নিজের বাড়িতে বাংলাদেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী
অধিনায়ক।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত জনপ্রিয় কোনও
অধিনায়ক এমন সাদামাঠা থাকতে পারেন ভাবাই যায় না।
মীরপুর স্টেডিয়ামের এক কিলোমিটারের
মধ্যে একটা সরু, ভাঙাচোরা রাস্তার ওপর
ছন্দপতনের মতো পাঁচতলা ঝকঝকে বাড়ি।
গোটা বিল্ডিংটাই তাঁর হওয়ার কথা কিন্তু বাস্তবে একটা
চোদ্দোশো স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট।
কোনটা তাঁর? কোন ফ্লোরে থাকেন
বাংলাদেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অধিনায়ক? সঙ্গী
পথপ্রদর্শক বললেন, জিজ্ঞেস করার দরকার
নেই। লিফটে উঠে যে ফ্ল্যাটের বাইরে
সবচেয়ে বেশি খোলা চটি পাওয়া যাবে, সেটাই
ওর। কাউকে না পেলে ও রাস্তা থেকে সম্পূর্ণ
অপরিচিত বাচ্চাদের খেলার জন্য ওপরে ডেকে
নেয়। মাশরফি মর্তুজা মিনিটখানেকের মধ্যে
আবির্ভূত হলেন ঘুম-ঘুম চোখে। বাড়িতে পরার
লুঙ্গি আর খয়েরি টি-শার্টে। যা ছবি তোলার জন্য
যে বদলালো সেটাই বোধহয় আশ্চর্য…
প্রশ্ন: কাল রাত্তির থেকে আপনার দুটো
ফোনই বন্ধ। বাংলাদেশি সাংবাদিকেরাই বলছেন তাঁরা
যোগাযোগ করতে পারছেন না এমন অবস্থা।
মাশরফি: কাল রাত্তিরে প্রেস কনফারেন্স করলাম
তো। যা বলার বলে দিয়েছি। তার পর ফোন বন্ধ
করে রেখেছি।
প্র: সেটাই তো অবাক লাগছে। গোটা বাংলাদেশ
উদ্বেলিত টিমের এশিয়া কাপ ফাjpgল ওঠা নিয়ে। আর
আপনি আসল লোক ফোন বন্ধ করে বসে
আছেন? ফোন তো লোকে ম্যাচ হারলে
বন্ধ করে।
মাশরফি: আজকের দিনটা রেস্ট নেওয়ার জন্য
রেখেছি। তা ছাড়া জিতেছি বলে উচ্ছ্বাসে
ভেসে যাব কেন? জীবনে প্রচুর হেরেছি।
ইদানীং কিছু ম্যাচ জিতছি। জিনিসগুলো স্বাভাবিক ভাবে
নেওয়াই ভাল।
প্র: কী বলছেন কালকে ওই ভাবে জেতার পর
স্বাভাবিক থাকা সম্ভব নাকি? আপনার টিম তো উইনিং
স্ট্রোকে বল বাইরে যেতে না যেতেই
মাঠে ঢুকে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
মাশরফি: হ্যাঁ ওটুকু হয়েছে। ড্রেসিংরুম অবধি খুব
হয়ে থাকে। ব্যস ওই পর্যন্ত। এর বাইরে
হোটেলে গিয়ে আর একপ্রস্থ উল্লাস। কেক
কাটা এগুলো হয় না। আমরা সব ড্রেসিংরুমেই
ফেলে আসি।
প্র: ক্রিকেট যে ভাবে গোটা বাংলাদেশি
সমাজকে এক করে দিয়েছে এটা দেখে
চমত্কৃত লাগছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী এসে
এই যে তিন ঘণ্টা খেলা দেখছেন এটাও তো
আশ্চর্য।
মাশরফি: হ্যাঁ উনি আসা মানে একটা দায়িত্ব চেপে
যায় যে জিততে হবে।
প্র: সেটা তো একটা বাড়তি চাপও যে ওঁর সামনে
খারাপ খেললে চলবে না।
মাশরফি: না প্রেসার তো নিতেই হবে। প্রেসার
না নিলে চলবে কী করে।
প্র: আমি বলতে চাইছিলাম কালকের ওই মুহূর্তটা।
সাকিব ওই রকম বিশ্রী আউট হলেন। উইকেটে
মারলেন ব্যাট দিয়ে। শেখ হাসিনা বসে আছেন।
আপনার টিম হারের মুখে। আর আপনি গিয়েই
দুটো চার মেরে দিলেন। তাও কিনা আমেরকে।
এটা করতে তো দম লাগে।
মাশরফি: আমি ঠিক করে রেখেছিলাম ওভারে একটা
বাউন্ডারি মারবই। ওই ওভারে প্রত্যেকটা বল চালাব
এটা প্ল্যানই ছিল।
প্র: সেটাই তো অবাক লাগছে। তখন আপনার
উইকেট যাওয়া মানে তো বিপণ্ণতা আরও বাড়ত।
মাশরফি: উপায় ছিল না। পরের ওভার অবধি রেখে
দিলে শেষ দু’ওভারে মোটামুটি ২৩ রান করতে
হত। ওই ঝুঁকি নেব কেন? আমি তো পেছনে
image link http://www.anandabazar.com/polopoly_fs/1.324152.1457040221!/image/image.jpg_gen/derivatives/landscape_390/image.jpg
image kink http://www.anandabazar.com/polopoly_fs/1.324153.1457040256!/image/image.jpg
স্মারক ক্যাবিনেটের সামনে মাশরফি। বৃহস্পতিবার।
প্র: আপনার ওপর বার হওয়া একটা বইতে কিছু কথা
পড়ে রীতিমতো অবাক লাগল।
মাশরফি: যেমন?
প্র: যেমন আপনি বলেছেন ক্রিকেটকে
জাতীয়তাবাদের স্তম্ভ হিসেবে দেখাটা আপনি
সমর্থন করেন না।
মাশরফি: আমি নিজের মনের কথা বলেছি। আমি
মনে করি দিনের শেষে খেলাটা একটা
বিনোদন। তাও তো ক্রিকেট হল স্পোর্টসের
একটা অংশ। পুরো খেলা নয়। সেখানে এত
হিরো ওয়ারশিপের দরকার কী?
প্র: আপনার চোখে হিরো কারা?
মাশরফি: সবচেয়ে বড় হিরো আমাদের
মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের জন্যই তো আজ
স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা রয়েছি। আমি ওদের
অসম্ভব সম্মান করি। আমি সম্মান করি
বৈজ্ঞানিকদের। ওঁদের এক-একটা আবিষ্কার
জাতিকে কত বছর আগে নিয়ে যায়। আমি সম্মান
করি ডাক্তারদের। যাঁরা মানুষের জীবন বাঁচান। এর
চেয়ে মহত্ কাজ আর কী হতে পারে।
আমাদের নিয়ে যত নাচানাচিই হোক, আমরা কি কারও
জীবন বাঁচাতে পারছি?
প্র: একটা এত বড় ফাইনালে ওঠার পর আপনার মুখে
কথাগুলো সত্যিই ব্যতিক্রমী।
মাশরফি: আমি ভেতর থেকে বিশ্বাস করি আমাদের
সমর্থন করছেন খুব ভাল। আমার টিম কৃতজ্ঞ।
কিন্তু সেই মেয়েটিকেও করুন যে স্যাগ
গেমসে চারটে সোনা জিতে সবার অলক্ষ্যে
ঢাকা ফিরেছে। আমরা যদি স্পোর্টসের লোক
হই তো ওই মেয়েটিও স্পোর্টসেরই লোক।
সাপোর্ট জীবনের সব বিভাগে করুন। তা হলেই
তো বাংলাদেশ এগোতে পারবে। শুধু