আজকে আমি আমার নিজের কিছু গল্প বলতে এসেছি; এই ট্রিকবিডি আমার নিজের পারসোনাল কনসেপ্ট এক্সপ্লেইন করার প্লাটফর্ম নয় আবার আমি কোন সেলিব্রেটিও নই সুতরাং আমার লেখাটি হয়তো উচিত হচ্ছে না…..তবুও লিখছি যেন লেখাটি পড়ার শেষে আপনার লাইফটা বদলে যায়!!!!
ইউটিউব- গুগলে এমন অনেক কনটেন্ট পাবেন যেখানে লেখা থালে “অমুক ভিডিও বা লেখাটি আপনার লাইফ পাল্টে দিবে” ভিউয়ার-ভিজিটর বাড়ানোর এই সকল ক্লিক আইডিয়ার আড়ালে আসলেই কি আপনার লাইফ পাল্টে যায়???
উত্তরটা হলো “না” কারন আপনার ব্রেইনের পোলারিক ক্যাপাসিটর একটুখানি চার্জ নিয়েই কিছুক্ষণ পর আবার ডিসচার্জ করে দেয় ফলে আপনি যেই লাউ সেই কদু হয়েই থাকেন…লাইফে সফল হওয়া আর সম্ভব হয়ে উঠে না।
লাইফে সফল হওয়ার জন্য মোটেই টাকা পয়সার দরকার নেই বরং দরকার আপনার ব্রাইট ব্রেইনের। এখন অনেক বস্তুবাদী মানুষ প্রতিবাদী হয়ে বলবেন “ধূর মিয়া…টাকা না থাকলে লেকচার আর আতলামী দিয়ে লাইফ বদলায় না” আমি স্পেসিফিকভাবে তাদেরকেই বলছি “টাকা ইনাকাম করতে ব্রেইন লাগে” আপনার ভেতর যদি সেই ব্রেইনের কারিশমা না থাকে তাহলে কোটি টাকাতেও আপনি ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন না, ইটস গ্যারান্টেড!!!
আমি গত রাতে আমার তিন মাসের জমানো মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে সর্বমোট “আটত্রিশ হাজার একশত চল্লিশ টাকা” পেয়েছি; এই তিনটা মাসে আমি সেই টাকা জমিয়েছি যেটা আমি বাড়তি খরচ করি….একটু অবিশ্বাস্য শোনাচ্ছে তাইনা??
নিশ্চয়ই আপনার মনে হচ্ছে “ব্যাটা হুদাই চাপা দিচ্ছে” নয়তো “আপনার টাকার কথা শুনে আমার কি লাভ, আমি কি আর আপনাকে টাকা দিবো?!!”
হ্যা, সত্যিই আমি আপনাকে টাকা দিবো তবে সেটার আগে আরও কিছু দিতে চাই ; যদি আপনি রাজী থাকেন তাহলে লেটস ফরোয়ার্ড…..
(১)বাজে খরচ কমান:
আপনি হয়তো সারাদিনে দুইটা চা কিংবা কফি অথবা ইয়েটিয়ে টেনে ২০-৩০ টাকাতে দিন চলে যায়; অথচ এই ২০/৩০ টাকাতেই আপনার লাইফ পরিবর্তন সম্ভব, যদি আপনার ব্রেইনের মাঝে নিজেকে সংযত (কৃপণ বলিনি) করার প্রয়াস লাভ করেন।
প্রতিদিন ১০ টাকা করে জমালেও মাসে ৩০০ টাকাতে আপনি ইন্টারনেটে ঘরে বসে অনেক কিছুই করতে পারেন; ইন্টারনেট হলো নিজের আইডিয়াকে সবার সামনে তুলে ধরার একটা ফ্রি ফ্লাটফর্ম।
(২)জমানো টাকা গুনবেন না:
আমরা অনেকেই একটু একটু করে টাকা জমাই আর যখন তা ৫০০ এর ঘর পার হয় তখন আড্ডা নয়তো ভিন্ন বিশেষ কোন পারপাসে ভেঙ্গে খরচ করে ফেলি; তাই জমানো টাকা কখনোই গুনবেন না।
আপনার কাজটা হলো টাকা জমানো তাতে নিজেই যদি বদনজর দেন তাহলে না তো বরকত আর না তো সেই টাকা জমিয়ে ব্রিলিয়্যান্ট কিছু করতে পারবেন।
(৩)টার্গেট নিয়ে এগিয়ে যান:
আপনি যদি মনে করেন “লাইফটা একদিন অটোমেটিক পাল্টে যাবে আর আপনি বড়লোক হয়ে যাবেন” তাহলে আপনার কপালে নিশ্চিত দুঃখ আছে; আপনাকে এখন হতেই আপনার লাইফে ফোকাস করতে হবে।
আপনাকে নিজেকে “ডায়মন্ড” এর মতোই শক্ত আর কঠিন করে গড়ে তুলতে হবে; নয়তো শুধু চকচক করলেই তো আর হীরা হয়ে যায়না।
উপরের আমার মাটির ব্যাংক ভাঙ্গার কথা কেন বলেছিলাম জানেন? কারন এই তিনটা পয়েন্টকে কাজে লাগিয়েই আমি ঐ ৩৮,১৪০ টাকা তিনমাসে জমিয়েছি। এখানে টাকার পরিমান মুখ্য নয় বরং এই তিনটা উপদেশই আসল কথা, তাই উপদেশ তিনটি যে আমাকে দিয়েছিলো তাকেই আমি টাকাটা গিফট করি।
সফল মানুষ হওয়ার মূলমন্ত্র:
আপনি যখন আপনার লাইফে নতুন কিছু করতে যাবেন তখন সামনে পিছনে বহু বাধা আসবে, সেগুলি পার করে সফলতার রাস্তা আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে। হয়তো আপনার সামনে গাইড বা লীড দেবার মতোন কেউ থাকবে না- আপনার পিছে সবাই আপনাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করবে….সেসব মাথাতে রাখবেন না, ডান কানে শুনে বাম কানে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিবেন।
আপনি এখন আপনার বাবার কাছে গিয়ে বলুন “আব্বা আমি মার্ক জুকারবার্গের মতোন একটা ফেসবুক বানাবো, ডোমেইন- হোস্টিং কেনার টাকা দেন” নিশ্চিত আপনার আব্বা আপনাকে টাকা দেওয়া তো দূরে থাক উল্টে পড়াশোনার উপদেশপূর্বক থাপ্পর নচেৎ নূন্যতম ঝাড়ি দিবেন তাইতো?
কারন আপনার বাবার আপনার যোগ্যতার ওপর ভরসা নেই, অথচ আপনি চাইলেই কিন্তু পিএইচপি দিয়ে অথবা আরও সহজে ওয়ার্ডপ্রেসে বডিপ্রেস হতে এমনি সোস্যাল নেটওয়ার্ক তৈরী করতে পারেন। আগে যোগ্যতা অর্জন করুন, সুযোগ প্রকৃতিগতভাবেই আসবে।
হয়তো আপনি নতুন কিছু করলে আপনার বন্ধু,পাড়া-প্রতিবেশী সবাই মিলে হাসি-ঠাট্টা-নিন্দা করবে; কেন জানেন?
কারন আপনি যেটা করছেন সেটা করার যোগ্যতা তাদের নেই, তাই এমন হাসি ঠাট্ট করেই তারা নিজেদের মনে অজান্তেই প্রবোধ মানায়।
আপনাকে সারা বিশ্ব সম্পর্কে জানতে হবে; যদি মনে করেন আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কি বলেছে, রাশিয়া তাদের টেকনোলোজির কি আপডেট জানিয়েছে, সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা এসব জেনে আপনি কি করবেন?
তাহলে সোজাসাপ্টা “ইউ আর এ কমন ম্যান এন্ড ইউ ডোন্ট ডিসার্ভ সুপার সাকসেস ইন ইউর লাইফ; প্লিজ গেট আউট”।
মনে রাখবেন সফলতার জন্য “তথ্য বা জ্ঞান হলো ব্রেইনের এ্যাসেট; যেখানেই জ্ঞান পাবেন সেখান হতেই টুকে নিবেন”।
নিজেকে নিয়ে কখনোই হীনমন্যতায় ভুগবেন না “আমি তো গরীব/আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা/আমি তো দেখতে কালো/আমি তো জিপিএ ফাইভ পাইনি/আমার তো কোডিং ক্যামনে করে জানি না/আমি ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট পারি না” এইসব কথাগুলো মাথা হতে ডিলিট করে ফেলুন; এইসব নেগেটিভ-নেগেটিভ কথা আপনার ক্ষতি ছাড়া আর কোন সুফল বয়ে আনবে না।
বাস্তবতা যদি হয় আপনি “জিরো” তবুও মন খারাপ করার কিছু নেই কেননা Zero(0) isn’t Negative at all!!!
“আপনি পারবেন না” এই কথাটি না বলে আপনি “কিভাবে পারবেন” এই প্রশ্নটা করুন।
লাইফে প্রেম করেনি এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না; উইলিংলি বলছি আমি করেছি তবে দয়া করে কয়টা করেছি এটা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না!!!
কিন্তু রিলেশন মানেই জীবনটা রাঙ্গিন পাংখা হয়ে গেল এমন নয়, আবার ব্রেকআপ হইলোই তো দেবদাস হয়ে যাবেন এমনটাও না!
প্রেম-ভালোবাসা-রিলেশন এগুলা প্রায় সবার জীবনেই আসে, আবার অধিকাংশ চলেও যায়; কিন্তু রিলেশনশীপ যদি আপনার ক্যারিয়ার গড়ার পথে ১ সেকেন্ডের জন্যও বাধা হয়ে দাড়ায় তবে সোজা কথা “বাদ দিয়ে দিন”। যদি একান্তই বিরহ মর্মাহত হন তবে সেসময় সিগারেটের ধোয়ার চেয়ে ডায়েরীতে একটা কবিতা বা গল্প লিখে ফেলুন…. সময়কে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ইফেক্টিভ ওয়্যেতে ইউটিলাইজ করুন।
আমাদের সবার জীবনেই ছোট বড় একটা কালো ইতিহাস আছে; তা যাই হউক সেটার জন্য মন খারাপ করবেন না। জীবনের খারাপ স্মৃতিগুলা মনে আনবেন না, অতীত কখনোই সংশোধন যোগ্য নয় তাই আপনার মন খারাপ করা বোকামী….প্রয়োজনে জোর করে হাসতে শিখুন!
আপনার চেয়ে জুতা পালিশ করা ছেলেটি আরও কষ্টে আছে; আপনার প্লেটে হয়তো কমদামী খাবার অথচ রাস্তার পাশের পথশিশু সেই সময় না খেয়ে শুয়ে আছে….. আপনি জন্মগতভাবে লাকি; সুতরাং মন খারাপ না করে করে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানান।
আপনার হাতের কাছে যা আছে সেটা দিয়েই আপনাকে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসটি মোডিফাই করে নিতে হবে। আপনার বাপের হোম থিয়েটার কেনার সাধ্যি নেই অথচ আপনি চাইলেই বাড়ীর টিভি আর অল্প কয়টা কম্পোনেন্ট এবং চারটা স্পিকার দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন হোম থিয়েটার!
আপনার হয়তো দামী পিসি নেই, আপনি ১৫০০ টাকার ভেতরে রাসবেরি পাই আর কিছু এক্সেসরিজ দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন মিনি পকেট কম্পিউটার!
আপনার কক্সবাজার পিকনিক করতে যাওয়ার টাকা নেই, ১০০ টাকার এমবি কিনে দিয়ে ইন্টারনেটে কক্সবাজার লিখে সার্ফ করুন…আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি ২ দিন ৩ রাতে কক্সবাজারের যতোটা না সৌন্দর্য আপনি দেখতে পারেন, ২ ঘন্টা ইন্টারনেটে আপনি তারচেয়ে বেশী ফ্যান্টাসি পাবেন।
ভালো মানুষ হউন; আপনার ব্যবহার সুন্দর করুন। মনে রাখবেন আপনার পকেট শূন্য থাকলেও আপনার মিষ্টি ব্যবহার কখনোই আপনাকে অভুক্ত রাখবে না। “ঐ ব্যাটা….তুই আমারে চিনস” টাইপের সস্তা মেন্টালিটি বাদ দিতে হবে। ক্ষমতা কখনো মুখে রাখবেন না, ক্ষমতা কখনো হাতেও রাখবেন না….ক্ষমতা রাখবেন মাথাতে; তাহলেই উইন হতে পারবেন।
লাইফে সকলেরই সমম্যা আছে আর যতোদিন বাঁচবেন সমম্যা থাকবেই সুতরাং সিনেমার শেষ দৃশ্যে “অতঃপর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো” এমনটি কখনোই হবে না।আপনি যতোদিন বাঁচবেন সমস্যা নিয়েই বাঁচতে হবে এটাইই লাইফ সুতরাং মোটেই প্যানিক হবেন না….পেইনকে টয়লেট প্যানে ফ্লাশ করে দিন; সমস্যা আসলে তাকে এমন লরেন্স সাদরে গ্রহণ করুন “আয় ব্যাটা দেহি….কেডা জিতে”।
মনে রাখুন আপনিই আপনার লাইফের রাজা!!!
লেখার শুরুতে বলেছিলাম যে “আমি টাকা দিবো” কথাটা কিন্তু আমি ভুলিনি; যদি এমন হয় যে আপনাদের এমন কোন প্রজেক্ট বা স্বপ্ন আছে যেটা পূরণ করতে টাকা লাগবে, তখন ইনশাল্লাহ আমি আমার সাধ্যমতো সহায়তা করার চেষ্টা করবো (ইনশাল্লাহ মার্চের পর)তাইবলে এমন নয় যে “কল্পনা করলাম ড্রোন-রোবট বানানো আর কালই দুইটা আর্ডুইনো কিনে এনে সার্কিট পুড়িয়ে ফেললাম” ইউ হ্যাভ টু ওয়েল আইডিয়া-ওয়েল নলেজ-ওয়েল প্লান ওভারঅল ওয়েল মাইন্ড!
আমি কি করি এটা জানতে চাইলে বলবো “কাজ”; কি কাজ সেটা জানতে চাইলে উল্টো আপনাকে আমি কাজের ডেফিনিশন শিখিয়ে দিলাম “সৎ পথে আপনার পরিশ্রমের সর্বোচ্চ ইকোনমিকাল এন্ড সোস্যাল ইফিসিয়েন্সি পান এমনটাই আপনার জন্য পারফেক্ট কাজ”।
যাই হউক অনেক কথায় বললাম; তবে সে সবই মূল্যহীন হবে যদিনা সেগুলি আপনি মনে রেখে নিজের লাইফে ইউটিলাইজ না করেন।
আপনার জীবন পরিবর্তনের চাবি দিয়ে দিলাম….এখনই তালা খুলুন নয়তো দেরী হলে তালাটাই হারিয়ে ফেলবেন!!!
ফেসবুকে আমি→ নিশান আহম্মেদ নিয়ন
আল্লাহ হাফেজ