই দিনটি সারাবিশ্বে প্রচলিত হলেও আমাদের দেশে প্রচারিত হয়েছে কয়েক বছর আগে।
জেনে নেই বাংলাদেশের ভালবাসা দিবসের প্রথম সময়ের কাহিনী।
বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয়। অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। আর যায় কোথায় ! লুফে নেয় বাংলার তরুণ-তরুণীরা। এরপর থেকে ঈমানের ঘরে ভালবাসার পরিবর্তে ভুলের বাসা বেঁধে দেয়ার কাজটা যথারীতি চলছে। আর এর ঠিক পিছনেই মানব জাতির আজন্ম শত্রু শয়তান এইডস নামক মরণ-পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। মানুষ যখন বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালবাসার অভাব ছিলনা। আজ পৃথিবীতে ভালবাসার বড় অভাব। তাই দিবস পালন করে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়! আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালবাসা নামক ভালো বস্তু থাকতে পারে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হৃদয় থেকে ভালবাসা উঠিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকার। দিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপা-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধুই কি তাই ! অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খোশ গল্প। এ হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কর্মসূচি! বিশ্ব ভালবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে অন্তত নামকরণটি যথার্থ হতো।
আমরা যেহেতু মুসলমান তাই জেনে নেই ইসলামের দৃষ্টিতে ভালবাসা দিবস সম্পর্কে কি বলে?ইসলামের দৃষ্টিতে ভালবাসা দিবস
এক:
বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালন একটি রোমান জাহেলি উৎসব। রোমানরা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার পরেও এ দিবস পালনের প্রথা অব্যাহত রাখে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৭০ খ্রিস্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন নামক একজন পাদ্রির মৃত্যুদণ্ডের সাথে এ উৎসবটি সম্পৃক্ত। বিধর্মীরা এখনো এ দিবসটি পালন করে, ব্যভিচার ও অনাচারের মধ্যে তারা এ দিবসটি কাটিয়ে থাকে।
দুই:
কোন মুসলমানের জন্য কাফেরদের কোন উৎসব পালন করা জায়েয নয়। কেননা উৎসব (ঈদ) ধর্মীয় বিষয়। এ ক্ষেত্রে শরয়ি নির্দেশনার এক চুল বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: উৎসব (ঈদ) ধর্মীয় অনুশাসন, ইসলামী আদর্শ ও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “তোমাদের প্রত্যেককে আমি আলাদা শরিয়ত ও মিনহাজ (আদর্শ) দিয়েছি”। তিনি আরও বলেন: “প্রত্যেক উম্মতের জন্য রয়েছে আলাদা শরিয়ত দিয়েছি; যা তারা পালন করে থাকে” যেমন- কিবলা, নামায, রোজা। অতএব, তাদের উৎসব পালন ও তাদের অন্যসব আদর্শ গ্রহণ করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ তাদের সকল উৎসবকে গ্রহণ করা কুফরকে গ্রহণ করার নামান্তর। তাদের কিছু কিছু জিনিস গ্রহণ করা কিছু কিছু কুফরকে গ্রহণ করার নামান্তর। বরং উৎসবগুলো প্রত্যেক ধর্মের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং ধর্মীয় আলামতগুলোর মধ্যে অন্যতম। অতএব, এটি গ্রহণ করা মানে কুফরের সবিশেষ অনুশাসন ও সবচেয়ে প্রকাশ্য আলামতের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা। কোন সন্দেহ নেই যে, এ ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণ করা মানে কুফরের অনুকরণ করা।
এর সর্বনিম্ন অবস্থা হচ্ছে- গুনাহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন: “নিশ্চয় প্রত্যেক কওমের উৎসব রয়েছে। এটা হচ্ছে আমাদের ঈদ বা উৎসব”। এটি যুনার (জিম্মিদের বিশেষ পোশাক) বা এ বিজাতিদের বিশেষ কোন আলামত গ্রহণ করার চেয়ে অধিক নিকৃষ্ট। কেননা এ ধরনের আলামত কোন ধর্মীয় বিষয় নয়; বরং এ পোশাকের উদ্দেশ্য হচ্ছে- মুমিন ও কাফেরের আলাদা পরিচয় ফুটিয়ে তোলা। পক্ষান্তরে তাদের উৎসব ও উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো একান্ত ধর্মীয়; যে ধর্মকে ও ধর্মাবলম্বীকে লানত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা আল্লাহর আযাব ও গজব নাযিলের কারণ হতে পারে।[ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম ১/২০৭]
অতএব, আমাদের সবাইকে উচ্চস্বরে বলতে হবে,
তিনি আরও বলেন: “কোন মুসলমানের জন্য তাদের উৎসবের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কিছুর ক্ষেত্রে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। যেমন, খাবার দাবার, পোশাকাদি, গোসল, আগুন জ্বালানো অথবা এ উৎসবের কারণে কোন অভ্যাস বা ইবাদত বর্জন করা ইত্যাদি। এবং কোন ভোজানুষ্ঠান করা, উপহার দেওয়া, অথবা এ উৎসব বাস্তবায়নে সহায়ক এমন কিছু বেচাবিক্রি করা জায়েয নয়। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবে শিশুদেরকে খেলতে যেতে দেওয়া এবং সাজসজ্জা প্রকাশ করা জায়েয নয়।
মোদ্দাকথা, বিধর্মীদের উৎসবের নিদর্শন এমন কিছুতে অংশ নেয়া মুসলমানদের জন্য জায়েয নয়। বরং তাদের উৎসবের দিন মুসলমানদের নিকট অন্য সাধারণ দিনের মতই। মুসলমানেরা এ দিনটিকে কোনভাবে বিশেষত্ব দিবে না।[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৯/১৯৩)]
হাফেয যাহাবী বলেন: খ্রিস্টানদের উৎসব বা ইহুদিদের উৎসব যেটা তাদের সাথে খাস এমন কোন উৎসবে কোন মুসলমান অংশ গ্রহণ করবে না। যেমনিভাবে কোন মুসলমান তাদের ধর্মীয় অনুশাসনগুলো ও কিবলাকে গ্রহণ করে না।[তাশাব্বুহুল খাসিস বি আহলিল খামিস, মাজাল্লাতুল হিকমা (৪/১৯৩)]
ভালবাসা দিবস পালন নিম্নোক্ত কারণে জায়েয নয়এক. এটি একটি বিদআতি উৎসব; শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।
দুই. এটি মানুষকে অবৈধ প্রেম ও ভালবাসার দিকে আহ্বান করে।
তিন. এ ধরনের উৎসব মানুষের মনকে সলফে সালেহিনদের আদর্শের পরিপন্থী অনর্থক কাজে ব্যতিব্যস্ত রাখে।
সুতরাং এ দিনের কোন একটি নিদর্শন ফুটিয়ে তোলা জায়েয হবে না। সে নিদর্শন খাবার-পানীয়, পোশাকাদি, উপহার-উপঢৌকন ইত্যাদি যে কোন কিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট হোক না কেন।
আমি যতদূর সম্ভব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে তথ্য ও ইতিহাস দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। ইসলামের দৃষ্টিতে, ইতিহাসের দৃষ্টিতে ও মানুষের দৃষ্টিতে ভালবাসা দিবস আসলে কি তা বুঝানোর চেষ্টা করেছি। আপনি যেহেতু ট্রিকবিডির পাঠক ও ডিজিটাল যুগের একজন নাগরিক সেহেতু আপনি বোঝেন যে আসলে কোনটা করা উচিত আর কোনটা না। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে আমরা যেহেতু মুসলমান তাই আমাদের খৃষ্টীয় উৎসবে না থাকায় ভালো।