২৬ জুলাই মুক্তি পেল একটি ভিন্ন ধারার বলিউড ফিল্ম “মিমি”। মুভিটির ট্রেইলার দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো একটি ভিন্ন ধারার স্বাদ দেবে মুভিটি। এক্সপেক্টেশন অনুযায়ী মুভি সফল ও হয়েছে। আজকে আমি এই মুভিটির রিভিউ ও ডাউনলোড লিংক নিয়ে এসেছি। তো চলুন শুরু করা যাক।
Film: Mimi (2021)
Genre: Drama, Comedy
Imdb Rating: 8.3/10 (2,567 votes)
Personal Rating: 9.5/10
Language: Hindi
Industry: Bollywood
Movie Print: Full HD (Web-Rip)
***হালকা স্পয়লার***
Sometimes It is easier to die than to survive
মাঝে মাঝে জীবনে এমন সময় আসে যখন হাল ছেড়ে দেওয়াটাই সহজ অপশন হিসেবে থাকে আর তা নাহলে ত্যাগ স্বীকার করতে হয় অনেক।
আর একজন মা এর চেয়ে বেশী ত্যাগ স্বীকার আর কয়জনই বা করতে পারে!
এমনই এক গল্প নিয়ে Laxman Utekar নির্মাণ করেছেন Mimi (2021).
কিছু মুভি দেখার সময় আপনি আসলে বুঝতে পারবেন না আপনি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আপনার মূল্যবান কিছু সময় ব্যয় করতেছেন! কারণ সেই সময়ের ফিলিংসটা সত্যিকারের মনে হবে আপনার। আপনি স্ক্রিনে অভিনয় করা মানুষগুলোর অভিনয় দেখে হাসবেন আবার পরক্ষণেই কাঁদবেন। আপনার ইমোশন নিয়ে খেলবে ওরা কিছুক্ষণ। জোর করে হাসানো অথবা জোর করে ইমোশন নিয়ে খেলা করার মতো মুভি না এটা। একদম সিম্পল কাহিনির মধ্যে গর্জিয়াস একটা প্যাকেজ।
অনলাইনে নামার পরপরই দেখে নিলাম। ট্রেইলারটা যতোটা ভালো ছিলো তার চেয়ে মুভিটা আরো বেশি ভালো ছিলো। একদিকে যেমন ছিলো কমেডি অন্যদিকে ইমোশনাল সিনে ভরপুর। কাহিনীটাও সুন্দর বলিউডের আর দশটা মুভির কাহিনীর মতো নয় একজন সারোগেট এর আসল মা হয়ে ওঠা নিয়ে বেশ ইউনিক একটা কাহিনী। মুভির গানগুলোও সুন্দর ছিলো।
যদি আগে ট্রেলার দেখে থাকেন তাহলে মুভিতে নতুনত্ব কিছুই খুঁজে পাবেন না। আর এরকম মুভিতে আপনি তেমন বড় বা এক্সাইটেড থ্রিল অথবা সাসপেন্স পাবেন না তাই সিম্পল গল্পেই অভিনয় করা মানুষগুলোর পারফরম্যান্স এবং মুভির কমেডি বা ইমোশন টাইমিং ভালো হলেই মুভিকে ভালো বলতে হবে আপনার।
একটি আমেরিকান দম্পতি যাদের বাচ্চা নেই। মহিলা কখনও বাচ্চা জন্মদান করতে পারবেন না। তাই তারা IVF পদ্ধতিতে বাচ্চা জন্মদানের জন্য একজন মেয়ে খুঁজছেন। বাচ্চা যেন সুস্থ ও সবল হয় সেজন্য তারা ভালো ফিটনেস আছে এমন কাউকে খুঁজছেন। সেই দম্পতি যে গাড়িতে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করতেছিল সেটার ড্রাইভার হলো পঙ্কজ ত্রিপাঠি (ভানু)। ভানু এসব শুনে তাদেরকে বিষয়টা জিজ্ঞেস করে এবং বলে সে এমন কাউকে খুঁজে দিবে তারজন্য তাকে টাকা দিতে হবে। আমেরিকান দম্পতিও রাজি হয়। অবশেষে ভানু তাদের নিয়ে যায় কৃতি শ্যাননের (মিমির) কাছে।
কৃতি শ্যানন যার একটাই স্বপ্ন বলিউডের নায়িকা হবে। সিনেমা পাড়ায় তার খুব নামডাক থাকবে একদিন সেই স্বপ্ন সে রাতদিন দেখে। কিন্তু নায়িকা হতে হলে অনেক টাকার দরকার সেটাও সে জানে। কথায় আছে টাকার লোভে অথবা প্রয়োজনে সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়। হয়তো মিমি টাকার প্রয়োজনেই এই প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায়। কিন্তু অবিবাহিত একটা মেয়ের পেটে বাচ্চা সেটা কিভাবে লুকিয়ে রাখবে সেই চিন্তা উদয় হয় তখন তাদের মনে। সেটারও একটা বন্দোবস্ত করে ফেলে ওরা। কয়েক মাস যাওয়ার পর বাচ্চার অনেকগুলো টেস্ট করানোর পর ডাক্তার বলে বাচ্চার কিছু সমস্যা আছে। আর এতে মন ভেঙে যায় আমেরিকান দম্পতির এবং তারা বাচ্চা নিবেনা বলে। তারা চলে যায় মিমিকে একা ফেলে।
সেই পরিস্থিতিতে মিমি কি করবে? বাচ্চা নষ্ট করে ফেলবে? কিন্তু কোনো মা কি স্ব-জ্ঞানে নিজের পেটের বাচ্চা নষ্ট করতে পারে? আর যদি বাচ্চা নষ্ট না করে তাহলে সমাজকে এই বাচ্চার কি পরিচয় দিবে? এই বাচ্চাকে কি তার পরিবার মেনে নিবে? এরকম আরও অনেকগুলো প্রশ্ন হয়তো আছে এবং সবগুলোর উত্তরই মুভিতে পাবেন।
ট্রেলার দেখার পর অনেকেরই মনে হয়েছে পুরো গল্প বলে দিয়েছে কিন্তু না ট্রেইলারে ছিলো শুধু অর্ধেক মুভির গল্প। মুভির কনসেপ্ট টা ছিলো খুবই সুন্দর আর পরিচালক ও সেটা নিপুণ হাতে সামাল দিয়েছেন।আর সবার চমৎকার অভিনয় দক্ষতায় সেটা হয়ে উঠেছে আরো আকর্ষণীয়।
প্রথমেই বলতে হয় কৃতি সেননের কথা।তার ক্যারিয়ার এর সেরা পারফরম্যান্স সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। অল্প কিছু সিনেমা করা কৃতি সেনন এই সিনেমায় নিজের সেরা টা দিয়েছে। চরিত্রের প্রয়োজনে ওজন বাড়িয়েছিলো পনরো কেজি। বিশেষ করে ইমোশনাল সীন গুলো তে কৃতি সেনন দারুণ ছিলো।
এবার আসি পঙ্কজ ত্রিপাঠি। এই লোকের সব কাজই প্রসংশার দাবীদার। প্রত্যেকটা চরিত্রে সে নিজেকে মানিয়ে নেয়।এই মুভিতেও তাই।একদম পারফেক্ট ভাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন। সাপোর্টিং কাস্ট হিসবে সাই তামান্নাকার, সুপ্রিয়া পাঠক, মনোজ পাহওয়া আর বিশেষ ভাবে আমেরিকান চরিত্রে অভিনয় করা ইডলিন এডওয়ার্ড ও ছিলো দারুণ। অভিনয় নিয়ে কোন অভিযোগ থাকার কথা না।
পংকজ ত্রিপাঠি এখন যে কোন পরিচালকের জন্যই ভরসার নাম। তার অভিনয়ে অভিযোগ করার কোন অপশন তিনি দেন না। এখানেও তিনি তার চমৎকার অভিনয় দিয়ে অডিয়েন্সকে মাতিয়ে রেখেছেন। এছাড়া অন্যান্য সকল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র একদম খাপে খাপ অভিনয় করেছেন।
অভিনয়,পরিচালনা,ডায়লগ,ক্যামেরার কাজ চমৎকার।কিছু ডায়ালগ মনে বসে যাবে।ট্রেইলার দেখে যারা হতাশ হয়েছিলেন হতাশা কাটিয়ে দেখতে বসে পড়ুন।
মুভির মিউজিক ছিলো আরেকটা ভালো দিক। এ আর রহমানের মিউজিকে দারুণ কিছু ট্র্যাক ছিলো মুভিতে। মুভির প্রথম হাফে দারুণ কমেডি আর দ্বিতীয় হাফে ইমোশনাল রাইড এর সুন্দর একটা ব্যালেন্স ছিলো আর শেষের সোশ্যাল মেসেজ টা তো খুবই হার্টটাচিং ছিলো। আর স্ক্রীন প্লে ও ছিলো বেশ ভালো যা আপনাকে বোর করবে না।
পৃথিবীতে সবচেয়ে ত্যাগী মানুষটা কিন্তু আমাদের মা। উনারা নিজেদের সব আশা আর স্বপ্নগুলো চোখের নিমিষেই ভুলে যেতে পারে শুধু আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে। মুভিতে কিছু সিন আছে যা দেখে আপনি হয়তো কান্নাও করে দিতে পারেন। বিশেষ করে আমেরিকান দম্পতি চলে যাওয়ার পর মিমি পাগলের মতো সব জায়গায় তাদের খুঁজে ফেরা এবং বাচ্চাটার জন্য দুই মায়ের কান্না করার সিনটা। আপনার ইমোশন নিয়ে খেলবে এই সিনগুলো।
আমি বলব, ২০২১ সালে একটা ভালো মুভি পেলাম বলিউড থেকে অবশেষে। যেটা আপনাকে জোর করে হাসানোর চেষ্টা করবেনা। কমেডি টাইমিং দুর্দান্ত। মুভির সবচেয়ে পজিটিভ দিক হলো এটার এন্ডিং। এরকম এন্ডিং হয়তো মুভি দেখার সময় আশা করতে পারবেন না। ভালো লাগবে মুভিটি আশা করি।
Content Is King!
নিঃসন্দেহে আর দুই চার বছর দশ বছর পর বলিউড থেকে স্টার প্রথা উঠে যাবে। যে যত সুন্দর কন্টেন্ট উপহার দিতে পারবে সে তত সফল হবে। কোন প্রেম কাহিনী,বড় কোন সুপারস্টার বা নায়ক ছাড়াও যে চমৎকার সব মুভি বানানো যায় তা এখন দেখা যাচ্ছে। এভাবেই এগিয়ে যাক এই রীতি।
কাহিনীর অংশটুকু পড়লে মনে হতে পারে এটা খুবই দুঃখের মুভি। এটা আসলে অতটাও দুঃখের মুভি না। বরং বলা যায় বেশ উপভোগ্য ফ্যামিলি ড্রামা কমেডি মুভি। চমৎকার কিছু হাসার উপকরণ রয়েছে মুভিতে। হাসি কান্না মজা সব মিলিয়ে চমৎকার একটা প্যাকেজ এই মুভিটা।